পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকু- : সীতাকু-ে প্রায় ৩ হাজার হেক্টর জমিতে শিমের আবাদ হয়েছে। চলতি মৌসুমে এই জমি থেকে ৫০ হাজার টনেরও বেশি শিম উৎপাদন হয়েছে। পাইকারী দরে প্রতি কেজি শিম সর্বনিম্ন ২০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এই হিসেবে শুধু সীতাকু-ের শিম বিক্রি থেকেই ‘শত কোটি’ টাকার বেশি আয় হয়েছে। কথাগুলো বলছিলেন সীতাকু- উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা সুশান্ত সাহা। সীতাকু-ের সর্বত্রই শিম উৎপাদন হয়ে থাকে। আর গত ৩ মাস ধরে এখান থেকে সারাদেশে শিম রফতানি হচ্ছে। ঢাকার পাইকারদের হাত ধরে এ অঞ্চলের শিমের বীচি যাচ্ছে ইউরোপেও। ফলে এ শিম দেশের অর্থনীতিতে বিরাট অবদান রাখছে। সীতাকু-ের ঐতিহ্যবাহী শিম চাষের অবস্থার বর্তমান অবস্থা সম্পর্কে বলতে গিয়ে কৃষিবিদ সুশান্ত আরো বলেন, সীতাকু-ের শিম চাষের সুনাম রয়েছে সারাদেশে।
সুদীর্ঘকাল ধরেই এ অঞ্চলের চাষিরা ব্যাপক হারে শিম চাষ করে আসছে। ব্যতিক্রম হয়নি এবছরও। এ মৌসুমে উপজেলার সবখানেই কমবেশি শিম চাষ হয়েছে। এখানে ধান জমি, পতিত জমি, গ্রাম্য সড়কের পাশ, পাহাড়, সাগর পাড়ের বেড়িবাঁধ, ধান খেতেই আইল, মহাসড়ক ও রেল লাইনের ধার থেকে শুরু করে বাড়ির উঠোনেও শিম চাষ করেছেন প্রায় ১৯ হাজার শিম চাষি। ফলে এখানে নীরবেই শিম বিপ্লব ঘটে গেছে বলা চলে। কোথাও কোথাও যত দূর চোখ যায় শুধু শিম আর শিম চোখে পড়ে।
সরেজমিনে শিম চাষ এলাকা পরিদর্শনকালে কৃষকদের সাথে আলাপকালে জানা যায়, সমগ্র সীতাকু-ের মাটি ও আবহাওয়া শিম চাষের জন্য উপযুক্ত হওয়ায় এখানে শিম চাষ করে কৃষকরা লাভবান ছাড়া লোকসানের স্বীকার হন না বললেই চলে। ফলে প্রায় প্রত্যেক কৃষকই কমবেশি শিম চাষ করেন। উপজেলার ১নং সৈয়দপুর ইউনিয়ন থেকে শুরু করে ১০নং সলিমপুর পর্যন্ত সর্বত্রই শিম চাষ হচ্ছে। তবে চাষের জমি বেশি থাকায় সবচেয়ে বেশি পরিমাণ শিম চাষ হয় সৈয়দপুর, বারৈয়াঢালা, মুরাদপুর, পৌরসদর, বাড়বকু-, বাঁশবাড়িয়া ও কুমিরায়। এখানে মোট ৫ প্রজাতির শিম চাষ হয়। এগুলো হলোÑ ছুরি শিম, বাটা শিম, লইট্টা শিম, কার্ত্তিকোডা ও পুঁটি শিম।
তবে ছুরি শিমের আবাদই সবচেয়ে বেশি। কৃষকরা জানান, এখানকার প্রায় সব শিম দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে রফতানি হয়। উপজেলার বারৈয়াঢালা ইউনিয়নের টেরিয়াইল এলাকার বাসিন্দা আব্দুল অজিত মাস্টারের পুত্র এক শিম চাষি নুরনবী জানান, তিনি এবার এক একর জমিতে শিম চাষ করেছেন।
শিম বীজ, বাঁশের কঞ্চি, শ্রমিক মুজুরি, সার, কীটনাশক প্রভৃতিবাবদ তার ব্যায় হয়েছে অর্ধ লাখ টাকারও বেশি। ইতোমধ্যে প্রায় দেড় লাখ টাকার শিম বিক্রি করেছেন। মৌসুমে অবশিষ্ট সময়ে আরো অন্তত ৫০ হাজার টাকা শিম বিক্রি করতে পারবেন বলে তিনি আশাবাদী।
এই কৃষক বলেন, তারা শিম উৎপাদন করে তা স্থানীয় হাটবাজারে বিক্রি করেন। তাদের কাছ থেকে ঢাকা-চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন অঞ্চলের পাইকারী ব্যবসায়ীরা শিম কিনে নিয়ে যান। এভাবে সারাদেশে চলে যায় শিম। শুধু তাই নয়, পাইকারদের মাধ্যমে এসব শিমের বীচি ঢাকার কাওরান বাজার হয়ে ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও যায়। একই ইউনিয়নের পূর্ব লানানগর এলাকার বাসিন্দা মোঃ ইসমাইলের ছেলে কৃষক মোঃ গোলামনবী জানান, তিনি ৭৫ শতক জমিতে শিম চাষ করেছেন। এ জমি থেকে অন্তত দেড় লাখ শিম বিক্রির ব্যাপারে আশাবাদী তিনি। শিম আবাদ সম্পর্কে জানতে চাইলে বারৈয়াঢালা ব্লকের দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা পিপাস কান্তি চৌধুরী বলেন, কৃষক নুরনবীর মত এ অঞ্চলে প্রায় ১শ’ জনেরও বেশি কৃষক মৌসুমে বিভিন্ন জাতের শিম চাষ করেছেন। ঘন কুয়াশায় মৌসুমের প্রথম দিকে শিম ফুলের কিছুটা ক্ষতি হলেও উৎপাদন কিন্তু বেশি হয়েছে। ফলে সব কৃষকই প্রত্যাশিত লাভ পেয়ে খুশি।
উপজেলা কৃষি অফিসার সুশান্ত সাহা বলেন, সব মিলিয়ে এবার গতবারের চেয়ে বেশি পরিমাণ জমিতে শিম চাষ হয়েছে। আর ফলনও হয়েছে ভালো। সর্বমোট ৫০ থেকে ৫৫ হাজার টন শিম উৎপাদনের মাধ্যমে শত কোটি টাকার শিম বিক্রি হয়েছে। কৃষকদের সাফল্যের ধারা অব্যহত থাকায় আগামীদিনে আরো বেশি পরিমাণ শিম উৎপাদন হবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।