Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের যাত্রা নির্বিঘ্নে ও নিরাপদ করতে হবে

| প্রকাশের সময় : ১৪ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ঈদে ঘরে ফেরায় দুভোর্গের চিরায়ত চিত্রে এবারো কোন পরিবর্তন নেই। যদিও এখনো ঈদের ছুটির আরো এক সপ্তাহের বেশী বাকি। এরই মধ্যে রাজধানীসহ সারাদেশের সড়ক-মহাসড়কের করুণ চিত্র বেরিয়ে আসছে। গত দুই দিনের বৃষ্টি ও দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় সর্বত্র মানুষের যে দুর্ভোগের চিত্র পাওয়া গেছে তাতে অতীতের যে কোন সময়ের চেয়ে খারাপ অবস্থা ধরা পড়েছে। ঢাকা ও চট্টগ্রামের সর্বত্র জলাবদ্ধতা ও দুর্ভোগ যেন নিত্যকার বিষয়ে পরিনত হয়েছে । এ থেকে পরিত্রাণের কোন পথ যেন খোলা নেই। বর্ষা ও রমজান মাসের আগে রাস্তায় সাংবাৎসরিক খোঁড়াখুঁড়িতে এমনিতে যানজটের দুর্ভোগ চরমে, তার উপর টানাবৃষ্টিপাতের ফলে খানাখন্দগুলো মরণফাঁদে পরিনত হয়েছে। রাস্তাখুঁড়ে তোলা মাটি এবং স্যুয়ারেজ ও ম্যানহোলের ময়লার সাথে বৃষ্টির পানি একাকার হয়ে এক অসহনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করছে। কোমর সমান পানিতে সয়লাব রাস্তায় গণপরিবহন, প্রাইভেট কারসহ নানা ধরনের গাড়ি অকেজো হয়ে মানুষের স্বাভাবিক চলাচল রুদ্ধ করে দিচ্ছে। রমজান মাসের অর্ধেক পেরিয়ে যাওয়ায় শহরের মার্কেটগুলোতে ব্যবসায়ীদের এবং সাধারণ মানুষের ঈদ কেন্দ্রিক কর্মব্যস্ততা বৃদ্ধি পেয়েছে। এহেন বাস্তবতায় রাস্তার দুরবস্থা সকলের জন্যই দুর্ভোগ ও দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাড়িয়েছে। দেশের প্রায় প্রতিটি সড়ক মহাসড়ক বেহালদশায় রয়েছে। তার উপর বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘনঘটা ঈদে ঘরে ফেরার প্রত্যাশি মানুষের জন্য বাড়তি দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে উঠেছে।
জৈষ্ঠ্যের তাপদাহে পবিত্র রমজানের সিয়ামসাধনারত কোটি কোটি ধর্মপ্রান মানুষের জন্য বৃষ্টিধারা কিছুটা আরাম ও স্বস্তিদায়ক হয়ে উঠলেও রাস্তার করুণদশা ও ঈদে ঘরে ফেরার দুর্ভোগ ও অনিশ্চয়তার আশঙ্কাই এখন মূখ্য বিষয় হয়ে উঠেছে। একদিকে সড়ক মহাসড়কের বেহালদশা, অন্যদিকে হাজার হাজার ফিটনেস বিহিন গাড়ি, অযোগ্য-অদক্ষ গাড়ি চালক, বাড়তি ভাড়ার খড়গ, সেই সাথে বৃষ্টি ও প্রাকৃতিক দুর্যোগের আশঙ্কা রমজানের পবিত্রতা, ঈদে ঘরে ফেরা ও আনন্দ আয়োজনকে শঙ্কার মধ্যে ফেলে দিয়েছে। সড়কপথের পাশাপাশি দেশের নৌপথগুলোও নানা ধরনের বিপদ ও নিরাপত্তাহীনতা ঝুঁকিতে রয়েছে। এমনিতেই নৌরুটগুলোতে লাইসেন্স ও ফিটনেস বিহিন এবং নিরাপত্তা প্রস্তুতি বিহিন শত শত লঞ্চ চলাচল করে