Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৭ মে ২০২৪, ০৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১, ০৮ জিলক্বদ ১৪৪৫ হিজরী

বেহাল অবস্থা বেনারশী পল্লী ঈদ আমেজে ভাটা

নজড় নেই তাঁত শিল্পে

| প্রকাশের সময় : ১১ জুন, ২০১৭, ১২:০০ এএম

ভারতীয় পণ্যে বাজার সয়লাব
অর্থনৈতিক রিপোর্টার : খানা-খন্দে এমনিতেই সড়কের বেহাল অবস্থা। এর মধ্যেই সড়কের দুই পাশে বসেছে ফুটপাথ। দখল হয়ে গেছে ছোট-বড় অনেক গলি। যেন চেনা পথ অনেকটাই অজানা। শুক্রবার সরেজমিন রাজধানীর মিরপুরে অবস্থিত ১১ ও ১২ নম্বরে আদি বেনারসি পল্লীতে গিয়ে দেখা গেল এমন চিত্র। হাতাশা প্রকাশ করে এখানকার ব্যবসায়ীরা জানালেন, অত্যন্ত সম্ভাবনাময় তাঁত শিল্প নিয়ে সরকারের কোন নজড় নেই। নানামুখী সমস্যার মধ্য দিয়ে বেনারসি পল্লীর বিক্রেতারা ব্যবসা করছেন। এর মধ্যে ভারত ও পাকিস্তানের জর্জেট, নেট ও ক্যাটালগ শাড়িতে সয়লাব ঈদের বাজার। তুলনামূলক দামে সস্তা এবং নিম্নমানের এসব শাড়ির কাছে মার খাচ্ছে দেশী বেনারসি, কাতান আর জামদানি। ভিনদেশী পোশাকের আধিক্য বাড়লেও এখনও নারীদের প্রথম পছন্দ দেশী শাড়ি। সেই শাড়ি কিনতেই ফ্যাশন সচেতন নারীরা আসছেন বেনারসি পল্লীতে। ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিশেলে গড়ে ওঠা শতাধিক দোকানে বাহারি নক্সা ও রঙের শাড়ির পসরা সাজিয়ে বসেছেন ব্যবসায়ীরা। মিরপুর ১০ নম্বর পার হয়ে ১১ নম্বর সেকশনের দিকে যেতেই পড়তে হলো বিড়ম্বনা। এলাকার সড়কের বেহাল দশা দেখে বোঝার উপায় নেই এটাই সেই আদি বেনারসি পল্লী। এখানকার ব্যবসায়ীরা জানালেন, ট্রাফিক ব্যবস্থা না থাকায় মূলত সমস্যা হচ্ছে। ১১ ও ১২ নম্বরের মাঝে সব পথই এখন বন্ধ। ফলে ক্রেতাকে সেই ১২ নম্বর সেকশন ঘুরে আসতে হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা জানান, আগে যেমন দূরের ক্রেতারা এখানে ছুটে আসতেন। এখন যোগাযোগ ব্যবস্থা খারাপ হওয়ায় দূরের ক্রেতারা খুব একটা আসছেন না। বড় বড় রাস্তা দখল করে ফুটপাথের কারণে চেনা পথ এখন অনেকটাই অচেনা। ছোট-বড় অনেক গলি দখল হয়ে গেছে। যেন দেখার কেউ নেই।
হানিফ সিল্কের বিক্রেতা মনির হোসাইন বলেন, মোটামুটি ভালোই বিক্রি করছি আমরা। তবে অন্যান্য বছর এই সময়ে ক্রেতাদের ভিড়ে খাওয়ার সময় পেতাম না। আর এবার সে তুলনায় একটু কম। কারণ হিসেবে তিনি জানান, ভারতীয় কিছু মানহীন শাড়ি আমাদের বাজার নষ্ট করছে। ওই শাড়িতে লাভ বেশি, কিন্তু সুতা ভালো না। ফলে ক্রেতারা কম দামে পেলেও প্রত্যাশা অনুসারে ব্যবহার করতে পারছেন না। এ জন্য আস্থা নষ্ট হচ্ছে। অনেকে এখন ভারতমুখী হয়ে পড়ছেন। এটাও ক্রেতা হ্রাসের অন্যতম কারণ। তবে চলতি সপ্তাহে ক্রেতা সমাগম বাড়বে বলে আশা করেন তিনি।
