গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
মালেক মল্লিক : সরকারি খরচে আইনি সেবা বাড়ছে। এতে করে লাভবান হচ্ছেন রাষ্ট্রের নিঃস্ব, দরিদ্র, অসহায় ও মামলা পরিচালনা করতে অঙ্গম বিচারপ্রার্থীরা। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, গত ৮ বছরে ২ লাখ ৩১ হাজার ৬২৬ জন সহায়তা নিয়েছে। এসবের মধ্যে (ট্রোল ফ্রি) হেল্পলাইনে আইনি সহায়তা নেয় ১৪ হাজার, কারাগারে আটককৃতরা ৪০ হাজারের বেশি। এছাড়াও নিষ্পত্তিকৃত মামলার সংখ্যা ৬৪ হাজার ৫৪৬টি। ২০০৯ আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরুর পর থেকে প্রান্তিক জনগোষ্ঠীর অসহায় ও গরিবদের আইনি সেবা ও পরামর্শ দিচ্ছেন জাতীয় আইনগত সহায়তা সংস্থা। সুপ্রিম কোর্ট থেকে শুরু করে জেলা, উপজেলা, ইউনিয়ন, চৌকি ও শ্রম আদালতে কাজ করে যাচ্ছে প্রতিষ্ঠানটি। সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন, পারিবারিক কলহ, নারী নির্যাতন ও জমি-জমা সংক্রান্ত বেশি সেবা নিয়েছে। বর্তমানে দেশের অসহায় ও দরিদ্রদের কাছে আইনি সেবার একমাত্র শেষ আশ্রয় (আইনগত সহায়তা সংস্থা) স্থলে পরিণত হয়েছে।
আজ ২৮ এপ্রিল (শুক্রবার) জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস। দিবস উপলক্ষে নানা কর্মসূচি পালন করছে সরকার। মামলা ছাড়াই বিরোধ নিষ্পত্তি নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি ড্রামা উদ্বোধন ও প্রদর্শন করা হবে। বিরোধ হলে শুধু মামলা নয় লিগ্যাল এইড অফিসে আপোষও হয়। এই স্লোগানকে সামনে রেখে ৫ম বারের মতো দিবসটি পালিত হচ্ছে। সকাল ১০টায় রাজধানীর ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
জনগণের মৌলিক অধিকার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে আর্থিকভাবে অসচ্ছল, সহায়-সম্বলহীন এবং নানাবিধ আর্থ-সামাজিক কারণে বিচার প্রাপ্তিতে অসমর্থ বিচারপ্রার্থী জনগণকে আইনগত সহায়তা প্রদানকল্পে আইনগত সহায়তা প্রদান আইন, ২০০০ প্রণীত হয়। সর্বোচ্চ আদালত থেকে শুরু করে প্রতি জেলার আদালত ভবনে, উপজেলা ও ইউনিয়ন কমিটি গঠন করা হয়। সর্বশেষ চৌকি আদালত ও শ্রম আদালতে কমিটি গঠন করা হয়। ২০১৬ সালে প্রধানমন্ত্রী ১৬৪৩০ (টোল ফ্রি) জাতীয় হেল্পলাইন চালু করেন। এরপর থেকে দেশের যে কোনো স্থান থেকে যে কেউ যে কোনো ফোনের মাধ্যমে বিনামূল্যে কল করে আইনি পরামর্শ পেতে পারেন। পুরুষের চেয়ে নারীরা বেশি সেবা নিচ্ছেন। সকাল ৯টায় থেকে বিকাল ৫টায় পর্যন্ত ২ জন কাউন্সিলর ফোনের মাধ্যমে বিনামূল্য আইনি সহায়তা দেন। ২০১৩ সালে ২৮ এপ্রিলকে জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস ঘোষণা করে। এরপর প্রতি বছর ২৮ এপ্রিল আইনগত সহায়তা দিবস পালন করা হচ্ছে।
