Inqilab Logo

শুক্রবার ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৫ আশ্বিন ১৪৩১, ১৬ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

কুমিল্লা উত্তর জেলায় বিএনপি নামধারীরা ক্ষমতাসীনদের লেজুড়বৃত্তি করছে তৃণমূল নেতা-কর্মীদের অভিযোগ

| প্রকাশের সময় : ২১ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে কুমিল্লায় বিএনপির রাজনীতিতে উত্তরের সাত উপজেলা নিয়ে গঠিত পাঁচটি সংসদীয় আসন দীর্ঘ সময় ধরে বিএনপির দখলেই ছিল। ২০০৮ সালের নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে উত্তরের হোমনা ও মুরাদনগর ছাড়া দাউদকান্দি, দেবিদ্বার, চান্দিনা আসন হাতছাড়া হয়। সর্বশেষ দশম নির্বাচনে বিএনপি অংশ নেয়নি। কুমিল্লা জুড়ে দলটি এখন নির্বাচনমুখী তৎপরতা শুরু করেছে। আর এমনি সময়ে উত্তরের কয়েকটি উপজেলায় বিএনপি নামধারি কিছু নেতা ক্ষমতাসীনদের লেজুরবৃত্তি করছে বলে অভিযোগ তুলেছেন তৃৃণমূল নেতাকর্মীরা।
কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির প্রধান কার্যালয় চান্দিনা উপজেলা সদরে অবস্থিত। চান্দিনা উপজেলা বিএনপি বর্তমানে নানা প্রতিকূল পরিস্থিতি মোকাবেলা করে মন্দের ভালো কার্যক্রম চালাচ্ছে। চান্দিনায় বিএনপিতে কোনরকম কোন্দল না থাকলেও বিএনপির সাবেক এমপি ও প্রতিমন্ত্রী বর্তমানে এলডিপি নেতা রেদোয়ান আহমেদ চান্দিনা বিএনপির জন্য অনেকটা বিষফোঁড়া হয়ে দাঁড়িয়েছে। কুমিল্লা উত্তর জেলা বিএনপির সভাপতি চান্দিনার বাসিন্দা খোরশেদ আলম বলেন, ‘সাংগঠনিক কাজ বলতে দলীয় কর্মসূচী উত্তরের সব উপজেলাতেই পালন হয়ে থাকে। আগামী সংসদ নির্বাচনের বিষয়টি মাথায় রেখে আমরা বসে নেই। যেসব উপজেলায় সমস্যা রয়েছে তাও সমাধান হয়ে যাবে।’
কুমিল্লা উত্তরের বৃহৎ উপজেলা ও সংসদীয় আসন মুরাদনগর বিএনপি দলের সাংগঠনিক কার্যক্রমকে জাগিয়ে রাখতে মাঠে রয়েছে। এরপরেও এখানকার বিএনপিকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তোলতে দলের নামধারি গুটিকতেক নেতা আগের মতো লেজুরবৃত্তি শুরু করেছে। ২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থী শাহ মোফাজ্জল হোসাইন কায়কোবাদকে পরাজিত করার এজেন্ডা নিয়ে বিএনপির বিদ্রোহী প্রার্থী হয়ে ব্যারিষ্টার রফিকুল ইসলাম মিয়া এবং ওই সময়ের জাতীয় পার্টি নেতা গোলাম কিবরীয়া সরকার নির্বাচনে প্রতিদ্ব›িদ্বতা করেছিলেন। কায়কোবাদের কাছে ওই দুইজনসহ আওয়ামী লীগের প্রার্থী ইউসুফ আবদুল্লাহ হারুন পরাজিত হয়েছিলেন। ওইসময়ে ব্যারিষ্টার রফিক ও কিবরীয়া সরকার জামানত হারান। ২০০৮ সালের নির্বাচনে সারাদেশে বিএনপির চরম প্রতিকূল অবস্থা ও এলাকার নানামুখি ষড়যন্ত্রের মধ্যেও কায়কোবাদ মুরাদনগর আসনে এমপি নির্বাচিত হন। নির্বাচনের পরে তিনি দূর্ঘটনার শিকার হয়ে দেশের বাইরে চিকিৎসা নিতে যান। বিদেশে চিকিৎসাধীন থাকা অবস্থায় ২১ আগষ্টের গ্রেনেড হামলা মামলায় তার