Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

নির্বাচন নিয়ে দুই দলের বাগযুদ্ধ

| প্রকাশের সময় : ৫ মে, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কামরুল হাসান দর্পণ : আগামী জাতীয় নির্বাচনের আরও দেড় বছর বাকি রয়েছে। সাংবিধানিক বাধ্যবাধকতা অনুযায়ী ২০১৯ সালের জানুয়ারি মাসের ৯০ দিন আগে তথা আগামী বছরের শেষ নাগাদ সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এ নির্বাচনকে সামনে রেখে ইতোমধ্যে দেশের প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের মধ্যে বাগযুদ্ধ শুরু হয়ে গেছে। বলা যায়, দেড় বছর আগেই নির্বাচনের ‘দামামা’ বেজে উঠেছে। একে নির্বাচনী যুদ্ধও বলা যেতে পারে। আমরা দেখেছি, ঊনবিংশ শতকে যখন দুই পক্ষ সৈন্য-সামন্ত নিয়ে যুদ্ধের মাঠে মুখোমুখি দাঁড়াতো, তখন উভয় পক্ষেই বাদক দল দেখা যেত। এই দলের কাজই হচ্ছে, ঢোল-বাদ্য ও বাঁশি বাজিয়ে সৈন্যদের উৎসাহিত করা। দেখা গেছে, যুদ্ধ শুরু হয়ে গেলেও, বাদক দল সৈন্যদের সাথে বাজাতে বাজাতে এগিয়ে যাচ্ছে। প্রতিপক্ষের কামানের গোলায় এক পা উড়ে গেলেও বাজানো থামাত না। ল্যাঙ্গড়াতে ল্যাঙ্গড়াতে বাজিয়ে যেত। তারা এতটাই অনুগত থাকত। বর্তমান রাজনীতিতে জাতীয় নির্বাচন নিয়ে দুই দলের মধ্যে যেন এমন এক পরিস্থিতি বিরাজ করছে। তারা ঢোল-বাদ্যের মাধ্যমে নয়, কথার তুবড়ির মাধ্যমে যুদ্ধের দামামা বাজিয়ে চলেছে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বিগত কয়েক সপ্তাহ ধরে অবিরত বলে চলেছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচনে বিএনপিকে আসতেই হবে। এছাড়া তাদের উপায় নেই। তা নাহলে দলটি যে ক্ষয়িষ্ণু অবস্থায় রয়েছে, তা আরও ক্ষয়িষ্ণুতর অবস্থায় চলে যাবে। অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। অন্যদিকে বিএনপির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাওয়ার প্রশ্নই ওঠে না। আর বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন হবে না। তিনি চ্যালেঞ্জ দিয়ে বলেছেন, উনারা (আওয়ামী লীগ) ভাল করেই জানেন, বিএনপি কী করতে পারে, কী না পারে। অতীতে তা প্রমাণ হয়েছে। সরকারি নিয়ন্ত্রণ ও পুলিশের নিয়ন্ত্রণ ছাড়া তারা নির্বাচন করে দেখুক, কারা এদেশে নির্বাচনে সবচেয়ে বেশি জনপ্রিয় রাজনৈতিক দল। উভয় দলের সাধারণ সম্পাদক ও মহাসচিবের এসব ঝাঁঝালো বক্তব্য থেকে বুঝতে বাকি থাকে না, নির্বাচনের দামামা এখন থেকেই বেজে উঠেছে। এ দামামা বাজছে বক্তব্য, পাল্টা বক্তব্যের মাধ্যমে। বলার অবকাশ রাখে না, নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসবে, বক্তব্যের ঝাঁঝ ততই বৃদ্ধি পাবে এবং কথার বোমা বিস্ফোরিত হতে থাকবে।
দুই.
এ কথা তো এখন প্রতিষ্ঠিত যে, দেশে ক্ষমতার প্রতিদ্ব›িদ্ব বলতে দুটো দলকেই বোঝায়। এক. আওয়ামী লীগ। দুই. বিএনপি। বড় জাহাজের সাথে যেমন ছোট ডিঙ্গি নৌকা বাঁধা থাকে, তেমনি এই দুই দলের সাথেও ছোট ছোট দল ডিঙ্গি নৌকার মতোই এসে ভিড়ে রয়েছে। উভয় দল এই ছোট ছোট দল নিয়ে জোট বেঁধেছে। যদিও রাজনৈতিক মাঠে এসব ছোট দলের কার্যক্রম খুবই কম। অন্যদিকে জাতীয় সংসদের বিরোধী দল হিসেবে পরিচিত জাতীয় পার্টির কার্যক্রমে বিরোধী দলের যে ভূমিকা, তা দূরবীণ দিয়েও খুঁজে পাওয়া যায় না। দলটিকে অনেকে ‘জ্বী হুজুর’-এর দল বলে থাকেন। ক্ষমতাসীন দল যা বলে, তাতেই জ্বী জ্বী করে। ফলে এ দলটিকে নিয়ে দেশের মানুষ খুব একটা মাথা ঘামায় না। তাদের সকল দৃষ্টি ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ ও প্রধান রাজনৈতিক বিরোধী দল বিএনপির দিকে। সকলেই জানেন, ক্ষমতাকেন্দ্রিক রাজনীতিতে এই দুইটি দলই মূল প্রতিদ্ব›দ্বী। যথাযথভাবে ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে এ দুইটি দলের যে কোনো একটি ক্ষমতায় যাবে। ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের নির্বাচনী যুদ্ধও তাই বিএনপিকে টার্গেট করেই করা হচ্ছে। বিএনপির টার্গেটও ক্ষমতাসীন দল। এজন্যই তারা আগাম নির্বাচনী বাকযুদ্ধে লিপ্ত হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, নির্বাচনে কার প্রস্তুতি কেমন? কে কি অস্ত্র নিয়ে নির্বাচনী যুদ্ধে অবতীর্ণ হবে? আমরা যদি ক্ষমতাসীন দলের দিকে দৃষ্টি দেই তবে দেখব, দলটি বেশ সুবিধাজনক অবস্থানে রয়েছে। অনেকে এ কথাও জোর দিয়ে বলছেন, আগামী নির্বাচনেও তারাই ক্ষমতায় আসবে। এর কারণ হিসেবে তাদের অভিমত হচ্ছে, ক্ষমতাসীনদের মূল অস্ত্র প্রশাসন। তারা প্রশাসনকে এমনভাবে সাজিয়েছে যে, এখানে তাদের অনুগত লোক ছাড়া খুব কম লোকই আছে। সর্বত্রই তাদের দলীয় লোক। আগামী নির্বাচন এই প্রশাসন দিয়েই হবে। কাজেই দলীয় লোকদের দিয়ে সাজানো প্রশাসন কি ক্ষমতাসীন দলের বাইরে যাবে? গেলে তো তাদের অস্তিত্বই হুমকির মুখে পড়বে। এর প্রমাণ হচ্ছে, বিগত সময়ে অনুষ্ঠিত পৌরসভা থেকে শুরু করে ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচন। এসব নির্বাচন ক্ষমতাসীন দল যেভাবে নেতা-কর্মীদের মাধ্যমে প্রভাব বিস্তার এবং হুমকি-ধমকির মাধ্যমে বিজয় ছিনিয়ে নিয়েছে, তা সম্ভব হয়েছে কেবলমাত্র প্রশাসনের পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ সহায়তার কারণে। এভাবে তৃণমূল পর্যন্ত ক্ষমতাসীন দল তার ক্ষমতা প্রতিষ্ঠিত করতে পেরেছে। এ অবস্থায় নির্বাচনে তাদের হেরে যাওয়া একেবারে অসম্ভব। আবার ক্ষমতাসীন দল জোর দিয়েই বলছে, তাদের অধীনেই আগামী নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। যদি তাই হয়, তবে তাদের বিজয় হয়ে উঠবে সময়ের ব্যাপার মাত্র। প্রশ্ন হচ্ছে, এভাবে বিজয়ের মধ্যে কোনো গৌরব আছে কিনা? সাধারণ অর্থে নেই। কারণ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত ও প্রত্যক্ষ ভোটের মাধ্যমে