শেখ ফজলুল করিমের জীবন ও সাহিত্য
বাঙ্গালী মুসলমানদের লুপ্ত গৌরব ও ইতিহাস ঐতিহ্য নিয়ে যে কয়জন খ্যাতনামা মুসলিম সাহিত্যিক স্মরণীয় বরণীয়
ভাই হারানোর বেদনা
নাফছি জাহান
রক্তরাঙা পলাশ ফুলে, কৃষ্ণচূড়ার ডালে ডালে
ভাই হারানোর বেদনা লুকিয়ে
অশ্রুজলে ভাসছি আজো সংগোপনে,
দগ্ধ হৃদয়ে নিস্তব্ধ নিশীথে
করুণ সুর ভেসে আসে বিরহের বাঁশিতে।
ক্লান্তিহীন বিষাদের ব্যথা আস্তরণ দেয়
স্পর্শকাতর নিষ্ঠুর ইতিহাসে,
একুশ ফিরে ফিরে আসে বিমুগ্ধতার সুরে।
হৃদয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভেসে ওঠে-
একুশ আমার ভাই হারানোর
বেদনার সীমাহীন ছন্দ,
চিরস্মরণীয় শর্তাধীন জ্বলন্ত অগ্নিশিখার খ-।
অভিশপ্ত চড়ুই
সৈয়দ ইবনুজ্জামান
চড়ুই পাখি কিভাবে কাঁদে?
কেমন হয় তার ভাষা?
কবিদের নাকি এসব বুঝতে হয়?
চড়ুইয়ের কান্নার ভাষা বুঝবো বলে-
কৈশোরে দু একটা চড়ুই ধরেছিলাম
তাদের আবার মুক্তিও দিয়েছিলাম
মুক্ত আকাশে তাদের ওড়ার আনন্দের শব্দ
আজ আর মনে নেই
মনে আছে তাদের স্পর্শের অনুভূতি
নরম পালক, তুলতুলে শরীর
বন্দিদশা থেকে মুক্তি পেতে কতই না ছটফটানি ছিল তাদের
ওসব স্মৃতি অনেক আগের
আমি আজ বসন্তের সবুজ পাতার যুবক
কবি হতে পারিনি, চড়ুই হয়েছি
রাত বাড়লেই কষ্টের প্রহরীরা বন্দি করে আমায়
তখন বন্দীশালায় বন্দি
ডানা ঝাপটে মুক্তি চাই
তোমার প্রত্যাখ্যান তখন ক্ষুর হয়ে-
মস্তিষ্কের দুর্বল স্থানে তার তা-বলীলা চালায়
রক্ত ঝরে টুপ টাপ
চিৎকার করে আর্তনাদ করি
কেউ বোঝে না, রাত বোঝে
ভালবাসা না বুঝে শাপ দিলে
আজ আমি তাই কবি নই
ঘুমন্ত রাতের অভিশপ্ত আহত চড়ুই
বেনামা হিসাব
ফজলে রাব্বী দ্বীন
নরকের দাউদাউ অগ্নি এনে দাও
বরফকাঁপা শীতে এক টুকরো খাব
ছেঁড়া কাঁথা মুড়ে আয়েশ কি পাব?
তুষারের ঝড় কেন শুনতে যে পাও?
দুরাশার কাল নেই তোমাদের চরণে
পরাভূত রাজপথে হাঁটি তাও মোরা
বসুমতী রঙহীন এত বর্ণচোরা!
হিজলের বাজপাখি হিম ছোঁয় বরণে।
আড়চোখা অগণন বেনামা সব যাত্রী
বাউলা সুরে মন মজে কোন বঙ্গে?
ভ্রমর শাড়ি পরে কি নাচে রঙ্গে?
শ্রাবণের তালদিঘি ডুবে রাখে রাত্রি।
তবু বাজে বেণু বিনা সুর যে মধুর!
নিষ্প্রাণে বেলা কাটে অবহেলায়
লোভে শিখা পাপ আজি পুথিতে নাই
ওরা হলে খাঁটি-সাধু মোরা হই চোর।
অণুকবিতা
রেজাউল ইসলাম হাসু
চুপকথা,
তোমার শহর তোলপাড় ক’রে
পেয়ে গেছি দুহাত ভ’রে
দেবতার রূপকথা!