থাকে। ঈদকে সামনে রেখে বছরের এ সময়ে দক্ষিনের জেলাগুলোর লাখ লাখ বাড়তি নৌযাত্রি পরিবহনের লক্ষ্যে অকেজো, পরিত্যক্ত নৌযানগুলোকে কোন রকমে মেরামত ও রং লাগিয়ে যাত্রি পরিবহনে নামানো হয়। এ ধরনের গাড়ি ও নৌযান প্রতি বছরই মর্মান্তিক দুর্ঘটনার কারণ হয়ে উঠছে। ঈদের আগে সড়ক মেরামত নিয়ে বড় বড় কথা শোনা গেলেও বাস্তবে তার কোন নজির দেখা যায়না। গণপরিবহন সেক্টরের নৈরাজ্য-বিশৃঙ্খলাও বন্ধ হচ্ছেনা। ঈদ ও বর্ষা আসলেই তড়িঘড়ি করে জোড়াতালি দিয়ে রাস্তা মেরামত এবং আনফিট গণপরিবহনের ঝক্কি থেকে মুক্তির স্থায়ী ব্যবস্থা দেখতে চায় জনগন।
বছরের এ সময়ে মওসুমি বৃষ্টিপাত স্বাভাবিক ঘটনা। ঈদের ছুটিতে লাখো মানুষের ঘরে ফেরার বিষয়টিও কোন নতুন ইস্যু নয়। তথাপি বর্ষা ও ঈদের আগ মুহুর্তে তড়িগড়ি রাস্তা মেরামত, ফিটনেস বিহিন গাড়ি ও নৌপরিবহন মেরামত করে অসংখ্য মানুষের ঈদ যাত্রাকে ঝুঁকির মুখে ঠেলে দেয়ার এহেন কর্মকান্ড বন্ধ করতে হবে। গত বছর কোরবানীর ঈদের আগে দেশের ৪৪টি মহাসড়কের বেহালদশার খবর প্রকাশিত হয়েছিল। এসব মহাসড়কে শত শত স্থানে ছোট বড় গর্ত, খানাখন্দ যানবাহনের গতি শ্লথ করে দিচ্ছে, যানজটের সৃষ্টি করছে এবং দুর্ঘটনার কারণ হয়ে প্রতিনিয়ত প্রানহানি ঘটাচ্ছে। রাজধানী থেকে বন্দর নগরী চট্টগ্রামসহ দেশের দক্ষিন-পূর্ব ও উত্তর-পশ্চিমের জেলাগুলোতে যাতায়াতের কোন রাস্তাই নিরাপদ ও নির্বিঘœ নেই। এখাতে বছরে হাজার হাজার কোটি টাকা ব্যঢ করেও জনদুর্ভোগ কমিয়ে আনতে না পারার ব্যর্থতা মেনে নেয়া যায়না। মহাসড়ক থেকে শহরের ব্যস্ততম বাণিজ্যিক এলাকা, অভিজাত আবাসিক এলাকা ও গলিপথ পর্যন্ত সর্বত্রই বেহাল অবস্থায় থাকা রাস্তাগুলো যথাশীঘ্র, সঠিকমান ও প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়ায় সংস্কার করতে হবে। রাস্তা মেরামতের নামে খোঁড়াখুঁড়ি করে মাসের পর মাস ফেলে রেখে জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে তোলার সংস্কৃতি বন্ধ করতে হবে। চলাচলের বিকল্প ব্যবস্থা করে পরিবেশে দ্রæততম সময়ে রাস্তা সংস্কারের কাজ করতে হবে। ঈদের আগেই মহাসড়কগুলোর সংস্কারে বিশেষ উদ্যোগ নিতে হবে। সেই সাথে ফিটনেস বিহিন যানবাহন, নৌযান এবং লাইসেন্স বিহিন ও অদক্ষ চালকদের বেপরোয়া কর্মকান্ডের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে। ঈদে ও বর্ষায় মানুষের চলাচল নির্বিঘœ রাখতে বিশেষত হাইওয়ে পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসনকে বাড়তি উদ্যোগ ও নজরদারির ব্যবস্থা করতে হবে। ঈদে ঘরে ফেরা মানুষের মানুষের যাত্রা নির্বিঘœ ও নিরাপদ করতে হবে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন