শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
জাকারিয়া জ্যাক : আয়শা ভূত দেখার মতো আঁতকে উঠল। বড় কোনো ভ‚ত না, ছোটখাটো ভূত। ভূতের সারা শরীর কর্দমাক্ত। ভূতটার হাতে ছোট একটা শোল মাছ। মাছটা আয়শার দিকে বাড়িয়ে ভ‚তটা ফিক করে হেসে উঠল। সাদা ফোকলা দাঁতের ভূতকে তখন চিনতে অসুবিধে হলো না আয়শার। তারই একমাত্র ছেলে জসীম।
-কি রে? তুই কাঁদা মাইখে ভূত সাজছিস ক্যান?
-মাছ ধলচি।
ফোকলা দাঁতে এইটাই ভালো উচ্চারণ। মায়ের বুঝতে অসুবিধে হলো না। রাগও লাগছে আবার হাসি আসছে আয়শার।
-তোর আব্বা আসলি আজকে তোরে মারবে।
-ক্যান? মাছ ধলা কি পাপ?
জসীম একবার কার কাছ থেকে গালি শিখেছিল। সেই গালিটা সবসময় বলত। একদিন তার বাবা সেটা শুনে তাকে মেরেছিল আর বলেছিল, গালি দেওয়া পাপ।
এইজন্য তার কাছে মনে হয় পাপ করলে মার খেতে হয়।
আয়শা তাকে নিয়ে কলপাড়ে গেল। সাবান দিয়ে ঘষে গোসল করাতে হবে। এদিকে এখনো রান্না করা হয়নি। মিনসে এসে যদি দেখে এখনো রান্না হয়নি, তাহলে রাগ করতে পারে। ব্যবসায়ী মানুষ যে এত রাগী হতে পারে এটা তার জানা ছিল না।
-মা, জানো, অনেক মাছ ছিল জোলায়। কিন্তু একটাও ধলতে পারি নাই।
-কার জোলায় মাছ ধরছিস?
-আমাগে ঘেলের পাশে।
-তুই একা?
-না, রনিও ছিল। ও একটাও মাছ পায় নাই। হিহি।
-কী অবস্থা করছিস? কাঁদা শুকায়ে চলটা পড়ে গেছে।
-মা, আস্তে ঘষো। ব্যথা লাগে।
-তা তুই মাছ ধরে রাখছিস কেন?
-এমনি। ধলে লাখতে ভাল লাগছে।
গোসল শেষ করে আয়শা রান্না শেষ করতে গেল। তরকারি আগেই রান্না করা হয়েছে। এখন ভাত বসাতে হবে। মিনসে ধোঁয়াওঠা গরম ভাত ছাড়া খেতে পারে না। তাই ভাত পরে রান্না করতে হয়।
-মা, মাছটা এখন লানবা না?
-না। রাতে ভাইজে দিব।
-না, না। এখন।
ছেলের জেদের কাছে প্রত্যেক বাবা-মাই হার মানে। আয়শা মাছটা কাটতে বসল। খালি গায়ে তার পাশে বসে মাছ কাটা দেখতে লাগল জসীম।
-মা, মাছটা তিন ভাগ কলবা, আমি মাথার ভাগ খাব, তুমি মধ্যিখানের আর আব্বু লেজ খাবে।
-এত কথা বলিস না তো। যা, গায়ে তেল দে। জামা পর।
-না। তুমি লানধো, আমি বসে বসে দেখি।
ছেলের পাকা কথায় আয়শা না হেসে পারল না। কোন মশলা ছাড়া শুধু তেলে মাছটা তিন টুকরা করে ভেজে দিল।
-এখন খাবি?
-না, মিনসে আসলি খাব?
-তুই তোর আব্বুকে মিনসে বলছিস কেন?
-তুমি বল, তাই বলি।
-আর বলবি না। ঠিক আছে?
-আইচ্ছা।
জিহাদ বাড়ি এসেছে। খুব ক্লান্ত মনে হচ্ছে। এক গøাস ঠাÐা পানি এনে আয়শা বলল, তোমাকে এত ক্লান্ত লাগছে কেন?
