রামগতিতে আ.লীগ নেতাকে বহিষ্কার
লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার চরআলগী ইউপি নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় ইউনিয়ন আ.লীগের সাধারণ সম্পাদক সাহেদ আলী মনুকে দলীয় পদ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। গত
আবুল হাসান সোহেল, মাদারীপুর থেকে : পোল্ট্রি ফার্ম আর মাছ চাষ করে ১৪ বছরে ফেরদৌস এখন স্বাবলম্বী। শুধু স্বাবলম্বী নয় এক সময়ের বেকার যুবক ফেরদৌস বর্তমানে এলাকার একজন প্রতিষ্ঠিত ব্যবসায়ী। ফেরদৌস বেকারত্ব ঘুচিয়ে নিজে স্বাবলম্বী হয়ে প্রমাণ করে দিয়েছেন অদম্য পরিশ্রম আর লক্ষ্য যদি স্থির থাকে তাহলে সবই সম্ভব। এক সময়ের দুরন্ত কিশোর এখন এলাকার এক পরিশ্রমী যুবক। মাদারীপুর সদর উপজেলার মস্তফাপুর ইউনিয়নের জয়াইর গ্রামের আব্দুল খালেক হাওলাদারের বড় ছেলে। ৫ ভাই-বোনের মধ্যে ফেরদৌস ২য় এবং ভাইদের মধ্যে ১ম। মাতা ছালেহা বেগম ছোট বেলায় ফেরদৌসকে নিয়ে চিন্তিত ছিলেন। এ ছেলে মানুষ হবে না কোনোদিন। কিন্তু ফেরদৌস মানুষ হয়ে প্রমাণ করে দিয়েছেন। ফেরদৌস ২০০০ সালে কোনোরকমে এসএসসি পাস করেন। ছাত্র হিসাবে তিনি কোনোদিনই ভালো ছিলেন না। এসএসসি পর্যন্তই তার লেখাপড়া শেষ। লেখাপড়ার পাঠ চুকিয়ে মস্তফাপুরে একটি ইলেকট্রনিক্স দোকানে কাজ শিখতে যান ফেরদৌস। কিন্তু এ কাজে তার মন বসেনা। শুরু হয় বাউন্ডেলে জীবন। হঠাৎ একদিন সিদ্ধান্ত তাকে মানুষ হতে হবে। এ প্রত্যাশা বুকে নিয়ে ২০০১ সালের প্রথমদিকে মাদারীপুর যুব উন্নয়ন অধিদফতর হতে ৩ মাস মেয়াদি হাঁস-মুরগি পালন, গবাদিপশু মোটাতাজাকরণ ও মৎস্য চাষবিষয়ক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে তার কর্মজীবন শুরু করেন। স্বল্প লেখাপড়ায় চাকরি না খুঁজে নিজে কিছু করার চেষ্টা করেন। যুব উন্নয়ন অধিদফতরের প্রশিক্ষণলব্ধ জ্ঞান কাজে লাগিয়ে যুব উন্নয়ন অধিদফতর থেকে প্রথমে ৫০ হাজার টাকা যুব ঋণ গ্রহণ করেন। এরপর ঐ টাকাকে পুঁজি করে প্রথমে ৪টি পুকুর লিজ নিয়ে প্রাথমিকভাবে মাছ চাষ ও একটি পোলট্রি ফার্ম দিয়ে প্রকল্প শুরু করেন। শুরু হয় জীবন সংগ্রাম। তার প্রচেষ্টায় ক্রমান্বয়ে একে একে বাড়তে থাকে তার প্রকল্পের পরিধি। ফেরদৌসের স্ত্রী স্বপ্না সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একজন শিক্ষক। মাস শেষে বেতনের পুরো টাকা তুলে দেন স্বামীর হাতে প্রকল্পের কাজের জন্য। তিনিও চাকরির অবসরে প্রকল্পের বিভিন্ন কাজ দেখাশোনা করেন। ২ বছরের মধ্যে ১৩টি পুকুরে বিভিন্ন জাতের মাছ চাষ করে প্রচুর অর্থ উপার্জন করেন। একই