শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
সাহিদা সাম্য লীনা : আজ বীথি বাড়িতে একা। ওর বাবা-মা, ছোট ভাই -বোন সবাই বেড়াতে গেছে। বীথিকে অনেক বলার পরও বীথি যায়নি। ওর নাকি এখন বেড়াতে মন চাচ্ছেনা। কী আর করা। অগত্যা ওরাই চলে গেল বীথিকে বাসায় একা রেখে। বীথি বারান্দায় এসে বসলো। হঠাৎ ঝিম ঝিম করে বৃষ্টি এলো। বীথি উঠে দাঁড়িয়ে বারান্দার গ্রিলের ফাঁকে হাত বের করে বৃষ্টিকে ছুঁয়ে দিল। বৃষ্টিতে ওর হাত ভিজছে। বীথি মজা পাচ্ছে। এভাবে অনেকক্ষণ হলো। একটু পর হাতটা তোয়ালেতে মুছে চা আনতে গেল। বারান্দায় বসে বীথি চা খাচ্ছে আর বৃষ্টির খেলা দেখছে।
চৈত্র মাস হওয়াতে সেই বৃষ্টির সাথে দমকা হাওয়া। বীথির ভীষণ ভালো লাগছে। চায়ে চুমুক আর বৃষ্টি।উফ! এই বৃষ্টিই একজনকে মনে করিয়ে দিল বীথিকে। বীথি ভাবলো এমন দিনে এই সময়ে রুহান থাকলে ভালোই হতো। রুহানের কথা মনে হতেই বীথি রুমে গিয়ে ড্রয়ার থেকে রুহানের ছবিটা নিয়ে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে শুল। এভাবে অনেকক্ষণ তাকিয়ে আছে ছবির দিকে। তখন মনে হলো কেউ যেন ওর পিঠে হাত রাখছে। বীথি ঘুরে তাকাতেই দেখে রুহান একটা গোলাপ হাতে নিয়ে দাঁড়িয়ে। ওকে ফিরতে দেখেই বীথির হাতে ফুলটা দিল আর বললো আই লাভ ইউ। বীথির বিশ্বাস হচ্ছিলনা রুহান ওর সামনে। বীথি রুহানের গা টা ছুঁয়ে দেখলো। পরে নিজের গায়ে চিমটি কাটলো। রুহান বীথির কান্ড দেখে হাসলো। বীথি বললো হাসছ কেন? রুহান বললো তোমার কাজ দেখে হাসছি। আরে যাহ কী যে বলো। করবো না, যদি স্বপ্ন হয়। রুহান বলে ধূর পাগলী আমি সত্যি এসেছি। এই বলে রুহান বীথির এলোমেলো চুলগুলোতে সুন্দর করে হাত বুলিয়ে দিলো।
রুহান রুহান বলে বীথি লাফ দিয়ে উঠলো বিছানায় !!! বীথির বুক কাপছে। বিছানার আশে পাশে রুমে কেউ নেই। বীথির মনে হলো ও কখন ঘুমিয়ে গিয়েছিলো। স্বপ্ন দেখেছে এতক্ষণ। ছবিটা ওর বালিশের কাছে। হাতে নিল । ওর চোখে এবার পানি চলে এলো। বীথি কাঁদছে। পুরনো স্মৃতি মনে করে। গত বছর এই বৃষ্টিতে