০২.
উড়ে যাবার অনুমোদন এলো। ডানা কোথায়?
কেমন ক’রে উড়ে যাবো দেবতার কাছে?
ডানাহীন চাঁদ নিয়ে আকাশ কি উড়তে পারে-
এইসব উত্তর কি দেবতারও জানা আছে?
০৩.
ধরে নাও- যিশু ফিরে এলেন ফিরিয়ে দিতে আমাদের পাপ।
মৃতদের আত্মায় ফঁৎকার দিয়ে ফের জেগে তুললেন গলিত প্রতিবাদ।
সৈয়দ রনো
সেই স্মৃতি পড়ে মনে
জোছনা আলোকিত গভীর রজনীতে
খোলা আকাশের দিকে তাকালে
সেই স্মৃতি পড়ে মনে।
ঝাঁঝালো মিছিল, তীব্র সেøাগান
স্বাধীনতার উড্ডীন পতাকা
গোলাগুলির শব্দ, বারুদের গন্ধ বাস লঞ্চ ট্রাকের
গতিবেগ দেখলে
আজো সেই স্মৃতি পড়ে মনে।
আধুনিকতায় গা ভাসানো উল্লাস
কম্পিত করা চতুর্দিকের ত্রাস
মুক্তিযোদ্ধাদের মূল্য পেল হ্রাস
কোর্ট কাচারিতে এখনো ইংরেজির ব্যবহার দেখলে
আজো সেই স্মৃতি পড়ে মনে।
ঘুষ খাওয়া অফিসার, অত্যাচারী মহাজন
মদ ভাং গাঁজার ব্যবসায়ী, কলুর বলদ
মিথ্যেবাদী রাজনীতিবিদদের দেখলে
সেই স্মৃতি পড়ে মনে।
খেয়াপাড়ের যাত্রী, দাঁড়টানা মাঝি
গাড়োয়ানের চলার মনোবল
অথৈ জলরাশি ওপারের স্বাধীনচেতা
যুবককে দেখে
আজো সেই স্মৃতি পড়ে মনে।
বাংলার পাগলকরা প্রকৃতি
কৃষকের কাঁধে লাঙল জোয়াল
মিল কর্মচারীর পরনে চটের পোশাক
পাজেরো গাড়িতে সাহেবসোবা
ভুখা নাঙা মানুষ শেরাটন হোটেল
রেডিওর সংবাদ শুনলে
আজো সেই স্মৃতি পড়ে মনে।
ঘুমের ঘোরে, জনতার ভিড়ে বটের মেলায়
সেই স্মৃতি পড়ে মনে।
আশার কুহক
ইদ্রিস আলী মেহেদী
ঠগবাজি আর হতাশায় লুটে নেয় সব প্রত্যাশা
মায়া-মৃগ হয়ে সবুজ বনে জেগে রয় শুধু আশা।
নূপুর-ঝংকারেও মৃতপ্রায় মন, সুখান্বেষণে জাগে
ভোগ-বিলাস নয় লেনাদেনা নয় শুধু ত্যাগে।
নৃত্যের ছন্দ, ঝলোমলো আলো, আসর শেষে সব ফিঁকে
মনোকাশে, কেবল উঁকি দেয় এক চাঁদ লিকলিকে।
অমাবশ্যা শেষে দেবে আলো আশা জাগে প্রতীক্ষায়
ময়ূরপঙ্খী না হয় হলো, নেবে তার চিলতে খেয়ায়।
ছোট্ট জীবনে দেখেছি কতো না চমকানো ঝড়
উড়িয়ে নিয়েছে যেটা যেখানে- বাদ যায়নি খড়।
অথৈ সমুদ্রের ঢেউয়ের তালে, অবশেষে এলে তুমি
যতই দেখি-জানি, অবাক হয়ে চম্পক অঙ্গুলি চুমি।
ভোগে নয় ত্যাগে- ত্যাগে নয় ভোগে
সান্নিধ্যের না হোক - থেকো সুখে কিংবা শোকে।
চেতনার বিন্দুতে, তুমি এক শক্ত স্তম্ভ -
অযোগ্য আমি, ডাকলেই কাছে পাবে, হবে না বিলম্ব।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।