পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
দেশে বেকারত্ব হ্রাস ও উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আর শ্রমঘনখাতে বিনিয়োগ বেশি কল্যাণকর। তাতে কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয় বেশি। দেশে বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ জিডিপির ২২-২৪%-এর মধ্যে সীমিত রয়েছে বহুদিন যাবত। করোনার কারণে সেটাও অনেক কমে গেছে। অথচ বেসরকারি খাতের বিনিয়োগ হওয়া দরকার কমপক্ষে জিডিপির ৩০% বলে বিশেষজ্ঞদের অভিমত। এফডিআইও আশানুরূপ নয়। এটাও করোনার কারণে হ্রাস পেয়েছে। অবশ্য এফডিআই বিশ্বব্যাপীই প্রায় অর্ধেক কমে গেছে। আঙ্কটাডের তথ্য মতে, ‘মহামারির প্রভাবে ২০২০ সালে বৈশ্বিক প্রত্যক্ষ বিদেশি বিনিয়োগ ৪২% হ্রাস পেয়েছে। ২০১৯ সালে বৈশ্বিক এফডিআই ছিল দেড় লাখ কোটি ডলার। ২০২০ সালে তা ৮৫ হাজার কোটি ডলারে নেমে এসেছে’। বিনিয়োগের এ অবস্থা চলতে পারে আরও কয়েক বছর। ফলে প্রয়োজনীয় কর্মসংস্থান সৃষ্টি হচ্ছে না। অবশ্য, কয়েক বছর যাবত দেশে সরকারি বিনিয়োগ ব্যাপক বৃদ্ধি পেয়েছে। তবে, সেটা অবকাঠামোখাতে। এতে প্রত্যক্ষ কর্মসংস্থান খুব কম হচ্ছে। অপরদিকে, বিদেশে শ্রমিক প্রেরণ ব্যাপক হ্রাস পেয়েছে করোনার কারণে। এছাড়া করোনার কারণে কর্ম হারিয়ে ৫ লাখের অধিক প্রবাসী দেশে ফেরত এসেছে। আরও কয়েক লাখ ফেরত আসবে বলে খবরে প্রকাশ। এই ফেরত আসা লোকরা দেশে এসে বেকার হয়ে পড়েছে। যারা ফেরত আসবে তাদেরও অবস্থা একই হবে। করোনার কারণে কর্ম হারিয়ে লাখ লাখ মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে। একইসঙ্গে বেশ কিছু সরকারি কল-কারখানা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সেখানকার শ্রমিকরাও বেকার হয়ে পড়েছে। এভাবে দেশের বেকারত্বের হার সর্বকালের রেকর্ড ভঙ্গ করেছে বর্তমানে। ওদিকে করোনার কারণে দেশে দারিদ্র্যের হার দ্বিগুণ হয়ে ৪২% হয়েছে। পণ্যমূল্য ব্যাপক বেড়ে যাওয়ায় দেশের বেশিরভাগ মানুষ চরম সংকটে পড়েছে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণ ঘটাতে হবে। সে লক্ষ্যে সরকারি যেসব পদ শূন্য আছে তা দ্রুত পূরণ করা দরকার। তাহলে কয়েক লাখ লোকের কর্মসংস্থান হবে। সংশ্লিষ্ট পরিবারগুলো রক্ষা পাবে। এছাড়া, সরকারি যেসব শিল্প বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, বিশেষ করে পাট ও চিনি শিল্প,সেসব দ্রুত চালু করতে হবে। পাশাপাশি দেশে বিনিয়োগের যেটুকু সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে, বিশেষ করে বিদেশী বিনিয়োগ- তার সবই খুব দ্রুত গ্রহণ করতে হবে লিগ্যাল হলে।
