Inqilab Logo

শুক্রবার ২৩ নভেম্বর ২০২৪, ০৮ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২০ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

জঙ্গিবাদ ছড়ানোর তালিকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদ

প্রকাশের সময় : ১৭ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ প্রথম সারির বেশকিছু শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান জঙ্গিবাদ ছড়াচ্ছে বলে জানিয়েছে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক চিঠিতে একথা উল্লেখ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর একটি তালিকাও দেয়া হয়েছে। ওই তালিকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের নাম ছাড়াও চারটি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়, তিনটি ইংরেজি মাধ্যম স্কুল, নয়টি মাদরাসা এবং এমনকি পাঁচটি মসজিদের নামও রয়েছে। বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার তৈরি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ওই চিঠি ও তালিকা দিয়েছে। চিঠিতে তালিকাভুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলোতে নজরদারি বাড়ানো ও ব্যবস্থা গ্রহণ করে লিখিতভাবে জানাতে বলা হয়েছে। খবরে জানা গেছে, শিক্ষা মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের ওপর নজরদারি বাড়ানোর নির্দেশনা দিয়েছে। স্মরণ করা যেতে পারে, গত জুলাইতে গুলশান ও শোলাকিয়ায় হামলার পর ১৪ টি বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় ও নয়টি ইংরেজি মাধ্যম স্কুলসহ ২৩ টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর কঠোর নজরদারির পদক্ষেপ নেয়া হয়, যা এখনো বহাল আছে। নজরদারি বাড়ানোর জন্য এখন যে সব প্রতিষ্ঠানের নাম-তালিকা প্রদান করা হয়েছে তার মধ্যে আগের কিছু প্রতিষ্ঠানের নামও রয়েছে। তবে এর আগে মাদরাসা-মসজিদের ওপর নজরদারির কথা শোনা যায়নি। নতুন তালিকায় মাদরাসা-মসজিদও যুক্ত হয়েছে। মসজিদ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান। শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মসজিদের নাম সংযুক্ত হলো কিভাবে, সেটা একটা বড় প্রশ্ন।
কোন্্ বিশেষ গোয়েন্দা সংস্থার রিপোর্টের ভিত্তিতে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রণালয় শিক্ষা মন্ত্রণালয়কে চিঠি দিয়েছে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের তালিকা দিয়েছে, আমাদের জানা নেই। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ই তা বলতে পারে। প্রশ্ন এখানে নয়, প্রশ্ন হলো, ওই রিপোর্টের ভিত্তিতে যে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে তা প্রকাশ না করলেই কি হতো না? প্রকাশ না করে গোপনে নজরদারি চালিয়ে অসম্ভব ছিল? প্রকাশ করার ফলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ভাবমর্যাদা যেমন দেশে-বিদেশে ক্ষুণœ হয়েছে, তেমনি দেশের ভাবমর্যাদাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। বলার অপেক্ষা রাখে না, তালিকাভুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো দেশের নামকরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠান। পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় সবার শীর্ষে। বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে নর্থ সাউথ, ইস্ট-ওয়েস্ট প্রভৃতি শীর্ষস্থানীয়। অন্যদিকে তালিকায় যেসব মাদরাসার নাম আছে সেগুলোর লেখাপড়ার মান এতটাই ভালো যে, প্রতি বছর মাদরাসার বিভিন্ন পরীক্ষায় এসব মাদরাসাই ফলাফলে শীর্ষস্থান লাভ করে। নাম-তালিকা জানাজানির পর এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে কি স্বতঃস্ফূর্তভাবে কোনো শিক্ষার্থী ভর্তি হতে চাইবে? অভিভাবকরা কি এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের সন্তান বা পোষ্যদের ভর্তি করাতে চাইবেন? ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে এখনো কিছু বিদেশী ছাত্র-ছাত্রী পড়তে আসে। অতঃপর, তারাও কি আর আসতে চাইবে? এখন যারা এসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে লেখাপড়া করছে তারা কি দেশে-বিদেশে লেখাপড়া ও কর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে প্রশ্নের সম্মুখীন হবে না? এতে হাজার হাজার শিক্ষার্থীর ভবিষ্যৎ সে নাজুক অবস্থায় পতিত হলো, তাতে কি কোনো সন্দেহ আছে? এর একটি ভিন্ন রকম প্রতিক্রিয়াও হতে পারে। দেশের এসব সেরা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যারা ভর্তি হতে চাইবে না, তারা বিদেশমুখী হতে বাধ্য হবে। এ কারণে বিপুল বৈদেশিক মুদ্রা বেরিয়ে যাবে এবং বিদেশে পড়তে যাওয়া শিক্ষার্থীদের অনেকেই দেশে ফিরবে না। এতে দেশ মেধার সংকটে পড়বে।
এমনিতেই জঙ্গিবাদ বিরোধী ব্যাপক তৎপরতা ও প্রচারণার কারণে দেশের ভাবমর্যাদা বহির্বিশ্বে প্রায় তলানিতে এসে ঠেকেছে। বিশ্বের বিভিন্ন দেশ এটা বিশ্বাস করতে শুরু করেছে যে, বাংলাদেশে জঙ্গিবাদের ব্যাপক উত্থান ঘটেছে। দেশটি জঙ্গিদের অভয় বিচরণক্ষেত্রে পরিণত হয়েছে। জঙ্গিদের সঙ্গে আন্তর্জাতিক জঙ্গিবাদী সংগঠনগুলোর নিকট সম্পর্ক বা প্রভাব রয়েছে। এরকম ধারণা দেশের জন্য যে খুবই ক্ষতিকর তাতে কোনো সন্দেহ নেই। এ ব্যাপারে বিভিন্ন দেশের বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কথা কারো অজানা নেই। নিরাপত্তার অজুহাতে বিদেশী বিনিয়োগকারীরা মুখ ফিরিয়ে নিয়েছে। শত চেষ্টা করেও বিদেশী বিনিয়োগ আসছে না। একই অজুহাতে গার্মেন্টপণ্য রফতানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। বিদেশী ক্রেতারা বাংলাদেশকে পরিহার করার চিন্তা-ভাবনা ছাড়াও পণ্যের মূল্য কম দেয়ার আবদার করছে। এমতাবস্থায়, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর ওপর নজরদারি বাড়ানোর খবর বিদেশী বিনিয়োগকারী ও ব্যবসায়ীদের আরও আস্থাহীন করে তুলবে। জঙ্গিবাদ দমন কিংবা জঙ্গি সৃষ্টির পথ বন্ধ করা এবং জঙ্গিবাদ বিরোধী জনমত গড়ে তোলার বিষয়টি সরকারের একান্ত নিজস্ব ব্যাপার। আইন-শৃংখলা বাহিনী এজন্য যথেষ্ট। সর্বোপরি দেশের জনগণ সব ধরনের জঙ্গিবাদ বা সন্ত্রাসবাদের ঘোর বিরোধী। জঙ্গিবাদ-সন্ত্রাসবাদ বাংলাদেশের জন্য কোনো বড় সমস্যা নয়। এতে এত বিচলিত ও উদ্বিগ্ন হওয়ার কোনো কারণ নেই। অথচ সরকার ও মহল বিশেষ জঙ্গিবাদকে এমনভাবে তুলে ধরছে যাতে মনে হতে পারে, এটিই বাংলাদেশের প্রধান সমস্যা। এ প্রশ্নও খুবই প্রাসঙ্গিক, জঙ্গিবাদের সঙ্গে মাদরাসা-মসজিদকে যুক্ত করা হচ্ছে কেন? সাম্প্রতিক কালে যেসব সন্ত্রাসী হামলা ও হত্যাকা- সংঘটিত হয়েছে, তাদের একটির সঙ্গেও মাদরাসা-মসজিদের সংশ্লিষ্টতা খুঁজে পাওয়া যায়নি। বাস্তবতা তো এই, যে কোনো জঙ্গিবাদী ও সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে মাদরাসা-মসজিদই সবচেয়ে বেশী সোচ্চার। জঙ্গিবাদ ছড়ানোর তালিকায় মাদরাসা-মসজিদের নাম জনগণের মধ্যে ভুলবার্তা পৌঁছাবে। আমরা মনে করি, এ ধরনের যে কোনো সিদ্ধান্ত এবং তা প্রকাশের ক্ষেত্রে সরকারের আরও সতর্ক ও সাবধান হওয়া উচিত।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জঙ্গিবাদ ছড়ানোর তালিকায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও মসজিদ
আরও পড়ুন