পটুয়াখালীর যুবক ক্বারী সাইয়্যেদ মুসতানজিদ বিল্লাহ রব্বানীর কোরআন তেলাওয়াতে মুগ্ধ যুক্তরাষ্ট্রবাসী
ইসলামি সভ্যতা ও সংস্কৃতি বিকাশে বাংলাদেশের অবদান অনস্বীকার্য। এদেশে ইসলামি সংস্কৃতি চর্চার ইতিহাস অনেক প্রাচীন।
তারেক সালমান : আনুষ্ঠানিকভাবে ভোটের প্রচারে মাঠে নেমেছে আওয়ামী লীগ। গত মাসে উত্তরবঙ্গের অন্যতম জেলা বগুড়া থেকে এ আনুষ্ঠানিকতা শুরু করে দলটি। প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা ওইদিন বগুড়ায় দলীয় জনসভায় আগামী নির্বাচনে নৌকা মার্কায় ভোট দিতে সরাসরি জনগণের প্রতি আহ্বান জানান। এরই ধারাবাহিকতায় চলতি মাস থেকে নির্বাচনের আগ পর্যন্ত সারাদেশে জনসভার কর্মসূচি হাতে নিয়েছে আওয়ামী লীগ। ইতোমধ্যে আগামী দুই মাসে বিভিন্ন জেলায় প্রধানমন্ত্রীর অন্তত ছয়টি জনসভার কর্মসূচি নির্ধারণ করেছে দলটি। এসব জনসভায় প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা প্রধান অতিথি থেকে বক্তব্য রাখবেন।
দলীয় সূত্র জানায়, চলতি মাসের ১৪ তারিখ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা লক্ষীপুর জেলায় জনসভা করবেন। এরপর চলতি মাসের ২১ তারিখ মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রী খুলনা বিভাগের মাগুরায় জনসভা করবেন। এরপর ২৮ মার্চ মঙ্গলবার আওয়ামী লীগ সভাপতি জনসভা করবেন ফরিদপুরে। এপ্রিলের ১৫ তারিখ শনিবার দেশের উত্তরাঞ্চলের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে জনসভা করবেন আওয়ামী লীগ প্রধান। এপ্রিলের ২৩ তারিখ রোববার তিনি বরিশাল বিভাগের বরগুনাতে জনসভা করবেন। সর্বশেষ ২৯ এপ্রিল শনিবার চুয়াডাঙ্গায় আওয়ামী লীগ সভাপতির জনসভার জন্য তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে।
নির্বাচনকে কেন্দ্র করেই ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের দলীয় সকল কর্মকান্ড ও সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপগুলোও এখন নির্বাচন বা ভোটমুখী। নির্বাচনের বিষয়টি মাথায় রেখেই প্রধানমন্ত্রীর প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন ও জনসম্পৃক্ত সরকারি কর্মসূচিগুলোকে অগ্রাধিকার দেয়া হচ্ছে বলে দলীয় সূত্র জানায়। প্রধানমন্ত্রী নিজেও আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি হিসেবে দলের সংসদ সদস্য ও কেন্দ্রীয় নেতাদের নিজ নিজ এলাকায় যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারক পর্যায়ের নেতাদের সঙ্গে কথা বলে এমন আভাস পাওয়া গেছে।
দলীয় সূত্রে জানা গেছে, নীতিগতভাবে আগামী জাতীয় নির্বাচনের জন্য ব্যাপক প্রস্তুতি গ্রহণ শুরু হয়েছে বেশ আগে থেকেই। গত অক্টোবর মাসে অত্যন্ত জাঁকজমকের সঙ্গে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে দু’দিনব্যাপী দলের ২০তম জাতীয় সম্মেলন সফলভাবে শেষের মধ্যদিয়েই এ প্রস্তুতি শুরু করে ক্ষমতাসীনেরা। দলীয় কাউন্সিলের পর থেকেই প্রধানমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনার পাশাপাশি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ও সিনিয়র