পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
উজানের আকস্মিক ঢল এবং অকাল বন্যায় দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলীয় হাওরে লাখ লাখ হেক্টর বোরো ধান তলিয়ে দিয়ে লাখ লাখ কৃষক পরিবারকে সর্বস্বান্ত করে দিয়েছে অত:পর উত্তরাঞ্চলীয় চলনবিল এলাকাকে অকাল বন্যায় গ্রাস করতে শুরু করেছে। গত কয়েকদিনে চলনবিলের হাজার হাজার হেক্টর ধানক্ষেত পানিতে তলিয়ে যেতে শুরু করার প্রেক্ষাপটে স্থানীয় প্রশাসনের পক্ষ থেকে আগাম আধাপাকা ধান কেটে ঘরে তোলার জন্য কৃষকদের প্রতি আহ্বান জানানো হচ্ছে বলে গতকাল প্রকাশিত সংবাদে জানা যায়। একদিকে উজানে ভারত সীমান্তে নির্মিত বাঁধ ও ড্যামগুলোর সøুইস গেট উন্মুক্ত করে দেয়া, অন্যদিকে কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে দেশের অন্যতম শস্যভাÐার চলনবিল এলাকা এখন ফসলহানির বিপর্যয়ের শিকার বলে সংশ্লিষ্টরা জানিয়েছেন। ভারত একতরফাভাবে অভিন্ন নদীগুলোর পানি প্রত্যাহার করায় নদীতে পলিজমে ক্রমান্বয়ে নদীগুলোর নাব্যতা ও পানি ধারণ ক্ষমতা হ্রাস পাওয়ায় হঠাৎ ছেড়ে দেয়া পানিতে বিস্তীর্ণ এলাকা প্লাবিত হয়ে যায়। সেই সাথে মৌসুমী ভারী বৃষ্টিপাতের খড়গ হাওর ও বিলের কৃষকদের জন্য কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে। আগাম বন্যা ও উজানের ঢলে ফসলহানির ঘটনা হাওরাঞ্চলসহ নিম্ন এলাকায় সাংবাৎসরিক বিষয় হয়ে উঠলেও এবার অতীতের সব মাত্রা ছাড়িয়ে গেছে। হাওরে ফসলহানির পর চলনবিল এলাকার বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধগুলোর মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জরুরী উদ্যোগ গ্রহণের বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কোন উদ্যোগ দেখা না গেলেও এখন যখন ভরা ধান তলিয়ে যেতে শুরু করেছে তখন স্থানীয় প্রশাসনের টনক নড়েছে।
চলনবিল এলাকায় ক্রমাগত পানিবৃদ্ধিতে চরম উদ্বিগ্ন স্থানীয় জনসাধারণ গত কয়েকদিন ধরে নিজস্ব উদ্যোগে বিলের বন্যা নিরোধক বাঁধগুলোর নিচু ও ক্ষতিগ্রস্ত অংশ মেরামতের মাধ্যমে পানি আটকানোর চেষ্টা করে যাচ্ছে। গতকাল প্রকাশিত রিপোর্ট অনুসারে প্রবল ঢলের তোড়ে ইতিমধ্যে অনেক ধানিজমি পুরোপুরি পানিতে তলিয়ে গেছে। সর্বস্ব হারানোর চেয়ে যেটুকু সম্ভব তুলে নেয়ার জন্য ডুবন্ত আধাপাকা ধান কেটে আনতে সচেষ্ট রয়েছে কৃষকরা। শত শত বর্গকিলোমিটার এলাকা নিয়ে গড়ে ওঠা চলনবিল ও আত্রাই এলাকা দেশের অন্যতম কৃষিক্ষেত্র ও শস্যভাÐার। শুধু ধানই নয়, গত কয়েক দশেকে চলনবিল এলাকার কৃষি ব্যবস্থায় বড় ধরনের বৈচিত্র্য গড়ে উঠেছে। ধান, রবিশস্য, তরি-তরকারি, হাজার হাজার টন তৈলবীজ ও চিনাবাদাম উৎপাদিত হয় চলনবিল এলাকায়। কয়েকদিনের ভারী বৃষ্টি এবং উজানের ঢলে ধানের পাশাপাশি এ অঞ্চলের সব ফসলেরই বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। হাওরে ফসলহানি, রাসায়নিক দূষণে মৎস্যসম্পদ নিধন, হাঁস এবং লাইভস্টক বা শত শত গবাদিপশু মৃত্যুর পর চলনবিল এলাকায় অকাল বন্যাজনিত ফসলহানি আরো কয়েক লাখ কৃষকের জন্য বড় ধরনের অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টির পাশাপাশি দেশে বড় ধরনের খাদ্য ঘাটতি সৃষ্টি করতে পারে। চলনবিল-আত্রাই অঞ্চলের অনেক মানুষ এখনো বিনিদ্র রজনী যাপন করে হুমকির সম্মুখীন বাঁধগুলো রক্ষায় আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। সরকারের সংশ্লিষ্ট দফতর এবং স্থানীয় প্রশাসন সর্বাত্মক চেষ্টা করলে হয়তো এখনো চলনবিলে বড় ধরনের বিপর্যয় থেকে রক্ষা পাওয়া সম্ভব।
হাওর এলাকায় সাম্প্রতিককালের নজিরবিহীন বন্যা এবং দূষণে লাখ লাখ হেক্টর জমির ধান এবং হাজার হাজার টন মৎস্যসম্পদ ধ্বংস হয়ে যাওয়ায় হাওরাঞ্চলজুড়ে যে হাহাকার শুরু হয়েছে এখন তা দেশের উত্তরাঞ্চলেও বিস্তৃত হতে চলেছে। পাবনা, নাটোর, সিংড়া, নিয়ামতপুর ও আত্রাইয়ের কৃষকদের আহাজারিতে এখন আকাশ-প্রকৃতি ভারী হয়ে উঠেছে। অকাল বর্ষণ ও ভারতের ঠেলে দেয়া পানির এই সর্বনাশা তাÐব জাতির জন্য এক অশনিসংকেত। তবে বাংলাদেশের কৃষকদের এই সর্বনাশা বিপর্যয়কে পুরোপুরি প্রাকৃতিক বিপর্যয় বলা যায় না। এর অনেকটাই মানবসৃষ্ট বিপর্যয় হিসেবে গণ্য হতে পারে। এ ছাড়া হাওরে মৎস্য সম্পদ ও জলজপ্রাণীর অস্বাভাবিক মড়কের কারণ সম্পর্কেও প্রকৃত তথ্য অনুসন্ধান ও উদ্ঘাটন এখন সময়ের দাবি। তবে এই মুহূর্তে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য হচ্ছে হাওরের বানভাসি কৃষকদের খাদ্য ও অর্থ সহায়তা দিয়ে আগামী ফসলের জন্য প্রস্তুত করা এবং চলনবিলে ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনার সর্বাত্মক প্রয়াস অব্যাহত রাখা। ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের পুনর্বাসন এবং ফসলহানি ও খাদ্য নিরাপত্তাজনিত ক্ষতি পূরণে সরকারকে সম্ভাব্য সবকিছুই করতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।