পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
মহাসচিব, আমীর খসরু রক্তাক্ত আহত ১০ : রাঙ্গামাটিতে ত্রাণ টিমের যাওয়া হলো না : সর্বত্র নিন্দা ধিক্কার : ‘সরকারি মদদেই এ সন্ত্রাসী হামলা’
শফিউল আলম ও রফিকুল ইসলাম সেলিম : গাড়ি বহরে সন্ত্রাসী হামলায় রক্তাক্ত হয়েছেন বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী। আহত হয়েছেন কেন্দ্রীয় ৬ নেতাসহ ১০ জন। ভয়াবহ পাহাড় ধসে বিধস্ত রাঙ্গামাটিতে হতাহত পরিবারের পাশে দাঁড়ানো এবং দুর্গতদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ করতে যাওয়ার পথে গতকাল (রোববার) সকাল সাড়ে ১০টায় চট্টগ্রামের রাঙ্গুনিয়ায় এ আচমকা হামলার ঘটনা ঘটে। মহাসচিবসহ নেতৃবৃন্দ চট্টগ্রাম শাহ আমানত আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছেই সরাসরি সড়কপথে রাঙ্গামাটি রওনা দেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় রিলিফ টিমের গাড়ি বহরের সামনে থাকা মহাসচিবের গাড়িটি ইছাখালী গোচরা বাজারের কাছে যেতেই সেখানে আগে থেকে প্রস্তুত থাকা ৩০-৩৫ জন যুবক লাঠিসোটা, ইট-পাটকেল, রাম দাসহ দেশী অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে। লাঠির আঘাতে মহাসচিবকে বহনকারী গাড়িটি তছনছ হয়ে যায়। এলোপাতাড়ি হামলার সময় গাড়ির কাচ ভেঙে রক্তাক্ত হয়ে আহত হন গাড়িতে থাকা মহাসচিব মির্জা ফখরুল, স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীসহ ৬ নেতা। এ ঘটনার আকস্মিকতায় নেতৃবৃন্দ অপ্রস্তুত এবং হতবাক হয়ে যান। মানবিক ত্রাণে যাওয়ার পথে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দের উপর সন্ত্রাসী দলের সশস্ত্র হামলার খবর ছড়িয়ে পড়লে বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রাম অঞ্চলের সর্বত্র সর্বস্তরের সচেতন সাধারণ মানুষের মাঝে তীব্র নিন্দা, ধিক্কার উচ্চারিত হচ্ছে। বিএনপি ও অঙ্গ-সহযোগী সংগঠনগুলো বিভিন্ন স্থানে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। ফেসবুকসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এর বিরুদ্ধে নিন্দা ও সমালোচনার ঝড় উঠেছে। বিশেষত মাহে রমজানে শান্ত এবং উপর্যুপরি দুর্যোগে বিধ্বস্ত চট্টগ্রামে রাজনৈতিক মদদে এ ধরনের হিংসাত্মক হামলার ঘটনায় মানুষের মাঝে ক্ষোভ-অসন্তোষ প্রকাশ পাচ্ছে।
হামলার পরপর মহাসচিবসহ নেতৃবৃন্দের প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে তারা এ অবস্থায় ‘জীবনের নিরাপত্তাহীনতা’র কারণ উল্লেখ করে কাপ্তাই সড়ক হয়ে রাঙ্গামাটি যাওয়ার কর্মসূচি বাদ দিয়ে চট্টগ্রামে ফিরে আসতে বাধ্য হন। দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক জরুরী সংবাদ সম্মেলনে মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর দুর্গত মানুষদের ত্রাণ দেয়ার মতো মানবিক একটি কর্মসূচিতে যাওয়ার পথে এহেন হামলাকে অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক উল্লেখ করেন। তিনি এই হামলার জন্য সরকারী দলের সন্ত্রাসীদের দায়ী করে বলেন, ‘সরকারী মদদেই এ সন্ত্রাসী হামলা হয়েছে। এ হামলা গণতন্ত্রের ওপর হামলা। এ ঘটনা প্রমাণ করে সরকার ফ্যাসিস্ট কায়দায় দেশ চালাচ্ছে’।