ব্যবসায়ীরা জানালেন, এবার ভারতীয় ভিসা সহজীকরণ করা ক্রেতা কমে যাওয়ার অন্যতম কারণ। এ সুযোগে পাইকারি অনেক ক্রেতা পণ্য কিনতে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত চলে গেছেন। এ জন্য এবারের ঈদ বাজারে মিরপুরের বিখ্যাত বেনারসি পল্লীতে ভিন্ন চিত্র। রমজানের আগে ক্রেতাদের ভিড় থাকলেও এখনও দেখা মেলছে না ঈদের আমেজ।
বেনারসি পল্লী মালিক সমিতি সূত্রে জানা যায়, বর্তমানে মিরপুর-১০, ১১ ও ১২ মিলিয়ে মোট ২ হাজারের মতো কারখানা রয়েছে। আগে আরও বেশি ছিল। এছাড়া মিরপুর-১০ এ ১২০টি এবং মিরপুর-১১ ও ১২ মিলে আরও শতাধিক বেনারসির দোকান রয়েছে। বেনারসি পল্লী দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও দিয়া শাড়ির স্বত্বাধিকারী আবুল কাশেম বলেন, দেশ স্বাধীন হওয়ার পর থেকে এই বেনারসি পল্লী স¤প্রসারিত হতে থাকলেও আশির দশক থেকে এটি ব্যাপকতা লাভ করে আজকের পর্যায়ে এসেছে। আগে এখানে কারখানা ছিল বেশি, দোকান ছিল কম। এখন দোকান বেড়েছে, কিন্তু কমেছে কারখানার সংখ্যা। ব্যবসায়ীরা বলেন, বেনারসি পল্লীতে ২৫-৩০ প্রকারের বিভিন্ন নাম ও ডিজাইনের শাড়ি রয়েছে। এবারের ঈদে দেশী শাড়ির মধ্যে রাঙ্গুলী কাতান, কলকা কাতান, রেশমী কাতান, ফিগার কাতান, মসলিন কাতান, পিউর কাতান, অপেরা কাতান, রুপ মহুড়ী কাতান, বডি প্লেন কাতান, বেনারসি কাতানের চাহিদা বেশি। এসব শাড়ীর দাম ১ হাজার টাকা থেকে শুরু করে ২০ হাজার টাকা। এছাড়া সূতি (পিউর রেশম) ৫০০টাকা থেকে দেড় লাখ টাকা পর্যন্ত দামে বিক্রি হচ্ছে। এছাড়া ভারতীয় শাড়ির মধ্যে নেট শাড়ি, গুপি, কোকিলা দির কাতান, রেম্বো, কলাবেরির কদর বেশি। বেনারসি পল্লী হলেও এখানে থ্রি-পিস, প্রিন্টের শাড়ি, টাঙ্গাইলের শাড়ি, লেহেঙ্গা, সিল্ক আর সুতি শাড়িও পাওয়া যাচ্ছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা। যাত্রাবাড়ি থেকে হানিফ সিল্কে শাড়ি কিনতে আসা গৃহিণী তাজরি তানিয়া বলেন, শাড়ি কেনার জন্য আদর্শ মার্কেট এটি। তাই এখানে চলে এসেছি। ইতোমধ্যে পছন্দ করে দুটি শাড়ি কিনেও ফেলেছি। তিনি বলেন, বাহারি কারুকাজের শাড়ির জন্যই মূলত বেনারসি পল্লীতে শাড়ি কিনতে আসি।
উল্লেখ্য, ১৯৪৭ সালে ভারত-পাকিস্তান বিভক্ত হওয়ার পর ভারতের বেনারস থেকে সাড়ে ৩০০ মুসলিম তাঁতি পরিবার তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান বা বাংলাদেশে চলে আসে। আগে দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে ছিটিয়ে থাকলেও স্বাধীনতার পর এদের বেশির ভাগ পরিবার মিরপুরে আবাস গড়ে তোলে। তাদের হাত ধরে ছোট ছোট তাঁতগুলো এক সময় বিশাল বেনারসি পল্লী হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে। ###



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