Inqilab Logo

রোববার ২২ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৭ আশ্বিন ১৪৩১, ১৮ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

প্রবাসী আয়ে ধস উদ্বেগজনক

| প্রকাশের সময় : ২৪ এপ্রিল, ২০১৭, ১২:০০ এএম

পরপর দুই বছর উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রবাসী আয় কমেছে। গত তিন দশকের মধ্যে এমনটি দেখা যায়নি। বিশ্বব্যাংকের অভিবাসন ও উন্নয়ন বিষয়ক হালনাগাদ প্রতিবেদনে এ তথ্য উঠে এসেছে। বিশ্বব্যাংকের হিসাব অনুযায়ী, ২০১৪ সালে উন্নয়নশীল দেশগুলোতে প্রবাসী আয় প্রবাহ আগের বছরের চেয়ে ২ দশমিক ৪ শতাংশ কমে ৪২ হাজার ৯০০ কোটি ডলারে নেমেছে। ২০১৫ সালে এই দেশগুলোতে প্রবাসী আয় ছিল ৪৪ হাজার কোটি ডলার। প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ভূমধ্য সাগরীয় দেশগুলো ও রুশ ফেডারেশনে তেলের দরপতন ও দুর্বল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কারণে দক্ষিণ ও মধ্য এশিয়ার দেশগুলোতে প্রবাসী আয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। পাশাপাশি ইউরোপে দুর্বল প্রবৃদ্ধির কারণে আফ্রিকার উত্তর ও সাহারা অঞ্চলের দেশগুলোর প্রবাসী আয় কমেছে। প্রবাসী আয়ের দিক থেকে শীর্ষে থাকা ভারতে গত বছর প্রবাসী আয় ৮ দশমিক ৯ শতাংশ কমে ৬ হাজার ২৭০ কোটি ডলারে নেমেছে। ২০১৫ সালে এ আয় ছিল ৬ হাজার ৮৯০ কোটি ডলার। শীর্ষ প্রবাসী আয় অর্জনকারী অন্যতম দেশ বাংলাদেশের প্রবাসী আয় কমেছে গত বছর ১১ দশমিক ১ শতাংশ। তবে ২০১৭ সালে ২ দশমিক ৪ শতাংশ আয় বাড়তে পারে বলে প্রতিবেদনে আভাস দেয়া হয়েছে।
প্রবাসী আয় বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি শক্তিশালী স্তম্ভ হিসাবে বিবেচিত। এই আয় কমে যাওয়া তার জন্য অত্যন্ত উদ্বেগজনক। বাংলাদেশ ব্যাংকের তরফে এ ব্যাপারে উদ্বেগ জানানো হলেও পরিস্থিতির উন্নয়নে তেমন কোনো পদক্ষেপ দৃশ্যমান হয়ে উঠেনি। বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদন ২০১৭ সালে প্রবাসী আয় বাড়ার পূর্বাভাস দেয়া হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, চলতি অর্থবছরের প্রথম ৯ মাসে প্রবাসী আয় এসেছে ৮১১ কোটি ৭০ লাখ ডলার। গত বছর একই সময়ে এসেছিল ৯৭৭ কোটি ৪০ লাখ ডলার। এক বছরের ব্যবধানে আয় কম হয়েছে ১৬৫ কোটি ৭০ লাখ ডলার অর্থাৎ প্রায় ১৭ শতাংশ। এর আগে ২০১৫-১৬ অর্থ বছরে ১ হাজার ৪৯৬ কোটি ১১ লাখ ডলার এবং ২০১৪-১৫ অর্থ বছরে ১ হাজার ৫৩১ কোটি ৬৯ লাখ ডলার প্রবাসী আয় দেশে এসেছিল। এই হিসাবে গত বছর প্রবাসী আয় কমেছে প্রায় আড়াই শতাংশ। ধারাবাহিকভাবে প্রবাসী আয় কমার কারণ হিসাবে তেলের মূল্য হ্রাস এবং বিভিন্ন দেশের দুর্বল অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির কথা বলা হলেও দেখা গেছে, এর মধ্যেই ফিলিপাইন ও মেক্সিকোর প্রবাসী আয় বেড়েছে। তাদের বৃদ্ধির হার যথাক্রমে ৪ দশমিক ৯ শতাংশ ও ৮ দশমিক ৮ শতাংশ। সুতরাং, একথা বলা যাবে না, তেলের মূল্যহ্রাস ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার কমে যাওয়া প্রবাসী আয় কমে যাওয়ার একমাত্র কারণ। একথা সত্য, তেলের দাম কমে যাওয়ায় মধ্যপ্রাচ্যের তেল রফতানিকারক ও জনশক্তি আমদানিকারক দেশগুলো অসুবিধায় পড়েছে। তবে তারা জনশক্তি রফতানি বন্ধ করে দিয়েছে কিংবা উন্নয়ন কর্মসূচির বাস্তবায়ন স্থগিত করে দিয়েছে, এমন নয়। তাদের জনশক্তি আমদানির প্রবাহ কিছুটা শ্লথ হয়েছে। যেহেতু সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশগুলোতে বাংলাদেশের জনশক্তি রফতানি সবচেয়ে বেশী, সে কারণে কিছুটা হলেও নেতিবাচক প্রভাব বাংলাদেশে পড়া অসম্ভব নয়। একই কথা মিশরসহ আরো কিছু দেশের ক্ষেত্রেও প্রযোজ্য।
ওয়াকিহাল মহলের অজানা নেই, বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বাংলাদেশী কর্মরতদের সংখ্যা এক কোটির ওপর। এর অধিকাংশ কর্মরত রয়েছে সউদী আরবসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশে। মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুরসহ আরো নানা দেশে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশী কাজ করছে। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোতে মধ্যপ্রাচ্যে ও মালয়েশিয়ায় জনশক্তি রফতানির প্রবাহ হ্রাস পেয়েছে। তারা আর আগের মতো বাংলাদেশী জনশক্তি নিচ্ছে না। এ ‘আপাত বন্ধ্যাত্ব’ ঘোচনোর চেষ্টা অব্যাহত থাকলেও কোনো ফলোদয় হচ্ছে না। পর্যবেক্ষকদের মতে, ওই সব দেশের সঙ্গে যোগাযোগ ও সম্পর্ক রাজনৈতিক পর্যায়ে যথেষ্ট শক্তিশালী না হওয়ার কারণে বিদ্যমান সুযোগ-সম্ভাবনা বাংলাদেশের পক্ষে কাজে লাগানো সম্ভব হচ্ছে না। সরকারী তথ্য মতে, জনশক্তি রফতানি বেড়েছে এবং বাড়ছে, সেমতে বাড়ার কথা প্রবাসী আয়। অথচ আয় কমছে। এর অন্যতম কারণ বাংলাদেশ থেকে যেসব কর্মী পাঠানো হচ্ছে তার অধিকাংশই অদক্ষ। অদক্ষ কর্মীদের আয় বা বেতন ও সুযোগ-সুবিধা কম। তাদের স্থলে যদি দক্ষ কর্মী পাঠানো যেতো তাহলে প্রবাসী আয়েও তার ইতিবাচক প্রভাব প্রত্যক্ষ করা যেতো। সঙ্গতকারণেই বলা যায়, প্রবাসী আয় এভাবে কমতে থাকলে অর্থনীতিতে বিরূপ প্রভাব আরও সম্প্রসারিত হবে। আশঙ্কার এই দিকটি আমলে নিয়ে জনশক্তি রফতানি ও প্রবাসী আয় বাড়ানোর চেষ্টা জোরদার করতে হবে। অদক্ষ কর্মীর জায়গায় দক্ষ কর্মী পাঠানোর বিষয়ে অগ্রাধিকার দিতে হবে। এই সঙ্গে সউদী আরব, সংযুক্ত আরব আমিরাত, কুয়েত, মালয়েশিয়া প্রভৃতি দেশের সঙ্গে রাজনৈতিক পর্যায়ে যোগাযোগ ও সম্পর্ক আরও ঘনিষ্ঠ করতে হবে। এতে দ্রুত ও দীর্ঘমেয়াদী সুফল পাওয়া যাবে। সরকার সর্ব প্রচেষ্টায় জনশক্তি রফতানি ও প্রবাসী আয় বৃদ্ধিতে ব্রতী হবে, এটাই আমরা কামনা করি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: প্রবাসী আয়

২ মার্চ, ২০২২
২ ডিসেম্বর, ২০২১
৪ অক্টোবর, ২০১৬

আরও
আরও পড়ুন