গুলিস্তানের বিস্ফোরণে নিহত ১৬ জনের নাম-পরিচয় পাওয়া গেছে
রাজধানীর গুলিস্তানের সিদ্দিক বাজার এলাকায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের ঘটনায় এখন পর্যন্ত ১৬ জন নিহত হয়েছেন। এ
মো: দেলোয়ার হোসেন, গাজীপুর জেলা সংবাদদাতা : প্রেসিডেন্ট মো: আবদুল হামিদ বলেছেন শিক্ষার মূল উদ্দেশ্য হচ্ছে মানবতার পরিপূর্ণ বিকাশ এবং দেশ ও জনগণের কল্যাণসাধন। মননশীল, অসাম্প্রদায়িক, দেশপ্রেমিক এবং কর্মকুশল নাগরিক হিসেবে বেড়ে ওঠার ক্ষেত্রে মানুষের প্রাথমিক চাহিদাগুলোর মধ্যে শিক্ষা অন্যতম। উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্য হলো বিশ্বমানের জ্ঞান সঞ্চারণ, নতুন জ্ঞানের উদ্ভাবন এবং সুদক্ষ জনশক্তি গড়ে তোলা, যারা দেশ, সমাজ ও সভ্যতাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে আগামীর পথে।
প্রেসিডেন্ট বৃহস্পতিবার বিকালে গাজীপুরের সালনায় অবস্থিত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে সভাপতির ভাষণে এসব কথা বলেন।
প্রেসিডেন্ট বলেন বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষি আমাদের অর্থনীতির প্রাণ। আমাদের আবহমান বাংলার গৌরবময় ইতিহাস ও ঐতিহ্য মিশে আছে কৃষির সাথে। মূলত বাঙালি জাতির শেকড় নিহিত রয়েছে কৃষির মধ্যে। প্রাচীনকাল থেকে আমাদের অর্থনীতিতে কৃষি ও কৃষকের অবদান অসামান্য। দেশের জনগণের দৈনন্দিন খাদ্য চাহিদা ও আমিষের চাহিদা পূরণ, শিল্পোৎপাদন, কর্মসংস্থানসহ রফতানি বাণিজ্যে কৃষিজাতের অবদান উল্লেখযোগ্য।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাবর্তন প্যাভিলিয়নে আয়োজিত বর্ণাঢ্য এ অনুষ্ঠানে সমাবর্তন ভাষণ দেন বিশ্ববিদ্যালয়ের মঞ্জুরি কমিশনের চেয়ারম্যান প্রফেসর আব্দুল মান্নান। বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি প্রফেসর ড. মো: মাহবুবর রহমান এতে স্বাগত ভাষণ দেন এবং ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ট্রেজারার প্রফেসর ড. ইসমাইল হোসেন মিঞা। অনুষ্ঠানে মুক্তিযুদ্ধবিষয়ক মন্ত্রী অ্যাডভোকেট আকম মোজাম্মেল হক, মো: জাহিদ আহসান রাসেল এমপি, কৃষিবিদ বাহাউদ্দিন নাছিম এমপি, গাজীপুরের জেলা প্রশাসক এস.এম আলম, পুলিশ সুপার মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ, গাজীপুর মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি অ্যাডভোকেট আজমত উল্লা খান, সাধারণ সম্পাদক মো: জাহাঙ্গীর আলম, সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র আসাদুর রহমান কিরণ প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয়ের পক্ষ থেকে প্রেসিডেন্টকে ক্রেস্ট প্রদান করেন ভিসি প্রফেসর ড. মো: মাহবুবর রহমান। সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডিগ্রিপ্রাপ্ত ১ হাজার ১১৩ জনকে সনদ প্রদান করা হয়।
এর আগে দুইটা ৪০ মিনিটে প্রেসিডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি, সিন্ডিকেট ও একাডেমিক কাউন্সিলের সদস্য এবং অনুষদের ডিনদের নিয়ে আনুষ্ঠানিক সমাবর্তন শোভাযাত্রা সহকারে অনুষ্ঠানস্থলে এসে উপস্থিত হলে সবাই দাঁড়িয়ে করতালি দিয়ে তাঁকে অভ্যর্থনা জানান। সমাবর্তন উপলক্ষে পুরো বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে বর্ণিল সাজে সজ্জিত করা হয়।