রুহানকে নিয়ে কত ঘুরে বেরিয়েছে রিকশার ফুট তুলে পর্দা টেনে। দুজন ভিজতো সবুজ গাছগাছালির মধ্যে গিয়ে। কী যে মজার দিন ছিলো। রুহানের সাথে বীথির সম্পর্কের কথা জেনে বীথির বাবা মা ওকে শাসন করে। রুহান শিক্ষিত ছেলে বটে কিন্তু ও গ্রামের ছেলে। পড়াশোনা পাশাপাশি রুহান একটা মোবাইল দোকানে পার্ট টাইম কাজ নেয়। এভাবে ওর হাত খরচ চালাতো। বীথির বাবা মা এমন পাত্রর কাছে মেয়ে বিয়ে দিবেনা বলে জানিয়ে দেয় । একদিন রুহানকে বাড়িতে ডেকে বলে। কিন্তু রুহানও নাছোড়বান্দা। রুহান বীথির বাবার মুখের সামনে দাঁড়িয়ে বলে আমি বীথিকে ভালবাসি। বীথিও আমাকে ভালবাসে। ওকে আমার সাথে আপনারা বিয়ে দিতেই হবে। তা না হলে আপনাদের মেয়ে কখনো সুখী হবেনা। আমি বীথির জন্য সব করতে প্রস্তুত। তখন বীথির বাবা বলে তাহলে আগামী এক বছরের মধ্যে তুমি বিশ লাখ টাকা ইনকাম করে দেখাতে হবে। তবেই বুজবো তুমি বীথির জন্য কী পার ? রুহান কথাটা শুনে প্রথমে কী বলবে চিন্তিত হ্য়। কিছুক্ষণ পর বলে ঠিক আছে আমি তাই করবো। এই বলে রুহান চলে যায়।
বীথি পরের দিন অনেক কষ্ট করে বাসা থেকে বের হয়ে রুহানের সাথে দেখা করে। রুহান বলে বীথি ভেবোনা। সব ঠিক হয়ে যাবে। আমার লেখাপড়াও শেষ। বিসি. এস. পরীক্ষাটা দিবার খুব ইচ্ছা ছিলো। যাক একবছর পরেই না হয় দিব। তুমি ভেবোনা। আমি একটা কিছু ভেবে তোমাকে জানাবো। সেই যে দেখা আর হয়নি ওদের। ওদিকে বীথির অনার্স ফাইনাল শুরু হলো। রুহান ফোনে একবার বলেছে মনোযোগ দিয়ে পড়াশোনা চালিয়ে যেতে। দেখা করা এখন প্রয়োজন নেই। দু মাস পর রুহান ফোন করে বীথিকে আবার। বলে আগামীকাল আমার ফ্লাইট। তুমি ভাল থেকো। পড়া বাদ দিবেনা। আমার জন্য ভাববেনা। আমার এক চাচার মাধ্যমে কাতার যাচ্ছি। একবছর পর কথা হবে দেখা হবে। সেই যে রুহানের সাথে ফোনে কথা হলো আর কোন যোগাযোগ নেই বীথির। আজ এক বছরের বেশী সময় পার হয়ে গেছে। রুহানের কোন খবর বীথি জানেনা। আজ বৃষ্টি রুহানের সাথে ওর সব স্মৃতি মনে করিয়ে দিলো। বীথি কাঁদতে লাগলো। রুহান তুমি কোথায়? কেমন আছ?
