Inqilab Logo

সোমবার ২৩ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৮ আশ্বিন ১৪৩১, ১৯ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

বোরো বিপর্যয়ের পর আউশ ও আমন থেকে পৌনে ২ কোটি টন চাল উৎপাদনের আশা

লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে সর্বাত্মক প্রচেষ্টা কৃষকের

| প্রকাশের সময় : ৪ জুলাই, ২০১৭, ১২:০০ এএম



নাছিম উল আলম : বিগত রবি মওসুমে বোরো ধানে উৎপাদন বিপর্যয়ের পরে চলতি ‘খরিপ-১’ মওসুমে আউশ আবাদের লক্ষ অর্জনের পাশাপাশি আসন্ন ‘খরিপ-২’তে দেশে ৫৩লাখ ৫হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ স্থির করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। অউশ ও আমন থেকে এবার প্রায় পৌনে ২কোটি টন চাল উৎপাদনে আশাবাদী মন্ত্রণালয়।
দেশে আউশ আবাদের প্রাথমিক লক্ষমাত্রা ১০লাখ ২৫হাজার হেক্টর নির্ধারণ করা হলেও পরে তা সংশোধন করে কিছুটা বৃদ্ধি করা হয়েছে। সে লক্ষও প্রায় অর্জিত হয়েছে বলে জানিয়েছে কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর-ডিএই। আসন্ন আমন থেকে এবার প্রায় ১কোটি ৪০লাখ টন ও আউশ থেকে আরো প্রায় ৩০লাখ টন চাল উৎপাদনে মাঠে তৎপর কৃষকরা। বিগত রবি মওসুমে বোরো ধানের ক্ষতি সহ সাময়িক খাদ্য ঘাটতি কাটিয়ে উঠতে সরকারের উচ্চ পর্যায়ের নির্দেশে কৃষি মন্ত্রনালয় সর্বোচ্চ তৎপড়তা শুরু করেছে। এরই অংশ হিসেবে চলতি আউশ ও অত্যাসন্ন আমন আবাদে কৃষকদের সাথে নিবিড় যোগাযোগ রক্ষা করে ধান আবাদে সব ধরনের পরামর্শ ও সহযোগীতা অব্যাহত রাখতেও মাঠ পর্যায়ের কর্মীদের নির্দেশ দিয়েছে মন্ত্রণালয়। ডিএই’র শীর্ষ পর্যায় থেকে অঞ্চল ও জেলা পর্যায়ের কর্মকর্তাগনও সার্বিক বিষয় সার্বক্ষনিক মনিটরিং করছেন। তবে এক্ষত্রে বøক সুপার ভাইজারগনের ভ‚মিকা সর্বাধিক হলেও তাদেও অতীত ভ‚মিকা খুব একটা প্রসংশনীয় নয় বলে অভিযোগ রয়েছে।
বিগত রবি মওসুমে দেশে প্রায় ৪৭.৯৭লাখ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ সম্পন্ন করেন কৃষকগণ। লক্ষ ছিল ১কোটি ৯১লাখ টন চাল উৎপাদনের। ৪৮লাখ হেক্টরে শতভাগ আবাদ লক্ষমাত্রা পূরন না হলেও উৎপাদন লক্ষ অর্জনে আশাবাদী ছিলেন কৃষি স¤প্রসারণ অধিদফতর-ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল। কিন্তু হাওর এলাকায় ব্যাপক বিপর্যয়ের পাশাপশি দেশের কয়েকটি জেলায় ছত্রাকবাহী ‘বøাষ্ট’ রোগের সংক্রমনের ক্ষতির পর বোরো থেকে ১কোটি ৮৪লাখ টনের মত চাল পাবার কথা বলছেন ডিএই’র একাধীক দায়িত্বশীল মহল। গত বছর ‘খরিপ-২’ মওসুমে দেশে ৫৫.৬০লাখ হেক্টরে আমন আবাদ লক্ষমাত্রার অতিরিক্ত কুড়ি হাজার হেক্টরে আবাদ সম্পন্ন হওয়ায় প্রায় ১কোটি ৭০লাখ টনের মত চাল উৎপাদনের কথা জানিয়েছিলেন দায়িত্বশীল মহল।