নাম জড়িয়ে দেয়া হয়। এরপর দেশের রাজনৈতিক পরিস্থিতি ঘিরে মুরাদনগর বিএনপির হাজারো নেতাকর্মী হামলা মামলার শিকার হোন। রাজনৈতিক নানা প্রতিকূল পরিস্থিতির মুখেও মুরাদনগর বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম থেমে থাকেনি। একাদশ সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে বর্তমানে মুরাদনগর বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম ভালো অবস্থানে থাকলেও বিএনপি নামধারি কিছু নেতার কর্মকান্ড নিয়ে তৃণমূল থেকে অভিযোগ ওঠেছে। ২০০১ এবং ২০০৮ সালে যারা আওয়ামী লীগের সাথে আঁতাত করে কায়কোবাদকে হারাতে চেয়েছিল সেই তারাই এখন নতুন করে মুরাদনগর আওয়ামী লীগের একটি গ্রæপের সঙ্গে গোপনজোট বেধে উপজেলা বিএনপির সাংগঠনিক কার্যক্রম বাধাগ্রস্ত করছে। মুরাদনগর উপজেলা বিএনপির নেতারা জানান, ‘নানা ষড়যন্ত্রের মধ্যেও মুরাদনগর বিএনপি সাবেক এমপি কায়কোবাদের নেতৃত্বে অপ্রতিরোধ্য। বিদেশে অবস্থান করেও তিনি মুরাদনগরের রাজনৈতিক, সামাজিক কার্যক্রম নিবিড়ভাবে পরিচালনা করছেন। তাঁর বিপুল জনসমর্থন ইনশাল্লাহ সকল ষড়যন্ত্র প্রতিহত করবে।’
এদিকে হোমনা-তিতাস উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসনের সাবেক এমপি ও মন্ত্রী এমকে আনোয়ারের এখানে নেতৃত্ব নিয়ে গ্রæপিং রয়েছে। এখানকার সাংগঠনিক কার্যক্রমে স্থবিরতা রয়েছে। হোমনা-তিতাসের তৃণমূল নেতাকর্মীদের অনেকেই ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, সরকার বিরোধী আন্দোলনে তৃণমূলরাই মামলার আসামী হয়েছে। আর এখানকার বিএনপি নামধারিরা ক্ষমতাসীনদের সাথে লেজুরবৃত্তি করে মাঠে রয়েছে। দাউদকান্দি ও মেঘনা উপজেলা নিয়ে গঠিত সংসদীয় আসনের সাবেক এমপি ও মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশারফ হোসেনের ছেলে ও দলের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ড. খন্দকার মারুফ হোসেন এখানকার সাংগঠনিক কার্যক্রম দেখভাল করছেন। দাউদকান্দি ও মেঘনায় বিএনপির অপর একটি গ্রæপ খন্দকার মারুফের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েও সুবিধা করতে পারছে না। এ গ্রæপটি ব্যালেন্স রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের এজেন্ডা বাস্তবায়নে ব্যস্ত। দেবিদ্বার আসনে সাবেক এমপি মঞ্জুরুল আহসান মুন্সি এখানকার বিএনপির নেতৃত্ব দিলেও দলের বিভাগীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আওয়াল খানের নেতৃত্বাধীন একটি গ্রæপ দেবিদ্বারে সক্রিয় রয়েছে। দেবিদ্বার উপজেলা বিএনপির কমিটির নেতেৃত্বে রয়েছে মঞ্জুরুল আহসান মুন্সির লোকজন। কমিটিতে আওয়াল খানের কাউকে রাখা হয়নি। তৃণমূলের একটি বড় অংশ আওয়াল খানের সাথে রয়েছে। ফলে নেতৃত্বের দোলাচলে পড়েছে তৃণমূলরা।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কুমিল্লা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