বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
মহসিন রাজু , বগুড়া থেকে : পত্রিকা বিক্রির অর্থ দিয়ে লেখাপড়া চালিয়ে এবার উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মফিদুল ইসলাম। তিনি চোখের আলোয় নয়, মনের আলোয় শ্রুতি লেখক নিয়ে ওই পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন। মফিদুল বগুড়া জেলার সুখানপুকুরস্থ সৈয়দ আহম্মদ কলেজ কেন্দ্রে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।
বগুড়ার গাবতলী উপজেলার তেলিহাটা পাচানীপাড়া এলাকার মৃত কলিম উদ্দিনের তিন পুত্র ও এক কন্যা সন্তানের মধ্যে মফিদুল ইসলাম (১৯) দৃষ্টি প্রতিবন্ধী। পৈতৃক বাড়ির ভিটেমাটি ছাড়া কোনো জায়গা জমি নেই। অন্য দুই ভাই সাংসারিক কাজ কর্ম করে। একটি বোনকে ৫ বছর পূর্বে বিয়ে দেয়া হয়। মফিদুল ট্রেনে পত্রিকা বিক্রি করেন। বগুড়া শহর থেকে প্রতিদিন ভোর বেলা পত্রিকা নিয়ে ট্রেনে ওঠেন। দিনভর তিনি বিভিন্ন ট্রেনে পত্রিকা বিক্রি করে পিতার অভাবী সংসারের হাল ধরে। পত্রিকা বিক্রির পাশাপাশি তিনি লেখাপড়াও চালিয়ে যাচ্ছেন। সে বগুড়া শহরের একটি দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের জন্য নির্ধারিত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে দুই বছর পূর্বে এসএসসি পরীক্ষা দিয়ে মানবিক বিভাগ থেকে ৩.৭২ পেয়ে উত্তীর্ণ হয়। এরপর সে সোনারায় তসলিম উদ্দিন তরফদার কলেজে ভর্তি হয়। সে চলতি উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় মানবিক বিভাগ থেকে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন তার রোল নং-৩৫০৩৬৬।
সরজমিনে ওই পরীক্ষা কেন্দ্রে গিয়ে দেখা গেছে, ওই দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মফিদুল প্রতিদিনের ন্যায় শ্রæতি লেখককে মুখে বলে দিচ্ছে আর শ্রæতি লেখক তা পরীক্ষায় খাতায় উত্তর লিখছেন। এমনকি বানান পর্যন্ত বলে দিচ্ছেন। ৪টি পরীক্ষা বেশ ভালোই দিয়েছেস। শ্রæতি লেখক খাদিজা আক্তার একই গ্রামের খাজা প্রামাণিকের কন্যা ও পার্শ্ববর্তী এমআরএম উচ্চবিদ্যালয়ের ১০ম শ্রেণির ছাত্রী।
দৃষ্টি প্রতিবন্ধী মফিদুল ইসলাম জানায়, পরীক্ষার পূর্বেই সে রাজশাহী মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড রাজশাহী থেকে শ্রæতি লেখকের অনুমতি প্রার্থনা করে বোর্ড কর্তৃপক্ষ তাকে শ্রæতি লেখক নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নেয়ার অনুমিত দেয়।
সৈয়দ আহম্মদ কলেজ কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব ও অধ্যক্ষ মো. সাইদুজ্জামান জানান, দৃষ্টি প্রতিবন্ধীকে পরীক্ষা দিতে পৃথক আসন বিন্যাস করা হয়েছে। দৃষ্টি প্রতিবন্ধী বোর্ডের অনুমতি নিয়েই শ্রæতি লেখকের মাধ্যমে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন।
একদিনের শিশু কন্যা কোলে পরীক্ষায় আঁখি
অন্যদিকে বগুড়ার সোনাতলায় একদিনের শিশু কন্যাকে কোলে নিয়ে এইচএসসি পরীক্ষায় দিচ্ছেন মা আঁখি বেগম। শনিবার সৈয়দ আহম্মদ কলেজ কেন্দ্রে ইংরেজি দ্বিতীয় পত্রের পরীক্ষায় অংশ নেন তিনি শিশুটিকে কোলে নিয়ে।
জানা গেছে, বগুড়া সদরের সাবগ্রাম শেখ পাড়া এলাকার মালয়েশিয়া প্রবাসী শিহাব মন্ডলের স্ত্রী ও গাবতলী সরকারি ডিগ্রি কলেজের ছাত্রী আঁখি বেগম একদিনের শিশু কন্যা নিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছেস। তিনি ওই কলেজে মানবিক বিভাগের ছাত্রী। তার রোল নং-৩৫০২১৯।
গত বছরের ২২ এপ্রিল মালয়েশিয়া প্রবাসী শিহাব মন্ডলের সাথে তার বিয়ে হয়। গত শুক্রবার রাতে বগুড়া শহরের ডক্টরস ক্লিনিক ইউনিট-২ তে সে ফুটফুটে একটি কন্যা সন্তান প্রসব করেন।
পরীক্ষার্থী আঁখি বেগমের ননদ সাইরা বানু জানায়, আঁখি মেধাবী ছাত্রী। তাই তাকে পরীক্ষায় অংশ নেয়ার জন্য অ্যাম্বুলেন্স ভাড়া করে ক্লিনিক থেকে পরীক্ষা কেন্দ্রে আনা হয়েছে।
পরীক্ষা কমিটির সদস্য ও ইসলামের ইতিহাস বিভাগের বিভাগীয় প্রধান প্রভাষক মুঞ্জুরে আলম জানান, সদ্য ভুমিষ্ট কন্যা সন্তানের মাকে পরীক্ষা দেবার জন্য পৃথক আসন বিন্যাস করা হয়েছে।
এ বিষয়ে সৈয়দ আহম্মদ কলেজ কেন্দ্রের কেন্দ্র সচিব ও অধ্যক্ষ মো. সাইদুজ্জামান জানান, একদিনের কন্যা সন্তান নিয়ে আঁখি নামের এক পরীক্ষার্থী পরীক্ষায় অংশ গ্রহণ করছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।