দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
১। মোহাম্মাদ ফারহানুল বারী দাইয়্যান, খেজুরবাগ কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।
জিজ্ঞাসা : হজের ফজিলত, হজের করণীয় ও বর্জনীয় বিষয়াদি সম্পর্কে আলোকপাত করুন?
উত্তর : হজের ফজিলত বা মর্যাদা : হজের মর্যাদা সম্পর্কে রাসূল (সা.) বলেন, “হযরত আবু হুরায়রা থেকে বর্ণিত, রাসূলকে জিজ্ঞেস করা হয়েছিল কোন আমলটি সবচেয়ে উত্তম। তিনি বলেন, আল্লাহর ও তাঁর রাসূলের ওপর ঈমান আনয়ন করা। তারপর কোনটি তা জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, আল্লাহর পথে জিহাদ করা। তারপর কি জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, মাবরুর হজ।” (বুখারি-২৬।) আরেকটি হাদিসে আছে, “হযরত আবু হুরায়রা (রা.) বলেন-আমি রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছিÑ যে ব্যক্তি হজ পালন করেছে এবং তাতে স্ত্রী সহবাস ও পাপকাজ করেনি, তবে সে সদ্য ভূমিষ্ট শিশু সন্তানের ন্যায় নিষ্পাপ হয়ে ফিরে আসবে।” (বুখারি-১৫১২) “হযরত আবু হুরায়রা (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেনÑ রাসূল (সা.) বলেছেন, একটি ওমরা অপর ওমরা পর্যন্ত মধ্যবর্তী সময়ের সকল গুনাহ মাফ করে দেয়। আর হজে মাবরুর এর বদলা হলো একমাত্র জান্নাত।” (বুখারি-১৭৭৩।) হজে করণীয় ও বর্জনীয় : হজ বিত্তশালী নারী-পুরুষ উভয়ের ওপরই ফরজ। তবে নারীর সঙ্গে যদি কোনো মাহরাম তথা নিকটাত্মীয় না থাকে, তবে নারীর জন্য হজের আবশ্যকতা স্থগিত থাকবে। যেমন হাদিসে আছেÑ “হযরত ইবনে আব্বাস (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন- আমি রাসূল (সা.)-কে বলতে শুনেছি, কোনো পুরুষ কোনো (গায়রে মাহরাম) মহিলার সঙ্গে নির্জনে অবস্থান করবে না। আর মহিলার সঙ্গে কোন মাহরাম তথা নিকটাত্মীয় না থাকলে সফরে বের হবে না।” (বুখারি-৩০০৬।) হজের করণীয় ও বর্জনীয় কাজের তালিকা অনেক দীর্ঘ। তাই এই স্বল্প পরিসরে এ বিষয় নিয়ে আলোচনা করা সম্ভব নয়। হজ পালনকারীদের হজবিষয়ক নির্ভরযোগ্য কিতাবাদি অথবা বিজ্ঞ আলেমদের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ রইল। আবার পালনের পদ্ধতিগত দিক থেকে হজ কয়েক প্রকার রয়েছে। এগুলোর মধ্য থেকে সর্বোত্তম পন্থা নির্বাচনের ক্ষেত্রে ইমামদের মাঝে মতানৈক্য রয়েছে। তাই এ ক্ষেত্রে কোরআন-হাদিসের বিষয়ে গভীর জ্ঞানের অধিকারী না হলে নিজ নিজ মাযহাবের অনুসরণ করা চাই। হজ মুমিন জীবনের টার্নিং পয়েন্ট : হজকে আমরা মানব জাতির জন্য সবচেয়ে উত্তম শিক্ষা সফর বললে মোটেই অতিরঞ্জন হবে না। পবিত্র হজের প্রায় প্রত্যেকটি আমলই আল্লাহতায়ালার কোনো না কোনো নিদর্শনকেন্দ্রিক। আল্লাহতায়ালার প্রিয় বান্দা ও নবী হযরত ইব্রাহিম (আ.)-এর স্মৃতিবিজড়িত স্থানগুলোই হজের মূল কেন্দ্রবিন্দু। ইব্রাহিম (আ.) নিজেকে একজন একনিষ্ঠ মুমিন হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে জীবনে সর্বোচ্চ কোরবানি করেছেন। তিনি আল্লাহতায়ালার সন্তুষ্টি লাভের উদ্দেশ্যে আল্লাহতায়ালার হুকুম তামিল করতে গিয়ে নিজের প্রাণপ্রিয় পুত্র হযরত ইসমাঈল (আ.)-কে পর্যন্ত উৎসর্গ করার প্রস্তুতি সম্পন্ন করেছিলেন। আবার নিজের স্ত্রীকেও মক্কার বিরান ভূমিতে ত্যাগ করে চলে গিয়েছেন। মোটকথা, যত বড় ধরনের কোরবানি হতে পারে, তার কোনোটাই তিনি বাদ দেননি। ইব্রাহিম (আ.)-এর পুত্র ইসমাঈল ও স্ত্রী হাজেরাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে সাফা-মারওয়া, যমযম কূপ, মিনায় কোরবানি, জামরাগুলোতে শয়তানকে পাথর নিক্ষেপের মতো হজের গুরুত্বপূর্ণ আমলগুলো। তাই আমরা বলতে পারি, হজ মুমিনকে আল্লাহতায়ালার পথে সর্বোচ্চ কোরবানি করার শিক্ষা দেয় এবং আমাদেরকে আল্লাহর পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস স্থাপন করতে নির্দেশনা দেয়। হজ পাপমুক্ত জীবন গড়ার প্রতি উৎসাহিত করে। এক কথায় বলতে গেলে, হজ আল্লাহ ও রাসূল (সা.)-এর আনুগত্য তথা পূর্ণাঙ্গ ইসলাম মেনে চলার শিক্ষা দেয়।
উত্তর দিচ্ছেন : মোহাম্মদ লাবীবুল বারী উসাইদ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।