Inqilab Logo

বুধবার, ২৬ জুন ২০২৪, ১২ আষাঢ় ১৪৩১, ১৯ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

জঙ্গিবাদ বেহেস্তের পথ নয়

প্রকাশের সময় : ২ নভেম্বর, ২০১৬, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:৫৬ পিএম, ১ নভেম্বর, ২০১৬

জাতীয় যুব দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী
বিশেষ সংবাদদাতা : মাদকাসক্তি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ থেকে যুবসমাজকে বিরত থাকার আহ্বান জানিয়ে তাদের দেশ গড়ার কাজে আত্মনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। গত মঙ্গলবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় যুব দিবসের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে তিনি এ আহ্বান জানান।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা চাই না আমাদের দেশের যুবসমাজ বিপথে চলে যাক, আর বাবা-মায়ের জন্য দুঃখের কারণ ঘটুক। মাদকাসক্তি, সন্ত্রাস, উগ্রবাদ ও জঙ্গিবাদ থেকে যুবসমাজকে বিরত থাকতে হবে। কারণ এই পথ মানুষকে সুস্থ পথে নিয়ে যায় না। এ পথ বেহেশত আর স্বর্গে নিয়ে যাবে না। বেহেশতে নিয়ে হুর-পরীও দেবে না। ইসলাম শান্তির ধর্ম। পবিত্র ধর্ম। ধর্মের নামে মানুষ খুন করা, ইসলাম মানুষ খুন করার অধিকার দেয়নি। শেষ বিচার করবেন আল্লাহ রাব্বুল আলামিন। সে কথা মনে রাখতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, যুবসমাজকে বলবÑ মাদক, সন্ত্রাস, জঙ্গিবাদ এ ধরনের কর্মকা- থেকে বিরত থেকে নিজের যে মেধাটা আছে, যে কর্মশক্তি আছে, সেটাকে কাজে লাগিয়ে নিজের জীবনকে, নিজের পরিবারকে যেমন উন্নত করা যাবে, দেশটাও উন্নত হবে। বাংলাদেশকে উন্নত দেশ হিসেবে গড়ে তোলার যে লক্ষ্য রয়েছে, সেখানেও মূল ভূমিকা যুবসমাজেরই। আমাদেরকে কেউ ভিক্ষুক বলবে, গালি দেবে আর ভিক্ষার হাত পেতে আমাদেরকে চলতে হবে, আমরা সেই বাংলাদেশ দেখতে চাই না, বললেন সরকারপ্রধান।
২০২১ সালের মধ্যে মধ্যম আয়ের ও ২০৪১ সালের মধ্যে দক্ষিণ এশিয়ার সবচেয়ে উন্নত, সমৃদ্ধ দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে গড়তে যুবসমাজের মেধা কাজে লাগানোর আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। এই কাজ সম্পন্ন করতে হলে আমাদের যুবসমাজের কর্মক্ষমতা, দক্ষতা, মেধা-মনন সব থেকে বেশি প্রয়োজন। আর সেভাবে নিজেদেরকে গড়ে তুলতে হবে, সেটাই আমরা চাই।
যুব শক্তিকে দেশের প্রাণ ও উন্নয়ন-অগ্রগতির চালিকাশক্তি হিসেবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আমাদের মোট জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশ যুবক। যা পৃথিবীর অনেক দেশেরই নেই। এই ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড পূর্ণ সদ্ব্যবহারকল্পে সৃজনশীল ও উৎপাদনশীল কর্মকা-ে ব্যাপকভাবে সম্পৃক্তকরণের বিকল্প নেই।