নজিরবিহীন পাহাড় ধসে চরম মানবিক বিপর্যয়ের শিকার রাঙ্গামাটির দুর্গত মানুষের মাঝে ত্রাণ সামগ্রী বিতরণের জন্য যাওয়ার পথে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরের গাড়ি বহরে হামলার ঘটনায় বিক্ষুদ্ধ হয়ে উঠে বিএনপির নেতাকর্মীরা। এই ঘটনার প্রতিবাদে নগরীর জামালখানসহ বিভিন্ন এলাকায় তাৎক্ষণিক বিক্ষোভ মিছিল করেছে বিএনপি ও তাদের সহযোগী সংগঠনের নেতাকর্মীরা। মাহে রমজানের দিনে বিএনপির শীর্ষ নেতাদের উপর সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় বন্দরনগরীসহ বৃহত্তর চট্টগ্রামে সর্বস্তরের মানুষের মাঝে তীব্র ক্ষোভ অসন্তোষ ও ঘৃণার সৃষ্টি হয়েছে। এই হামলার খবর ছড়িয়ে পড়ার পর লোকজনকে প্রকাশ্যে ক্ষোভ প্রকাশ করতে দেখা যায়। ন্যাক্কারজনক এই হামলার ঘটনায় হতবাক রাঙ্গুনিয়ার সাধারণ মানুষও।
হামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ভাঙা কাচের আঘাতে আহত হয়েছেন। তার বাম হতে লাঠির আঘাত লেগেছে। আর দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য সাবেক মন্ত্রী আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরীও আহত হয়ে রক্তাক্ত হয়েছেন। মাথা ও শরীরের বিভিন্ন অংশে লাঠি ও ইটের আঘাত পান দলের উপদেষ্টা পরিষদের সদস্য মেজর জেনারেল অব. রুহুল আলম চৌধুরী, চট্টগ্রাম বিভাগীয় সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান শামীম, কেন্দ্রীয় নেতা ডা. ফাওয়াজ হোসেন শুভ। তাদের সবাইকে চট্টগ্রামে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়।
যেভাবে হামলা-
পূর্ব ঘোষণা অনুযায়ী বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের এ টিম ত্রাণ সামগ্রী বিতরণ করতে চট্টগ্রাম থেকে রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে রওনা হন। মির্জা ফখরুলসহ কয়েকজন কেন্দ্রীয় নেতা সকালের ফ্লাইটে ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম আসেন। এরপর তারা সবাই সড়কপথে রাঙ্গামাটির উদ্দেশ্যে রওনা হন। মির্জা ফখরুলের গাড়িতে ছিলেন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, রুহুল আলম চৌধুরীসহ ৬ জন। মহাসচিব সামনের আসনে ছিলেন। মহাসচিবের গাড়ির পেছনে আরও অন্তত ১০টি গাড়িতে বিএনপির মহানগর জেলা পর্যায়ের নেতারা ছিলেন। চট্টগ্রামের সাথে সরাসরি রাঙ্গামাটি সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিএনপি নেতারা চট্টগ্রাম থেকে রাঙ্গুনিয়া হয়ে কাপ্তাই এবং সেখান থেকে নদীপথে রাঙ্গামাটি যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেন।
বিএনপির নেতারা জানান, গাড়ির বহর ইছাখালী পার হওয়ার সময় ভারি বর্ষণ ছিল। এ অবস্থায় একদল সন্ত্রাসী সড়কের উপর তাদের গাড়িবহরে অতর্কিতে লাঠিসোঁটা, রামদা, ধারালো অস্ত্রসহ ঝাঁপিয়ে পড়ে। মহাসচিবের গাড়ির চারিদিক ঘিরে ব্যাপক হামলা করে তারা। গাড়ির সব কাচ ভেঙ্গে চুরমার করে দিয়ে তারা গাড়িতে থাকা নেতাদের আঘাতের পর আঘাত করে। একই সাথে পেছনের আরও একটি গাড়িতে হামলা হয়। ব্যাপক ভাঙচুর আর নেতাদের রক্তাক্ত আহত করে হামলাকারীরা নিরাপদে সরে যায়।
বিএনপি নেতারা জানান, হামলার উদ্দেশে ওইসব সন্ত্রাসীরা আগে থেকেই রাস্তায় অবস্থান করছিল, এ হামলা পূর্বপরিকল্পিত। মির্জা ফখরুলের গাড়িতে হামলার খবরে বহরের সামনে ও পেছনে থাকা গাড়িতে থাকা নেতাকর্মীরা মহাসচিবকে বাঁচাতে এগিয়ে আসতেই হামলাকারীরা সরে পড়ে। সেখানে নেতারা মহাসচিব ও আহত নেতাদের প্রাথমিক সেবা দিয়ে বহরের অন্যগাড়িতে তুলে নেন। আবারও হামলা হতে পারে এমন আশঙ্কায় স্থানীয় লোকজন ও সেখানকার বিএনপি নেতারা তাদের চট্টগ্রামে ফিরে যাওয়ার পরামর্শ দেন। মুহূর্তে এই হামলার খবর চট্টগ্রাম ও রাঙ্গামাটিতে ছড়িয়ে পড়ে। মির্জা ফখরুল রাঙ্গামাটি জেলা বিএনপির নেতাদের ঘটনা জানিয়ে তারা সেখানে যেতে পারছেন না বলে জানিয়ে দেন এবং পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি অনুযায়ী ত্রাণ সামগ্রী বিরতণ করতে বলেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।