পাশাপাশি চলতি ‘খরিপ-১’ মওসুমে দেশে আবাদকৃত প্রায় ১১লাখ হেক্টরে আউশ থেকে প্রায় ৩০লাখ টন চাল উৎপাদন কার্যক্রম শুরু হয়েছে। যা আগামী ৩ মাসের মধ্যে বাজারে আসতে পারে। ইতোমধ্যে আউশ আবাদ লক্ষমাত্রা অতিক্রম করেছে। বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলে চলতি মওসুমে দুই লক্ষাধিক হেক্টর জমিতে আউশের আবাদ সম্পন্ন হয়েছে। এধান থেকে দক্ষিণাঞ্চলে প্রায় সাড়ে ৫ লাখ টন চাল আসবে কৃষকের ঘরে। দেশে আবাদকৃত মোট আউশ ধানের ২০ ভাগই হচ্ছে দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলায়।  
এদিকে ‘খরিপ-২’ মওসুমে দেশের দ্বিতীয় প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমন আবাদ কার্যক্রমও শুরু হয়েছে ইতোমধ্যে। দক্ষিণাঞ্চলে আমন বীজতলা তৈরীর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। উত্তরাঞ্চলের বেশীরভাগ এলাকায় বীজতলা তৈরীর কাজ শেষ। দক্ষিণাঞ্চল সহ সারা দেশে এবার ৫৩লাখ ৫হাজার হেক্টর জমিতে আমন আবাদের লক্ষ স্থির করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়। যা থেকে প্রায় ১কোটি ৪০লাখ টন চাল উৎপাদনে আশাবাদী মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে শুধুমাত্র বরিশাল অঞ্চলেই প্রায় ৭লাখ ৪০হাজার হেক্টর জমিতে আমনের আবাদ হচ্ছে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলো থেকে প্রায় পৌনে ১৬লাখ টন আমন চাল পাবার ব্যপারে আশাবাদী ডিএই সহ কৃষি মন্ত্রণালয়।
তবে দেশে যে প্রায় ১০লাখ ৮৩হাজার হেক্টর জমিতে স্থানীয় জাতের আমনের আবাদ হচ্ছে, তার মধ্যে সাড়ে ৪লাখ হেক্টরই হচ্ছে বরিশাল সহ দক্ষিণাঞ্চলের ৬টি জেলায়। অথচ ‘বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-ব্রি’ ইতোমধ্যে প্রায় ৭৭টি উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রীড জাতের ধানের জাত উদ্ভাবন করেছে। ব্রি উদ্ভাবিত উফশী জাতের গড় ফলন হেক্টর প্রতি ৩টন চাল ও হাইব্রীড সাড়ে ৩টন। কিন্তু দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এখনো সনাতন পদ্ধতির কম ফলনশীল জাতের আমন আবাদের আধিক্য বিদ্যমান। স্থানীয় জাতের সনাতন এসব আমন ধানের হের প্রতি গড় ফলন মাত্র দেড় টনের মত।
দক্ষিণাঞ্চলের মাঠ পর্যায়ে কৃষকদের কাছে ব্রি উদ্ভাবিত উচ্চ ফলনশীল জাতের ধান বীজ ও এর আবাদ প্রযুক্তি পৌঁছে দিতে ব্যার্থতার কারণেও এ অঞ্চলে এখনো ‘উচ্চ ফলনশীল-উফশী’ জাতের অমানের আবাদ স¤প্রসারিত হচ্ছে না বলে মনে করছেন ওয়াকিবাহাল মহল। তবে এ লক্ষে মাঠ পর্যায়ে কর্মকান্ড আরো জোরদার করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ডিএই’র দায়িত্বশীল মহল। খাদ্য উদ্বৃত্ত দক্ষিণাঞ্চলে উফশী আমনের আবাদ আরো স¤প্রসারিত হলে ওই অঞ্চলে খাদ্য নিরাপত্তা ব্যবস্থা আরো টেকশই হতে পারে বলেও মনে করছে মহলটি।
