পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
ছাতক উপজেলা সংবাদদাতা : ছাতকে ইসলামপুর ইউনিয়নের ভারতীয় সীমান্তবর্তী এলাকায় নৃ-গোষ্ঠী ৬৫ পরিবার বসবাস করছে। উপজেলার ১৩ ইউনিয়নে আর কোনো নৃ-গোষ্ঠী পরিবারের অস্তিত্ব নেই। একমাত্র তাঁত শিল্পকে পুঁজি করেই চলছে তাদের প্রত্যহিক জীবন-জীবিকা। কিন্তু পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে তাদের একমাত্র অবলম্বন তাঁত শিল্প এখন ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। সীমান্তঘেঁষা গ্রাম মনিপুরী বস্তি, রাসনগর, ধনীটিলা গ্রামের উপজাতি ও মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন তাঁতশিল্পের সাথে জড়িত রয়েছে। এ উপজেলায় নৃ-গোষ্ঠী ছাড়া আর কোনো পরিবার তাঁত শিল্পের সাথে জড়িত নয়। এসব সংখ্যালঘু পরিবারের সবাই তাঁতে কাপড় বুনা, চরকা দিয়ে সুতা কাটাসহ বিভিন্ন ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্পের সাথে জড়িত রয়েছে। নৃ-গোষ্ঠী পরিবারের একেবারে বৃদ্ধ মহিলাও ঘরে বসে থাকেনি, তাঁতে কাপড় বুনে ও কাজ করে তার বাঁচতে চায়। তাদের ধারণা হচ্ছে, কাজের মধ্যেই বালক-বালিকা, কিশোর-কিশোরী, যুবক-যুবতীসহ ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধারাও বেঁচে থাকতে চায়। তাই সব সময় কাজই তাদের অভাবী সংসারে অনুপ্রেরনা ও উৎসাহ-উদ্দীপনা জাগিয়ে তোলে। কিন্তু অর্থাভাবে তাদের হাতে বুনা কাপড় বিক্রি ও বিপননে উপযুক্ত মূল্য পাচ্ছেনা। টাকার অভাবে শ্রীমঙ্গলের আদমপুর থেকে সুতা ক্রয় করতে পারছেনা তারা। এজন্যে একের পর এক বন্ধ হতে চলেছে নৃ-গোষ্ঠীর তাঁত ও ক্ষুদ্র কুটির শিল্প কারখানা। তারা উপজাতি থাকায় এসব তাঁত ও ক্ষুদ্র কুটির শিল্প পরিচালনার জন্যে ঋণ দিচ্ছে না সরকারি-বেসরকারি কোনো ব্যাংক বা সংস্থা।
এ ছাড়া মনিপুরী বস্তি, রাসনগর, ধনীটিলা গ্রামের উপজাতিও মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজনের যাতায়াতে নেই কোন রাস্তা-ঘাট। বিদ্যুৎ, পানি ও যাতায়াত ব্যবস্থার ফলে দেশের সম্ভাবনাময় তাঁত শিল্প এখন বিলুপ্তির দ্বারপ্রান্তে এসে পৌঁছেছে। সরেজমিন গিয়ে নৃ-গোষ্ঠীর সাথে কথা বলে জানা যায়, ছাতক শহর থেকে প্রায় ২০ কিমি দূরে ভারতীয় সীমান্তঘেঁষা এসব গ্রাম। এখানে বসবাস করেন ৬৫ কর্মজীবী পরিবার। দুর্গম পাহাড়ী এলাকায় হচ্ছে মনিপুরী বস্তি, রাসনগর, ধনীটিলা গ্রাম। তারা এ দুর্গম পাহাড়ী এলাকা থেকে ছাতক শহরে আসার পাকা অথবা কাঁচা রাস্তা নেই। হেমন্তে পায়ে হেঁটে ও বর্ষাকালে অর্ধপথ নৌকায় যাতায়াত করেন নৃ-গোষ্ঠীরা। দেশ স্বাধীনের ৪৫বছর অতিবাহিত হলেও জনপ্রতিনিধিদের চোখের আড়ালেই রয়ে গেছে কর্মঠ ও ব্যাপক উদ্যমী এ মানুষগুলো। তাদের মতে, যারা দিন-রাত ঘুমায় আর পেট পুরে খায়, অথচ দেশের জন্যে কিছুই দেয়নি, সরকার