খবরে প্রকাশ, ‘২০১৯ সালের শেষার্ধে বাংলাদেশে ইন্টিগ্রেটেড রেল অ্যান্ড এনার্জি প্রজেক্ট শীর্ষক প্রকল্প নামে একটি বিনিয়োগ প্রস্তাব দিয়েছে যুক্তরাজ্যের আইএম পাওয়ার। ১২ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের উক্ত প্রকল্পের চার বছর মেয়াদি প্রথম ধাপে কনটেইনার পরিবহন ও অন্যান্য মালপত্র পরিবহনে পায়রাবন্দর থেকে ভাঙ্গা হয়ে ঢাকা পর্যন্ত ডাবল ট্র্যাক বৈদ্যুতিক রেললাইন নির্মাণ করবে আইএম পাওয়ার। ব্যয় হবে ৫.৫ বিলিয়ন ডলার। দ্বিতীয় ধাপে নির্মাণ হবে নতুন পদ্মা সেতু থেকে ঢাকা এবং ঢাকা থেকে চট্টগ্রাম হয়ে মাতারবাড়ীবন্দর পর্যন্ত উচ্চগতির প্যাসেঞ্জার রেল। এতে ব্যয় হবে ৬ বিলিয়ন ডলার। আর তৃতীয় ধাপে চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত প্যাসেঞ্জার রেলের স¤প্রসারণ। ব্যয় হবে ২১.৪০ কোটি ডলার। সব মিলিয়ে ১১.৭ বিলিয়ন ডলার। প্রস্তাবে একটি কনসোর্টিয়ামের মাধ্যমে পিপিপির ভিত্তিতে প্রকল্প বাস্তবায়নের কথা বলা হয়েছে।’ জানা মতে, উক্ত প্রকল্প নিয়ে দেশে সংশ্লিষ্ট বিভাগে ব্যাপক পরীক্ষা-নিরীক্ষা হয়েছে। অতঃপর আইএম এবং বাংলাদেশের প্রতিনিধিদের এক বৈঠক হয়েছে গত ১৬ ফেব্রুয়ারি। তাতে এই প্রকল্পের ব্যাপারে সমঝোতা হয়েছে। এ ব্যাপারে ব্রিটিশ হাইকমিশনার গত ১৭ ফেব্রুয়ারি সাংবাদিক সম্মেলনে বলেছেন, ‘বিনিয়োগের জন্য বাংলাদেশ চমৎকার স্থান। আগামী তিন থেকে চার বছরের মধ্যে ১০ থেকে ১৫টি ব্রিটিশ কোম্পানি বাংলাদেশে ব্যবসায়িক কার্যক্রম শুরু করবে। বাংলাদেশি তরুণদের জন্য বিশ্বসেরা শিক্ষার সুযোগ করে দিতে অন্তত ৯টি ব্রিটিশ বিশ্ববিদ্যালয় বাংলাদেশে ক্যাম্পাস খুলতে চায়। বাংলাদেশ ২০২৭ সাল পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের জিএসপি সুবিধা পাবে।’ স্মরণীয় যে, ইউরোপীয় ইউনিয়নের সাথে যুক্তরাজ্যের ছাড়াছাড়ি হয়েছে চূড়ান্তভাবে। এ নিয়ে উভয়ের মধ্যে রেষারেষি চলছে। তাই যুক্তরাজ্য দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দিকে ঝুঁকে পড়েছে বাণিজ্য ও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে। তাতে বাংলাদেশ আদর্শ স্থান বলে মনে করছে দেশটি। এই সুযোগের সদ্ব্যবহার করা দরকার। উল্লেখ্য যে, বায়ু মন্ডলের উঞ্চতা হ্রাস করার জন্য সম্প্রতি চীন, জাপান, জার্মানীসহ বিভিন্ন দেশে বৈদ্যুতিক যানবাহন চালু করা হচ্ছে। এর মধ্যে ট্রেনও রয়েছে। কোথাও কোথাও সৌর বিদ্যুৎ ও হাইড্রোজেন চালিত যানবাহনও চালু করা হচ্ছে। তাই যুক্তরাজ্যের বৈদ্যুতিক ট্রেনের প্রস্তাব দেশের জন্য সময়োপযোগী। উপরন্তু সংশ্লিষ্ট রুটে পণ্য ও মানুষ পরিবহনে নতুন দিগন্ত উন্মোচিত হবে। তাই দেশের অন্য রুটেও এ ধরণের ট্রেনের ব্যবস্থা করা দরকার। দ্বিতীয়ত, বিষয়টি দেশের জন্য মর্যাদাকরও।
