শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
কালীপদ দাস : বারাণসী ভ্রমণের কথা বলার আগে এই পৌরাণিক শহর সম্পর্কে সংক্ষেপে একটু জেনে নেওয়া ভাল। তাতে ভ্রমণের আনন্দ ও আকর্ষণ অনেকটাই বেড়ে যায়। বারাণসীর পূর্ব নাম কাশি। কাশা থেকে এই নামের উৎপত্তি, যার অর্থ ঔজ্জ্বল্য বা উজ্জ্বলতা। অনেক পরে নাম হয় বারাণসী। গঙ্গার দুটি ধারা দুটি শাখা-নদী, বরুণা ও অসি মিলিয়ে এই জায়গার নামকরণ হয় বরুণা-অসি বা বারাণসী। কথায় বলে ‘বার্ধক্যে বারাণসী’। কিন্তু নানা কারণেই বারাণসী আজ আর শুধু প্রবীণদের জন্যই নয়, সব বয়সের মানুষের কাছেই বারাণসীর আকর্ষণ সমান। বারণসী হল হিন্দুদের কাছে অন্যতম একটি তীর্থক্ষেত্র। এখানকার পবিত্র নদীতে অবগাহন করলে সব পাপ ক্ষয় হয় এবং দেহ শুদ্ধ হয়। এই শহরকে বলা হয় ভারতের সাংস্কৃতিক রাজধানী। কোনও কোনও ঐতিহাসিক এই শহরকে প্রাচীনতম বিশ্বের জীবন্ত শহর বলেও উল্লেখ করেছেন। ধর্ম ও সংস্কৃতির এক আশ্চর্য মেল-বন্ধন ঘটেছে এই শহরে। আধ্যাত্মবাদ, যোগ, সঙ্গীত, নৃত্য, চারু ও কারু শিল্প, দর্শন, ভাষা-সাহিত্য এবং অবশ্যই পুরাণ ও ইতিহাস হল এই প্রাচীনতম শহরের অহঙ্কার। এই শহরে বসেই গোস্বামী তুলসীদাস লিখেছিলেন তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘তুলসীমানস’। এই শহরেই জন্মেছেন খ্যাতনামা সানাই বাদক বিসমিল্লাহ খাঁ সাহেব, সাহিত্যিক প্রেমচন্দ, নৃত্য শিল্পী বিরজু মহারাজ, বিশ্ব বিখ্যাত সেতার বাদক পন্ডিত রবিশঙ্কর প্রমুখেরা। শোনা যায় এই শহরে বসেই মহর্ষি পতঞ্জলি আয়ুর্বেদে নিয়ে বিরল গবেষণা করেছিলেন।
এই শহরেই প্রথিতযশা পন্ডিত মদন মোহন মালব্য স্থাপন করেছেন এশিয়ার সবচেয়ে বড় বিশ্ববিদ্যালয়-ভি.এইচ.ইউ অর্থাৎ বেনারস হিন্দু ইউনিভার্সটি।
কথিত আছে, এই শহরে মৃত্যু বরণ করলে নাকি মোক্ষ বা মুক্তি লাভ হয় অর্থাৎ তাকে আর মনুষ্য জন্ম নিতে হয় না। একটা সময় ছিল যখন রাজা-মহারাজা, বড় বড় জমিদার এবং দেশের ধনাঢ্যরা অনেকেই মৃত্যু কালে বারাণসীতে এসে তাদের বাকি জীবনটা কাটাতে চাইতেন, যাতে এখানেই তারা শেষ নি:শ্বাস ত্যাগ করতে পারেন। এই শহরের অন্যতম আকর্ষণ হল এখানকার ঘাট এবং ঘাটের ধারে ধারে রাজা-মহারাজা, জমিদারদের বিশাল-বিশাল সুৃরম্য প্রাসাদ। এই প্রসাদগুলোর গঠন শৈলী দু’চোখ ভরে দেখার মত।
বারাণসীর সেরা এই পার্বণ হল দেব-দীপাবলী, যা পালিত হয় দেওয়ালির ১৫ দিন পর, অর্থাৎ পূর্ণিমার দিন রাতে। প্রায় ৪-৫ কিলোমিটর পর্যন্ত যত ঘাট আছে, লক্ষ লক্ষ প্রদীপ ও আলো দিয়ে তার পুরোটা এদিন সাজানো হবে। এই স্বর্গীয় দৃশ্য চাক্ষুষ করতে ভারত তথা বহির্ভারত থেকে লক্ষ লক্ষ মানুষ বারাণসীতে এসে জড়ো হন। এদিন সন্ধ্যে থেকে নৌকায় চড়ে এই বিরল ও অপূর্ব দৃশ্য প্রত্যক্ষ করা সৌভাগ্যের কথা। ফলে নৌকার ভাড়াও এদিন বেড়ে যায় স্বাভাবিকের চেয়ে অনেক গুণ। শেষে এমন অবস্থাও হয় যে দু’পাঁচ হাজার টাকা ভাড়া দিয়েও একটা নৌকা মেলে না এদিন। একটা নৌকা ভাড়া করে দেব-দীপাবলীর এই নয়নাভিরাম ও পবিত্র দৃশ্য দু’চোখ ভরে উপভোগ করা এক বিরল অভিজ্ঞতা। । সেক্ষেত্রে কিন্তু
=২=
২-৩ দিন আগে গিয়েই একটা নৌকা ভাড়া করে নেওয়া দরকার । কোনও দালালের খপ্পরে না পড়ে নিজেরাই একটু দরদাম করে একটা নৌকা ভাড়া নেওয়াই ভাল।
এবার আসি ঘোরার প্রসঙ্গে। বারাণসী ঘোরার জন্য ৫ থেকে ৭ দিনই যথেষ্ট। এ বছর আপনি যেতে যেতে হয়তো ঠান্ডা পড়ে যাবে তাই পাতলা শীতের পোষাক সঙ্গে নেওয়া দরকার। আর একটা কথা, জরুরি পরিস্থিতির জন্য আপনার টিমের সদস্যদের সবার কাছেই অন্তত ৫০-১০০ টাকা, হোটেল বা অতিথি নিবাসের ঠিকানা এবং টিম-প্রধানের ফোন নম্বর দিয়ে রাখা দরকার।
প্রথম দিন বারাণসী পৌঁছে সকাল বেলাটা বিশ্রাম নিন। খাওয়া-দাওয়া সেরে দুপুরের পর রিক্সা নিয়ে প্রথমে যান দুর্গা মন্দির। রিক্সার ব্যাপারে বলি, ওখানে বাংলাদেশ বা পশ্চিমবঙ্গের বহু বাঙালি রিক্সাওয়ালা দেখতে পাবেন। পারলে তাদের কাউকে খুঁজে নিন। বার্তালাপেও সুবিধা হবে এবং ঠকার ভয়ও খুব একটা থাকবে না। বাঙালিদের তারা একটু সমীহই করে। যাইহোক, দুর্গা মন্দিরে আসি। এখানে বানরের বড় উৎপাত। তাই ঢোকার সময় চশমা, গগ্লস, হাত ব্যাগ সাবধানে রাখবেন। এগুলি ওদের খুব পছন্দ। বাকি আর কোনও ভয় নেই। (অসমাপ্ত)
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।