Inqilab Logo

শনিবার ২১ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ০৬ আশ্বিন ১৪৩১, ১৭ রবিউল আউয়াল ১৪৪৬ হিজরী

কোহলীর বিরাট রেকর্ড

প্রকাশের সময় : ১১ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম | আপডেট : ১১:০৮ পিএম, ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭

বিশেষ সংবাদদাতা, হায়দারাবাদ (ভারত) থেকে : চলমান মৌসুমে হোমে টেস্ট ব্যস্ততা বিরাট কোহলীকে যেনো একটু বেশিই উজ্জীবিত করেছে। সেই সেপ্টেম্বরে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টেস্ট দিয়ে শুরু, বাংলাদেশের বিপক্ষে ৯ম ম্যাচে এসে বিরাটের বিরাট রেকর্ড! এক মৌসুমে হোমে সর্বাধিক ১১৬৮ টেস্ট রানের বিশ্বরেকর্ড করে ফেলেছেন ভারত অধিনায়ক। হায়দারাবাদ টেস্টের প্রথম দিন শেষে বিশ্বরেকর্ড থেকে ৩১ রান দূরে ছিলেন। গতকাল দিনের ৮ম ওভারে সাকিবকে মিড অফে বাউন্ডারিতে ছাড়িয়ে গেছেন ২০০৪-৫ মৌসুমে হোমে বীরেন্দ্র শেবাগের ১১৫ রানের রেকর্ডকে।
টেস্টে এক মৌসুমে হোমে হাজার রানের রেকর্ডে এতদিন ছিলেন চার কীর্তিমান। ১৯৭৯-৮০ মৌসুমে ২১ ইনিংসে গাভাস্কারের ১০২৭ বিরল এই ক্লবে প্রথম। হোমে এক মৌসুমে হাজার রানের মাইলফলকে দ্বিতীয় ব্যাটসম্যানকে পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ১০টি বছর। ১৯৯০ সালে ইংল্যান্ড লিজেন্ডারি গ্রাহাম গুচ ঘরের মাঠে ভারতক বাগে পেয়ে ৩ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে একটি ট্রিপল সেঞ্চুরি ( লর্ডসে ৩৩৩) এবং ম্যানচেস্টারে উভয় ইনিংসে সেঞ্চুরিতে ( ১২৩ ও ১১৬) ৭৫২ রানে দিয়েছিলেন বিস্ময়ের জন্ম। হোমে ওই মৌসুমে মাত্র ১১ ইনিংসে ৪ সেঞ্চুরি,৩ ফিফটিতে ১০৫৮ রান নিজেকে উঠিয়ে এনেছিলেন অন্য উচ্চতায়। ওই মৌসুমে হোমে তার গড়টাও (৯৬.১৮) ঈর্ষণীয়। গাভাস্কার (১০২৬), গ্রাহাম গুচকে ( ১০৫৮) টপকে হোমে এক মৌসুমে সর্বাধিক রানের রেকর্ড নতুন কারো হাত দিয়ে লেখানোর জন্য ক্রিকেট বিশ্বকে অপেক্ষায় থাকতে হয়েছে এক যুগ। হোমে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ইন্দোরে ডাবল সেঞ্চুরিতে (২১১) শুরু হয়েছিল বিরাট যাত্রা। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিশাখাপত্তমে ১৬৭,মুম্বাইয়ে ২৩৫’র পর হায়দারাবাদে বাংলাদেশের বিপক্ষে ২০৪!
শুধু হোমে এক মৌসুমে সর্বাধিক টেস্ট রানই নয় (১১৬৮), এক মৌসুমে টানা তিন সিরিজে একটি করে ডাবল সেঞ্চুরিতে এতদিন রেকর্ড অটুট ছিল ব্রাডম্যান এবং দ্রাবিড়ের। নিজের কৃতিত্বে সেই রেকর্ডটিও ভেঙে ফেলেছেন কোহলী। টানা ৪টি সিরিজের প্রতিটিতে নামতা গুনে একটি করে ডাবল সেঞ্চুরিতেও বিরল বিশ্বরেকর্ড গড়েছেন কোহলী গতকাল। তাইজুলকে মিড অফ দিয়ে বাউন্ডারিতে ২৮৯ মিনিটে ডাবল সেঞ্চুরিতে অন্য উচ্চতায় উঠে এলেন কোহলী। বাংলাদেশের বিপক্ষে ঐতিহাসিক ম্যাচে হায়দারাবাদ তার দু’হাত ভরে দিয়েছে। চতুর্থ উইকেট জুটিতে রাহানেকে সঙ্গে নিয়ে ২২২ রানে কোহলীর নেতৃত্ব দেয়া এই পার্টনারশিপটি এই জুটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের রেকর্ড। এর আগে ২০০৭ সালে চট্টগ্রামে শচীন-সৌরভের ১৮৯ ছিল ৪র্থ উইকেট জুটিতে বাংলাদেশের বিপক্ষে ভারতের সর্বোচ্চ। হায়দারাবাদে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রানের এই পার্টনারশিপে হয়েছে আর একটি রেকর্ড। ৪র্থ উইকেট জুটিতে শচীন-সৌরভের তিনটি ২০০ প্লাস পার্টনারশিপটি ছিল এতোদিন সবার উপরে। সেই রেকর্ডটি গতকাল স্পর্শ করেছেন কোহলী রাহানে।
