Inqilab Logo

শুক্রবার, ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ০৬ বৈশাখ ১৪৩১, ০৯ শাওয়াল ১৪৪৫ হিজরী

উজানের ঢলে বন্যার শঙ্কা

উত্তর-পূর্ব মধ্য-ভারত নেপাল হিমালয় অঞ্চলে অতিবৃষ্টি

শফিউল আলম | প্রকাশের সময় : ২৯ জুন, ২০২১, ১২:০০ এএম

সক্রিয় মৌসুমী বায়ুর প্রভাবে উজানে উত্তর-পূর্ব ও মধ্য-ভারত, নেপাল, হিমালয় পাদদেশীয় অঞ্চলে ভারী বৃষ্টিপাত হচ্ছে। মাঝারি থেকে ভারী, কোথাও কোথাও অতিভারী বর্ষণ হচ্ছে দেশের অভ্যন্তরেও। এরফলে প্রধান নদ-নদীসমূহের ভারতে উজানের অববাহিকায় পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। উজান থেকে ঢল আসা ক্রমাগত বৃদ্ধি পাওয়ায় ভাটিতে বাংলাদেশের প্রধান নদ-নদীগুলোতে বাড়ছে পানি। এ অবস্থায় দেশের উত্তরাঞ্চল, মধ্যাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে বন্যার পদধ্বনি দেখা দিয়েছে।
বাংলাদেশ ও ভারতের আবহাওয়া বিভাগের তথ্য-উপাত্ত উল্লেখ করে পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র গতকাল সোমবার পূর্বাভাসে জানায়, আগামী ৭২ ঘণ্টায় দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং এর সংলগ্ন ভারতের হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গ, সিকিম, আসাম, মেঘালয় ও ত্রিপুরা প্রদেশের অনেক স্থানে ভারী বৃষ্টিপাত হতে পারে। এরফলে এ সময়ে দেশের উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার, ব্রহ্মপুত্র, উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকা এবং দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের পার্বত্য অববাহিকার প্রধান নদীসমূহের পানি দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র গতকাল বিশেষ পূর্বাভাস প্রতিবেদনে জানায়, দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল, মধ্যাঞ্চলের ব্রহ্মপুত্র-যমুনা ও গঙ্গা-পদ্মা অববাহিকায়, লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর, কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, পাবনা, নওগাঁ ও নাটোর জেলাসমূহের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তাছাড়া উত্তর-পূর্বাঞ্চল ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের কতিপয় স্থানে নদ-নদী বিপদসীমা অতিক্রম করে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
এদিকে গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহের উজানে উত্তর-পূর্ব ভারতের অনেক স্থানে ভারী থেকে অস্বাভাবিক অতিভারী বর্ষণ হয়েছে। এ সময়ে চেরাপুঞ্জিতে ৩১৬ মি.মি., পাসিঘাটে ১৭২ মি.মি., জলপাইগুড়িতে ৫৫ মি.মি.সহ বিভিন্ন স্থানে ভারী থেকে অতিভারী বৃষ্টিপাত হয়। অন্যদিকে দেশের অভ্যন্তরেও মৌসুমী বায়ুর সক্রিয় প্রভাবে অনেক স্থানে ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হয়েছে। এ সময়ে সিলেট অঞ্চলে জাফলংয়ে ১৬৬ মি.মি., ছাতকে ১৩৫ মি.মি., লালাখালে ১২১ মি.মি., সিলেটে ১০৪ মি.মি., লরেলগড়ে ৭৫ মি.মি., সুনামগঞ্জে ৭০ মি.মি., শেওলায় ৬১ মি.মি., কানাইঘাটে ৫৭ মি.মি. এবং উত্তর জনপদের কুড়িগ্রামে ৫১ মি.মি. বৃষ্টিপাত রেকর্ড করেছে পাউবো।
নদ-নদীর প্রবাহ পরিস্থিতি সম্পর্কে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানায়, ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানি স্থিতিশীল আছে, যা আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে। কুশিয়ারা ব্যতীত দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের আপার মেঘনা অববাহিকায় প্রধান নদ-নদীসমূহের পানির সমতল বৃদ্ধি পাচ্ছে। যা আগামী ২৪ ঘণ্টা অব্যাহত থাকতে পারে।
দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহের ১০১টি পানির সমতল পর্যবেক্ষণ স্টেশনের মধ্যে গতকাল ৫১টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৪৬টি পয়েন্টে হ্রাস পায়। ৩টি স্থানে পানি অপরিবর্তিত থাকে। রোববার নদ-নদীসমূহের ৫০টি পয়েন্টে পানি বৃদ্ধি ও ৪৫টিতে হ্রাস পায়।