প্রেসিডেন্ট তাঁর ভাষণে বলেন আমি জেনে আনন্দিত হয়েছি যে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় নতুন ধ্যান-ধারণা ও নর্থ আমেরিকান কারিকুলাম ভিত্তিক শিক্ষা পদ্ধতি অনুসরণের পাশাপাশি শিক্ষা ও গবেষণায় উৎকর্ষ সাধনের মাধ্যমে দেশে বিদেশে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে সক্ষম হয়েছে। তিনি বলেন আমাদের মনে রাখতে হবে তথ্য প্রযুক্তির বিকাশ ছাড়া বহুমাত্রিক ব্যবহার ও উন্নয়ন সম্ভব নয়।
প্রেসিডেন্ট আরো বলেন গবেষণলব্ধ নতুন জ্ঞান উন্নয়নের চাবিকাঠি। কৃষি খাতের সম্প্রসারণে আমাদের পরিবেশ ও জলবায়ু উপযোগী পদ্ধতি ও কৌশল উদ্ভাবনে মনোযোগী হতে হবে। এছাড়া কৃষকরা যাতে এসব প্রযুক্তি সহজে ব্যবহার করতে পারে তাও নিশ্চিত হতে হবে। মনে রাখতে হবে উদ্ভাবন ও নতুন প্রযুক্তি কৃষিবন্ধব না হলে তা বাস্তবে কোনো কাজে আসবে না। ধনী-গরীব, ছোট-বড় নির্বিশেষে সকল দেশেই কৃষির গুরুত্ব অপরিসীম। তিনি কৃষিবিদ, কৃষিবিজ্ঞানী, গবেষক ও সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহবান জানিয়ে বলেন আপনারা কৃষিকে ভুলবেন না, উৎসকে ভুলবেন না। বরং কৃষির উন্নয়নে টেকসই কৌশল ও প্রযুক্তি উদ্ভাবনে নিজেদের নিয়োজিত রাখবেন। কৃষকরা যাতে উৎপাদনে উৎসাহিত হয়, উৎপাদিত পণ্যের সঠিক মূল্য পায় তা নিশ্চিত করতেও সবসময় তাদের পাশে থাকবেন। এ জন্য উৎপাদক ও ভোক্তা পর্যায়ের মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমাতে হবে। আলু, টমেটো, আম, আনারস, লিচুসহ বিভিন্ন মৌসুমী ফসল ও ফল সংরক্ষণ ও প্রক্রিয়াজাতকরণের অভাবে বেশিরভাগ সময়ই উৎপাদকগণ ন্যায্যমূল্য থেকে বঞ্চিত হন এবং উৎপাদনে উৎসাহ হারান। তাই এসব বিষয়েও কৃষিবিদদের ভাবতে হবে।
প্রেসিডেন্ট ডিগ্রিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্যে বলেন, একবিংশ শতাব্দির এমন একটি গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তোমরা দেশের একটি সর্বোচ্চ বিদ্যাপিঠ থেকে কৃষিতে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর ডিগ্রিলাভ করেছো, যখন বিশ্বব্যাপী জ্ঞানের সকল শাখায় বিস্ময়কর অগ্রগতি সাধিত হচ্ছে। অর্জিত জ্ঞানকে হালনাগাদ করে নতুন নতুন উদ্ভাবন ও গবেষণার মাধ্যমে সময়ের দাবি মোকাবেলা করে এগিয়ে চলাই হবে তোমাদের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। আমি আশা করি তোমরা তোমাদের অর্জিত জ্ঞান, দক্ষতা এবং উদ্ভাবনী শক্তিকে কাজে লাগিয়ে কৃষিক্ষেত্রে একটি নতুন বিপ্লবসাধনে সক্ষম হবে। তিনি বলেন বিশ্বায়ন ও তথ্য প্রযুক্তির এ যুগে মানুষের জ্ঞান, দক্ষতা ও উদ্ভাবন ভৌগলিক সীমানা পেরিয়ে বিশ্বের সর্বত্র ছড়িয়ে পড়েছে। বিশ্বের এক প্রান্তের উদ্ভাবনের সুবিধা অপর প্রান্ত ভোগ করছে। এদেশের দক্ষ কৃষি গ্র্যাজুয়েটরা এমনই উদ্ভাবনী শক্তির পরিচয় দিবে যাতে সারা বিশ্বের মানুষ ঘরে বসেই তার সুফল ভোগ করতে পারে।
প্রেসিডেন্ট বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আজীবন লালিত স্বপ্ন ছিল একটি অসাম্প্রদায়িক, ক্ষুধা ও দারিদ্র্যমুক্ত সমৃদ্ধ সোনার বাংলা প্রতিষ্ঠা। তিনি বুঝেছিলেন কৃষির উন্নয়ন ছাড়া এদেশের সামগ্রিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। তাই কৃষি শিক্ষায় মেধাবী শিক্ষার্থীদের আকৃষ্ট করার জন্য তিনি ১৯৭৩ সালে কৃষি গ্র্যাজুয়েটদের সরকারি চাকরিতে প্রথম শ্রেণির মর্যাদা দিয়েছিলেন। এর সুফল দেশবাসী পেয়েছেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।