Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

কান্ডারী ও বাংলাদেশ কবিতা লেখার প্রেক্ষাপট

| প্রকাশের সময় : ২৬ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মা হ মু দু ল হা সা ন নি জা মী
কান্ডারী তব সম্মুখে ঐ পলাশীর প্রান্তর
বাঙালীর খুনে লালে লাল হলো ক্লাইভের খঞ্জর
এ কবিতার মাধ্যমে কবি নজরুল ভারতবাসীর উপর বহিরাগত দখলদার ইংরেজ শাসকের নির্মমতার চিত্র তুলে ধরেছেন তিনি।
ভারত বর্ষের স্বাধীনতা উদ্ধারে নজরূল একটি রাজনৈতিক দল ও করেছিলেন দলটির নাম হচ্ছে অল ইন্ডিয়া স্বরাজ পার্টি এ দলের মাধ্যমে সংস্কৃতি মনা লোকদের তিনি সংগঠিত করে দখলদার বৃটিশের বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তুলেন। ভারতবর্ষবাসী কে স্বাধীনতার চেতনায় জাগিয়ে তুলেন ।দখলদার বৃটিশদেরঅত্যাচারের বিরুধে জনগনকে ফুঁসিয়ে তুলেন । নজরুলের কাব্য ক্ষেপানাস্ত্রে সন্ত্রস্ত্র হয়ে দখলদার বৃটিশ নজরুলকে গ্রেফতার করে নির্যাতন করে।
লাথি মার ভাংরে তালা যত সব বন্দীশালা জ্বালা জ্বালা আগুন জ্বালা
কারাগারে বন্দী থেকেও দমে না গিয়ে নজরুল রৌদ্ররূষে ফুসে উঠেন। এ কবিতাই তার প্রমান। ভারতবর্ষের স্বাধীনতা উদ্ধারে ছাত্রদলের গান রচনা করে তিনি ছ্ত্রাদের স্বাধীনতা সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেন । নজরুলের কাব্য প্রেরনাই ভারতেবর্ষের ছাত্ররা রাজনৈতিক ইতিহাসে স্বর্ণযুগ সৃজন করেছে ।
স্বাধীনতা সংগ্রামের দুর্গম পথ সাহসের সাথে অতিক্রম করার কাব্য প্রেরণা ও উৎসাহে তিনি কবিতা উপহার দিয়ে গেয়েছেন স্বাধীনতা কামীদের ---
র্দুগম গিরি কান্তার মরু দুস্তর পারাপার
লঙ্গিতে হবে রাত্রী নিশিথে যাত্রীরা হুশিয়ার
১৯২১ সালের দিকে মাওলানা মোহাম্মদ আলীর খেলাফত আন্দোলনের নেতৃ্ত্েব যখন সর্ব ভারতীয় স্বধীনতা আন্দোলন সফলতার কাছাকাছি ঠিক তখনি ঈর্ষান্বিত ভারতীয় কংগ্রেস আন্দোলন থেকে পিছু হটে যায় ইংরেজদের প্ররোচনায় এবং দখলদার বৃটিশ এ বলে কংগ্রেস নেতাদের বুঝাতে সক্ষম হয় যে মো: আলীর দলের যদি বিজয়ী হয় তবে তবে ভারত বর্ষে আবার মুসলমানী শাসন প্রতিষ্ঠা হবে এবং বৃটিশরা এ বলে কংগ্রেসকে আাশ্বস্থ করলো যদি স্বাধীনতা দিতে হয় কংগ্রেসএর হাতেই দিবে। এ প্ররোচনায় কংগ্রেস সফলতার দ্বার প্রান্তে উপনীত আন্দোলন কে ল্যাং মারে। তারি প্রেক্ষাপটে নজরুল লেখেন কবিতা---
গিরি সংকট ভীরু যাত্রীরা গুরু গরজায় বাজ/ পশ্চাৎ পথ যাত্রীর মনে সন্দেহ জাগে আজ/ কান্ডারী তুমি ভুলিবে কি পথ? ত্যাজিবে কি পথ মাঝ ?
করে হানাহানি তবু চলো টানি নিয়াছো যে মহাভার।
বৃটিশ প্ররোচনায় কংগেসের ক্ষমতার মানসিকতায় যখন মাওলানা মো: আলীর আন্দোলন ভে¯েত যাচ্ছিলো ঠিক তখনি কবি নজরুলের কলম আবার গর্জে উঠে--------
অসহায় জাতি মরিছে ডুবিয়া জানেনা সন্তরন
কান্ডারী আজ দেখিবো তোমার মাতৃমুক্তি পণ
হিন্দু না ওরা মুসলিম ? ওই জিঞ্জেসে কোনজন?