নির্বাচিত হয়ে ক্ষমতায় যাওয়ার মধ্যে যে শক্তি ও স্বস্তি থাকে, প্রশাসন নির্ভর নির্বাচনের মধ্যে তা থাকে না। ২০১৪ সালের ৫ জানুয়ারির নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল সাংবিধানিকভাবে নির্বাচিত হয়েছে ঠিকই, তবে জনগণের প্রত্যক্ষ ভোটে নির্বাচিত না হওয়ায় তা মোটেও গৌরবের ছিল না, এখনও নয়। এতে অবশ্য ক্ষমতাসীন দল অগৌরব বোধ করছে না। তারা সগৌরবেই ক্ষমতা ভোগ করে চলেছে এবং এর মাধ্যমেই আবারও ক্ষমতায় থাকার পথ পাকাপোক্ত করে ফেলেছে। আসলে ক্ষমতা এমন এক জিনিস যেভাবেই তা আসুক না কেন, বিজয়ী দল তা ভোগ করতে দ্বিধা করে না। তারা ভাল করেই জানে, প্রতিপক্ষকে যদি দুর্বল হয়ে পড়ে বা দুর্বল করে ফেলা যায়, তখন জনগণ কী বলল, তাতে কিছু আসে যায় না। তাদের পক্ষ হয়ে বলার মতো কোনো প্রতিনিধিত্বশীল শক্তি যদি না থাকে, তবে জনগণের কথা শোনা যায় না। ক্ষমতা এমনই এক জিনিস যা দিয়ে লাজ-লজ্জা ঢেকে ফেলা যায়। কেউ যে কিছু বলে লজ্জা দেবে, এ সুযোগও ক্ষমতাসীনরা রাখে না। বিভিন্ন কৌশলে জনগণের দৃষ্টি তা থেকে সরিয়ে দেয়ার জন্য একটার পর একটা কৌশল অবলম্বন করে। বর্তমান ক্ষমতাসীন দলও এই কৌশল অবলম্বন করে চলেছে। প্রথমত উন্নয়নের জোয়ার বইয়ে দেয়ার কথা, দ্বিতীয়ত জঙ্গী দমনের ইস্যুর কথা। নিজেদের দুর্বলতা ঢাকতে এসব উন্নয়ন ও সাফল্যের কথা বলে চলেছে। জনগণের দৃষ্টি একেকবার একেকদিক সরিয়ে তার মূল ত্রæটি ঢেকে ফেলার চেষ্টা করছে। এরূপ কাজ সাধারণত স্বৈর শাসকরা করে থাকে। আমরা যদি স্বৈরশাসকদের শাসনামলের দিকে তাকাই, তবে দেখব তারাও একই ধারায় ক্ষমতা ভোগ করেছে। এ ধরনের সরকার এবং স্বৈরাচারদের মধ্যে পার্থক্য শুধু সাংবিধানিক বৈধতা। স্বৈরাচারদের সাংবিধানিক বৈধতা থাকে না। অন্যদিকে সাংবিধানিক বৈধতাধারী সরকার এ অস্ত্রটি ব্যবহার করে তাদের ইচ্ছামতো দেশ পরিচালনা করে। তারা এতটাই নিস্পৃহ হয় যে, নিজেদের সমর্থকদেরও খুব একটা আমলে নেয় না। এর কারণ হচ্ছে, তারা জানে তাদের সমর্থক ও জনসাধারণের ভোটের মাধ্যমে তারা ক্ষমতায় আসেনি। কাজেই এ নিয়ে মাথা ঘামানোর প্রয়োজন নেই। বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের মনোভাব এবং আচার-আচরণেও তাই প্রতীয়মাণ হচ্ছে। তারা ভাল করেই জানে, জনগণের কাছে যাওয়া মানে ক্ষমতায় থাকা অনিশ্চিত হয়ে পড়া। তার চেয়ে সাজানো-গোছানো প্রশাসন যন্ত্র দিয়ে যতক্ষণ টিকে থাকা যায়, ততই মঙ্গল। যদিও গত শনিবার চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের প্রতিনিধি সভায় আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে শঙ্কার কথা প্রকাশ করে বলেছেন, অবৈধভাবে অর্জিত টাকা-পয়সা থাকবে না। ক্ষমতায় না থাকলে টাকা নিয়ে পালিয়ে থাকতে হবে। সরকার ক্ষমতা হারালে নেতাকর্মীদের দেশ ছেড়ে পালাতে হবে। তার এ বক্তব্যের মধ্যেই প্রতিভাত হয়, নিরঙ্কুশ ক্ষমতা ক্ষমতাসীন দলের নেতা-কর্মীদের কতটা বেপরোয়া করে তুলতে পারে। যার ফলাফল দাঁড়াতে পারে, ক্ষমতা হারানো, এমনকি দেশ ত্যাগ।
তিন.
জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে বিএনপির প্রস্তুতি কি তা এখনও পরিস্কার নয়। পত্র-পত্রিকায় একেক সময় একেক ধরনের প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। কোনো কোনো প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, বিএনপি নীরবে প্রস্তুতি নিচ্ছে। কোনো কোনো প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিএনপির সাংগঠনিক অবস্থা অনেকটা হ-য-ব-র-ল। আর বিএনপির মহাসচিব থেকে শুরু করে প্রথম সারির নেতারা স্পষ্ট করেই বলছেন, সহায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে তারা যাবেন না। আর বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন হতেও দেয়া হবে না। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন দলের সাধারণ সম্পাদক বলেছেন, বিএনপিকে কেন নির্বাচনে ডাকতে হবে। নির্বাচনে অংশগ্রহণ করা তাদের অধিকার। আমাদের তো কেউ নির্বাচনে ডেকে আনেনি। তাহলে আমরা কেন বিএনপিকে ডাকব। আবার এ কথাও বলা হয়েছে, বিএনপি অবশ্যই নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। কারণ আগামী নির্বাচনে অংশগ্রহণ না করলে তাদের নিবন্ধন বাতিল হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সাংগঠনিক বিপর্যয়ে থাকা বিএনপি আরও ছন্নছাড়া হয়ে যেতে পারে। কাজেই আগামী নির্বাচনে বিএনপির অংশগ্রহণ ছাড়া বিকল্প নেই। প্রশ্ন হচ্ছে, আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে কিনা? এ প্রশ্নের দুই ধরনের ব্যাখ্যা হতে পারে। প্রথমত বিএনপিকে প্রকাশ্যে জনসভা ও মিছিল করাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি যেভাবে ঘরবন্দি করে ফেলা হয়েছে, এ অবস্থা বজায় থাকলে দলটির পক্ষে নির্বাচন করা এক প্রকার অসম্ভব হয়ে পড়বে। আমাদের দেশে সাধারণত জাতীয় নির্বাচনের এক-দেড় বছর আগে থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতি ও হাওয়া বইতে থাকে। সরকার ও বিরোধী দল বড় বড় জনসভা ও মিছিল করে শক্তির জানান দেয়। এক্ষেত্রে এবার ভিন্ন চিত্র দেখা যাচ্ছে। সরকারি দল বড় বড় জনসভা করলেও বিএনপিকে তা করতে দেখা যাচ্ছে না। যদিও বিএনপির পক্ষ থেকে বরাবরই অভিযোগ করা হচ্ছে, সরকার বিভিন্ন অজুহাতে মিছিল-মিটিং করার অনুমতি দিচ্ছে না। অর্থাৎ বিএনপির রাজনৈতিক কর্মসূচি পালন ক্ষমতাসীন দলের অনুমতি নির্ভর হয়ে পড়েছে। অংশগ্রহণমূলক ও প্রতিযোগিতামূলক নির্বাচনের ক্ষেত্রে ক্ষমতাসীন দলের এ ধরনের আচরণ কোনোভাবেই সমীচিন হতে পারে না। তবে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন, বিএনপিকে এমন এক সময় এসে হয়তো মিছিল-মিটিং করার অনুমতি দেয়া হতে পারে, যখন দলটির হাতে প্রচার-প্রচারণা করার পর্যাপ্ত সময় থাকবে না। দেশের এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে জনগণের সামনে পৌঁছানো সম্ভব হবে না। অর্থাৎ অপ্রস্তুত অবস্থায় বিএনপিকে নির্বাচনের দিকে ঠেলে দেয়া হতে পারে। এটা ক্ষমতাসীন দলের রাজনৈতিক কৌশল। এখন এ কৌশল বিএনপি কীভাবে মোকাবেলা করবে, এটা তার ব্যাপার। তবে দলটির শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বরাবরই বলে আসছেন, বিএনপি নির্বাচনমুখী দল। সবসময়ই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত থাকে। তাদের এ কথার কিছুটা সত্যতা পাওয়া যায়, বিভিন্ন সাংগঠনিক কর্মকাÐের মাধ্যমে। ইতোমধ্যে দলটি শীর্ষ পর্যায়ের নেতাদের নিয়ে ৫১টি কমিটি গঠন করেছে। এসব কমিটি দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলা সফর করবে। জনমত গঠনে উঠান বৈঠকসহ প্রতিনিধি সভা করবে। ৭ মে এসব বৈঠক ও সভার একটি প্রতিবেদন বিএনপি চেয়ারপার্সনের কাছে জমা দিতে হবে। বলা বাহুল্য, বিএনপির এ কর্মসূচি বরাবরের মতোই সরকারি দল ও প্রশাসনের বাধার মুখে পড়তে পারে। আবার দলটি নির্বাচনে জয় লাভ করলে কীভাবে সরকার পরিচালনা করবে, তার একটি রূপরেখাও তৈরি করছে। ভিশন টুয়েন্টি-থার্টি শিরোনামে এ রূপরেখা আগামী ঈদের পর দলটির চেয়ারপার্সন জাতির সামনে উপস্থাপন করতে পারেন। শত সীমাবদ্ধতার মাঝেও দলটির এই যে প্রস্তুতিমূলক কর্মকাÐ এ থেকে প্রতীয়মাণ হয়, সে নির্বাচনে যেতে চায়। এ ধরনের প্রস্তুতির মাঝেই দলের শীর্ষ পর্যায়ের নেতারা বলছেন, কেবলমাত্র নির্বাচনী সহায়ক সরকার ও লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড হলেই তারা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। কোনো কোনো নেতা এ যুক্তিও দিচ্ছেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন দলের অধীনেই যদি নির্বাচনে যেতে হয়, তবে ৫ জানুয়ারির নির্বাচন কী দোষ করেছিল? তখনই তো যাওয়া যেত। তাহলে নেতা-কর্মীরাও এত হামলা-মামলা এবং জেল-জুলুমের শিকার হতো না। দলও বিপর্যয়ে পড়ত না। কাজেই নির্বাচনকালীন সহায়ক সরকার ছাড়া নির্বাচনে যাওয়া যাবে না। বিএনপির বর্তমান অবস্থান বিবেচনায় বলা যায়, দলটি মাঝপথে দাঁড়িয়ে আছে। পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছে এবং নির্বাচন অবাধ ও গ্রহণযোগ্য করার জন্য বিভিন্ন বক্তব্য-বিবৃতি দিয়ে সরকারের উপর চাপ সৃষ্টির কৌশল নিয়েছে। সাংবিধানিক কাঠামোর মধ্যে থেকে যদি একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ সৃষ্টি করা যায়, তবে বিএনপির এ দাবী কারো উপেক্ষা করার কারণ নেই। উপেক্ষা তারাই করবে, ক্ষমতায় না থাকলে যাদের দেশ ছেড়ে পালাতে হবে।
চার.
এখন সময় বদলেছে। আন্তর্জাতিক ও আঞ্চলিক রাজনীতিরও ব্যাপক পরিবর্তন সাধিত হয়েছে। বিশেষ করে বিশ্বের প্রভাবশালী দেশগুলোর মনোভাবেও পরিবর্তন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। আমাদের দেশের ব্যাপারে অনেক আগে থেকেই ইউরোপ-আমেরিকার ব্যাপক আগ্রহ রয়েছে। গত জাতীয় নির্বাচনটি এসব দেশের কাছে গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এখনও তাদের মনোভাব একই রয়েছে। আবার ভারত অনেকটা একতরফা সমর্থনের মাধ্যমে যেভাবে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্যতা দিয়েছে, সে ভারতের মনোভাবেও পরিবর্তন এসেছে বলে পর্যবেক্ষকরা মনে করছেন। ভারতও চাইছে না, আরেকটি একতরফা নির্বাচন হোক। এ প্রেক্ষিতে নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসবে, দেশের দুই বড় দলের মধ্যে পাল্টাপাল্টি কথা চালাচালি তত বাড়বে। দোষারোপের রাজনীতি উত্তুঙ্গে উঠবে। এখনই তার আভাস পাওয়া যাচ্ছে। নির্বাচনের আগে কথা হবে, বাগযুদ্ধ হবে, তাতে কোনো আপত্তি নেই। তবে তা গঠনমূলক ও রুচির মধ্যে থাকা বাঞ্চনীয়। জনগণের আশা-আকাক্সক্ষার বাস্তবানুগ প্রতিফলন থাকা জরুরী। কেবল কথার ফুলঝুরি এবং কথার কথা বা রাজনৈতিক উদ্দেশ প্রণোদিত কথার অপসংস্কৃতি থেকে সরে আসা উচিত। জনগণের সামনে যে কথা বলা হবে তা ভেবেচিন্তে বলা এবং বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপন করা অপরিহার্য।
[email protected]



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: নির্বাচন

২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