কর্মসূচি : আজ শুক্রবার সকাল ১০টায় ঢাকাস্থ ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে ‘জাতীয় আইনগত সহায়তা দিবস এর কেন্দ্রীয় অনুষ্ঠান উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। আইনমন্ত্রী আনিসুল হকের সভাপতিত্বে বক্তব্য রাখবেন জাতীয় আইনগত সহায়তা কেন্দ্রের পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান। মামলা ছাড়াও বিরোধ নিষ্পত্তি নিয়ে একটি ডকুমেন্টারি ড্রামা উদ্বোধন ও প্রদর্শন করা হবে। এছাড়া, তৃণমূল পর্যায়ে সরকারি আইনি সেবার বার্তা পৌঁছে দেয়ার জন্য সারা দেশে লিগ্যাল এইড র্যালি, মেলা, পথনাটিকা, টক-শো, গোল টেবিল বৈঠক, সভা-সেমিনার, মাইকিং ও রক্তদান কর্মসূচির আয়োজন করা হয়েছে। গত বুধবার আইন মন্ত্রণালয়ে সাংবাদিক সম্মেলনে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, সর্বস্তরের মানুষের অকুন্ঠ সমর্থন ও সহযোগিতা পেলে সরকারি আইনি সেবা কার্যক্রম আরও কার্যকর, গতিশীল ও শক্তিশালী হবে। এছাড়াও সুপ্রিমকোর্ট লিগ্যাল এইড কমিটি মানবাধিকার ও মিডিয়া কর্মীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন। কমিটির চেয়ারম্যান বিচারপতি এম ইনায়েতুর রহিম বলেন, সরকারি খরচে দরিদ্র অসহায়দের সেবার মান ক্রমাগতভাবে বেড়েই চলছে।
জাতীয় আইনগত সহায়তা অফিস সূত্রে জানা যায়, ২০০৯ থেকে ২০১৭ সালের মার্চ পর্যন্ত মোট ২ লাখ ৩১ হাজার ৬২৬ জনকে সরকারি আইনি সেবা প্রদান করা হয়েছে। ২০১২-২০১৭ পর্যন্ত ১ লাখ ৬৬ হাজার ৩৩৯ জনকে মামলায় আর্থিক সহায়তা, কারাগারে আটককৃত ৪০ হাজার ৭১৫ জনকে আইনগত সহায়তা প্রদান করা হয়েছে। আর ১৬৪৩০ হেল্পলাইনের মাধ্যমে গত এক বছরে ১৪ হাজার ৪৮৭ জন সেবা নেয়। এর মধ্যে পুরুষ ৭ হাজার ৭৬ জন, নারী ৩ হাজার ৩৯ জন সেবা নিয়েছেন। নিষ্পত্তিকৃত মামলার সংখ্যা প্রতি বছর বাড়ছে। ২০০৯ সালে নিষ্পত্তি হওয়া মামলার সংখ্যা ছিল ৩ হাজার ৫২৪, ২০১০ সালে তা বেড়ে হয় ৫ হাজার ৫০৬। ২০১৪ সালে ১০ হাজার ৬৭৪। ২০১৫ সালে ১২ হাজার ৪১৬টি মামলা নিষ্পত্তি হয়েছে। গত বছরে ১৪ হাজারের বেশি। সব মিলিয়ে ৬৪ হাজার ৫৪৬টি মামলা নিষ্পত্তি হয়। এসবের মধ্যে দেওয়ানি ২২ হাজার ৪৬টি, আর ফৌজদারি ৪২ হাজার ৩৭৮টি মামলা নিষ্পত্তি হয়। ২০১২ সাল থেকে চলতি বছর মার্চ পর্যন্ত কারাগারে আটক ব্যক্তিরা ৪০ হাজার ৭১৫ জনকে আইনগত সহায়তা দেয়া হয়।
সুপ্রিমকোর্ট কমিটি : ২০১৫ সালে সুপ্রিমকোর্টে লিগ্যাল এইড কার্যালয় উদ্বোধনের পর থেকে সরকারি সহায়তা আইনি সেবা প্রদান করে আসছেন। পাঁচটি ক্যাটাগরিতে এ সেবা দেয়া হয়। জানা যায়, এ পর্যন্ত ৫৫৫টি মামলার মধ্যে ২৯৮টি মামলার নিষ্পত্তি হয়। এছাড়া ১২৩২ জন বিচারপ্রার্থীকে মৌখিক পরামর্শ দেয়া হয়।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জাতীয় আইনগত সহায়তা প্রদান সংস্থার ভারপ্রাপ্ত পরিচালক মোস্তাফিজুর রহমান ইনকিলাবকে বলেন, জাতীয় আইনগত সহায়তা কেন্দ্রের মাধ্যমে হতদরিদ্ররা বিনামূল্যে আইনি সহায়তা পাচ্ছেন। এতে করে মামলা চালানো অক্ষম ব্যক্তিরা তাদের সাংবিধানিক অধিকার ভোগ করছেন। দেশে আইনি শাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এটা কিন্তু তাদের লাভবান কিছু না; কারণ এটা দরিদ্রদের সাংবিধানিক অধিকার। সরকার এ বিষয়ে সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিচ্ছেন। ৫ম বারের মতো দিবসটি পালন হতে যাচ্ছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।