বিএনপির মানববন্ধন আজ, পাল্টা কর্মসূচি আওয়ামী লীগ
সারা দেশের মহানগর ও জেলা পর্যায়ে আজ মানববন্ধন করবে বিএনপি ও তার মিত্ররা। আর এ
তানোর উপজেলা সংবাদদাতা : রাজশাহীর তানোরে কোনো সম্ভাব্যতা যাচাই না করেই কেবলমাত্র রাজনৈতিক বিবেচনায় নেতার ইচ্ছেপূরণ করতে প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে সেতু-কালভার্ট নির্মাণের অভিযোগ উঠেছে। সংশ্লিষ্ট এলাকার জনসাধারণের মধ্যে সরকারের বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয়ের শঙ্কা দেখা দিয়েছে। সংযোগসড়ক ছাড়াই প্রায় আড়াই কোটি টাকা ব্যয়ে বিভিন্ন খাঁড়ির ওপর ৬টি সেতু-কালভার্টের নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন ও নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। এদিকে এলাকাবাসী ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে নির্মাণকাজে নিম্নমানের নির্মাণসামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ তুলেছে। জানা যায়, উপজেলার ৪টি ইউনিয়ন পরিষদের প্রত্যন্ত এলাকায় খাঁড়ির উপর ৬টি সেতু নির্মাণে তালিকা প্রস্তুত করে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতরে পাঠানো হয়। ওই তালিকা অনুযায়ী নকশা অনুমোদন করে গত বছরের ৫ অক্টোবর ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা অধিদফতর হতে দরপত্র আহবান করা হয়। এতে ব্যয় ধরা হয় দুই কোটি ৩১ লাখ ৪৬ হাজার ৬৮৯ টাকা। স্থানীয়রা জানান, সরেজমিন তদন্ত করলেই অভিযোগের সত্যতা পাওয়া যাবে, যে এসব সেতু নামের কালভার্ট কেবলমাত্র রাজনৈতিক বিবেচনায় নির্মাণ করা হচ্ছে।
তানোর উপজেলার বাঁধাইড় ইউপির গাল্লা-প্রকাশনগর খাড়ির ওপর ৬০ ফুট দৈর্ঘ্যরে সেতু নির্মাণ কাজে ৫৬ লাখ ৮৯ হাজার ১০৬ টাকা ব্যয় ধরা হয়। ওই একই পরিমাণ ব্যয়ে কলমা ইউপির বলদিপাড়া-মোয়াতলা খাড়ির ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেয় কর্তৃপক্ষ। এছাড়া কলমা ইউপির বংশীধরপুর-খড়খড়ি ঘাটে খাঁড়ির ওপর ৩০ ফুট দৈর্ঘ্যরে সেতু নির্মাণ কাজে ২৪ লাখ ৬৮ হাজার ৯১৫ টাকা ও রামনাথপুর-গুটিংপাড়া -চকনাকা খাঁড়ির ওপর ৩৪ ফুট সেতু নির্মাণ কাজে ২৭ লাখ ৯৪ হাজার ২৫৬ টাকা ব্যয় ধরা হয়। অপরদিকে, উপজেলার পাঁচন্দর ইউপির বনকেশর-মরাপাড়া খাঁড়ির ওপর ৪০ ফুট সেতু নির্মাণ কাজে ৩২ লাখ ৫২ হাজার ৬৫৩ টাকা ব্যয় ধরা হয়। ওই একই পরিমান ব্যয়ে উপজেলার সরনজাই ইউপির কাজিজিয়া-বিল্লী খাড়ির ওপর মুকুলের জমির নিকট সেতু নির্মাণ প্রকল্প অনুমোদন দেয় কর্তৃপক্ষ।
