Inqilab Logo

বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৪ আশ্বিন ১৪৩১, ১৫ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

সকালে বৈঠক বিকালে বরখাস্ত মেয়র মান্নান

| প্রকাশের সময় : ৭ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম

স্টাফ রিপোর্টার : গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র এম এ মান্নান সকাল করপোরেশন ভবনে উন্নয়ন সভার বৈঠক করেছেন। গতকাল বৃহস্পতিবার বিকালে স্থানীয় সরকার বিভাগের থেকে বিএনপি নেতাকে মেয়র পদ থেকে আবারো সাময়িক বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়েছে। আইনি লড়াই চালিয়ে পদে ফেরার এক মাস না গড়াতেই আবারো বরখাস্ত করা হল গাজীপুরের মেয়র এম এ মান্নানকে। গত ১৮ জুন পুনরায় মেয়রের চেয়ারে বসেন মেয়র তার ১৮ দিনের মধ্যে তাকে ফের বরখাস্ত করল সরকার। মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, দুর্নীতি দমন কমিশনের এক মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হওয়ায় আইন অনুযায়ী এই পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান মান্নান ২০১৩ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীকে হারিয়ে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। কিন্তু এরপর নির্বিঘেœ দায়িত্ব পালন করতে পারেননি তিনি। এই নিয়ে তিন দফা বরখাস্ত হলেন তিনি। নাশকতার মামলায় গ্রেপ্তার হয়ে তাকে কারাগারেও থাকতে হয়েছিল কিছু দিন। এক মামলায় জামিনের পর আরেক মামলায়ও গ্রেপ্তার দেখানো হচ্ছিল তাকে। বিএনপি অভিযোগ করে আসছে, বিরোধী দল থেকে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের দায়িত্ব পালন করতে না দেওয়ার উদ্দেশ্যেই আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন সরকার মান্নানকে বার বার বরখাস্ত করছে। নাশকতার এক মামলায় আদালতে অভিযোগপত্র গৃহীত হওয়ার পর ২০১৫ সালের ১৯ আগাস্ট মান্নানকে প্রথম বরখাস্ত করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। উচ্চ আদালতে ওই আদেশ স্থগিত হলে তখন পদ ফিরে পেয়েছিলেন তিনি। কিন্তু চেয়ারে বসতে না বসতেই আরেক মামলায় তার বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র গৃহীত হলে গত বছরের ১৮ এপ্রিল দ্বিতীয়বারের মতো তাকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়। ওই আদেশ চ্যালেঞ্জ করে হাই কোর্টে গেলে পক্ষে আদেশ পান এই বিএনপি নেতা। এরপর গত ১৮ জুন পুনরায় মেয়রের চেয়ারে বসেন তিনি। তার ১৮ দিনের মধ্যে তাকে ফের বরখাস্ত করল সরকার। এবারের বরখাস্তের ক্ষেত্রে যে মামলাটির উল্লেখ করা হয়েছে, তা মেয়রের দায়িত্ব পালনকালে অর্থ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে নিয়ম ভাঙার অভিযোগে করে দুদক।
প্রজ্ঞাপনে বলা হয়, সিটি করপোরেশনের ত্রাণ ও দরিদ্র তহবিলের আয় কোনো ব্যাংক হিসাবে না রেখে নিয়ম বহির্ভূতভাবে ক্যাশ-ইন-হ্যান্ড হিসেবে হিসাব রক্ষণ কর্মকর্তা মো. গোলাম কিবরিয়ার কাছে রাখেন মেয়র মান্নান। পরস্পর যোগসাজশে ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা ও অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গ এবং টাকা গ্রহীতার স্বাক্ষরবিহীন ৯৯৯টি ভুয়া ভাউচার তৈরি করে সিটি করপোরেশনের ৪৯ লাখ ১ হাজার ৮৪৮ টাকা আত্মসাৎ করেন বলে মামলায় অভিযোগ করা হয়। এই মামলার তদন্ত শেষে দুদকের অভিযোগপত্র গত ১২ জানুয়ারি গাজীপুরের বিশেষ জজ আদালতে গৃহীত হয়েছে বলে জানানো হয়। ফৌজদারি মামলার আসামি হওয়ায় স্থানীয় সরকার (সিটি করপোরেশন) আইন অনুযায়ী মেয়র মান্নানকে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে।
প্রজ্ঞাপনে আরো বলা হয়,ক্ষমতার অপব্যবহার, প্রতারণা, অপরাধমূলক বিশ্বাস ভঙ্গ ও অর্থ আত্মসাতের অভিযোগে মান্নান অভিযুক্ত হয়েছেন এবং অভিযোগপত্র আদালতে গৃহীত হয়েছে, যা সিটি করপোরেশনের মেয়রের নৈতিক মানদন্ড ও ভাবমূর্তি পরিপন্থি এবং এ অবস্থায় মেয়র হিসেবে দায়িত্ব পালন করলে সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নৈতিক মনোবল ক্ষুণ্ন হওয়া, সাক্ষ্য প্রমাণাদি বিনষ্ট বা ক্ষতিগ্রস্ত হওয়া এবং গুরুত্বপূর্ণ সাক্ষীদের সাক্ষ্য প্রভাবিত হওয়ার যৌক্তিক আশঙ্কা রয়েছে। একই মামলার আসামি সিটি করপোরেশনের কর্মকর্তা গোলাম কিবরিয়াকে গত বছরের ৮ নভেম্বর সাময়িকভাবে বরখাস্ত করা হয়েছে।
সকালে মেয়র মান্নানের বৈঠক অনুষ্ঠিত
এদিরেক গতকাল সকালে গাজীপুর সিটি করপোরেশনের মেয়র এম এ মান্নানের ডাকা বৈঠক সভাকক্ষে অনুষ্ঠিত হয়। এ সভায় গাজীপুর সিটি করপোরেশনে বেশিভাগ কাউন্সিলরের উপস্থিত ছিলেন। তবে আওয়ামী লীগপন্থী কাউন্সিলরা দলীয় কারণে মেয়র মান্নানের বৈঠক বয়কট করেছেন। তবে বিএনপিপন্থী কাউন্সিলরা মাসিক বৈঠকে যোগ দিতে নির্ধারিত সময়ে সভাকক্ষে এসেছেন। এমএ মান্নানের অবর্তমানে ২০১৫ সালের ৮ মার্চ থেকে প্যানেল মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ ভারপ্রাপ্ত মেয়রের দায়িত্বে ছিলেন। ২০১৩ সালের ৬ জুলাই নবগঠিত গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিপুল ভোটে মেয়র নির্বাচিত হন বিএনপি নেতা ও সাবেক প্রতিমন্ত্রী এম এ মান্নান।