প্রধানমন্ত্রী এ সময় যুবসমাজকে ‘দেশের প্রাণ এবং উন্নয়ন-অগ্রযাত্রার চালিকাশক্তি,’ বলেও উল্লেখ করেন। যুবসমাজকে শ্রম এবং মেধা বিকাশের সুযোগ করে দিলে তারা অসাধ্য সাধন করতে পারে। টেকসই বাংলাদেশ গড়তে যুবসমাজকে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখারও আহ্বান জানান তিনি।
কারও কথায় প্ররোচিত হয়ে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কেউ যেন বিদেশে পাড়ি না জমায় সে বিষয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার আহ্বান জানান শেখ হাসিনা। জীবনের ঝুঁকি নিয়ে অবৈধ পথে বিদেশে পারি দেয়া, তারপর অকাল মৃত্যু, নিঃস্ব হয়ে ফিরে আসা এই জাতীয় ঘটনা যাতে না ঘটে। তার জন্য বিভিন্নভাবে প্রচারণার ব্যবস্থা, বিভিন্ন ডকুমেন্টারি তৈরি করে প্রচার করা হচ্ছে, মানুষ সচেতন হচ্ছে।
প্রশিক্ষণের ওপর গুরুত্বারোপ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, নানামুখী কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা আমরা করে দিচ্ছি। ১০০টি অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তুলছি। যেখানে ক্ষুদ্র-মাঝারি-বৃহৎ শিল্প গড়ে উঠবে। কর্মের সংস্থান হবে। তার জন্য আমাদের প্রশিক্ষিত লোক দরকার। আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারের প্রশিক্ষণ প্রয়োজন।প্রশিক্ষণ ভাতা ৪০ টাকা থেকে ১০০ টাকা করার ঘোষণা দেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু যুবকদের সংগঠিত করে বাঙালির মুক্তির সংগ্রামে উজ্জীবিত করেছিলেন, উদ্যমী করেছিলেন। এই যুবকরাই মুক্তিযুদ্ধে বিজয় ছিনিয়ে এনেছে। আমরা বিজয়ী জাতি। এখন সবাইকে দেশের অর্থনৈতিক মুক্তির সংগ্রামে উজ্জীবিত হতে হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, আমরা কারো কাছে হাত পাতব না, আত্মমর্যাদাশীল, কর্মউদ্যমী হয়ে উঠব। আমরা চাই না আমাদের যুবশক্তি কোনোভাবেই বিপথে যাক এবং তাদের অভিভাবকদের যন্ত্রণার কারণ হয়ে দাঁড়াক। তাদেরকে অবশ্যই মাদক, সন্ত্রাস এবং জঙ্গিবাদ থেকে দূরে থাকতে হবে। এগুলো কোনো সুস্থ ধারা নয়, এগুলো সবসময়ই যুবসমাজের সুন্দরভাবে বিকাশের অন্তরায়, বলেন প্রধানমন্ত্রী।
যুব ও ক্রীড়া প্রতিমন্ত্রী বীরেন সিকদার, উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় এবং যুব ও ক্রীড়া মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি জাহিদ আহসান রাসেল অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন। মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী আখতার উদ্দিন, যুব সংগঠক অমীয় প্লাবন চক্রবর্তী, সেলফ এমপ্লয়ার সুলতানা পপি অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন। যুব ও ক্রীড়া অধিদপ্তরের মহাপরিচালক আনোয়ারুল করিম অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তৃতা করেন। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ১৯ জনকে জাতীয় যুব পুরস্কারে ভূষিত করেন।
