Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

অর্থ লোপাটের কারখানা ভবদহ

এবারও যশোর-খুলনার ২শ’ গ্রামে পানিবদ্ধতার আশঙ্কা, বরাদ্দ হয় কাজ হয় না

| প্রকাশের সময় : ২৯ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মিজানুর রহমান তোতা : যশোর ও খুলনার বিরাট এলাকার অভিশাপ ভবদহ সুইস গেট। যুগ যুগ ধরে অভিশাপ মোচনে দফায় দফায় সরকারী অর্থ বরাদ্দ হয়েছে কিন্তু কাজ হয়নি। বর্ষা এলেই প্রায় ২শ’ গ্রামের মানুষ হয় পানিবন্দী, আর আশীর্বাদ হয় পানি উন্নয়ন বোর্ডের এক শ্রেণীর কর্মকর্তা ও সংশিষ্ট ঠিকাদারদের। ভবদহ সমস্যার সমাধানের নামে প্রজেক্টের পর প্রজেক্ট গ্রহণ করে যুগ যুগ ধরে কোটি কোটি টাকা শুধু লুটপাটই হয়েছে, ন্যুনতম সমাধান হয়নি-এ অভিযোগ ক্ষতিগ্রস্ত এলাকার সাধারণ মানুষের। ভবদহ পানি নিষ্কাশন সংগ্রাম কমিটির প্রধান উপদেষ্টা বিশিষ্ট রাজৗনতিক নেতা ইকবাল কবীর জাহিদ, আহ্বায়ক রনজিত বাওয়ালী, প্রধান সমন্বয় অধ্যাপক বৈকন্ঠ বিহারী রায়, গাজী আব্দুল হামিদ, এ্যাডভোকেট আবুবকর সিদ্দিক এবং এলাকার বিভিন্ন শ্রেলী ও পেশার মানুষ অভিযোগ করেছেন, বিল কপালিয়ায় টিআরএম প্রকল্পবিরোধী চক্র বর্য়াকে পুজি করে আবার তৎপর, মনিরামপুরের সংসদ সদস্যের প্রত্যক্ষ তদারকিতে অর্থ বরাদ্দ এনে বিশেষ ঠিকাদারকে দিয়ে নদী খনন করা হচ্ছে নামকাওয়াস্তে। যার কোন স্বচ্ছতা নেই। তাদর আশংকা এবারও  ২ শতাধিক গ্রাম জনপদ ডুবে যাবে। দেখা দেবে ভয়াবহ বিপর্যয়। একাধিক সুত্র জানায়, ভবদহ সমস্যা জিইয়ে রেখে ভবদহ সরকারী অর্থ লোপাটের কারখানায় পরিণত হয়েছে। প্রায় প্রতিবছর বর্ষা মৌসুমে বিরাট এলাকা পানিবদ্ধ হয়ে রাস্তাঘাট, ফসলাদি, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ঘরবাড়ি পানিতে ডুবে যায়। ঘটে দীর্ঘসময় মানবিক বিপর্যয়। অবশ্য সেনাবাহিনীর তত্ত¡াবধানে একবার বর্য়ায় ড্রেজিংসহ পানি নিস্কাশন কাজ করায় পানিবদ্ধতার নিরসন হয়। পরবর্তীতে ধারাবাহিকতা রক্ষা করেনি পানি উন্নয়ন বোর্ড। যার জন্য যশোর-খুলনার ২শ’ গ্রামে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হয়। এবারও আশংকা ঘনীভুত হচ্ছে। স্থানীয়দের দাবি, জরুরি ব্যবস্থা নেওয়া না হলে পানিবদ্ধতার আশংকা থাকবে। সুত্র জানায়, পানি উন্নয়ন বোর্ড টিআরএম (টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্ট) চালু করেনি। তাছাড়া সর্বশেষ প্রায় ১ কোটি টাকা বরাদ্দে সুইস গেটের মুখে ৮ কিলোমিটার খনন কাজ হচ্ছে নামকাওয়াস্তে।
যশোর ও খুলনার পানি উন্নয়ন বোর্ড বরাবরই লুটপাটের অভিযোগের দায় এড়িয়ে যায় কৌশলে। যখনই বক্তব্য চাওয়া হয় তখনই বলা হয় ওইসময় তো অমুক কর্মকর্তা ছিলেন আমার জানা নেই। সর্বশেষ ভবদহে শ্রী নদী খননে থোক বরাদ্দকৃত অর্থ লোপাটের সব পথ করা হয়েছে ইতোমধ্যেই-এ অভিযোগ এলাকার লোকজনের। এ ব্যাপারে বক্তব্য নেওয়ার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডের যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামীকে কয়েকদফা মোবাইল করা হয়। কিন্তু তিনি মোবাইল ধরেননি। কাগুজে সমীক্ষা ও সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থ যথাযথ ব্যয় না হওয়ার কারণে প্রজেক্ট শেষ হয় কিন্তু কাজ হয় না। এভাবেই চলছে বছরের পর বছর। পাউবো’র একশ্রেণীর কর্মকর্তা ও ঠিকাদাররা কিছুটা কাজ দেখিয়ে বিল তৈরী এবং অর্থ উত্তোলন করে থাকে এটি ওপেন সিক্রেট। ভবদহের ক্ষেত্রে জনসাধারণের মতামত, পাউবো’র কোন স্বচ্ছতা ও জবাবদিহীতা নেই। এমনকি রাজনৈতিক বিভাজন থাকলেও পানি উন্নয়ন বোর্ডের ঠিকাদারী কাজের ক্ষেত্রে মুষ্টিমেয় ঠিকাদার অভিন্ন। এবার সরাসরি এক এমপি পুত্র বেনামে খনন করছে।
তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, সবুজ বিপ্লবের ঘোষণা দিয়ে ১৯৬০ সালের দিকে যশোরের সদর, মনিরামপুর, কেশবপুর, অভয়নগর, খুলনার ফুলতলা ও ডুমুরিয়া উপজেলার মধ্যবর্তী ভবদহ নামকস্থানে শ্রীনদীর উপর নির্মাণ করা হয় একটি বড় ¯ুইস গেট। একপর্যায়ে যশোর ও খুলনার মধ্যবর্তী প্রায় ২শ’ গ্রামের ৮ লক্ষাধিক মানুষের মরণ ফাঁদে পরিণত হয় ভবদহ সুইস গেট। গেটটিতে মোট কপাট রয়েছে ৩৬টি। গেট সংলগ্ন শ্রীনদী, টেকা ও মুক্তেশ্বরী এই ৩টি নদী রয়েছে। ওই সুইস গেট দিয়ে বিল কেদারিয়া, বিল বকর ও বিল আড়পাড়াসহ যশোর ও খুলনা এলাকার  মোট ২৭টি বিলের পানি নিষ্কাশন বন্ধ হয়ে যায়। প্রতিটি বর্ষা মৌসুমে বিল তীরবর্তী আশেপাশের শত শত গ্রামে পানিবদ্ধতার সৃষ্টি হতে থাকে। ভবদহ সুইস গেট চিহ্নিত হয় যশোর ও খুলনার বিরাট এলাকার দুঃখ হিসেবে। পানিবদ্ধ এলাকার সাধারণ মানুষের জোরদার আন্দোলন শুরু হলে ১৯৯৪ সালে এশীয় উন্নয়ন ব্যাংকের (এডিবি) আর্থিক ও কারিগরী সহায়তায় যশোর-খুলনা পানি নিষ্কাশন প্রকল্প (কেজিডিআরপি) গ্রহণ করা হয়। ব্যয় নির্ধারণ করা হয় ২৫৭ কোটি টাকা। সমুদয় অর্থ ব্যয় হওয়ার পরও পানিবদ্ধতার নিরসন হয় না। অভিযোগ ওই অর্থের বড় অংশই লুটপাট হয়। পর্যায়ক্রমে ২০০৭ সালে ৫৯ কোটি ৫৯ লাখ টাকা, ২০১০ সালে ৭৩ কোটি ৬০ লাখ টাকা, ২০১৪ সালে ৫ কোটি এভাবে দফায় দফায় নদী খনন ও টিআরএমসহ ছোট ছোট প্রজেক্টে কোটি কোটি টাকা ব্যয় দেখানো হয়। সর্বশেষ ভবদহ গেটের পাশে শ্রীনদী ড্রেজিংএ হচ্ছে যা লোক  দেখিয়ে অর্থ লোপাটের ব্যবস্থা প্রায় সম্পন্ন।
পানি বিশেষজ্ঞ, পর্যবেক্ষক, সংগ্রাম কমিটিসহ একাধিক সুত্র জানায়, উজানের সাথে সংযোগ স্থাপন বিশেষ করে মুক্তেশ্বরী নদীর সঙ্গে ভৈরব নদের সংযোগ এবং বিল কপালিয়াসহ বিলে টাইডাল রিভার ম্যানেজমেন্টে (টিআরএম) চালু করে জোয়ার আধার সৃষ্টি ও শ্রীনদী, হরিহর নদী, টেকা নদী, মুক্তেশ্বরী নদীসহ তলদেশ ভরাট হওয়া নদীর বেড থেকে মাটি কেটে পাড় বাঁধানোর ব্যবস্থা ভবদহ সমস্যার স্থায়ী সমাধান হতে পারে।



 

Show all comments
  • Engr Krishna Pada Mallick ৩০ জুন, ২০১৭, ১০:২৮ এএম says : 0
    Actually the most people working in Bangladesh Water Development Board(BWDB) are thieves.You can not do good works instead of giving money to them. In Sirajgonj Hard Point I had a Project I know everything.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: অর্থ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