পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
উমর ফারুক আলহাদী : জঙ্গিবাদ প্রতিরোধে আইনপ্রয়োগকারী সংস্থার পাশাপাশি প্রয়োজন জনসচেনতা। সমাজের সকল শ্রেণী পেশার মানুষকে ঐক্যবদ্ধভাবে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানো এখন সময়ের দাবি বলে মনে করছেন দেশের বিশিষ্টজনরা। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও তার বক্তব্যে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি বলেছেন, জঙ্গিবাদ দমনে প্রয়োজন সর্বস্তরের মানুষের সচেতনতা। প্রধানমন্ত্রী স্কুল-কলেজ, মাদ্রাসা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষিকা, মসজিদের ইমাম, অভিভাবকসহ সকল শ্রেণী- পেশার মানুষকে জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে ভূমিকা পালনের আহ্বান জানিয়েছেন। এ ছাড়া রাজপথের বিরোধীদল বিএনপিও জঙ্গিবাদ দমনে রাজনৈতিক ঐক্যের আহ্বান জানিয়েছে। এ বিষয়ে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সরকার জঙ্গি ইস্যুকে রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে। সরকারের এ খেলা জাতির জন্য খুবই ভয়ঙ্কর। জঙ্গিবাদকে বিরোধী দল দমনে ট্রামকার্ড হিসেবে ব্যবহার করলে তা আরো ভয়াবহ রূপ নেবে। জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় প্রয়োজন রাজনৈতিক ঐক্য। রাজনৈতিক ঐক্য ছাড়া, সকলের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াস ছাড়া জঙ্গি দমন সম্ভব নয়। তাই আমরা বার বার সরকারের প্রতি নোংরা খেলা বন্ধ করে খোলা মনে এ বিষয়ে সকলের সাথে আলোচনা করার আহ্বান জানাচ্ছি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সাথে গতকাল যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমি এখন কানাডায় আছি। এ ব্যাপারে বার বার বলেছি সচেতনতা বৃদ্ধির কোন বিকল্প নেই। যুবসমাজ যাতে বিভ্রান্ত না হয় এ জন্য তাদের মুটিভেটেট করতে হবে। জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করতে হবে। শুধু র্যাব-পুলিশ দিয়ে জঙ্গিদের নির্মূল করা সম্ভব নয়। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী দিয়ে এদের সাময়িক দমন করা গেলেও দেশকে জঙ্গি মুক্ত করতে প্রয়োজন সচেতনতা বৃদ্ধি করা।
এ বিষয়ে আইজিপি এ কে এম শহীদুল হক বলেছেন, জঙ্গিদমনে আমরা কঠোর অবস্থানে আছি। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সাহসী ভূমিকা এবং কার্যকর অভিযানের কারণে জঙ্গিদের নেটওয়ার্ক দুর্বল হয়ে পড়ছে। তবে একেবারে এদের নির্মূল করা সম্ভব নয়। এ জন্য প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা। বিশেষ করে মসজিদ মাদ্রাসায় আমাদের আলেম-ওলামারা জনসচেতনা জন্য প্রয়োজনী ধর্মীয় ব্যাখ্যাসহ জঙ্গিবিরোধী জনমত গঠনে সহায়ক ভূমিকা রাখতে পারেন। এছাড়া স্কুল-কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকগণ এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের সচেতন করার উদ্যোগ গ্রহণ করবেন। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ এখন একটি বৈশ্বিক সমস্যা। তবে আমাদের দেশে আন্তর্জাতিক পর্যায়ের জঙ্গি সংগঠন অর্থাৎ আইএসের কোন অস্তিত্ব নেই। দেশীয় জঙ্গিবাদ মোকাবেলায় পাড়া-মহল্লায় জনপ্রতিনিধিসহ সকলের একান্ত আন্তরিক প্রচেষ্টার দরকার। জঙ্গিদের ভয়ঙ্কর পরিণতি সম্পর্কে প্রচার-প্রচারণার মাধ্যমে তরুণ সমাজকে সচেতন করা প্রয়োজন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাধ বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষক সৈয়দ মাহফুজুল হক মারজান এ বিষয়ে বলেন, জঙ্গিরা এখন অল্পসংখ্যক কর্মী দিয়েই মারাত্মক কোনো ঘটনা ঘটানোর চেষ্টা করতে পারে। সে ক্ষেত্রে তারা জনবহুল স্থান টার্গেট করতে পারে। বিখ্যাত ব্যক্তি বা জনপ্রিয় কোনো রাজনীতিবিদও তাদের লক্ষ্য হতে পারেন। সে ক্ষেত্রে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে আরও সতর্ক হতে হবে। তিনি বলেন, জঙ্গিবিরোধী প্রচার-প্রচারণা এবং সচেতনতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে ন্যাশনাল সেমিনারের প্রয়োজন। তিনি বলেন, জঙ্গিরা ক্রমান্বয়ে আরো ভয়ঙ্কর হচ্ছে। এরা এত দিন সিøপার সেল হিসেবে কাজ করে আসছিল। তবে এখন তারা আত্মঘাতী হচ্ছে। এজন্যই প্রয়োজন সমাজ সচেতনতা।