নেতারা আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণ করতে বারবার নেতাকর্মীদের প্রতি নির্দেশ দিয়ে আসছেন। তবে, গত ২৬ ফেব্রুয়ারি বগুড়ার শান্তাহার উপজেলায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জনসভার মধ্যদিয়েই মূলত এ আনুষ্ঠানিকতা শুরু করে দলটি। এরপর থেকেই সরকারের মন্ত্রী, এমপি ও নির্বাচনে দলীয় মনোনয়ন-প্রত্যাশী নেতারা যার যার নির্বাচনী এলাকা চষে বেড়াচ্ছেন। অনেকে সপ্তাহের বেশির ভাগ সময়ই নিজ নিজ এলাকায় ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। এমনকি দলের তৃণমূল নেতাকর্মীদের পাশে পেতে তারা গ্রাম ও ওয়ার্ডেও দিনরাত ঘুরে বেড়াচ্ছেন।
নাম না প্রকাশের শর্তে দলের এক সিনিয়র নেতা বলেন, আসন্ন নির্বাচনের জন্য পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ও রাজনৈতিক ময়দানে দেশের প্রধান বিরোধীদল বিএনপির অংশগ্রহণের বিষয়টি নিশ্চিত হলেই যে কোনো সময় নির্বাচনের ঘোষণা আসতে পারে। যদিও বর্তমান সরকারের মেয়াদ এখনো বাকি আছে আগামী বছরের শেষ পর্যন্ত। কিন্তু নির্বাচনী প্রস্তুতি ও বিএনপির অংশগ্রহণ বিষয়ে সন্তোষজনক নিশ্চয়তা দৃশ্যমান হলেই দেশে যে কোনো সময় জাতীয় নির্বাচন চলে আসতে পারে।
আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী এমপি ইনকিলাবকে বলেন, গত অক্টোবরে দলীয় কাউন্সিলেই আমাদের সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নেতাকর্মীদের আগামী নির্বাচনের প্রস্তুতি গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই নির্দেশনার আলোকে আমরা দলের সব সাংগঠনিক সম্পাদকরা সারাদেশে যার যার দায়িত্বপ্রাপ্ত এলাকায় ছুটে যাচ্ছি। যুগ্ম সাধারণ সম্পাদকেরা যাচ্ছেন। অন্যান্য নেতারাও যাচ্ছেন। সবাই মিলে সংগঠনকে শক্তিশালী করছি, নেতাকর্মীদের নির্বাচনের জন্য প্রস্তুত করছি। সে ক্ষেত্রে প্রধানমন্ত্রীর জনসভাকে এক অর্থে নির্বাচনী প্রচারের জনসভা বলা যেতেই পারে।
খালিদ মাহমুদ বলেন, দেশ ছোট হলেও আমাদের জনসংখ্যা ১৬ কোটি, কিন্তু কম সংখ্যা না। তাই জনগণের কাছে পৌঁছাতে, তাদের কাছে সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের কথা তুলে ধরতে এখন থেকেই প্রস্তুতি ও প্রচার একযোগে চালাতে হবে। প্রধানমন্ত্রীর ধারাবাহিক জনসভাও এসব উদ্দেশ্যেই চলবে।
আওয়ামী লীগের নেতারা মনে করেন, জঙ্গি ও সন্ত্রাসবাদ ইস্যুতে বিরোধীদলগুলোর বাধা-প্রতিবন্ধকতা সত্তে¡ও দেশজুড়ে সকল শ্রেণি-পেশার মানুষের মধ্যে জাতীয় ঐক্য সৃষ্টি হওয়ায় কাক্সিক্ষত সফলতা পেয়েছে সরকার। জঙ্গিবাদী অপতৎপরতা দমন ও সরকারের উন্নয়ন কর্মকান্ডের জন্য বিগত সময়ের চেয়ে জনমত এখন আবার সরকারের দিকে হেলে পড়েছে।
আওয়ামী লীগ সূত্র জানায়, আগামী নির্বাচনে নৌকার বিজয়ের সম্ভাবনার বিষয়ে অনেকটা স্বস্তির মধ্যে আছে সরকার। নির্বাচনে বিজয়ের ব্যাপারে ইতোমধ্যেই তৃণমূল পর্যায়ে সরকারের বিভিন্ন গোয়েন্দা সংস্থার পাশাপাশি স্বাধীন কিছু সংস্থাকে দিয়েও জরিপ পরিচালনা করেছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। এসব জরিপে দলটি জানতে পেরেছে, নেতা হিসেবে দেশের অন্য যে কোনো নেতার চেয়ে এই মুহূর্তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সবচেয়ে জনপ্রিয়। আর দল হিসেবেও আওয়ামী লীগ অন্য যে কোনো দলের চেয়ে জনগণের কাছে আস্থার। তাই এ জনপ্রিয়তা ধরে রেখেই আওয়ামী লীগ সামনের নির্বাচন সারতে চায়। এজন্য সম্ভাব্য সবকিছুই করতে চায় তারা।