-দোকানপাট সামলানো চাট্টিখানি কথা? এক কর্মচারী ছুটি নিয়ে চলে গেছে। তার বাবা নাকি অসুস্থ।
-ওহ, তুমি জিড়াও।
-না। সময় নাই। এখন মোকামে যেতে হবে। তুমি খাবার দাও, আমি ততক্ষণে একটা ডুব দিয়ে আসি।
পুকুরে গোসলে গেল জিহাদ। তার সাথে সাথে গেছে জসীম। ঘাটে বসে আছে। জিহাদ ছেলের সাথে এখনো কথা বলেনি। জসীমও বলেনি। এদের বাপবেটার মধ্যে একটা অন্যরকম খেলা আছে। যে আগে কথা বলবে, সে হেরে যায়। আর তার খামচি খেতে হয়। দুজন দুজনের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে। জসীমের কিছু না বলে থাকতে কষ্ট হচ্ছে। আজকের মাছ ধরার ঘটনার বর্ণনা দিতেই হবে। এদিকে তার হারের পরিমাণটাও খুব বেশি। অবশেষে বলার লোভটা সামলাতে পারল না সে।
-আব্বু, জানো?
-হেহে, হেরে গেছে। বলেই পানি ছিটিয়ে দিল জিহাদ তার ছেলের দিকে।
-কী হয়েছে, বাবা?
-আজকে না আমি একটা মাছ ধলিছি?
-তাই? কী মাছ?
-শোল মাছ।
-আরেব্বাহ। তাহলে তো আমার আর মাছ কেনা লাগবে না। আমার জসীম মাছ ধরে খাওয়াবে।
-হিহি। খিক করে হেসে উঠল সে।
গোসল শেষ করে বাপবেটা মাদুর পেতে খেতে বসেছে। জসীম ধোঁয়াওঠা গরম ভাত খেতে পারে না। আয়শা বাতাস দিয়ে ভাত জুড়িয়ে দিচ্ছে। দুপুরে সে মুরগির তরকারি রান্না করেছে। জসীমকে দিতে গেলে সে বলল, মুলগি খাব না। মাছ খাবো।
-কী মাছ, বাবা?
-শোল মাছ, আমি ধলিছি।
আয়শা মাছের মাথাসহ আরেক পিস জসীমের প্লেটে তুলে দিল। সে বলল, আমি এই মাছ খাবো না। শুধু মাথা খাবো। এইটা তুমি খাও।
জিহাদ বলল, আমি মাছ খাবো না?
-তুমি লেজ খাও।
-না, আমি আমি মাথা খাব।
জসীম প্লেট নিয়ে সরে বসল। ছেলের এহেন কর্মকাÐ দেখে জিহাদ এবং আয়শা হেসে উঠল। শুকনো ভাত লবণ মাখিয়ে খাচ্ছে। মাঝেমধ্যে মাছের মাথাটা উল্টেপাল্টে দেখছে সে। আয়শা জসীমকে বলল, আমি মাছের মাথা খাবো, আমাকে দে।
জসীম বুঝতে পারছে না সে কী বলবে। মাকে সে খুব পছন্দ করে এবং ভালবাসে। এদিকে মাছের মাথা খাওয়ার লোভও সামলাতে পারছে না। মুখটা ফ্যাকাসে করে বলল, পরে খাও।
-এখন দিবি না?
জসীম মাছের মাথাটা ভেঙে ছোট একটা টুকরা নিয়ে মায়ের মুখে তুলে দিচ্ছে। এটা দেখে তো জিহাদ অবাক।
-আমি চাইলাম, আমাকে দিলি না, আর মাকে খাওয়ায়ে দিচ্ছিস?
-মা কষ্ট কলে লান্না কলেছে, তাই দিছি।
-আমি রাগ করছি।
-আব্বু, তুমি অনেক বলো মাছ কিনে আনবা, বড় মাথা আমি আর তুমি খাবো।
-হাহাহা, ঠিক আছে বাবা। এখন খাওয়া শেষ কর। আয়শা, আমি এখন বের হব।
-খেয়েই উঠবে নাকি? কিছুক্ষণ বস। আমি পান এনে দেই।
আয়শা উঠে জিহাদকে পান দিল। পান চিবাইতে চিবাইতে বের হয়ে গেল জিহাদ। মোকামে আগে আগে না গেলে সমস্যা।
সন্ধ্যার পর আয়শা জসীমকে পড়াতে বসল। বাংলা বর্ণমালার সাথে জসীমের পরিচয় হয়েছে। এখন সে কিছু ছড়া শিখছে। আয়শা তাকে সুর করে পড়ছে, জসীম সেই সুর নকল করে পড়ছে :,
আয় আয় চাঁদ মামা টিপ দিয়ে যা
চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা।
ধান ভানলে কুড়ো দিব
মাছ কাটলে মুড়ো দিব
কালো গায়ের দুধ দিব
দুধ খাবার বাটি দিব
চাঁদের কপালে চাঁদ টিপ দিয়ে যা।
-আচ্ছা মা, মাছ কাটলে মুড়ো দিব কী?