আইন ও সালিশ কেন্দ্রের ভারপ্রাপ্ত নির্বাহী পরিচালক নূর খান লিটন বলেন, বিশ্বব্যাপী নৈতিকতা ও নতুন দর্শনের শূন্যতার কারণেই জঙ্গিবাদের আস্ফালন বেড়েছে। বিশেষ করে ষাটের দশকে বাম রাজনীতির উত্থান ও এর প্রসার এ সময়ে এসে স্তিমিত হয়ে যাওয়ার পর সেই জায়গাটি দখল করেছে ধর্মীয় উগ্রবাদ। এছাড়া শাসক শ্রেণীর জুলুম-নির্যাতনের কারণেও জঙ্গিবাদের বিস্তার ঘটে। তিনি বলেন, জঙ্গিবাদ দমন করতে প্রয়োজন সম্মিলিত প্রচেষ্টা। এটা শুধু র্যাব পুলিশ দিয়ে দমন করা কখনই সম্ভব নয়।
গত বছর বাংলাদেশে সবচেয়ে আলোচিত বিষয় ছিল জঙ্গিবাদ। ২০১৬ সালে ২৫টি হামলার ঘটনায় ৪৭ ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। আর পুলিশের অভিযানে নিহত হয়েছে ৩৪ জঙ্গি। এ পরিস্থিতি এখনো অব্যাহত রয়েছে। একের পর এক জঙ্গি হামলা এবং পুলিশের জঙ্গিবিরোধী অভিযান নিয়ে বছরজুড়ে সরব ছিল গণমাধ্যম। এসব হামলার সঙ্গে মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএস (ইসলামিক স্টেট) এর সম্পৃক্ততা থাকা বা না থাকার বিষয়টি নিয়েও জল্পনা-কল্পনা ছিল বিস্তর। এসব কারণে আন্তর্জাতিক পর্যায়েও দেশের ভাবমর্যাদা প্রশ্নের মুখে। বিদেশীরা আসতে ভয় পাচ্ছে। নানা কারণেই জঙ্গি ইস্যু এখন সর্বাধিক সমালোচিত। এজন্য শুধু প্রধানমন্ত্রী নয়, সরকারী দলের বেশ কয়েকজন মন্ত্রী-এমপিও জঙ্গি দমনে জনসচেতনতার ওপর জোর দিয়েছেন। গত বছর ১ জুলাই গুলশানের হলি আর্টিজানে রক্তাক্ত জঙ্গি হামলার ঘটনায় বিশ্বজুড়ে বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের বিষয়টি আলোচনায় আসে। বিশ্লেষকরা বলছেন, ২০১৭ সাল বাংলাদেশের জন্য আরও চ্যালেঞ্জিং। পুলিশের দাবি অনুযায়ী জঙ্গিদের শক্তি স্তিমিত হয়ে আসলেও তারা এখন আরও সুসংগঠিত হয়ে ভিন্ন কৌশলে হামলার দিকে ঝুঁকবে।
বর্তমান সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০১৩ সাল থেকে জঙ্গি হামলার ঘটনা শুরু হয়। নিষিদ্ধ ঘোষিত জঙ্গি সংগঠন জামাআতুল মুজাহিদীন, আনসারুল্লাহ বাংলা টিম ও আনসার আল ইসলামের সদস্যরা এসব হামলার সঙ্গে জড়িত ছিলেন বলে বিভিন্ন সময়ে দাবি করে আসছে পুলিশ। বিভিন্ন ঘটনায় মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক জঙ্গি সংগঠন আইএস দায় স্বীকার করে নিলেও বৈশ্বিক জঙ্গিবাদের সঙ্গে বাংলাদেশের জঙ্গিবাদের সংযোগের বিষয়টি বরাবরই নাকচ করে এসেছে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। তাদের দাবি, দেশে জন্ম নেয়া জঙ্গিরাই এসব হামলা ঘটিয়েছে।
জানা যায়, ২০১৩ সালে চারটি জঙ্গি হামলায় নয়জন, ২০১৪ সালে পাঁচটি ঘটনায় তিনজন, ২০১৫ সালে ২৩টি ঘটনায় ২৫ জন এবং ২০১৬ সালে ২৫টি ঘটনায় ৪৭ জন নিহত হয়েছে। এছাড়া চলতি বছরের ২০ মার্চ পর্যন্ত জঙ্গিবিরোধী অভিযানে ১৭ জন নিহত হয়েছে। এসব জঙ্গি হামলার শিকার ব্যক্তিদের মধ্যে রয়েছেন বিদেশি নাগরিক, হিন্দু পুরোহিত, সাধু, খ্রিস্টান যাজক, বৌদ্ধ ভিক্ষু, বাহাই স¤প্রদায়ের নেতা, পীরের অনুসারী, মাজারের খাদেম, শিয়া অনুসারী, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, ধর্মান্তরিত ব্যক্তি, বøগার এবং সমকামীদের অধিকারকর্মী। গুলশানের হলি আর্টিজানে ১ জুলাই হামলা ও সাত জুলাই শোলাকিয়ায় হামলার পর ৮ মাসে ১৫টি জঙ্গি আস্তানায় অভিযানে মোট ৪৮ জন ‘নব্য জেএমবির সদস্য নিহত হয়েছে। গুলশান হামলার পর অভিযানে ৫ জন এবং শোলাকিয়ার হামলার পর অভিযানে একজন জঙ্গি নিহত হয়। তখন সর্বমোট নিহত হয় ৩৪ জন জঙ্গি।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।