বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : নম্বর প্লেটের জায়গায় শুধু ‘কুমিল্লা থ-১১’ লিখে নগর গ্রাম-গঞ্জে চলছে অসংখ্য সিএনজি অটোরিকশা। এরমধ্যে কুমিল্লা নগর থেকে উত্তর গ্রামীণ জনপদের বাগড়া নামক স্থান পর্যন্ত চলছে নম্বরবিহীন প্রায় দেড় হাজার সিএনজি অটোরিকশা। এ রুটে নম্বরবিহীন অটোরিকশা চলাচল করতে হলে ‘আজমির পরিবহন স্টিকার’ গাড়িতে ব্যবহার করতে হবে। আর এজন্য স্টিকার বাণিজ্যের মূলহোতা শাহআলমকে প্রতিমাসে দিতে হয় এক হাজার টাকা। এভাবে দেড় হাজার সিএনজি থেকে স্টিকার বাবদ প্রতিমাসে শাহআলম নিজেই আদায় করে ১৫ লাখ টাকা। অন্যদিকে ওই অনিবন্ধিত দেড় হাজার ও নিবন্ধিত ৫শ’ সিএনজির প্রতিটি থেকে প্রতিদিন ৫০ টাকা হারে এক লাখ টাকা জিপি’র চাঁদা দিচ্ছে। আবার নগরীর তিনটি মোড়ে নির্দিষ্ট একটি রুটে চলাচলকারি প্রায় তিনশ’ সিএনজি অটোরিকশা থেকে ১০৫ টাকা হারে প্রতিদিন জিপি ফান্ডের নামে চাঁদা তোলা হয় সাড়ে ৩১ হাজার টাকা। নগরীর অন্যান্য রুটেও এধরণের চাঁদাবাজি চলছে। দীর্ঘদিন ধরে সিএনজি অটোরিকশা ঘিরে স্টিকার ও জিপি ফান্ডের নামে একটি সংঘবদ্ধ চক্র চাঁদাবাজি করে আসছে। কিন্তু এসব দেখার কেউ নেই।
বাংলাদেশ রোড ট্রান্সপোর্ট অথরিটি (বিআরটিএ) কুমিল্লা শাখা সূত্রে জানা যায়, যোগাযোগ মন্ত্রাণালয়ের নির্দেশ ২০০৯ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ৮হাজার ৩২৩টি সিএনজিচালিত অটোরিকশা কুমিল্লা-থ-১১ সিরিয়ালে রাস্তায় চলাচলের জন্য রেজিস্ট্রেশন দেয়া হয়। ওই পরিমাণ কোটা অতিক্রম করার পর রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় কুমিল্লা বিআরটিএ কর্তৃপক্ষ। প্রায় সাড়ে সাত রেজিস্ট্রেশন কার্যক্রম বন্ধ থাকলেও ভারত থেকে আমদানি প্রক্রিয়া চালু থাকায় কুমিল্লায় চলছে সিএনজি অটোরিকশা বেচা-কেনা। সেই হিসেবে কুমিল্লার নগর গ্রাম-গঞ্জে বর্তমানে আট হাজারের বেশি নম্বরবিহীন সিএনজি অটোরিকশা রাস্তায় চলাচল করছে। এসব নম্বরবিহীন সিএনজি অটোরিকশার কিছু অংশ ট্রাফিক পুলিশের সাথে অলিখিত চুক্তিতে চলাচল করলে কুমিল্লা নগরীর দুইটি মোড় থেকে প্রায় দেড় হাজার সিএনজি চলাচলে চালকরা ব্যবহার করছে এক অভিনব স্টিকার। নগরীর ফৌজদারি মোড় ও রাজগঞ্জ থানা রোড মোড় থেকে চলাচলকারি নম্বরবিহীন এসব সিএনজি ‘আজমির পরিবহন’ নামে একটি স্টিকার ব্যবহার করে। প্রতিমাসেই পরিবর্তন করতে হয় এ স্টিকার। এক হাজার টাকায় কেনা এ স্টিকারে অমোচনীয় কালিতে দিন মাস ও সন উল্লেখ থাকে। ওই