Inqilab Logo

সোমবার, ০১ জুলাই ২০২৪, ১৭ আষাঢ় ১৪৩১, ২৪ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

খেয়ালি আবহাওয়ায় বাড়ছে দুর্ভোগ

| প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম


অতিবর্ষণে বর্ষাকালীন অবস্থা : ঢাকায় বৃষ্টি শেষে অকালে কুয়াশাপাত
শফিউল আলম : দেশের আবহাওয়ায় খেয়ালিপনা বেড়েই চলেছে। ঋতুর ছক ও বৈশিষ্টের সাথে বিপরীতমুখী আবহাওয়ার আচরণে জনজীবনে বাড়ছে দুর্ভোগ। কৃষি-খামার, ফল-ফসলের উপর পড়েছে এর নেতিবাচক প্রভাব। গত দু’মাস যাবত বসন্ত আর গ্রীষ্মের চরিত্র পাল্টে গেছে। অত্যধিক বজ্রপাতের সাথে ঝরেছে অতিবৃষ্টি। গত মার্চ মাসে সমগ্র দেশে স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫২ শতাংশ বেশি বর্ষণ হয়েছে। চলতি এপ্রিল মাসে এ পর্যন্ত অধিক বর্ষণে দেশের অনেক এলাকায় বর্ষাকালীন অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। শুধু তাই নয়; গতকাল (রোববার) ঢাকায় দ্বিতীয় দিনের মতো বৃষ্টিপাত শেষে অকালে কুয়াশাপাত হয়েছে বিকেল বেলায়। ঢাকা ছাড়াও এ মাসে দেশের বিভিন্ন এলাকায় কুয়াশা ঝরেছে। আবহাওয়া ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা একে জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তনের সুস্পষ্ট আলামত হিসেবে দেখছেন।  
এদিকে আবহাওয়া বিভাগ জানায়, আজও (সোমবার) দেশের অনেক এলাকায় বৃষ্টি কিংবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। সাগর উত্তাল থাকায় সমুদ্র বন্দরগুলোকে ৩ নম্বর সতর্ক সঙ্কেত দেখাতে বলা হয়েছে।    
গত সন্ধ্যায় আবহাওয়ার সর্বশেষ অবস্থা সম্পর্কে জানা গেছে, লঘুচাপের একটি বর্ধিতাংশ ভারতের পশ্চিমবঙ্গ এবং এর সংলগ্ন বাংলাদেশে অবস্থান করছে যার বর্ধিতাংশ উত্তর বঙ্গোপসাগর পর্যন্ত বিস্তৃত রয়েছে। আজকের আবহাওয়া পূর্বাভাসে জানা গেছে, বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ এবং সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায়, খুলনা ও ঢাকা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় এবং রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের দুয়েক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা থেকে ঝড়ো হাওয়াসহ বৃষ্টি অথবা বজ্রসহ বৃষ্টিপাত হতে পারে। সেই সাথে বরিশাল, চট্টগ্রাম, ময়মনসিংহ এবং সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে অতি ভারী বর্ষণ হতে পারে। সারাদেশে দিন ও রাতের তাপমাত্রা ১ থেকে ২ ডিগ্রি সেলসিয়াস বৃদ্ধি পেতে পারে।পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় বৃষ্টি ও বজ্রবৃষ্টির প্রবণতা হ্রাস পেতে পারে। বর্ধিত পাঁচ  দিনে দিনের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে।
উত্তর বঙ্গোপসাগর এলাকায় বায়ুচাপের তারতম্যের আধিক্য বিরাজ করছে। উত্তর বঙ্গোপসাগর, বাংলাদেশের উপক‚লীয় এলাকা এবং সমুদ্র বন্দরসমূহের উপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যেতে পারে। চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মংলা ও পায়রা সমুদ্রবন্দরকে ৩ নম্বর স্থানীয় সতর্ক সঙ্কেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত মাছধরা নৌকা ও ট্রলারগুলোকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপক‚লের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। গতকাল সন্ধ্য ৬টা পর্যন্ত পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বোচ্চ বৃষ্টিপাত হয়েছে বরিশালে ৭২ মিলিমিটার। এ সময় ঢাকায় ৩২, চট্টগ্রামে ৫০, সিলেটে ১৩, খুলনায় ২৭ মি.মি. বৃষ্টি হয়েছে।