চীনে শ্রমিকের মজুরী বৃদ্ধি পেয়েছে অনেক। উপরন্তু হংকংয়ের গণতন্ত্র নিয়ে চীনের সাথে বিশ্বের বহু দেশের বিরোধ সৃষ্টি হয়েছে। তাই চীন থেকে জাপানী বিনিয়োগকারীরা বিনিয়োগ প্রত্যাহার করে বাংলাদেশে বিনিয়োগ করায় আগ্রহী হয়েছে। ব্লুমবার্গের রিপোর্ট মতে, ঢাকায় নিযুক্ত জাপানি রাষ্ট্রদূত বলেছেন, যেহেতু করোনা মহামারি শুরু হয়েছে চীনে, তাই সরবরাহ চেইন অব্যাহত রাখতে জাপানের কোম্পানিগুলোকে অন্য স্থানে সরিয়ে নেয়ার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এতে বাংলাদেশ ভালো সুবিধা পাবে। জাপানি প্রতিষ্ঠানগুলোকে যখন প্রলুব্ধ করার চেষ্টা করছে বাংলাদেশের স্পেশাল ইকোনমিক জোন, তখন জাপানের কোম্পানি স্থানান্তরের উদ্যোগ একটা বড় সুখবর। নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার উপজেলায় ১০০০ একর জায়গার ওপর হবেই এই শিল্প এলাকা। বাংলাদেশ ইকোনমিক জোনস অথরিটির মতে, এখানে ২০০০ কোটি ডলারের জাপানি বিনিয়োগের আশা করছে বাংলাদেশ। অপরদিকে, চীনের কিছু বিনিয়োগকারীও তাদের কিছু প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে শিফট করতে চাইছে বলে জানা গেছে। মিয়ানমারে এফডিআই আমাদের চেয়ে অনেক বেশি। কিন্তু সম্প্রতি দেশটিতে সেনা ক্যু হয়েছে। মানুষ তার বিরুদ্ধে প্রতিরোধ আন্দোলন গড়ে তুলেছে। শ্রমিক-কর্মচারীরাও অসহযোগ আন্দোলন শুরু করেছে। ফলে দেশটির কাজ-কর্ম সব বন্ধ হয়ে মহাসংকট শুরু হয়েছে, যা সহজে দূর হবে না। তাই দেশটির চলতি বিনিয়োগ ও সম্ভাব্য বিনিয়োগ বাংলাদেশে আসার সম্ভাবনা সৃষ্টি হয়েছে।
চীন বিপুল ব্যয় সম্বলিত ‘তিস্তা মহাপরিকল্পনা’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করার প্রস্তাব দিয়েছে। এই প্রকল্পের ব্যয় ঋণ হিসাবে চীনই দেবে স্বল্প সুদে বলে জানিয়েছে। বাংলাদেশের রক্তের বন্ধনের বন্ধুদেশ ভারত তিস্তা চুক্তি করবে করবে বলে বহুদিন যাবত আশ্বাস দিয়েই চলেছে। কিন্তু বাস্তবায়ন করছে না। এখন দেশটির কর্তৃপক্ষ বলছে, ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার তিস্তা চুক্তি করতে ইচ্ছুক। তবে পশ্চিমবঙ্গের সরকারের আপত্তির কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না। এটা তিস্তা চুক্তি না করার ভারতীয় ভানুমতীর খেলা। আর এই খেলায় পড়ে আমাদের মরণদশা সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে, চীন ব্রহ্মপুত্র নদের উপর বাধ দিয়ে পানিবিদ্যুৎ প্লান্ট তৈরি করছে। খবরে প্রকাশ, ‘চীন সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে পাঁচ হাজার মিটার উঁচুতে তিব্বতের পশ্চিমাঞ্চলীয় হিমবাহ থেকে সৃষ্টি হওয়া ইয়ারলুং সাংপু নদীতে বিশ্বের বৃহত্তম পানিবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণ করছে। এই নদী ব্রহ্মপুত্র নামে ভারতের অরুণাচল ও আসাম প্রদেশ হয়ে বাংলাদেশে এসে প্রবেশ করেছে। পরিকল্পনা অনুযায়ী এখানে ৬০ গিগা ওয়াট বিদ্যুৎ উৎপাদন হবে। ভারত চীনের এই প্রকল্পের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে।কিন্তু চীন এতে কর্ণপাত করবে না, তা নিশ্চিত। আর ভারত সে বিষয়টি নিয়ে আন্তর্জাতিক আদালতেও যেতে পারবে না।কারণ,তারা নিজেরাই আন্তর্জাতিক নদীগুলোতে অসংখ্য বাধ দিয়ে বেশিরভাগ পানি ডাইভার্ট করে অভ্যন্তরীণ কাজে ব্যবহার করছে।