এ ব্যপারে গতকাল ডিএই’র বরিশার অঞ্চরেল অতিরিক্ত পরিচালক কৃষিবীদ ওমর ফারুখ ইনকিলাবকে জানান, দক্ষিনাঞ্চলের জমিতে বর্ষা মওসুমে পানি বেশী থাকে বিধায় বেশীরভাগ এলাকাতেই উফশী জাতের ধান আবাদ সম্ভব হয় না। তবে অতি স¤প্রতি ‘ব্রি-৭৬’ ও ‘বি-৭৭’ নামের দুটি উচ্চফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছে আমাদের ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট। যা অধিক পানির জমিতেও রোপন করা যাবে। এবারের আমন মওসুমে এ দুটি উচ্চ ফলনশীল জাতের ৫শ’ টন বীজ দক্ষিণাঞ্চলের জেলাগুলোতে প্রদর্শনী সহ কৃষকদের মধ্যে বিতরন করা হবে বলেও জানান তিনি। ফলে আগামী বছর পাঁচেকের মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলে স্থানীয় জাতের পরিবর্তে উফশী জাতের অঅমনের আবাদ বাড়বে বলেও আশা করছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
এবার খরিপ-২ মওসুমে সারা দেশে ৯৫হাজার হেক্টর জমিতে ৩লাখ ৩২হাজার টনের মত হাইব্রীড, ৪১লাখ ২৭হাজার হেক্টরে ১কোটি ১৫লাখ ৫৫হাজার ৬শটন উফশী ও ১০লাখ ৮৩হাজার হেক্টরে প্রায় ১৮লাখ ২০হাজার টন স্থানীয় জাতের আমন চাল উৎপাদনের লক্ষ নির্ধারণ করেছে কৃষি মন্ত্রণালয়।
ব্রি’র মতে, ১৯৬৫-৬৬সালে দেশে মোট ধানের উৎপাদন ছিল ৭০লাখ টনের মত। ১৯৬৮সালে ‘আন্তর্জাতিক ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট-ইরি’ থেকে ‘অইআর-৮’ নামের উফশী জাতের ধান বীজ সংগ্রহ করে মাঠ পর্যায়ে চাষাবাদ শুরু হয়। অপেক্ষাকৃত খাটো আকারের এ ধান গাছ থেকে হেক্টরপ্রতি ৫-৬টন ফলন পাওয়া যায়। সে থেকে উফশী জাতের ওই ধান সাধারনের কাছে ইরি হিসেবে পরিচিতি লাভ করে। ১৯৭০সালে আমাদের ‘ব্রি’ প্রতিষ্ঠিত হবার পর থেকে এ পর্যন্ত আউশ আমন ও বোরো মিলিয়ে উচ্চফলনশীল প্রায় ৭৭টি জাতের ধান বীজ উদ্ভাবন করেছে। উফশী জাতের ধান আবাদের ফলে ১৯৭০Ñ৭১সালে দেশে চালের উৎপাদন প্রায় ১কোটি টনে উন্নীত হয়। ২০০৮-০৯সালে দেশে ধানের উৎপাদন ছিল ৩কোটি ৩৪লাখ টন। এমনকি উফশী বোরো আবাদের ফলে একসময়ে দেশের প্রধান দানাদার খাদ্য ফসল আমনের অবস্থান এখন দ্বিতীয় স্থানে। বর্তমানে দেশে গম ও বিভিন্ন জাতের ধান সহ দানাদার খাদ্য উৎপাদন পৌনে ৪কোটি টনের কাছাকাছি বলে জানা গেছে। বর্তমানে সারা দেশে আবাদকৃত মোট ধানের প্রায় ৮০ভাগই ব্রি’র বিজ্ঞানীদের উদ্ভাবিত উফশী জাতের ধান। উৎপাদিত ধানেরও প্রায় ৮৫ভাগই ব্রি উদ্ভাবিত বিভিন্ন জাতের ধান।
যা দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে দিয়েছে। তবে কৃষক পর্যায়ে ধানের ন্যায্য দর নিশ্চিত করা সহ বিএডিসি থেকে উন্নত বীজ সরবারহ এবং সেচকাজে ডিজেলে ভর্তুকি প্রদান করলে আগামী কয়েক বছরে দেশে দানাদার খাদ্য ফসলের উৎপাদন প্রায় ৫কোটি টনে উন্নীত করা সম্ভব বলে মনে করছেন মাঠ পর্যায়ের কৃষিবীদগণ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: বোরো

২২ ডিসেম্বর, ২০২২
৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২২
২৪ জানুয়ারি, ২০২২
২৩ জানুয়ারি, ২০২২

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