দক্ষিণাঞ্চলসহ উপকূলজুড়ে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া অব্যাহত : বরিশালে দেশের সর্বাধিক বৃষ্টিপাত
বরিশাল ব্যুরো : দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ উপকূলীয় এলাকায় দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া অব্যাহত রয়েছে। শনিবার রাতে ব্যাপক ব্রজপাতের সাথে ঘণ্টা দুয়েকের ভারি বর্ষণের পরে গতকাল সকাল থেকে আবহাওয়া যথেষ্ট ভাল থাকলেও দুপুর থেকে আকাশ কালো করা মেঘে দিগন্ত ঢেকে যায়। বিকেল ৪টার পরে পুনরায় ব্যাপক বজ্রপাতের সাথে ভারি বর্ষণে সমগ্র দক্ষিণাঞ্চলের জনজীবন বিপর্যস্ত হয়ে পরে। সন্ধা ৬টা পর্যন্ত বরিশালে প্রায় ৩০ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। এসময় প্রায় ৫৫ কিলোমিটার বেগের ঝড়ো হাওয়ায় জনজীবন অনেকটাই বিপর্যস্ত হয়ে পরে। গতকাল সকাল ৬টার পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় বরিশালে ৮৬ মিলিমিটার, ভোলাতে ৬৬ মিলিমিটার ও পটুয়াখালীতে ৬২ মিলিমিটার বৃষ্টি হয়েছে। গতকাল সন্ধ্যা ৬টার পূর্ববর্তী ২৪ ঘণ্টায় দেশের সর্বাধিক বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে বরিশালে ৭২ মিলিমিটার।
গত কয়েকদিনের প্রবল বর্ষণে দক্ষিণাঞ্চলসহ উপকূল ভাগের বোরো ও আউশ ধানের বেশিরভাগই এখন পানির তলায়। কয়েক লাখ হেক্টর জমির ধান নিয়ে দক্ষিণের কৃষককূল এখন চরম দুশ্চিন্তায়। বরিশাল মহানগরীসহ দক্ষিণাঞ্চলের বেশিরভাগ এলাকাতেই বিদ্যুৎ ব্যবস্থাও বার বার বিপর্যস্ত হয়ে পড়ছে। সাগর মাঝারী মাত্রায় উত্তাল রয়েছে। আবহাওয়া বিভাগ থেকে আজ (সোমবার) পর্যন্ত দক্ষিণাঞ্চলসহ সমগ্র উপকূলীয় এলাকায় ভারি থেকে অতি ভারি বর্ষণের সতর্কতা জারী রাখা হয়েছে। পায়রাসহ সবকটি সমুদ্র বন্দরে ৩ নম্বর সতর্কতা সংকেত বহাল রয়েছে। বরিশালসহ দক্ষিণাঞ্চলের সবগুলো নদী বন্দরকের ২ নম্বর সতর্ক সংকেতের আওতায় রাখা হয়েছে। ফলে অনধিক ৬৫ ফুট দৈর্ঘের সব যাত্রীবাহী নৌযানের চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে।
অমাবশ্যার ভরা কোটালকে সামনে রেখে বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা ধেয়ে এসে উপকূল ভাগসহ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে এ বৃষ্টি ঝড়াচ্ছে। উত্তর বঙ্গোপসাগরে বায়ুচাপের তারতম্য ও আধিক্য বিরাজ করার কথা জানিয়ে উত্তর বঙ্গোপসাগরসহ দেশের উপকূলীয় এলাকার ওপর দিয়ে ঝড়ো হাওয়া বয়ে যাবার কথা বলা হয়েছে। সমুদ্র বন্দরসমূহকে ৩ নম্বর সতর্ক সংকেত দেখানোর পাশাপাশি  উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সব মাছ ধরা নৌকা ও ট্রলারসমূহকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। তবে ইতোমধ্যে বিপুল সংখ্যক ছোট ও মাঝারী মাছধরা নৌকা ট্রলার মৎস্য বন্দর আলীপুর-মহীপুর, পাথরঘাটা, চরমোন্তাজ ঢালচর ও চর কুকরী-মুকরীতে আশ্রয় নিয়েছে বলে জানা গেছে।
মৌসুমী লঘুচাপ এখন উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থান করছে বলে আবহাওয়া বিভাগ থেকে জানান হয়েছে। ফলে গভীর সঞ্চালনশীল মেঘমালা গোটা উপকূলসহ দক্ষিণাঞ্চলের আকাশকে ঢেকে দিচ্ছে। ফলে দক্ষিণাঞ্চলসহ উপকূলভাগে বজ্রসহ প্রবল বর্ষণ অব্যাহত রয়েছে। আজকের পরও এ বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে তা আসন্ন অমাবশ্যার ভরা কোটালকে স্পর্শ করবে। ফলে সাগর আরো ফুঁসে ওঠার পাশশাপাশি দুর্যোগ আরো বাড়তে পারে। ফলে উপকূলভাগ ভরা জোয়ারের চেয়ে ২-৩ ফুট বেশী পানিতে প্লাবিত হওয়াসহ ধানের ক্ষতি আরো বৃদ্ধির আশঙ্কা রয়েছে।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আবহাওয়ায়

১০ জানুয়ারি, ২০২১
২৫ ফেব্রুয়ারি, ২০১৬

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