শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেনের
সেনা সমর্থিত তথাকথিত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের সময়ে দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও আইনশৃঙ্খলার ক্ষেত্রে চরম বিপর্যয় ও নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি বিরাজ করেছিল। জাতীয় জীবনে রচিত সেই কালো অধ্যায়ের ইতিহাস নিয়ে তথ্যভিত্তিক পর্যবেক্ষণ, বিশ্লেষণ ও গবেষণাধর্মী একটি নতুন গ্রন্থ ‘জরুরী আইনের সরকারের দুই বছর (২০০৭-২০০৮) প্রকাশিত হয়েছে। ভিন্ন স্বাদের নতুন ধারার ব্যতিক্রমী এই গ্রন্থটির রচয়িতা ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক, বিএনপির স্থায়ী কমিটির সিনিয়র সদস্য এবং মুক্তিযুদ্ধের সংগঠক।
২০০৭ সালের ১১ জানুয়ারি রক্তপাতহীন এক অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। ওই সময় রাষ্ট্রপতি নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন বাতিল এবং দেশে জরুরি আইন ঘোষণা করতে বাধ্য হন। তখন কীভাবে অসাংবিধানিক সেনা সমর্থিত কথিত ‘তত্ত্বাবধায়ক সরকার’ ক্ষমতাসীন হয়? তার পটভূমি সম্পর্কে এই গ্রন্থে একটি বস্তুনিষ্ঠ বিশ্লেষণ করা হয়েছে। সাংবিধানিক তত্ত্বাবধায়ক সরকার ৯০ দিন ক্ষমতায় থাকার বাধ্যবাদকতা রয়েছে। অথচ জরুরি আইনের ওই তত্ত্বাবধায়ক সরকার সংবিধানকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে নানা অজুহাতে দুই বছর দেশ পরিচালনা করেছে। সেনা সমর্থিত সরকার জনগণের বুকের ওপর জগদ্দল পাথরের মত চেপে বসেছিল। ওই সময় তারা কী এক শ্বাসরুদ্ধকর ও বিভীষিকাময় পরিস্থিতি সৃষ্টি করেছিল, রাজনীতিক, ব্যবসায়ী, পেশাজীবী ও সাধারণ মানুষের কী ভাগ্যবরণ করতে হয়েছে- এই সব লোমহর্ষক ঘটনা বর্তমান প্রজন্মকে স্মরণ করিয়ে দেয়া এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অবহিত করতেই লেখকের গ্রন্থ রচনার এই প্রয়াশ। গ্রন্থটিতে তিনি তখনকার প্রেক্ষাপটের আদ্যেপান্ত চমৎকারভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন। লেখক গ্রন্থে শব্দচয়ন ও সহজ বাক্য বিন্যাসে ঘটনার অন্তর্নিহিত বিষয়গুলো উপস্থাপনায় দারুণ মুন্সীয়ানা দেখিয়েছেন, যা পাঠক হৃদয়ের গভীরে ঠাঁই করে নেবে। ওই সময়ের জাতীয় দৈনিকের রেফারেন্সসহ বিভিন্ন সূত্র থেকে নেয়া তথ্যে ঘটনা প্রবাহ পরিচ্ছন্নভাবে গ্রন্থ’টিতে উঠে এসেছে। পাঠকের কাছে এই গ্রন্থটি সংগ্রহে রাখার জন্য একটি প্রামাণ্য দলিল হিসেবে বিবেচিত হবে।
লেখক ড. মোশাররফ তার গ্রন্থে টুইন টাওয়ার ধ্বংসের দিনের উপমা দিয়ে লিখেছেন, নাইন ইলেভেন-এ আমেরিকায় যেভাবে টুইন টাওয়ার ধুলোয় মিশেছিল, তেমনিভাবে বাংলাদেশে ‘ওয়ান ইলেভেন’ মুক্তিযুদ্ধের মূল চেতনা ‘গণতন্ত্রের অভিযাত্রা’কে ধ্বংস করেছে। লেখক গ্রন্থে উল্লেখ করেছেন, জরুরি আইন জারির পর গায়েবীভাবে প্রতিষ্ঠিত সরকারকে ‘জরুরী আইনের তত্ত্বাবধায়ক সরকার’, ‘সেনা সমর্থিত সরকার’, ফখরুদ্দিন-মইন উদ্দিনের সরকার’, ‘অসাংবিধানিক সরকার’, ‘অনিয়মিত সরকার’, ‘অস্বাভাবিক সরকার’ এবং ‘জরুরী আইনের সরকার’ নামে অভিহিত করা হয়। এই সরকার কি নামে পরিচিত হবে, এ নিয়ে আইন উপদেষ্টা ও সেনাপ্রধান প্রকাশ্যে পরস্পর বিরোধী বক্তব্য দিয়ে বিতর্কের সৃষ্টি করেন।
