Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

লন্ডনে ভস্মীভূত ভবনজুড়ে সারি সারি লাশ

| প্রকাশের সময় : ১৬ জুন, ২০১৭, ১:০৩ এএম


মৃতের সংখ্যা বেড়ে ১৭ : ৭৮ জন হাসপাতালে : ঝুঁকির কারণে উদ্ধার তৎপরতায় ধীরগতি
ইনকিলাব ডেস্ক : ১৭ জনের নিশ্চিত মৃত্যুক সঙ্গী করে এখন নতুন লাশের অপেক্ষায় রয়েছে লন্ডন। সূত্রপাতের ৩৬ ঘণ্টা পরও আগুন জ্বলতে দেখা গেছে গ্রেনফেল টাওয়ার নামের সেই ভবনে। ধসে না পড়লেও পুড়ে ছারখার হয়ে গেছে ভবনটি। সেখান থেকে জীবিত কাউকে উদ্ধারের আশা ছেড়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। প্রত্যক্ষদর্শীদের বরাত দিয়ে আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো শতাধিক মৃত্যুর আশঙ্কা প্রকাশ করেছে। তারা জানিয়েছে, ভবনজুড়ে সারি সারি ভস্মীভূত লাশ পড়ে থাকতে দেখেছেন প্রত্যক্ষদর্শীরা।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, ঝুঁকিপূর্ণ হওয়াতে এখনও পরিপূর্ণ উদ্ধার অভিযান চালানো যায়নি। তাই লাশের সঠিক সংখ্যাও নিরুপণ করা যায়নি। ১৭ জনের নিশ্চিত প্রাণহানির বাইরেও নিখোঁজ রয়েছেন অনেকে। হন্যে হয়ে তাদের খুঁজছেন স্বজনরা।
বুধবার রাতে পশ্চিম লন্ডনের গ্রেনফেল টাওয়ারে আগুন লাগে। রাত ১টা ১৫ এর দিকে আগুনের সূত্রপাত হয় বলে ধারণা করা হচ্ছে। আগুনের তাÐবে ভবনটি একদম ছারখার হয়ে যাওয়ায় ১৭ প্রাণহানির পাশাপাশি শতাধিক মানুষের প্রাণহানির আশঙ্কা করা হচ্ছে। আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমের সবশেষ খবর অনুযায়ী ৭৮ জনকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। তাদের মধ্যে ১৮ জনের অবস্থা আশঙ্কাজনক। এ ঘটনায় শোক জানিয়েছেন ব্রিটেনের রানী দ্বিতীয় এলিজাবেথ।
১৯৭৪ সালে নির্মিত ভবনটিতে ১২০টি ফ্ল্যাট ছিলো। বিভিন্ন ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ওই ভবনে ৪০০ থেকে ৬০০ মানুষের বসবাসের কথা জানিয়েছে। তবে আগুন লাগার পর ঠিক কতজন বের হতে পেরেছেন বা কতজন আটকা পড়েছেন সে বিষয়ে নিশ্চিতভাবে কিছু জানা যায়নি। ভবনের ভেতরে বহু মানুষের জিম্মি হয়ে থাকার খবর জানিয়েছিল প্রত্যক্ষদর্শীরা। একটা পর্যায়ে ঘরের ভেতরে আটকা পড়ে তারা জানালা দিয়ে জীবনের আর্তি জানাতে শুরু করে। তবে এখন আর কোনও প্রাণের আর্তি নেই ওই ভবনে।
সংবাদমাধ্যম ডেইলিং মেইলের বিশেষ ব্যবস্থায় নেওয়া ছবিতে দেখা গেছে, বিতর্কিত বৃষ্টিপ্রতিরোধী প্রলেপে মোড়ানো ভবনটিতে এখন সারি সারি ভস্মীভূত বস্তু। পুড়ে যাওয়া আসবাবগুলোর এমন অবস্থা যে এখন বোঝার উপায় নেই কোনটা কী জিনিস। ভবনের বিভিন্ন কক্ষে ভস্মীভূত জানালা, গলে যাওয়া টেবিল আর বিভিন্ন আসবাবের সমাহার। দেখা গেছে অর্ধেক কাপড়ে ভর্তি ওয়াশিংমেশিন, যেন ভবনের বাসিন্দাদের জীবনের আর্তির এক আধমরা সাক্ষী।
ভবনের আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত রয়েছে ৪০টি ইউনিট ও ২০০ দমকলকর্মী। ডেইলি মেইল জানিয়েছে, ভবনের উপরের তলাগুলোতে উদ্ধারকাজ শেষ হয়েছে। বুধবার সকাল পর্যন্তও ভবনে জীবিত মানুষ ছিলেন। উদ্ধার কর্তৃপক্ষের ধারণা, তাদের কেউ এখন বেঁচে নেই। ফায়ার সার্ভিসের দাবি অনুযায়ী, তারা এখনও জানেন না যে ভেতরে কতজন মৃত রয়েছেন।