-মুড়ো মানে মাছের মাথা।
-তুমি চাঁদকে মুড়ো দিয়ে দিবা?
-হুম, চাঁদ টিপ দিবে তোমার কপালে, আর আমি তাকে মাছের মুড়োটা দিয়ে দিব।
-না, না। মুড়ো আমাকে দিবা, চাঁদকে দিবা না।
রাগ করে আছে জসীম। শব্দ করে হেসে উঠল আয়শা। তারপর ছেলেকে রাগানোর জন্য বলল, তোকে মুড়ো দিব না, তুই দুপুরে আমাকে অল্প একটু দিয়েছিস।
-পরের বার, অদ্দেক দিব।
-আচ্ছা। এখন পড়া শেষ। কী করবি এখন?
-কার্টুন দেখব।
আয়শা টিভি ছেড়ে দিল। টিভিতে টম্ জেরি কার্টুন হচ্ছে। টম একটা মাছ চুরি করেছে কিন্তু জেরি খেতে দিচ্ছে না। জসীম নিজেকে জেরি ভাবছে। জ-তে জসীম, জ-তে জেরি।
জসীম ঘুমিয়ে পড়েছে। জিহাদ বাড়ি পৌঁছল ১০টার পর। বাইরে থেকে ডাকছে, জসীমের মা।
আয়শা বের হলো। এক হাতে বাজারের ব্যাগ। আরেক হাতে অনেক বড় একটা কাতলা মাছ। আয়শা কিছুটা বিরক্ত হয়ে বলল, এত রাতে মাছ এনেছ কেন? এখন কাটতে পারব না।
-আরে, আমার আব্বাটা বড় মাছের মাথা খেতে চেয়েছে। তাই নিয়ে আসছি।
ছেলের প্রতি বাবার এই ভালবাসা দেখে আয়শা রাগ করতে পারল না। বলল, জসীমকে ডেকে তোল। সে মাছ দেখলে খুশি হবে।
জিহাদ কাপড় ছেড়ে জসীমকে ডাকতে গেল।
-দেখি, আমার বাবাটা কই?
কোলবালিশ জড়িয়ে ধরে ঘুমাচ্ছে। এইটুকু ছেলে ঘরঘর করে নাক ডেকে ঘুমাচ্ছে। কী অদ্ভুত ব্যাপার। উঠছেই না।
-আয়শা, ও তো ওঠে না।
-তাহলে থাক। সকালে উঠলে দেখবে।
-তুমি এক কাজ কর। মাছের আঁশটে ছাড়িয়ে পেটি বের করে রাখ। সকালে ওর সামনে কাটবে।
-আচ্ছা, তুমি ফ্রেশ হয়ে আসো। আমি খাবার দিচ্ছি।
সূর্য ওঠার আগেই জসীম উঠে গেছে। অবশ্য তাকে ওঠানো হয়েছে। আয়শা তাকে কিছু ভাল অভ্যাস শিখাচ্ছে তার মধ্যে একটা হলো ভোরে ঘুম থেকে ওঠা। বাড়ির পূর্বপাশে ক্ষেত। এদিকটা ফাঁকা থাকার কারণে সূর্যের প্রথম আলোটা ওদের বাড়িতেই পড়ে। জসীম ব্রাশ নিয়ে পূর্বদিকে বসে দাঁত ব্রাশ করছে। গ্রামের লোকজন অনেকে তখন ঘেরে, ক্ষেতে যায়। জসীমদেরও দুইটা ঘের আছে।
আয়শা রান্না চড়িয়ে জসীমকে ডাকল।
-জসীম, দেখে যা।
-কী মা।
-এদিকে আয়।
জসীম রান্নাঘরের দাওয়ায় বসতেই দেখল, অনেক বড় একটা মাছ। আর মাছের মাথাটাও বেশ বড়। চোখেমুখে হাসির ঝিলিক দেখা যাচ্ছে। আয়শা বলল, এখন মাছটা কাটব।
-মাছের মুড়োটা কি সত্যিই চাঁদকে দিয়ে দিবা?