ফলে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক অভিন্ন নদীগুলো থেকে পানি না পেয়ে মরুভূমিতে পরিণত হতে চলেছে। তাই চীনের বিরুদ্ধে ভারত আন্তর্জাতিক আদালতে যাবে না। তাতে কেঁচো খুড়তে সাপ বেরিয়ে পড়তে পারে- সে ভয়ে। ফলে চীন ব্রহ্মপুত্র নদের উপর পানিবিদ্যুৎ বাঁধ নির্মাণ করবেই।আর এটা হলে ভারতই পানি পাবে না।সে ক্ষেত্রে বাংলাদেশ পানি পাওয়ার প্রশ্নই উঠে না।এই অবস্থায় চীন প্রস্তাবিত তিস্তা মহা পরিকল্পনা খুব দ্উত অনুমোদন ও সঠিকভাবে নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে বাস্তবায়ন করা জরুরী। তাহলে তিস্তা সংলগ্ন মানুষের দুঃখের অবসান হয়ে ভাগ্যের পরিবর্তন ঘটবে। পরিবেশ ও প্রতিবেশও রক্ষা পাবে।
সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বলেছেন, ‘বাংলাদেশের বিভিন্ন খাতে সৌদি বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পে প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করতে আগ্রহী। এছাড়া এভিয়েশন শিল্পের উন্নয়নেও সৌদি আরব বাংলাদেশের সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করতে আগ্রহী।’ স্মরণীয় যে, পর্যটন ব্যবসায় লাভ অত্যন্ত বেশি। কারণ, একজন পর্যটককে কেন্দ্র করে ১১ জনের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়। তাই বিশ্বের বহু দেশ শুধুমাত্র পর্যটন আয়ের উপর ভিত্তি করেই চলে। নেপাল তার প্রকৃষ্ট উদাহরণ। তাই বিশ্বের বেশিরভাগ দেশ পর্যটনখাতের উন্নয়নে সর্বাধিক গুরুত্ব দেয়। বাংলাদেশে পর্যটকদের আকর্ষণ করার মতো অনেক পর্যটন স্থান রয়েছে। তবুও আমাদের পর্যটন আয় কাক্সিক্ষত নয়। কারণ, অবকাঠামো, যোগাযোগ, নিরাপত্তা ও বিনিয়োগের প্রচন্ড অভাব রয়েছে। এই অবস্থায় সৌদি আরবের মতো দেশ যদি এ দেশের পর্যটন ও এভিয়েশন খাতে বিনিয়োগ করে, তাহলে সংশ্লিষ্ট খাতের ব্যাপক উন্নতি ঘটবে। দেশে পর্যটক আগমনে ভিসা জটিলতা রয়েছে। এটা নিরসন করা দরকার। গত ১৮ ফেব্রুয়ারি ভারতের কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্যমন্ত্রী বলেছেন, শিগগিরই ই-পর্যটন ভিসা চালু করার পরিকল্পনা নেওয়া হয়েছে। পর্যটক আগমন বৃদ্ধি করার জন্যই ভারত এই উদ্যোগ নিয়েছে। এরূপ ব্যবস্থা আমাদেরও গ্রহণ করা দরকার।
গত ২ জানুয়ারি ‘২০২১ সালের এনার্জি চ্যালেঞ্জ’ শীর্ষক সেমিনারে বক্তারা বলেছেন, ‘দেশীয় কয়লা উত্তোলন থেকে সরে থাকার নীতি আত্মঘাতী হচ্ছে। কারণ উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে কমপক্ষে ২৫% কয়লাভিত্তিক সাশ্রয়ী বিদ্যুৎ উৎপাদন জরুরি। এছাড়া, সভায় বিপ্পার প্রেসিডেন্ট ইমরান করিম বলেছেন, আমাদের ১৫-১৭’শ মেগাওয়াট ক্ষমতার কিছু বিদ্যুৎ কেন্দ্র অনেক পুরনো, যা বর্তমানে যুগের বিবেচনায় চলে না। ক্যাপটিভ ও অন্যান্য বাদ দিলে প্রকৃত পক্ষে ১৫ হাজার মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেয়ার সক্ষমতা রয়েছে’। মিনারেলস কাউন্সিল অব অস্ট্রেলিয়ার