ভঙ্গুর ও ভস্ম হয়ে যাওয়া ভবনে স্বতস্ফূর্ত উদ্ধার অভিযানকে বিপদজনক মনে করছে সে দেশের ফায়ার সার্ভিস। লন্ডন ফায়ার সার্ভিসের প্রধান ড্যানি কটন স্কাই নিউজকে বলেন, ‘দুর্ভাগ্যবশত আমরা এখন কাউকে জীবিত উদ্ধার করার আশা করতে পারছি না। এরকম অগ্নিকাÐে কেউ বেঁচে গেলে সেটা অলৌকিক ব্যাপার হবে।’ অবশ্য কারও জীবিত থাকার সম্ভাবনা না থাকলেও ‘মিরাকল’ কিছু ঘটার আশায় ডগ স্কোয়াড পাঠানো হয়েছে ভবনের অভ্যন্তরে।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, উদ্ধারকাজ এখনও শেষ হয়নি। ভবনের অভ্যন্তরে আরও তৎপরতা চালাবেন তারা। পৃথক এক সাক্ষাতকারে লন্ডন ফায়ার সার্ভিসের প্রধান কটন বলেন, এই মুহূর্তে ভবনের কিছু স্থান অনিরাপদ। গতরাতে ভবনের উচতলায় আমাদের দমকলকর্মীরা উদ্ধার অভিযান চালিয়েছে। সেখানে থেকে প্রাথমিক তল্লাশি করা হয়েছে।’ তিনি বলেন, ‘যদিও আমরা সেখানে গিয়েছি কিন্তু পুরোপুরি উদ্ধার অভিযান চালানো এখনও সম্ভব হয়নি। ভবনটি পুরোপুরো নিরাপদ নিশ্চিত না করা পর্যন্ত আমি দমকলকর্মীদের ঝুঁকিতে ফেলতে চাই না।’
এবিসি নিউজের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, মঙ্গলবারের অগ্নিকাÐের ১৮ মাস আগেই বসবাসরতদের আগুনের ঝুঁকির ব্যাপারে সাবধান করে দেওয়া হয়েছিল। ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম দ্য গার্ডিয়ানের এক প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, ২০১২ সালে ভবনটির অগ্নি নিরাপত্তা নিয়ে একটি রিপোর্ট তৈরি করেছিলো গ্রেনফেল অ্যাকশন গ্রুপ। রিপোর্টে বলা হয়, বেসমেন্ট, লিফটের মোটর রুপ ও গ্রাউন্ড ফ্লোরের ইলেক্ট্রিকাল রুমের অগ্নি নির্বাপণ যন্ত্র এক বছরেরও বেশি পুরাতন ছিলো। আর ২০০৯ সালের পর থেকে সেগুলো পরীক্ষাও করা হয়নি বলে দাবি করে গ্রুপটি। সেসময় তারা আরও জানায় যে টেনান্ট ম্যানেজমেন্ট অর্গানাইজেশন বাড়ি নির্মাণের সময় রাবিশ ব্যবহারের অনুমতি দেয়।
গ্রেনফেল অ্যাকশন গ্রুপ নিজেদেরকে ল্যাঙ্কাস্টার ওয়েস্ট কমিউনিটর সেবায় নিয়োজিত বলে দাবি করে। ২০১০ সালে গঠিত এই সংস্থাটি এর আগে ল্যাঙ্কাস্টার গ্রিনের নির্মাণের বিরোধীতাও করেছিলো। এবিসিরি প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রেনফেল টাওয়ারের বাসিন্দাদের কাছে এটা পরিষ্কার ছিল যে দায়িত্বে অবহেলা ও ব্যক্তিগত শত্রুতা যেকোনও সময় বিপদ ডেকে আনতে পারে। আর জমির মালিকরাও টাওয়ারটিতে প্রবেশ ও বাহিরপথে নিরাপত্তা প্রদান করতে ব্যর্থ হয়েছিল। সূত্র : ওয়েবসাইট।



 

Show all comments
  • আহমদ করিম ১৬ জুন, ২০১৭, ৩:৪৫ এএম says : 0
    সকল মুসলিম নর নারীকে আল্লাহ বেহেস্তে নসীব করুক।আমিন।আর যারা অন্য ধর্মালম্বী পুড়ে মারা গেছে তাদের ব্যাপারে আল্লাহ ভাল জানেন।
    Total Reply(0) Reply
  • ১৬ জুন, ২০১৭, ৪:০৮ এএম says : 0
    আমাদের দেশও এরকম হাজারও ভবন রয়েছে যেগুলো অনিরাপদ অবস্থায় রয়েছে সেগুলো যে কোন দুর্ঘনা এরাতে পদক্ষেপ নেওয়া উচিত।
    Total Reply(0) Reply
  • Obaydulla ১৬ জুন, ২০১৭, ৩:৪৭ পিএম says : 0
    Allah rabbul alamin sobay ka maf kore Jannat nosib kore deo
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: লন্ডন


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