সাথে ৫টি পোলট্রি ফার্মে মুরগি পালন শুরু করেন। এতে অর্থনৈতিকভাবে আরো উন্নতি লাভ করতে থাকেন। এরপর তাকে আর পেছনে তাকাতে হয়নি। বর্তমানে তার সম্পদের পরিমাণÑ পুকুর ১৩টি, পোলট্রি সেড ০৫টি, রাইসমিল ০১টি, এবং গরু মোটাতাজাকরণ ফার্ম ০১টি, বাউকুল বাগান ০১টি ও দুগ্ধবতী গাভী ০৫টি। ২০০৩ সালে তিনি লাভের টাকা দিয়ে একটি রাইস মিল প্রতিষ্ঠা করেন মস্তফাপুর বাজার রোডে। বর্তমানে ফেরদৌসের মাসিক আয় প্রায় ১ লাখ টাকা। ৬০ হাজার টাকা আসে তার ১৩টি মাছের পুকুর থেকে। বাকি প্রায় ৪০ হাজার টাকা আসে পোলট্রি ফার্মসহ অন্যান্য প্রকল্প থেকে। তিনি তার ফার্মে ৬ জন বেকার যুবকের কর্মসংস্থানের সৃষ্টি করেছেন। এই ফার্মে নিজেদের ৪ জন কাজ করে থাকেন। তার লাভের টাকা দিয়ে ১৪ বছরে বিপুল পরিমাণ সম্পদ করেছেন। দেড় বছর আগে তার লাভের টাকা দিয়ে মেঝ ভাইকে সৌদি আরব পাঠিয়েছেন। তার আগামী প্রজন্মের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে ঢাকার মিরপুরে ৩৬ লাখ টাকা দিয়ে ২ বছর আগে একটি প্লট কিনেছেন। ফেরদৌস হাওলাদারের সাথে আলাপকালে জানা যায়, তিনি ফরিদপুর ভিক্টর হ্যাচারি থেকে ১ দিনের কক মুরগির বাচ্চা ও যশোরের বিভিন্ন স্থান থেকে ১ দিনের ব্রয়লার বাচ্চা আনেন। সেগুলো প্রতিপালন করে প্রতি মাসে বিক্রি করে থাকেন। এছাড়া বিভিন্ন জাতের মাছের পোনা আনেন ময়মনসিংহের মুক্তাগাছা থেকে। মাদারীপুর অঞ্চলে দেশীয় প্রজাতির মাছের সিংহভাগ বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ায় এবং মাছের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পুকুরে মাছ চাষের প্রবণতা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। তার চাষ করা পুকুরের রুই, কাতল, মৃগেল, পুঁটি, থাইপুঁটি, ব্লাককার্প, গ্লাসকার্র্প, কৈ, শিং, তেলাপিয়া মিনারকার্প, সিলভারকার্প, পাঙ্গাস, চিতলসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছ মস্তফাপুর, মাদারীপুর, ফরিদপুরের ভাঙ্গার বিভিন্ন মাছের আড়তে বিক্রি হয়ে থাকে। শুধু শিং মাছ ঢাকার কাওরান বাজারে রফতানি করা হয়। অন্যদিকে পোলট্র্রি ফার্মের মুরগি স্থানীয় বাজারে চাহিদা পূরণ করেও ঢাকার বিভিন্ন আড়তে রফতানি করা হয়। একদিনের বেকার ফেরদৌস আজ স্বাবলম্বী। মাতা-পিতার গর্বিত সন্তান তিনি। ফেরদৌস হতে পারে অন্যান্য বেকার যুবকদের স্বাবলম্বী হওয়ার অনন্য দৃষ্টান্ত। তাকে অনুকরণ ও অনুসরণ করে এ অঞ্চলের বেকার যুবকরা আত্মনির্ভরশীল হতে পারেÑএমন প্রত্যাশা ফেরদৌসের।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।