এক গবেষণা রিপোর্টে বলা হয়েছে, ‘পশ্চিমা বিশ্ব কয়লার ব্যবহার ধীরে ধীরে কমাচ্ছে। উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে এশিয়ার উন্নয়নশীল অর্থনীতির দেশগুলোয়। ভারত, বাংলাদেশ, ইন্দোনেশিয়া, ভিয়েতনামসহ এশিয়ার উন্নয়নকামী ও দ্রুত বর্ধনশীল অর্থনীতির দেশগুলো জ্বালানি পণ্যটির তথা কয়লার ব্যবহার উত্তরোত্তর বাড়িয়ে চলেছে। এ ধারাবাহিকতায় ২০৩০ সাল নাগাদ এশিয়ার বাজারে কয়লার সম্মিলিত চাহিদা ১১০ কোটি টনে পৌঁছে যেতে পারে।’ দেশে বিপুল পরিমাণে আবিষ্কৃত কয়লা আছে এবং তা খুবই উন্নতমানের। কোন কোন কয়লার খনিতে হীরারও মজুদ আছে। তবুও আমরা সে কয়লা উত্তোলন না করে অনেক ব্যয়বহুল আমদানিকৃত কয়লা ব্যবহার করছি বিপুল পরিমাণে। কিন্তু কেন? যা’হোক, যেহেতু আমাদের বিদ্যুৎ উৎপাদনের ক্ষেত্রে ২৫% কয়লা ব্যবহার করার সুযোগ রয়েছে, তাই যথা শিগগির দেশীয় কয়লা পর্যাপ্ত পরিমাণে উত্তোলনের ব্যবস্থা করা আবশ্যক। নতুবা দেশীয় এই মহামূল্যবান সম্পদ মাটির নীচেই পড়ে থাকবে। আলোর মুখ দেখবা না কোনদিনই। দিনাজপুরের বড়পুকুরিয়ায় কয়লা উত্তোলন করে তা দিয়ে বিদ্যুৎ উৎপাদন করা হচ্ছে। তাই অন্য খনি থেকে কয়লা উত্তোলন করে বিদ্যুৎ উৎপাদন করতে অসুবিধা নেই। অপরদিকে, গ্যাসের নতুন কুপের সন্ধান এবং সন্ধানকৃত গ্যাস উত্তোলনের ব্যবস্থা করা জরুরি। কারণ, গ্যাসের মজুদ শেষ হয়ে আসছে। তাই নতুন করে আবাসিকে গ্যাস সংযোগ দেওয়া বন্ধ করা হয়েছে। অন্যদিকে, আমদানিকৃত এলপিজি গ্যাসের মূল্য অত্যধিক।
বিনিয়োগ ও পর্যটনের ক্ষেত্রে বাছ-বিচার করার বিশেষ অবকাশ নেই। তবুও আমরা অতীতে বিদেশী বিনিয়োগ নিয়ে অনেক বাছ-বিচার করেছি, যার খেসারত দিতে হচ্ছে দেশবাসীকে। আর এখন করোনা মহামারিসৃষ্ট বৈশ্বিক মহামন্দার কারণে বিনিয়োগ ও পর্যটন নিয়ে বেশি বাছ-বিচার ও কালক্ষেপণ করা হলে এসব খাতে সর্বনাশ ঘটে যাবে। তাই বিনিয়োগের যেটুকু প্রস্তাব পাওয়া যায়, তা লিগ্যাল হলে খুব দ্রুত তা অনুমোদন করা দরকার। উল্লেখ্য যে, কোন একটি দেশের বড় কোম্পানী যদি কোন একটি দেশে বিনিয়োগ করে তাহলে সে দেশের বিনিয়োগের সম্ভাবনা ব্যাপক বেড়ে যায়। কারণ, একটির দেখাদেখি অন্য বড় কোম্পানীও সেখানে বিনিয়োগে উৎসাহী হয়। তাই দেশে যেসব বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছে ও আসবে তা সাথে সাথে সাদরে গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করতে হবে। একইসঙ্গে বিনিয়োগ ও ব্যবসার বাধাসমূহ দূর করতে হবে। আমাদের দেশে আমলাতন্ত্রের জটিলতা, ব্যাপক দুর্নীতি ও চাঁদাবাজি এবং অবকাঠামো, যোগাযোগ ও নিরাপত্তা সংকট তীব্রতর।তাই বৈশ্বিক ব্যবসা সহজীকরণ সূচকে আমাদের অবস্থান তলানিতে। এতে বহু বিনিয়োগ ফেরত গেছে অতীতে। সেটা ভবিষ্যতে যেন না হয়, সেদিকে কড়া নজর রাখতে হবে। সবকিছুতেই ওয়ান স্টপ সার্ভিস চালু করতে হবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।