প্রবীণ রাজনীতিক ড. মোশাররফ অত্যন্ত সাবলীলভাবে লিখেছেন, দেশের দুই প্রধান নেত্রী বেগম খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে রাজনীতি থেকে সরিয়ে দেবার কূটকৌশল হিসেবে ‘মাইনাস টু’ ফরমূলা বাস্তবায়নের অপচেষ্টা, বিরাজনীতিকরণের জন্য দুই নেত্রীসহ বিএনপি-আ.লীগের সিনিয়র নেতাদের গ্রেফতার ও মিথ্যা মামলায় সীমাহীন নির্যাতনের কথা। জনগণের প্রতিরোধের মুখে তাদের মাইনাস টু ফরমূলা আলোর মুখ দেখেনি। ‘জরুরী আইনের সরকার’ দুই বছরে সুশাসন প্রতিষ্ঠা, রাজনৈতিক সংস্কার, দুর্নীতি দমন, দ্রব্যমূল্য ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণসহ সর্বক্ষেত্রে চরমভাবে ব্যর্থ হয়েছে। ২০০৮ সালের শেষ দিকে তারা একটি প্রশ্নবিদ্ধ নির্বাচন অনুষ্ঠান শেষে ক্ষমতা থেকে প্রস্থান করতে বাধ্য হয়। লেখকের এই নতুন গ্রন্থে সুশাসন, জনকল্যাণমুখী কর্মকা- ও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিসহ নানা বিষয়ে জরুরি আইনের সরকারের ব্যর্থতার তথ্যভিত্তিক তুলনা চিত্র প্রশংসনীয়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, ৩ মেয়াদের সাবেক মন্ত্রী ড. খন্দকার মোশাররফ হোসেন। ১/১১ সরকারের ষড়যন্ত্রের অন্যতম শিকার তিনি। ড. মোশাররফকে ২০০৭ সালের ৭ মার্চ কোন কারণ ছাড়াই গ্রেফতার করে ৬১৬ দিন কারান্তরীণ করে রাখেন। তিনি (লেখক) ‘জরুরী আইনের সরকারের ২ বছর (২০০৭-২০০৮)’ গ্রন্থে ১৯টি অধ্যায়ে যে সব বিষয় বিস্তারিতভাবে তুলে ধরেছেন- তা হচ্ছে, ১। জরুরি আইন ঘোষণার প্রেক্ষাপট, ২। জরুরি আইনের সরকারের সাংবিধানিক ও নৈতিক ভিত্তি নিয়ে বিতর্ক, ৩। মাইনাস টু ফরমূলা ও বিরাজনীতিকরণ, ৪। প্রধান উপদেষ্টা ও অন্য উপদেষ্টাদের কার্যকলাপ, ৫। জরুরি আইনের সরকারের সেনাপ্রধানের ভূমিকা, ৬। যৌথবাহিনী ও টাস্কফোর্সের ভূমিকা, ৭। রিমান্ডে নির্যাতন ও স্বীকারোক্তি আদায়, ৮। জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ ও নীতিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, ৯। অর্থনৈতিক বিপর্যয়, ১০। নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যমূল্য পরিস্থিতি, ১১। আজ্ঞাবহ দুর্নীতি কমিশন, ১২। বিতর্কিত বিচারকার্য পরিচালনা, ১৩। উচ্চ আদালতের ভূমিকা, ১৪। নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা, ১৫। সংস্কারের নামে দল ভাঙ্গার তৎপরতা, ১৬। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে স্ফুলিঙ্গ থেকে গণবিস্ফোরণ, ১৭। কিংস পার্টি ও কিংস ফ্রন্ট গঠনের উদ্যোগ, ১৮। মাইনাস টু থেকে ম্যানেজ টু এবং ১৯। নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন-২০০৮।
লেখক ড. মোশাররফ গ্রন্থের ভূমিকায় দৃঢ় আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন, সকল শ্রেণির পাঠকের কাছে গ্রন্থটি ভাল লাগবে, সুখপাঠ্য হবে। গ্রন্থটিতে নিরপেক্ষ, সত্য অনুসন্ধানী পর্যবেক্ষণ ও বস্তুনিষ্ঠ পর্যালোচনা করা হয়েছে। পাঠকের কাছে এ প্রয়াশ গ্রহণযোগ্য হলে তার পরিশ্রম স্বার্থক হবে। ‘জরুরী আইনের সরকারের দুই বছর (২০০৭-২০০৮)’ গ্রন্থটি প্রকাশ করেছে আহমদ পাবলিশিং হাউস। ৬৬, প্যারিদাস রোড, বাংলাবাজার, ঢাকা-১১০০। প্রকাশকাল- ফেব্রুয়ারি ২০১৭। প্রকাশক মেছবাহ উদ্দীন আহমদ। পৃষ্ঠা-৩৫৮, অধ্যায়-১৯, মূল্য-৬০০ টাকা।
হ শাহ্ আক্তারুজ্জামান
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।