কান্ডারী বল- ডুবিছে মানুষ সন্তান মোর মা’র
ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামকে সফল করার জন্যই তিনি অসাম্প্রদায়িক সার্বজনীন -মানুষ এবং কবি হিসাবে আবির্ভাব হয়েছিল তাঁর । তিনি স্বাধীনতার কবি, সাম্যবাদের কবি, মানবতার কবি, তার তুলনা শুধু তিনিই।
ভারত ও বাংলায় মুসলমানরা খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের মাধ্যমে ব্যাপক ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলনে অংশগ্রহণ করে। হিন্দু-মুসলমান নেতাদের যৌথ নেতৃত্বে পরিচালিত এই আন্দোলন দুই সম্প্রদায়ের মধ্যে রাজনৈতিক সমঝোতা সৃষ্টি করে, শহরের শিক্ষিত মুসলমান যুবকদের রাজনৈতিক আন্দোলনের প্রতি উৎসাহী করে তোলে। তবে, খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলন হিন্দু-মুসলমান ঐক্যকে চিরস্থায়ী করতে পারেনি। অসহযোগ আন্দোলন হঠাৎ বন্ধ করার ফলে মুসলমানগণ কংগ্রেসের ওপর ক্ষুব্ধ হয়। ভবিষ্যতে হিন্দুদের সাথে ঐক্যবদ্ধ জাতীয় আন্দোলনে তাদের সংশয় সৃষ্টি হয়। বাংলায় খিলাফত ও অসহযোগ আন্দোলনের ব্যর্থতার পর হিন্দু-মুসলিম মিলন আর সম্ভব হয়নি।
কবি নজরুল ইসলামের কবিতায় হিমালয় থেকে বঙ্গোপোসাগর পর্যন্ত বাংলাদেশের মাচিত্রের বর্ননা
নম নম নম বাংলাদেশ মম,
চির মনোরম চির মধুর,
বুকে নিরবধি বহে শত নদী চরণে জলধির বাজে নূপুর
নম নম নম বাংলাদেশ মম,
চির মনোরম চির মধুর ।
শিয়রে গিরিরাজ হিমালয় প্রহরী,
আশীষ মেঘ বারি সদা তার পড়ে ঝরি,
যেন উমার চেয়ে , আদরিনী মেয়ে,
ওরে আকাশ ছেয়ে মেঘ চিকুর ।
নম নম নম বাংলাদেশ মম , চির মনোরম চির মধুর ।
যখন ভারত নামে কোন দেশই ছিলোনা তখনো পুরো উপমহাদেশ ছিল একটি দেশ বঙ্গদেশ বা বাংলাদেশ। ষষ্ঠ শতাব্দীর প্রথম দিকেই প্রথম গুপ্ত সাম্রাজ্যে দূরবস্থার সৃষ্টি হয়। একদিকে আভ্যন্তরীণ কলহ-বিবাদ, অর্থনৈতিক হুনদের আক্রমণের মুখে গুপ্ত সাম্রাজ্যের অস্তিত্ব যখন বিপন্ন তখনই বাংলার রাজনীতিতে আভির্ভূত হন এক নতুন দুর্ধর্ষ মহনায়ক যশোধর্মণ। যশোধর্মন ৬১০ খৃষ্টাব্দে প্রতিষ্টা করেন বিশাল এক স্বাধীন বাংলাদেশ ।এবং এই বিশাল বাংলাদেশের আয়তন ছিলো ১৪,৩,৯৯৮ বর্গ মাইল অথব ১৫লক্ষ ৩০ হাজার বর্গ মাইল ।তাঁর বিজয় স্তম্ভে নিজ রাজ্য জয়ের বর্ণনা দেয়া হয়েছে। বর্ণানুযায়ী যশোধর্মনের প্রতিষ্ঠত স্বাধীন বাংলাদেশের রাষ্টের আয়তন ছিলো পূর্বে ব্রহ্মনদ, পশ্চিমে আরব সাগর এবং উত্তরে হিমালয় পর্যন্ত বিস্তৃত বিশাল এক বাংলাদেশ।যখন উপমহাদেশে ভারত নামক কোন একক দেশের অস্তিত্বই ছিলোনা তখনই, যশোধর্মন বঙ্গদেশে জয় করেছিলেন।
যশোধর্মনকে তাই বঙ্গবন্ধু হিসাবে উপাধিত করা হয়েছিলো। আর সে বিশাল পাংলাদেশ এর মানচিত্রের সীমানা বর্ননা করে কবি নজরুল বাংলাদেশ নামক এই কবিতা টি রচনা করেন।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন