Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

পুনর্বাসিত বাঙালি গুচ্ছগ্রামের গম কালোবাজারে

| প্রকাশের সময় : ১৯ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

দিদারুল আলম রাজু, খাগড়াছড়ি থেকে : খাগড়াছড়ি জেলার পানছড়ি উপজেলার পুনর্বাসিত বাঙালি গুচ্ছগ্রামের বরাদ্দকৃত খাদ্যশস্য কালোবাজারে বিক্রি করা হচ্ছে, এই অভিযোগটি আগে কেবল প্রকল্প চেয়ারম্যানদের বিরুদ্ধেই ছিলো। তবে মামলা সংক্রান্ত জটিলতায় এখন আর প্রকল্প চেয়ারম্যানরা খাদ্যশস্য বিতরণ করেন না, গেলো বছরের জুলাই থেকে বিতরণ করেন সংশ্লিষ্ট খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। অভিযোগ পাওয়া গেছে, ব্যবসায়ীদের সাথে সিন্ডিকেট করে গমের বদলে কার্ডধারীদের বাজার মূল্যের চেয়ে কম টাকা নিতে বাধ্য করে সংশ্লিষ্ট খাদ্য গুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা। তবে চক্রটি প্রভাবশালী হওয়ায় ভয়ে মুখ খুলতে সাহস পায় না সাধারণ কার্ডধারীরা।
পানছড়ি উপজেলার ১২টি গুচ্ছগ্রামে পুনর্বাসিত বাঙালি রেশনভোগী কার্ডধারীর সংখ্যা ৪ হাজার ১শ’ ৩৪ জন। সরকারীভাবে প্রতিজন কার্ডধারীর জন্য মাসে ৩৫.৯৫ কেজি চাল ও ৪৯.১০ কেজি গম বরাদ্দ দেয়া হয়। আর এসব খাদ্যশস্য বিরতণ করা হয় তিনমাস অন্তর অন্তর। সম্প্রতি অভিযোগ বরাদ্দকৃত চাল কার্ডধারীদের মাঝে বিতরণ করা হলেও কোন প্রকার গম বিতরণ করা হয় না। বরাদ্দের কোন গম গুদামেও আসে না। গুচ্ছগ্রামের এ সব হতদরিদ্র মানুষের গম বিক্রি করে দেয়া হয় চট্টগ্রামের বাজারে। এছাড়া চাল বিতরণেও অনিয়মের অভিযোগ কম নেই। ওজনে কম দেয়া, চালের বদলে টাকা নিতে বাধ্য করা ইত্যাদি
পানছড়ি উপজেলা আওয়ামী লীগ সভাপতি মো. বাহার মিয়া অভিযোগ করে বলেন, সরকারি কর্মকর্তাদের সাথে স্থানীয় কিছু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে মোটা অংকের বাণিজ্য করছে। এ ব্যাপারে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের বারবার অভিযোগ করেও কোন সুরাহা হয়নি। এদিকে পুনরায় রেশন বিতরণের সময় ঘনিয়ে এসেছে, অথচ এখন পর্যন্ত চাহিদা অনুযায়ী গুদামে কোন প্রকার গম মজুদ করতেও চোখে পড়েনি। ধারণা করা হচ্ছে, জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত এই মাসের রেশনেও কোন গম পাবে না কার্ডধারীরা।
অভিযোগের সূত্র ধরে গত বুধবার উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে গিয়ে কর্মকর্তা প্রমিত কুমার চাকমাকে পাওয়া যায়নি।
এদিকে অভিযুক্ত পানছড়ির এলএসডি একেএম মঈনুল খাইর জানালেন, সর্বশেষ অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত তিন মাসের খাদ্যশস্য বিতরণ করা হয়েছে। এতে বরাদ্দ অনুযায়ী ৬০৮ মেট্রিক টন গম গুদামে এসেছিলো এবং তা প্রত্যেক কার্ডধারীকেই দেয়া হয়েছে। তবে রেজিস্টার দেখতে চাইলে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের দোহাই দিলেন তিনি। বললেন, ‘রেজিস্টার দেখাতে হলে সময় দিতে হবে সপ্তাহখানেক।’ এছাড়া অক্টোবর থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত গুদামে মজুদকৃত গমের চালানপত্র অর্থাৎ ‘ইনভয়েস’ দেখতে চাইলে তিনি কেবল চার ট্রাক গমের চালানপত্রই দেখাতে পেরেছিলেন। সরকারি হিসেব অনুযায়ী একটি ট্রাকে সর্বোচ্চ ১১ মেট্রিক টন গম পরিবহন হয়ে থাকে। সেই মতে গেল বছরের শেষ তিনমাসে গুদামে গম মজুদ হয়েছে চার ট্রাকে সর্বোচ্চ ৪৪ মেট্রিক টন। অথচ এই কর্মকর্তা জানালেন, তিনি বরাদ্দ অনুযায়ী ৬০৮ মেট্রিক টন গমই কার্ডধারীদের মাঝে বিতরণ করেছেন। গম গুদামেই আনা হয়নি অথচ কি করে তিনি তা বিতরণ করলেন কার্ডধারীদের মাঝে, এমন প্রশ্নের কোন সদুত্তরও দিতে পারলেন না তিনি।
এদিকে বরাদ্দকৃত সম্পূর্ণ খাদ্যশস্য বিতরণ কেন্দ্রে মজুদ করার পর সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা পরিদর্শন করে প্রত্যয়ন করবার কথা। তবে খাদ্যশস্য মজুদ আছে কিনা তা না দেখেই প্রত্যয়ন দিয়ে দিলেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা জাহিদ হোসেন ছিদ্দিক। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ভারপ্রাপ্ত এলএসডির বিরুদ্ধে অনিয়মের একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। ব্যাপারটি আমলে নিয়ে খতিয়ে দেখবার জন্য খাদ্য বিভাগকে অনুরোধ করবো।’
এ বিষয়ে কথা বলতে পরপর দু’দিন জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রকের কার্যালয়ে গিয়েও দেখা মেলেনি। কার্যালয়ের অন্যান্য কর্মকর্তা জানালেন, দাপ্তরিক কাজে জেলার বাইরে আছেন তিনি। পরে মুঠোফোনে কথা হয় জেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক মো. আশরাফুল আলমের সাথে। জানালেন, অভিযোগের বিষয়টি শুনেছেন এবং তদন্ত করে প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেবেন তিনি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কালোবাজারে

৬ আগস্ট, ২০১৬
৩ মার্চ, ২০১৬

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