সূত্রগুলো জানায়, আগামী নির্বাচনে আওয়ামী লীগ উন্নয়নের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে ক্ষমতার ধারাবাহিকতার উপর জোর দিচ্ছে। সেভাবেই ঠিক হবে নির্বাচনী মূল শ্লোগান। নির্বাচনী ইশতেহারও সেভাবে ঠিক করা হচ্ছে। পাশাপাশি চলছে সাংগঠনিক সব প্রস্তুতি। ২০১৮ সালের শেষদিকে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া নির্বাচনকে সামনে রেখে এরই মধ্যে আওয়ামী লীগের নীতি-নির্ধারণী মহল থেকে তৃণমূলসহ সহযোগী সংগঠনগুলোকে নির্বাচনী প্রস্তুতির জন্য ইতোমধ্যেই দেয়া হয়েছে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা।
দলের নেতাদের বক্তব্য, আওয়ামী লীগ নির্বাচনের দল। প্রত্যেক রাজনৈতিক দল যারা গণতন্ত্রকে বিশ্বাস করে, তারা অবশ্যই নির্বাচনকে ঘিরেই সবকিছু চিন্তা-ভাবনা করে। নির্বাচনের মাঝ দিয়েই আমাদের কর্মসূচি বাস্তবায়নের সুযোগ থাকে। দল হিসেবে আমাদের যে উদ্দেশ্য-আদর্শ তা বাস্তবায়ন করার জন্য নির্বাচন একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। সময় কোনো কথা নয়। একটি নির্বাচন হয়ে যাওয়ার পরই আরেকটি নির্বাচন নিয়ে চিন্তা-ভাবনা থাকা দরকার। আর আমরা সে অনুযায়ী প্রস্তুতি গ্রহণ করছি।
প্রধানমন্ত্রীর জনসভা আগামী ভোটের প্রচার কি না- এ ব্যাপারে জানতে চাইলে আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক এ কে এম এনামুল হক শামীম ইনকিলাবকে বলেন, প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা লক্ষীপুরসহ বিভিন্ন জেলায় জনসভা করবেন। আগামী ১৪ মার্চ মঙ্গলবার তিনি লক্ষীপুর জেলায় জনসভায় ভাষণ দেবেন। তিনি দীর্ঘ ১৯ বছর পর লক্ষীপুরে আসছেন। তার আগমনকে কেন্দ্র করে সারা জেলায় উৎসবের জোয়ার বইছে। মানুষ আনন্দে উদ্বেলিত।
শামীম বলেন, প্রধানমন্ত্রীর এ জনসভাকে আপনারা নির্বাচনী প্রচার হিসেবে দেখতে পারেন। কিন্তু আমি তা মনে করি না। আমি মনে করি, প্রধানমন্ত্রীর জনসভাগুলো রাজনৈতিক জনসভা। কারণ নির্বাচনের এখনো অনেক সময় বাকি আছে। তা ছাড়া, গণতান্ত্রিক রাজনৈতিক দল হিসেবে আওয়ামী লীগের সবসময় নির্বাচনী প্রস্তুতি থাকে।
২০১৪ সালে ৫ জানুয়ারির নির্বাচনের মধ্য দিয়ে পরপর দ্বিতীয়বার ক্ষমতায় আসে আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন বর্তমান সরকার। ওই নির্বাচনে অংশ নেয়নি তার আগের সংসদের প্রধান বিরোধীদল বিএনপি এবং তাদের নেতৃত্বাধীন জোট। তৎকালীন মহাজোট থেকে বের হয়ে এসে পার্লামেন্টে বিরোধীদলের জায়গা নেয় সাবেক স্বৈরশাসক এরশাদের জাতীয় পার্টি (জাপা)। জাতীয় পার্টিও এরই মধ্যে নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু করেছে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।