-হাহাহা, না। আমার আব্বুকে দিব।
-হিহি। এখন কাটো, আমি দেখি।
আয়শা মাছ কাটছে। মাথা ছাড়ানোর পর জসীম নিজের ছোটে হাতের বিঘতে মাপতে লাগল। প্রায় দুই বিঘতের মতো মাথা। এত্ত বড় মাছের মাথা আগে সে দেখেনি।
-মা, মাছের মাথা কখন রান্না করবা?
-দুপুরে।
জিহাদ উঠেছে। জসীম এক দৌড়ে বাপের কোলে উঠে গেল। ছেলেকে অতিমাত্রায় আনন্দিত দেখে জিজ্ঞেস করল, কী হয়েছে, এত খুশি লাগছে কেন?
-মা অনেক বড় একটা মাছ কুটছে।
-তাই, দেখি তো।
দুপুরে জিহাদের সাথে মসজিদে জুম্মার নামাজ পড়ে বাড়ি এসে দেখে মা খাবার দিচ্ছে। বাপবেটা একসাথে খেতে বসল। জসীমের ছোট্ট থালায় এত বড় মাছের মাথার জন্য আর জায়গা নেই। বাধ্য হয়ে তার শখের থালায় মাছের মাথা খাওয়া হচ্ছে না। অবশ্য তাতে ওর খারাপ লাগছে না।
জিহাদ বলল, আমাকে একটু দিবা না?
-তুমি একটা মাছ আনছ কেন? আরও আনো নাই কেন?
-আচ্ছা, পরে আনব।
এত বড় মুড়ো জসীমের ক্ষুদ্র পাকস্থলিতে জায়গা করতে পারল না। অর্ধেকের মতো খেয়ে সে তার বাবার দিকে এগিয়ে দিয়ে বলল, আর খেতে পারছি না।
-আসলটুকুই তো খাও নাই। এদিকে দাও, আমি ভেঙে দেই।
জিহাদ মাথাটা ভেঙে ঘিলু বের করে খাইয়ে দিল জসীমকে। জসীমের ছোট্ট মস্তিষ্কে তখন ঢুকে গেল, এত বড় মাছের মাথা খাওয়ার ঘটনা ভোলা যাবে না। সে তার বন্ধুদের কাছে এই গল্প অনেক মজা করে বলবে।
জসীম অনেক বড় হয়েছে। এখন ভার্সিটিতে পড়ে। তার একটা ছোট বোনও হয়েছে। ছুটিতে গেলে জিহাদ তার জন্য বাজারের বড় মাছটা কিনে আনে। বাবা-মায়ের কাছে জসীমের মাথা খাওয়ার গল্প শুনে জসীমের বোন জেনি জসীমকে ক্ষেপায়। দুই ভাইবোনের মধুর ঝগড়া দেখে সব বাবা-মা অন্যরকম আনন্দে দ্রবীভ‚ত হয়।
ঢাকা থেকে আসার সময় প্রতিবারেই জসীম দুইটা ডিমওয়ালা ইলিশ মাছ কিনে আনে। ইলিশের ডিম জেনির খুব প্রিয়। আর বাপবেটা দুইজনে মাছের মাথা খায়। আর জসীমের আসার খবর শোনামাত্র বাজার থেকে বড় মাছটা কিনে রাখে।
এক ঈদের সময় জসীম বাড়ি যেতে পারল না। ঈদের পরেই তার পরীক্ষা। এই প্রথম ঈদ তার বাড়ির বাইরে করতে হলো। পরীক্ষার শেষ দিনে জসীমের ফোন এল বাসা থেকে। তার বাবা খুব অসুস্থ, সে যেন দ্রæত বাড়ি চলে যায়। জসীম আর বিলম্ব করল না। রওনা দিল বাড়ির উদ্দেশ্যে। পদ্মার পাড়ে ইলিশ মাছ উঠেছে। ডিমওয়ালা বড় বড় ইলিশ। আর পাঁচ কেজি ওজনের একটা কালিবাউশ মাছ পেল। ওটাও কিনে নিল। বাবা সুস্থ হলে মাছ দেখে খুশি হবে। একটা সময় থেকে সন্তানেরা তাদের পিতামাতাকে খুশি করার জন্য ব্যাকুল হয়ে থাকে।
