Inqilab Logo

শনিবার ৩০ নভেম্বর ২০২৪, ১৫ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২৭ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

এসএম আমানউল্লাহ রাজনন্দিনী চতুর্দশী

| প্রকাশের সময় : ১৭ মার্চ, ২০১৭, ১২:০০ এএম

কবিতা রাজ্যের রাজকুমারী বলা যেতে পারে ‘সনেট’কে। রাজকুমারী শুনলেই মানসপটে ভেসে ওঠে এক অনিন্দ্যসুন্দরী কিশোরী বা তরুণী। কবিতার ক্ষেত্রেও তাই কবিরা তিল তিল করে গড়ে তোলেন চতুর্দশী সুন্দরী সনেটকে। তাকে যেনতেন করে গড়ার কোনো সুযোগ নেইÑ সৃজন করতে হবে অক্ষর গুণেÑ ছন্দের নিগূঢ় বন্ধনে, ভাবকে শিখরে উঠিয়ে আবার নামিয়ে আনতে হয় ভাবের সামঞ্জস্য বজায় রেখে।
সনেট বিশ্ব সাহিত্যের এক চমৎকার সাহিত্যকর্ম। ইতালীয় শব্দ ‘সনেটো’ (ঝড়হবঃঃড়) বা মৃদুধ্বনি থেকে সনেট কথাটির উদ্ভব বলে সাধারণভাবে ধারণা করা হয়। ইতালীয় কবি ফ্রান্সেস্কো পেত্রার্ক-কে এর প্রবর্তক বলে মনে করা হয়। তবে এনিয়ে বির্তক আছে। বাংলা সাহিত্যে সনেট প্রবর্তক শ্রী মধুসূদন মনে করেনÑফ্রান্সিস্কো পেতরকা কবি ‘বাক্্ দেবীর বরে’ ‘কাব্যের খনিতে’ প্রথম এই ‘ক্ষুদ্র মণি’টিকে পান।
আজকে যে গ্রন্থখানা সম্পর্কে পাঠককে অবহিত করব সেটি সনেট সম্পর্কে লেখা এসএম আমানউল্লাহ্্র ‘রাজনন্দিনী চর্তুদশী’। মধুসূদন পরবর্তী ফররুখ আহমদ, ফররুখ-পরবর্তী আমান উল্লাহ্্। বাংলা সাহিত্যে বর্তমানে যে ক’জন সনেট বোদ্ধা লেখক আছেন তাদের মধ্যে এসএম আমান উল্লাহ্্ অন্যতম। ইংরেজি সাহিত্যের অধ্যাপক আমানউল্লাহ স্যার সনেট বুঝেই ক্ষান্ত হননি সনেটের নাড়ি নক্ষত্রের চুলচেরা বিশ্লেষণ জেনে-বুঝে নিজেই লিখেছেন অনেক বিশুদ্ধ সনেট। শুধু সনেটই বা বলি কেন তার রয়েছে সনেটক্রম।
রাজনন্দিনী চর্তুদশী গ্রন্থের মুখবন্ধ অংশে লেখক জানাচ্ছেনÑ এই পুস্তকে সর্বমোট ১৩০টি সনেট সন্নিবেশিত হয়েছে। প্রত্যেকটি তিন প্রধান অবয়বে অর্থাৎ পেত্রাক, শেকস্পিয়ারিয়ান ও স্পেনসিয়ারিয়ান-এর অনুকরণে লিখিত হয়েছে বিশেষ করে আকৃতি, ভাব ও মিল বিন্যাসের বৈচিত্র্যের আলোকে। এর পাশাপাশি বাংলায় সাতটি (৭) ও ইংরেজিতে আটটি (৮)- মোট ১৫টি সনেট ভিক্টোরিয়ান ঔপন্যাসিক ও কবি জর্জ মেরেডিথ (এবড়ৎমব গবৎবফরঃয)-এর গড়ফবৎহ খড়াব-এর আদলে প্রলম্বিত বা চৎড়ষড়হমবফ বা ঊীঃবহফবফ সনেট হিসেবে পূর্ণ যৌবনা ষোড়শীর লাবণ্যে ১৬ লাইনে লিপিবদ্ধ হয়েছে। অন্য একটি সনেট ফুলের ভাষাÑ বাংলা ও ইংরেজি উভয় ভাষায় তিন আদলে লিখিত হয়েছে। বিষয়বস্তু প্রায় অভিন্ন রেখে একই নামকরণে আকৃতিগত পার্থক্য যেমন অষ্টক ও ষষ্টক এবং তিনটি চতুর্দষ্পদীর শেষে একটি দ্বিপদী পঙক্তি ব্যবহার করে এবং স্ব-স্ব সনেটের মিল বিন্যাস সংযোজন করে এগুলো রচিত হয়েছে। আশা করছি এর থেকে পাঠকবৃন্দ বা সাহিত্যের শিক্ষার্থীরা সনেটের ক্রমবিকাশ, ভাব ও সৌন্দর্য সম্পর্কে সম্যক ধারণা পাবেন যা বিশেষ করে ইংরেজি সাহিত্যের শিক্ষার্থীদের অনেক সহায়ক হবে।
এবার পাঠক নিশ্চয়ই বুঝতে পারছেন লেখক আমানউল্লাহ্্ কত সাধনায় এসব দুরূহ কাজ সম্পন্ন করেছেন। এরই পাশাপাশি তিনি তুলে ধরেছেন সনেট সম্পর্কে নাতিদীর্ঘ আলোচনা যা অত্যন্ত সমৃদ্ধ এবং জ্ঞানগর্ভ।
প্রচ্ছদের প্রসঙ্গ না টানলেই নয়Ñ হালকা নীলাভ রঙের মাঝখানে রাজনন্দিনী চতুর্দশীকে নিয়ে লেখা হৃদয়হরা একটি সনেট, প্রচ্ছন্নে মুকুট পরিহিত স্মিতহাস্যময়ী রাজনন্দিনী। সবচে বড় কথা, এটি পাঠককে জানাবে পেত্রাক থেকে মেরেডিথ পর্যন্ত সনেট কবিদের পারদর্শিতা সম্বন্ধে। প্রকাশ করেছে ফ্রেন্ডস বুক কর্নার, মূল্য-২৮০.০০
বাংলা ইংরেজি উভয় ভাষাই প্রায় ত্রুটিহীনভাবে ঝকঝকে অক্ষরে সাদা কাগজে বিন্যস্ত হয়েছে। গ্রন্থখানার বহুল প্রচার কামনা করছি।
হ ড. গুলশান আরা



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

আরও পড়ুন