বাইরে বৃষ্টি নেই এখন। দুপুর গড়িয়ে বিকেল। রহিমা কাজের মেয়েটা এসে একটা ¯িøপ দিল বীথিকে । সেখানে লেখা ’ আমি রুহান। আপনার সাথে দেখা করতে চাই।’ ¯িøপটা বীথির বাবার কাছে লিখেছে রুহান। বিথী আচমকা রহিমার দিকে তাকিয়ে বলে ও কোথায়? রহিমা বলে আপু উনি নিচে ড্রয়িং রুমে । আমি বসতে বলেছি। রহিমা চলে গেল।
বিথী হাসবে না কাঁদবে বুজতে পারেনা। তার মানে রুহান এসেছে। ওর রুহান আজ এত দিন পর। বিথী দৌঁড়ে নিচে নামে ড্রয়িং রুমে রুহানের কাছে। সিঁড়িতে নেমে দেখে রুহান নিচের দিকে তাকিয়ে। কেমন মলিন হয়ে গেছে। আগের সেই রুহান যেন নেই।কেউ আসছে আওয়াজ শুনে রুহান তাকালো । দেখে বীথি। ওর স্বপ্নের রানি। দুজন দুজনের মুখোমুখি। দুজনের চোখেই পানি। বীথি রুহানের বুকে মাথা রাখে। দুজনের চোখের পানি দুজনেই মুছে দেয়। কথা বলে নীরবে দুজন । দীর্ঘদিনের না বলা সব কথা। রুহান বলে তোমার বাবাকে দেখছিনা। ¯িøপ পাঠিয়েছি। বীথি বলে হু রহিমা আমাকে দিয়েছে। বাবা মা আজ বাসায় নেই। এখন রুহান বলো এতোদিন তুমি কোথায় ছিলে? কী করেছ? রুহান বললো আমি কাতার গিয়েছি তোমাকে বলেছি। ওখানেই ছিলাম। চাচার সহযোগিতা পেয়েছি।সে অনেক কথা। তবে তোমার বাবার কথা রেখেছি আমি।
তোমাকে বিয়ে করতে হলে বিশ লাখ ইনকাম করে দেখাত হবে বলেছিল তোমার বাবা। আমি পঁচিশ লাখ টাকা ইনকাম করেছি। এরপর তোমার বাবা যদি আর কোন উৎস দাঁড় করায় বিয়ে না দিতে তুমি তখন কী করবে ? বীথি বলে না রুহান এমন করে বলোনা। তবে সেরকম যদি কিছু হয়ে যায় আমি তোমার হাত ধরে চলে যাব । তুমি যেখানে নাও। রুহান হাসে। ঠিক তো, বীথি মাথা নাড়ে। রুহান আলতো করে বীথির হাত দুটো ধরে বলে তুমি বড়লোকের মেয়ে। তোমার চলাফেরা আমার মতো হলেও তুমি অনেক কিছুতে অনাভ্যস্ত। আমি তোমাকে কষ্ট দিবোনা। আজ তুমি যেভাবে আছ সেভাবেই আমি তোমাকে রাখবো। বেশী বিত্তবৈভব হয়তো এখনি দিতে পারবনা। গ্রামে আমাদের যা আছে তা দিয়ে হয়তো একটা বাড়ি হয়ে যাবে। বীথি বলে আমার অত সব লাগবেনা। তুমি এবার বিসি.এস.টা দিবে।অনেক ভাল ছাত্র তুমি। একটা কিছু তো হবেই। এরপর দেখবে ভাল ভালো চাকরী তোমার পিছু নিবে। দুজনেই ওদের ভবিষ্যত ভেবে হেসে উঠে। ওদিকে আবার শুরু হয়েছে বৃষ্টি। একেবারে ঝুম বৃষ্টি । বীথি বৃষ্টির দিকে তাকিয়ে। রুহান বলে কী ভিজবে? চল সেই দিন গুলোর মতো আজো আমরা ভিজি । রুহান বীথিদের লনে নিয়ে আসে ওকে। গাছ,ফুল। সব ভিজে একাকার। রুহান বীথি দুজনে ভিজছে বৃষ্টির সাথে মিশে। এখন ওরা অন্য জগতে। বিকাল ছুঁয়েছে সন্ধ্যায়। এরপরো ওদের ভিজা শেষ হলোনা।
গাড়ি এসে ঢুকছে গেট পার হয়ে। বাগানে কাউকে দেখলো মনে হলো যেন। ড্রাইভারকে গাড়ি থামাতে বলে বীথির বাবা। গøাস সরিয়ে দেখলেন বীথি রুহানের সাথে । সেই ছেলেটি। ওদের এভাবে ভিজতে দেখে বীথির মা -বাবা ,ভাই অপলকে দেখছে। যেন এমন দৃশ্য কখনো ওরা দেখেনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।