দুইটি মোড় থেকে নম্বরবিহীন এসব সিএনজি স্টিকারের মাধ্যমে গোমতী নদীর উত্তর জনপদের বাগড়া নামক স্থান পর্যন্ত নির্বিঘেœ চলাচল করতে পারে। এসব সিএনজির চালকরা জানান, ‘আজমির পরিবহন নামের স্টিকার গাড়িতে লাগানো থাকলে চলাচলে কোনরকম সমস্যা হয় না। প্রতিমাসে এক হাজার টাকার বিনিময়ে সদরের ফকির বাজারের শাহআলমের কাছ থেকে এ স্টিকার কিনে নিতে হয়। ফকির বাজারেই শাহআলমের অফিস। সেখানে তার নিয়োজিত চেকার রয়েছে। তারা প্রায়ই স্টিকার পরীক্ষা করে। পুরনো মাসের স্টিকার লাগানো থাকলে গাড়ি চলতে বাধা দেয়। প্রতিমাসের স্টিকার ১ থেকে ৫ তারিখের মধ্যে কিনে নিতে হয়। চালকরা জানান, স্টিকার কেনার পরও প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার অনিবন্ধিত এবং একই রুটে চলাচলকারি ৫ শতাধিক নিবন্ধিত সিএনজি থেকে জিপি ফান্ডের নামে ৫০ টাকা হারে চাঁদা আদায় করা হয়।’
চালকদের হিসেব মতে কুমিল্লা সদরের ফকির বাজারের শাহআলম স্টিকার বাণিজ্যে প্রতিমাসে প্রায় দেড় হাজার সিএনজি থেকে ১৫ লাখ টাকা আদায় করছে। আর ওইরুটে চলাচলকারি নিবন্ধিত-অনিবন্ধিত মোট দুই হাজার সিএনজি অটোরিকশা থেকে জিপি ফান্ডের নামে ৫০ টাকা হারে প্রতিদিন চাঁদা আদায় করা হচ্ছে প্রায় এক লাখ টাকা। অন্যদিকে নগরীর প্রাণকেন্দ্র কান্দিরপাড় থেকে পদুয়ারবাজার-বিশ্বরোডমুখি অন্তত তিনশ’ সিএনজি অটোরিকশা চলাচল করছে। ওই রুটে চলাচলকারি এসব সিএনজির চালকরা তিনটি মোড়ে জিপি ফান্ডের নামে প্রতিদিন ১০৫ টাকা করে চাঁদা দিচ্ছেন। তারমধ্যে কান্দিরপাড়ে দিতে হয় ৫০ টাকা। টমসমব্রীজে দিতে হয় ১৫ টাকা এবং পদুয়ারবাজার এলাকায় ৪০ টাকা। বুড়িচংয়ের দুলালের নেতৃত্বে সজীব, নাজমুল ও গিয়াসউদ্দিন প্রতিদিন তিনশ’ সিএনজির চালক থেকে প্রায় সাড়ে ৩১ হাজার টাকা জিপি ফান্ডের নামে চাঁদা আদায় করে। চালকরা জানান, এ টাকা কোন স্বার্থে নেয়া হয় তারা জানেন না। তবে চাঁদা না দিলে সিরিয়াল দেয়া হয় না এবং গালমন্দ করে এলাকা থেকে সিএনজি বের করে দেয়।
কুমিল্লা ট্রাফিক পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ‘কুমিল্লা ট্রাফিক পুলিশ বিভাগ অনিবন্ধিত সিএনজির অটোরিকশার বিরুদ্ধে যথারীতি অভিযান অব্যাহত রেখেছে। আমরা এসব বাহন আটক করে দু’টি খাতে ২ হাজার ৫০০ টাকা জরিমানা করছি। মামলা দিচ্ছি। কুমিল্লার ট্রাফিক পুলিশ সিএনজিসহ কোন ধরণের যানবাহন থেকে অবৈধভাবে অর্থ নেয়ার কাজে জড়িত নয়’।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।