নদ-নদীতে পানি বৃদ্ধি
পাউবোর বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আরিফুজ্জামান ভূঁইয়া গতকাল বন্যা পূর্বাভাস সম্পর্কিত বিশেষ প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এতে দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহের আগামী ৭ দিনের সম্ভাব্য প্রবাহ পরিস্থিতি সম্পর্কে পূর্বাভাস দেয়া হয়েছে। পূর্বাভাসে জানানো হয়, জুন মাসে বাংলাদেশ ও উজানের অববাহিকাসমূহের অনেক স্থানে বৃষ্টিপাত, কোথাও কোথাও ভারী থেকে অতিভারী বর্ষণ হয়েছে। এরফলে নদীসমূহের পানি বৃদ্ধি পেলেও বিপদসমীমার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হয়েছে। আবহাওয়ার সাম্প্রতিক পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি সপ্তাহে উজানের অববাহিকাসমূহের অনেক স্থানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। এরফলে দেশের প্রধান নদ-নদীসমূহের পানি সামগ্রিকভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে।
বাংলাদেশ ও উজানের অববাহিকায় ভারতের অরুণাচল, আসাম, মেঘালয় ও হিমালয় পাদদেশীয় পশ্চিমবঙ্গের উপর আগামী ২৪ ঘণ্টায় মৌসুমী বায়ু আরও সক্রিয় হতে পারে। এরফলে চলতি সপ্তাহে অনেক স্থানে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টি হতে পারে। এর প্রভাবে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের পানি আগামী ৭ দিনে সামগ্রিকভাবে বৃদ্ধি পেতে পারে। জুলাই মাসের প্রথম সপ্তাহে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এ সময়ে কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধা, জামালপুর, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, মানিকগঞ্জ, পাবনা, নওগাঁ ও নাটোর জেলাসমূহের নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
একই সময়ে উত্তর জনপদের তিস্তা এবং ধরলা নদীর পানি বৃদ্ধি পেতে পারে। তিস্তা নদীর পানি কতিপয় স্থানে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এতে করে লালমনিরহাট, নীলফামারী এবং রংপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে স্বল্পমেয়াদী বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
চলতি সপ্তাহে উজানে ভারতের বিহার ও উত্তর প্রদেশে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে গঙ্গা নদীর পানি আগামী ৭ দিনে বৃদ্ধি পেতে পারে। এর পাশাপাশি একই সময়ে ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদের পানি বৃদ্ধির আশঙ্কার প্রেক্ষিতে পদ্মা নদীর পানি চলতি সপ্তাহে বৃদ্ধি পেতে পারে এবং কতিপয় স্থানে বিপদসীমা অতিক্রম করতে পারে। এ সময়ে দেশের মধ্যাঞ্চলে রাজবাড়ি, ঢাকা, মুন্সিগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, শরীয়তপুর ও চাঁদপুর জেলার নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে। তবে দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে গঙ্গা নদীর অববাহিকার জেলাগুলোতে বন্যার আশঙ্কা নেই।
উজানে আসাম ও মেঘালয় প্রদেশে মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টিপাতের ফলে আগামী ৭ দিনে সুরমা-কুশিয়ারা ও মেঘনা অববাহিকার উজানের অন্যান্য নদীর (সারিগোয়াইন, যদুকাটা, সোমেশ^রী, ভুগাই-কংষ, মনু, খোয়াই) পানি সময়বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। কতিপয় স্থানে বিপদসমীমা অতিক্রম করে আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতি সৃষ্টি হতে পারে।
আগামী ৭ দিনে দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অববাহিকায় মাঝারি থেকে ভারী বৃষ্টির ফলে এ অঞ্চলে নদ-নদীসমূহের পানি আগামী ৭ দিনে সময়বিশেষে দ্রুত বৃদ্ধি পেতে পারে। এ সপ্তাহে বান্দরবান ও কক্সবাজার জেলায় ভারী বর্ষণের কারণে কতিপয় স্থানে পাহাড়ধস তথা ভূমিধসের আশঙ্কা রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: উজানের ঢলে বন্যার শঙ্কা
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