প্রধানমন্ত্রী জাতির পিতার একটি উদ্ধৃতির উল্লেখ করে বলেন, জাতির পিতা ১৯ আগস্ট ১৯৭২ সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে ছাত্রলীগের জাতীয় সম্মেলনে কারিগরি শিক্ষার প্রতি বিশেষ গুরুত্ব আরোপ করে যুবকদের উদ্দেশ্যে বলেন, ‘কাজ কর, কঠোর পরিশ্রম কর, না হলে বাঁচতে পারবে না। শুধু শুধু বি.এ এম.এ পাস করে লাভ নাই। আমি চাই কৃষি কলেজ, কৃষি স্কুল, ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ ও স্কুল, যাতে সত্যিকার মানুষ পয়দা হয়। বুনিয়াদি শিক্ষা নিলে কাজ করে খেয়ে বাঁচতে পারবে।
তিনি বলেন, দেশে কর্মমুখী শিক্ষার প্রসার ঘটায় ২০০৯ সালে সারা দেশে পলিটেকনিকে ভর্তির আসন ছিল যেখানে ছিল মাত্র ২৫ হাজার। বর্তমানে তা ১ লাখ ২৫ হাজারে দাঁড়িয়েছে। যুব উন্নয়ন অধিদপ্তর প্রতিষ্ঠার পর থেকে জুন ২০১৬ পর্যন্ত প্রায় ৪৮ লক্ষ ৪৭ হাজার ৪৬২ জনকে দক্ষতা বৃদ্ধিমূলক প্রশিক্ষণ দিয়েছে। প্রশিক্ষণ গ্রহণকারী ৮ লাখ ৫৩ হাজার ৭৮৯ জনকে ১ হাজার ৪৫৯ কোটি ১৪ লক্ষ ২৭ হাজার টাকা ঋণ দেয়া হয়েছে। প্রশিক্ষিত যুবকদের মধ্যে ২০ লক্ষ ২১ হাজার ১০৩ জন আত্মকর্মে নিয়োজিত হয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, শিক্ষিত বেকার যুবকদের অস্থায়ী কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। যে কর্মসূচিতে অন্তর্ভুক্ত একজন যুবক-যুবনারী প্রতিমাসে ৬০০০ টাকা কর্মভাতা পেয়ে থাকেন। এ পর্যন্ত ২৮টি জেলার ৬৪টি উপজেলায় প্রশিক্ষণ সমাপনকারীর সংখ্যা মোট ১ লক্ষ ১১ হাজার ১১৬ জন। কর্মসংস্থান প্রাপ্তদের সংখ্যা ১ লক্ষ ০৮ হাজার ৭৮২ জন। অস্থায়ী কর্মসংস্থান শেষে অনেকে স্থায়ী কর্মসংস্থান কিংবা আত্মকর্মী হওয়ার সুযোগ পেয়েছে।
তিনি বলেন, ন্যাশনাল সার্ভিসে যুবনারীদের অংশগ্রহণ শতকরা প্রায় ৪০ ভাগ। তাদের এই বিপুল অংশগ্রহণ নারীর ক্ষমতায়নকে আরো এগিয়ে নিয়ে যাবে। নীতিমালা অনুযায়ী ন্যাশনাল সার্ভিস কর্মসূচি ক্রমান্বয়ে সারাদেশে সম্প্রসারিত হবে।
এছাড়া, যুবকদের আত্মকর্মসংস্থানে কর্মসংস্থান ব্যাংক, প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংক সৃষ্টিসহ দেশব্যাপী যুব উন্নয়ন অধিদপ্তরের বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কার্যক্রম, বিদেশে গমনেচ্ছু তরুণ-যুবাদের জন্য টেকনিক্যাল ট্রেনিং, দেশের বিদ্যালয়গুলোতে ভকেশনাল ট্রেনিং কর্মসূচি চালু এবং শেখ হাসিনা যুব কেন্দ্রকে সেন্টার অব অ্যাক্সিলেন্স হিসেবে গড়ে তোলায় সরকারের পদক্ষেপের উল্লেখ করেন।



 

Show all comments
  • নোমান ২ নভেম্বর, ২০১৬, ১১:৩০ এএম says : 0
    একদম ঠিক কথা বলেছেন।
    Total Reply(0) Reply
  • শাহিন ২ নভেম্বর, ২০১৬, ১১:৩২ এএম says : 0
    জঙ্গিবাদ বর্তমানের সারা বিশ্বের সবচেয়ে বড় সমস্যা
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জঙ্গিবাদ বেহেস্তের পথ নয়
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