তাদের জন্যে রাস্তা-ঘাটসহ সব কিছু করে। কিন্তু উপজাতিরা কাপড় বুনে দেশের অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি অর্জনে ভূমিকা রেখেও কোনো সরকারি সূযোগ-সুবিধা পাচ্ছে না। গ্রামে নেই বিদ্যুৎ ব্যবস্থা। বিদ্যুৎ থাকলে তাঁতশিল্পকে আরো বিকশিত করা যেত বলে তারা আক্ষেপের সাথে জানায়। ব্যাংক ঋণ যেন কখনও তাদের কপালে জুটে না। ব্যাংক ঋণের জন্যে বাংলাদেশ ব্যাংকসহ বিভিন্ন দফতরে ধরনা দিলেও কোনো সুরাহা হচ্ছে না। তারা ব্যাংক ঋণ নিয়ে দেশের অন্যান্য এলাকার নৃ-গোষ্ঠীর ন্যায় হস্তশিল্প ও তাঁতের কাপড়সহ রুচিশীল দ্রব্য সামগ্রীর ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প কারখানা তৈরী করতে আগ্রহী। কিন্তু প্রচলিত ব্যাংক ব্যবস্থায় তাদেরকে ঋন না দেয়ায় অবশেষে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর বরাবরে গত ২২মে’ ২০১৬ইং উপজাতিদের পক্ষে বাবু সিংহের স্ত্রী চন্দ্রিকা দেবী ও নিরমনি সিংহের স্ত্রী অহল্যা দেবী লিখিত আবেদন করেন। এতে গভর্নর সব ব্যাংকে ঋণ দেয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। কিন্তু এরপরও রহস্যজনক কারনে তাদেরকে ঋন দেয়া হয়নি।
আবেদনে বলা হয়, ২০ জন উপজাতি গত ২০০৪ সালে আনসারও ভিডিপির প্রশিক্ষণ নিয়ে সনদপ্রাপ্ত হন এবং আনসার ও ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংকের শেয়ার ক্রয় করেন। কিন্তু যাতায়াত ব্যবস্থা ও বাড়ি দূরবর্তী থাকার অজুহাতে সভাও সেমিনারে তাদেরে ডাকা হয়নি। অসচ্ছল থাকায় নিজের পুঁজিতে ব্যবসা পরিচালনা করা তাদের খুবই দুরুহ হয়ে পড়েছে। এজন্যে ব্যবসা ঠিকিয়ে রাখার স্বার্থে ছাতক আনসার ও ভিডিপি উন্নয়ন ব্যাংক, সোনালী ব্যাংক, কৃষি ব্যাংক, অগ্রণী ব্যাংক ও রূপালী ব্যাংকের কাছে ক্ষুদ্র ঋণ দেয়ার দাবী জানান। কিন্তু গভর্নরের আদেশ থাকার পরও এসব ব্যাংক তাদের নামে ঋন মঞ্জুর করেনি। এর আগে উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফুজ্জামানের কাছে ঋনের দাবীতে আরেকটি আবেদন করে। অবশেষে নিরুপায় হয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নরের কাছে এ আবেদন করা হয়। ঋণ বরাদ্দ হলে তারা সম্মিলিতভাবে বৃহৎ তাঁত শিল্প প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করবে বলে জনা গেছে। বর্তমানে সারা বিশ্বে মনিপুরী কাপড়ের বিপুল চাহিদা থাকলেও যোগাযোগ ব্যবস্থার ফলে তারা উৎপাদিত কাপড়ের ন্যায্য মূল্য পাচ্ছে না। এখন প্রত্যেকের বাড়িতে একটি করে তাঁত শিল্প রয়েছে। এযাবত সুবিধাবঞ্চিত পরিবারগুলো কোন ধরনের রেশন বা ভাতা পায়নি। সরকারের সদিচ্ছা ও পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এসব লোকজন দেশের অর্থনীতিতে বড় ধরনের অবদান রাখতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।