 

Show all comments
  • Farhad ৭ জুলাই, ২০১৭, ৪:১৩ এএম says : 0
    এমন ন্যাক্কারজনক নির্লজ্জ কাজ বোধহয় বিশ্বের আর কোথাও নেই আমরা এর তীব্র ঘৃনা জানাই
    Total Reply(0) Reply
  • Nur- Muhammad ৭ জুলাই, ২০১৭, ৭:৫২ এএম says : 0
    হায় রে আমাদের গণতন্ত্র! ক্ষমতার কাছে পেশিত তুমি। বিরুধে থাকলে তোমাকে কত যে ভালবাসি, ক্ষমতা পেলে তোমাকে পেশি। ক্ষমতার জন্য তুমি হও দেবী, ক্ষমতা পেলে তোমাকে না চিনি। হায় রে মোদের গণতন্ত্র! এখন তোমাকে না চিনি। ---------------------------------। দলীয় লোকেরা খুন খারাবি করে দিব্বি এমপি মন্ত্রী হয়ে বসে আছে। তাদের কেশ পর্যন্ত কেহ ছুইতে পারছে না। আর লাখ লাখ ভোট পেয়ে একজন জনপ্রতিনিধিকে এভাবে হেনেস্থা করা বড় ই বেদনাদায়ক। তার অপরাধ হলো, সে বিরুধী দল করে। এভাবে চলতে থাকলে কি দেশে কোন বিরুধী মত থাকবে? মান্নান কে জনগণ ভোট দিয়েছে। মেয়রের চেয়ারে বসায়েছে। এটাই বড়। এটাই সত্য। জনগণ মনে করে, মান্নানকে চেয়ার থেকে সরানো সন্পূর্ন অবৈধ। এমন করা গণতন্ত্রের উপর আঘাত করাই সামীল। জনগণ মনে কর, ক্ষমতাসীনদের মধ্যে ও উচ্চ গণতান্ত্রীক মানসের লোক আছে। তারা এর প্রতিবাদ করবে। সোচ্চার হবে। এই অগণতান্ত্রীক প্রথাটি দেশ হতে চিরতরে দূর করার জন্য জনগণ সকলের তরে আকুল অনুরোধ করছে। প্রয়োজনে জনগণ গণতন্ত্রের মানস কন্যা শেখ হাসিনার কাছে এর দ্রুত সমাধান চায়। ধন্যবাদ। সবায়কে ধন্যবাদ।
    Total Reply(0) Reply
  • ৭ জুলাই, ২০১৭, ১০:৫১ পিএম says : 0
    সত্যের পথিক তোমাকে হাজারো ধন্যবাদ
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