সন্ধ্যার মধ্যেই বাড়ি পৌঁছে গেল জসীম। বাড়িতে ঢুকেই জসীমের গা ছমছম করে উঠল। বাড়ি ভর্তি লোকজন। বাড়ির পাশের লম্বা তালগাছটায় বসে কাক ডাকছে। কী বিশ্রী ডাক। মাথা ধরে যাচ্ছে। এলাকার এক ভাই জসীমের কাছ থেকে ব্যাগটা নিল। কেমন যেন শুনশান। সেই শুনশান অবস্থার মধ্যেও কেমন যেন এক অস্থিরতা বিরাজমান।
ঘরে ঢুকতেই বারান্দায় সাদা কাপড়ে মোড়ানো জিহাদ। মুখটা কেমন হাসিহাসি। জসীমের বুঝতে বেশ সময় লাগল যে তার বাবা মারা গেছে। আয়শা ছেলেকে ধরে কান্না শুরু করল। সেই কান্নার শব্দে কাকের কা কা শব্দ গেল থেমে। জেনি তার ভাইয়াকে জড়িয়ে ধরে ফুপাচ্ছে। জসীম কাঁদতে পারছে না। কান্না বুকে আটকে আছে। অধিক শোকে পাথর হয়ে গেছে সে।
ইমাম সাহেব বললেন, মুর্দাকে আর রাখা ঠিক হবে না। মুর্দার রুহু কষ্ট পাবে। জসীম শেষবারের মতো তার বাবাকে দেখে বাড়ির পাশে খোঁড়া কবরে রাখা হলো জিহাদের লাশ। জসীম একবারও কাউকে জিজ্ঞেস করল না কীভাবে তার বাবা মারা গেল।
গভীর রাত। এখনো কিছু লোকজন জসীমদের বাড়িতে বসে আছে। রাতে কারও খাওয়া হয়নি। মৃতের বাড়িতে রান্না হয়নি। জসীমের চাচি রান্না করে খাবার এনে দিয়েছে। মোটামুটি জোর করেই জসীম ও তার বোনকে খেতে দিয়েছে। জসীমের প্লেটে মাছের মুড়ো তুলে দিল চাচি। মুড়ো দেখে জসীমের ধক ফেটে যাচ্ছে। ঘন নিঃশ্বাস নিয়ে আর্তনাদ করতে শুরু করল, আব্বাগো, তুমি ক্যান আমাদের ছেড়ে চলে গেলা? কে আমারে এত ভালবাসবে? কে আমার জন্য বড় মাছ কিনে রাখবে?
মরাবাড়িতে প্রথমে শোকের যে জর্জরিত অবস্থা থাকে, একটা সময় তা মলিন হয় যায়। তখন জসীমের আর্তনাদে যোগ দেওয়ার কেউ থাকে না। তবুও রাতের নির্জনতায় জসীমের প্রলাপবাক্য আর আর্তনাদে সবার হৃদয়ে পিতৃহারা ছেলের আর্তনাদ দাগ কেটে গেল।
পরিশিষ্ট : দশবছর পরের কথা। জসীম বিয়ে করেছে। জেনিকেও বিয়ে দিয়েছে। আয়শা এখন সারাদিন ইবাদত নিয়েই থাকে। জসীমের একটা ছেলে হয়েছে। ছেলের বয়স চার বছর। একদিন দুপুরে বাড়ি এসে দেখে জসীমের ছেলে জিসান কাঁদায় পুরো মাখামাখি। আর তার হাতে ছোট একটা শোল মাছ। প্রকৃতি স্মৃতির পুনরাবৃত্তি খেলা বেশ ভালোই খেলতে পারে। এই খেলায় জসীমের কোন হাত নেই। সে একজন নীরব দর্শক হয়ে থাকবে। জসীমের স্ত্রী তার ছেলে জিসানকে দেখে আঁতকে উঠে বলল, এ কী জিসান? তুমি ভ‚ত সেজেছ কেন? জিসান তার ফোঁকলা দাঁত বের করে হেসে তার হাতের মাছটা এগিয়ে দিল তার মায়ের দিকে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।