Inqilab Logo

রোববার, ০৭ জুলাই ২০২৪, ২৩ আষাঢ় ১৪৩১, ৩০ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

লালপুরে বিলুপ্তির পথে ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প

লালপুর (নাটোর) উপজেলা সংবাদদাতা | প্রকাশের সময় : ২৮ জানুয়ারি, ২০১৯, ১২:০২ এএম

লালপুর উপজেলার ওয়ালিয়ার ঐতিহ্যবাহী তাঁত শিল্প এখন বিলুপ্তির পথে। এক সময় এই অঞ্চলের মানুষের ঘুম ভাঙ্গত তাঁতের খটর-খটর শব্দে। সারাদিন বাহারী রঙ্গের গামছা, লুঙ্গী, শাড়ী তৈরীতে ব্যস্ত থাকতেন গ্রামের গৃহবধূরা। দিনের শেষে তাঁতের তৈরী গামছা, লুঙ্গি, শাড়ী বিক্রয় করতে পশরা সাজিয়ে বিভিন্ন গ্রামের হাটে-হাটে যেতো গ্রামের অধিকাংশ পুরুষেরা। এখানকার তৈরী কাপড় কিনতে বাইরের ব্যবসায়ীরাও আসতেন কিন্তু এসব কথা এখন শুধু রূপকথার গল্প বা কেচ্ছা কাহিনীর মতো শুনায়।
জানাগেছে, উপজেলার ওয়ালিয়া ইউনিয়নের বর্তমান ৪, ৫, ৬ নং ওয়ার্ড এলাকার প্রতিটি বাড়িতেই ছিলো তাঁত শিল্প। এখানকার তাঁত শিল্পীরা তৈরী করতে বাহারীসব শাড়ী, লুঙ্গি ও গামছা। এই তাঁত শিল্প কে ঘিরে ঐ এলাকার নাম করণ করা হয় কারিগর পাড়া। আগে এই এলাকার প্রতিটি ঘরে ঘরে তাঁত থাকলেও বর্তমানে মাত্র ১০/১২ টি পরিবারে তাঁত রয়েছে। এই সকল তাঁতে এখন শুধু মাত্র গামছা তৈরী হয়। এর সাথে জড়িত শিল্পীরাও এখন পুঁজির অভাবে খাবি খাচ্ছে। এদের অনেকেই মহাজনের ফাঁদে পা দিয়ে কোন রকমে দিনাতিপাত করছে। লাভের অধিকাংশই চলে যাচ্ছে মহাজনের পকেটে।
গতকাল শনিবার সকালে সরেজমিনে উপজেলার ওয়ালিয়া পশ্চিম কারিগর পাড়ায় গিয়ে দেখা যায়, আগের মত তাঁতের খটর-খটর শব্দ এখন আর শোনা যায় না। হঠাৎ এক বাড়ি তে শোনা যাচ্ছে তাঁতের শব্দ। বাড়ির ভিতরে গিয়ে দেখা যায় একজন মাঝ বয়সী গৃহবধূ তাঁত যন্ত্রে গামছা তৈরী করছেন তার নাম জাহানারা বেগম সেই ঐ গ্রামের মৃত আশরাফের স্ত্রী। তিনি জানান, এক ছেলেও দুই মেয়ে নিয়ে সংসার তার। স্বামী হারা এই মাঝ বয়সী নারী সংসারের কাজের ফাঁকে কিছু টাকা আয়ের জন্য সারা বছর তাঁতে গামছা বুনানোর কাজ করেন। গামছা বুনানোর জন্য একটি তানায় ২০ মুড়া সুতা থাকে। তাতে ১৭২ টি গামছা তৈরী করা যায়। যা মাহাজনদের নিকট থেকে ২৫০০-২৭০০ টাকায় কিনতে হয়। এই ১৭২ টি গামছা বুনানোর জন্য লাল, সবুজ, সাদা, কালো, গ্রীন গোলাপী রং এর মোট ৩৭ মোড়া সুতা প্রয়োজন হয়। যার প্রতি মোড়া গ্রীন কালার সুতা ৮০ টাকা, লাল, হলুদ, সাদা, কালো রংএর সুতা ৭০টাকা। ১৭২ টি গামছা বুনতে সময় লাগে ৩০-৪০দিন। তৈরী গামছা পাইকারী বিক্রয় হয় ৫০টাকা। খুচরা বিক্রয় হয় ৬০-৬৫ টাকা। একটি তানায় ১৭২ টা গামছা বিক্রয় করে আয় হয় মাত্র ১০০০/১২০০ টাকা। সরকারী পৃষ্ঠপোষকতা পেলে এই এলাকায় তাঁত শিল্প তার ঐতিহ্য পুনরায় ফিরে পাবে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