সংশ্লিষ্ট ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে থেকে কার্যাদেশ কিনে আমিনুল ইসলাম নামের এক ঠিকাদার এসব সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। চলতি বছরের ২৯ জানুয়ারী রাজশাহী অঞ্চলের ৬ ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দরপত্রের কার্যাদেশ পায়। কিন্তু তানোরের আমিনুল ইসলাম নামের এক ঠিকাদার এসব ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের কাছে থেকে কার্যাদেশ কিনে নিয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন। আর নির্মাণ কাজের শুরুতেই অনিয়মের মাধ্যমে নিম্নমানের নির্মাণ সামগ্রী ব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে। এদিকে এসব সেতু-কালভার্ট নির্মাণের ব্যয়ে আকাশ-পাতাল পার্থক্য দেখা গেছে। উপজেলা এলজিইডি’র নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন, প্রকল্পের অর্থ লোপাটের জন্যই সংশ্লিষ্ট বিভাগ তিনগুন বেশি অর্থ ব্যয়ে সেতুর নামের এসব কালভার্ট নির্মাণ করছে। তিনি বলেন, এসব সেতু নামের কালভাট নির্মাণে কোনোভাবেই ৮ থেকে ১০ লাখ টাকার বেশি ব্যয় হবে না।
সরজমিনে দেখা গেছে, বাঁধাইড় ইউপির গাল্লা-প্রকাশনগর খাড়ির ওপর ৬০ ফুট দৈর্ঘ্যরে সেতু নির্মাণ কাজ চলছে। সেতুটি নির্মাণ শুরু হলেও কোনো সংযোগসড়ক নেই। সেতুর উভয়পাশে বিস্তর ধান খেত রয়েছে। স্থানীয় বাসিন্দা শরিফুল ইসলাম বলেছেন, এই সেতুর পাশেই মাত্র দু’শ হাত দূরে একই খাঁড়ির ওপর সেতু ও সড়ক রয়েছে। তিনি বলেন, অযথায় এই সেতু নির্মাণ না করে সেই টাকা ব্যয়ে এলাকার ভাঙা রাস্তা মেরামত করা হলে তা মানুষের কাজে আসত, সংযোগসড়ক ছাড়াই এই সেতু নির্মাণ অর্থহীন।
ঠিক একই অবস্থা কলমা ইউপির বলদিপাড়া-মোয়াতলা খাড়ির ওপর সেতু নির্মাণ প্রকল্পে। এই সেতুর দুই পাশেই বনবিভাগের বিপুলসংখ্যক ঔষুধী ও বনজগাছ বাগান রয়েছে, কোনো সংযোগ সড়ক নাই। এছাড়া পাঁচন্দর ইউপির বনকেশর-মরাপাড়া খাঁড়ির ওপর ৪০ ফুট দৈর্ঘ্য সেতুর দু’পাশেই ধান খেত। অথচ এই সেতুর স্থানে নকশায় কোনো সড়ক নাই বলে স্থানীয়দের দাবি। একই ধরনের অবস্থা সরনজাই ইউপির কাজিজিয়া-বিল্লী খাড়ির ওপর মুকুলের জমির নিকট সেতু নির্মাণ প্রকল্পে। এখানেও সংযোগসড়ক ছাড়াই সেতু নির্মাণ করা হচ্ছে। এ ব্যাপারে সাব-ঠিকাদার আমিনুল ইসলাম বলেন, নকশা মোতাবেক সেতুর নির্মাণ কাজ শুরু করা হয়েছে। কাজে কোনো অনিয়ম নেই। সিডিউল মোতাবেক কাজ দেখভালের জন্য কর্মকর্তা নিয়োগ রয়েছে বলে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।
এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মুহা: শওকাত আলী বলেন, এসব কাজের নকশা সংশ্লিষ্ট দফতর থেকে অনুমোদন দেয়া হয়ে থাকে। তিনি কেবলমাত্র দেখভালের দায়িত্বে রয়েছেন। কোনো ঠিকাদার কাজে অনিয়ম করলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। তবে, সংযোগসড়ক নির্মাণের জন্য প্রস্তুতি চলছে বলে জানান তিনি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।