জানেন, যে ছেলেটির প্রথম ১১টি সেঞ্চুরির মধ্যে একটিই কেবল দেড়শ’ ছাড়িয়েছে, সেই কোহলীই কি না সর্বশেষ ৫টি সেঞ্চুরির ৫টিকে পরিণত করেছেন দেড়শ’ প্লাসে ! ইংল্যান্ডের বিপক্ষে বিশাখাপত্তমে ১৬৭ রানের ইনিংসটি বাদ দিলে অন্য ৪টি সেঞ্চুরির সব ক’টিই ডাবল! টেস্ট ক্যারিয়ারে প্রথম ডাবল সেঞ্চুরির জন্য অপেক্ষা করতে হয়েছে যে ছেলেটিকে কোহলীকে ৫টি বছর, এন্টিগায় গত জুলাইয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ডাবলের (২০০) মুখ দেখা সেই ভারত অধিনায়ক উপর্যুপরি ৪টি সিরিজে নামতা গুনে একটি করে ডাবলে এখন ইতিহাস! বাংলাদেশের বিপক্ষে অধিনায়কদের মধ্যে এতদিন ডাবল সেঞ্চুরির রেকর্ড ছিল দ.আফ্রিকার গ্রায়েম স্মিথ (চট্টগ্রামে ২০০৮ সালে ২৩২) এবং নিউজিল্যান্ডের স্টিফেন ফ্লেমিংয়ের (২০০৪ সালে চট্টগ্রামে ২০২), সেই রেকর্ডে নতুন সংযোজন ভারত অধিনায়ক কোহলীর ২০৪ রান।
জানেন, কোহলীময় ম্যাচে প্রথম ইনিংসে ভারতের স্কোর ৬৮৭/৬ ডি. বাংলাদেশের বিপক্ষে সর্বোচ্চ। যে স্কোরটি আবার ভারতের ৫ম সর্বোচ্চ। ৯৮টি টেস্টে বাংলাদেশের বিপক্ষে এটি আবার দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। ২০১৪ সালে মিরপুরে শ্রীঙ্ককার ৭৩০/৬ ডি. স্কোরটি এখনো সবার উপরে। তবে এই স্কোরে ভারত আর একটি বিশ্বরেকর্ড গড়েছে। গত ডিসেম্বরে মুম্বাইয়ে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ৬৩১/১০,চেন্নাইয়ে ৭৫৯/৭ ডি. এর পর বাংলাদেশের বিপক্ষে ৬৮৭/৬ ডি. টানা তিন ইনিংসে ৬শ’ প্লাস স্কোরের রেকর্ডটাও যে নেই অন্য কোনো দলের!
কাছ থেকে বিরাট কোহলীর ব্যাটিং এই প্রথম দেখেছেন মেহেদী হাসান মিরাজ। ভারত অধিনায়কের ব্যাটিং থেকে শিক্ষনীয় অনেক কিছুই আছে বলে মনে করছেন মিরাজ ‘ আগে টেলিভিশনে ওনার (কোহলী) ব্যাটিং দেখেছি। সামনে থেকে কোহলির ব্যাটিং দেখা আমার জন্য নতুন এক অভিজ্ঞতা। তার বিপক্ষে কিভাবে বোলিং করলে ভালো হবে, এখান থেকে তা শেখার সুযোগ পাচ্ছি। আমি অনেক বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলতে চাই। এখানে খেলার অভিজ্ঞতাগুলো ভবিষ্যতে আমার ক্যারিয়ারে যোগ হলে, তা আমার জন্যই ভালো হবে।’
টেস্ট ক্যারিয়ারের দ্বিতীয় সেঞ্চুরিতে কোহলীর প্রেরণাকেই এগিয়ে রাখছেন ঋদ্ধিমান সাহা। শেষ ১৭টি রানে ২টি ছক্কার শট, তাও আবার তাইজুলকে লং অনের উপর দিয়ে আত্মবিশ্বাসী শটে সেঞ্চুরি উদযাপন ! টি ব্রেকের সময় যখন ঋদ্ধিমানের স্কোর ৮৩, তখন নাকি চড়াও হয়ে খেলার নিদের্শনা দিয়েছিলেন কোহলী ‘ব্রেকের সময়ে কোহলি আমাকে বলেছেন, তোমার রানের দিকে তাকাও। সেঞ্চুরি তো একটা মাইলস্টোন, পরলে সেঞ্চুরি করে আস।’ কোহলী এই টিপস দিয়ে এক অর্থে ঋদ্ধিমানের প্রতিদানই দিয়েছেন। কারন ১৮০ রানের সময় ফ্রন্ট ফুটে খেলতে যেয়ে বলের লাইন করেছিলেন মিস, ফ্রন্ট প্যাডে আঘাত হানা মিরাজের ওই ডেলিভারিতে এলবিডাবøুর আপিলের পক্ষেই রায় দিয়েছিলেন আম্পায়ার উইলসন। কোহলীও এলবিডাবøু ভেবে আম্পায়ারের সিদ্ধান্ত মেনে নিয়েছিলেন, ঠিক তখনই কোহলীকে ফিরিয়েছেন ঋদ্ধিমান, বলেছেন ‘বিরাট এসে বলল, আমি মনে হয় আউট হয়েছি, তুমি কি বল ? তখন আমি কোহলিকে বলেছি তুমি সামনে পা বাঁড়িয়ে যখন খেলো তখন মনে হয় রিভিউ নেয়া উচিত।’ এই পরামর্শে ডাবল সেঞ্চুরি, এবং তাতেই একগুচ্ছ রেকর্ড।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কোহলী
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