দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
১। মোহাম্মাদ ফারহামুল বারী দাইয়্যান, রাজামেহার, কুমিল্লা।
জিজ্ঞাসা : হযরত ওয়াইস ক্বরনীর (রা:) জীবনাদর্শ বিবৃত করুন।
জবাব : হযরত ওয়াইস ক্বরনী (রা:) একজন তাবেঈ ছিলেন। ওয়াইস ক্বরনী (রা:) সরাসরি জাগতিকভাবে হযরত রাসূল (সা:)-এর দেখা পাননি। তাঁর জন্মস্থান ছিল ইয়ামেন। হযরত ওয়াইস ক্বরনী (রা:) আমাদের প্রিয় রাসূল (সা:)-এর প্রেমে আসক্ত ছিলেন। হযরত ওয়াইস ক্বরনী (রা:) ক্বরনীয়া ত্বরিকার ঈমাম।
মায়ের খেদমত : হযরত ওয়াইস ক্বরনী (রা:) মা বৃদ্ধ ও অসুস্থ ছিলেন। তাঁর কোনো ভাইবোন ছিল না। মায়ের সেবা করে জীবন কাটিয়েছেন। কোনো এক সময় অসুস্থ মাকে ঘরে রেখে হযরত ওয়াইস ক্বরনী (রা:) বায়াত গ্রহণের জন্য হযরত রাসূল (সা:)-এর নিকট গিয়েছিলেন। তখন হযরত রাসূল (সা:) তাঁর হুজরা শরীফে ছিলেন না। হযরত ওয়াইস ক্বরনী (রা:) কিছুক্ষণ হযরত রাসূল (সা:)-এর জন্য অপেক্ষা করে মায়ের খেদমত করার জন্য ফিরে এসেছিলেন। হযরত ওয়াইস ক্বরনী (রা:) মায়ের নিকট ফিরে আসার কিছুক্ষণ পর হযরত রাসূল (সা:) তাঁর হুজরায় প্রবেশ করে হযরত ওয়াইস ক্বরনী (রা:)-এর গায়ের খুশব পেয়েছিলেন।
ধৈর্যশীলতা : হযরত ওয়াইস ক্বরনী (রা:)-এর ধৈর্যশীলতা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যের অনন্য দিক ছিল। জীর্ণশীর্ণ বস্ত্র পরিধান কওে ঘোরাফেরা করার সময় ছেলেরা তাকে পাগল বলে ডাকত। কেউ কেউ তাঁর দিকে পাথরের ঢিল ছুড়ত। তিনি ব্যথা পেলেও কোন প্রকার প্রতিবাদ করতেন না। ছেলেদের উল্টো মারধর করতেন না।
দানশীলতা : হযরত রাসূল (সা:) এরশাদ করেছিলেন, ‘আমার উম্মতের এমন কিছু উম্মত থাকবে যারা শুধু মসজিদে আসার মতো পরনের কাপড় রেখে বাকি বস্ত্র দান করে দিবেন’। হযরত ওয়াইস ক্বরনী (রা:) তাদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন। হযরত ওয়াইস ক্বরনী (রা:)-এর একটির বেশি চাদর, জামা, খড়ম ছিল না। তিনি একবেলা খাবার মজুত রেখে অবশিষ্ট খাবার দান করে দিতেন। আধ্যাত্মিক সাধনা : আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালার নৈকট্য লাভের জন্য হযরত ওয়াইস ক্বরনী (রা:) দুনিয়ার সাংসারিক মায়া মোহ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে পাহাড়-জঙ্গলে ধ্যানমগ্ন থাকতেন। হযরত রাসূল (সা:) নিজেই সাহাবীদের নিকট হযরত ওয়াইস ক্বরনী (রা:) পরিচয় দিয়ে রেখেছিলেন। রাসূল (সা:) সাহাবীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন হযরত ওয়াইস ক্বরনী (রা:)-এর সাক্ষাত পেলে আল্লাহর নিকট তাঁর উম্মতের গুনা ক্ষমা চাওয়ার জন্য যেন তাকে অনুরোধ করা হয়। কারণ আল্লাহ সুবহানাহুতায়ালার নিকট হযরত ওয়াইস ক্বরনী (রা:) সেজদা অনেক পছন্দনীয় ছিল। হযরত ওয়াইস ক্বরনী (রা:) সেজদার মহাত্ম্য : হযরত ওয়াইস ক্বরনী (রা:) এক সেজদা সন্ধ্যায় দিলে অপর সেজদার জন্য ফযর হয়ে যেত। কখনো এক সেজদায় কয়েকদিন পর্যন্ত কাটিয়ে দিতেন। হযরত ওয়াইস ক্বরনী (রা:) সেজদার মধ্যে আত্মার প্রশান্তি খুঁজতেন। সেজদার মাধ্যমে ¯্রষ্টার দীদার চাইতেন। তাঁর মতো দীর্ঘ সেজদা দানকারী সূফি সাধক হিসেবে দ্বিতীয় আর কাউকে দেখা যায় না। তিনি একটি সেজদায় ৭০ হাজার উম্মতের গুনা খাতা মাফ চাইতেন।
বুজুর্গি : হযরত ওয়াইস ক্বরনী (রা:) উঁচু স্তরের সূফি সাধক ছিলেন। তাঁর কাশফ ক্ষমতার প্রখরতা ছিল। আল্লাহ পাকের পক্ষ থেকে তার নিকট অনবরত ইলহাম আসতো। তিনি কাউকে দেখামাত্র আল্লাহর ইচ্ছায় সব কিছুই বলে দিতে পারতেন। রাসূল (সা:)-এর প্রতি মহব্বত ঃ ওহুদের যুদ্ধে রাসূল (সাঃ) দন্ত মোবারক শহীদ হওয়ার সংবাদ হযরত ওয়াইস ক্বরনী (রা:) নিকট পৌঁছলে হযরত রাসূল (সা:)-এর প্রেমে ফানা হযরত ওয়াইস ক্বরনী (রা:) একে একে নিজের ৩২টি দন্ত পাথর দিয়ে খুঁচিয়ে তুলে ফেলেছিলেন। রাসূল (সা:)-এর জুব্বা দান : হযরত রাসূল (সা:)-এর ওফাত গ্রহণের পূর্বে তাঁর পবিত্র জুব্বা মোবারক হযরত ওয়াইস ক্বরনী (রা:)-এর নিকট পৌঁছে দেয়ার জন্য সাহাবীদের নির্দেশ দিয়েছিলেন। রাসূল (সা:)-এর নির্দেশ মোতাবেক হযরত ওমর (রা:) ও হযরত আলী (রা:) জুব্বা মোবারক নিয়ে হযরত ওয়াইস ক্বরনী (রা:)-এর নিকট উপস্থিত হয়েছিলেন। হযরত রাসূল (সা:)-এর দেয়া বর্ণনা মোতাবেক হযরত ওমর (রা:) ও হযরত আলী (রা:) গভীর জঙ্গলে গিয়ে সেজদারত অবস্থায় হযরত ওয়াইস ক্বরনী (রা:) সাক্ষাৎ পেয়েছিলেন। এবং রাসূল (সা:)-এর পবিত্র জুব্বা মোবারক তাঁর নিকট হস্তান্তর করেন। হযরত ওমর (রা:) ও হযরত আলী (রা:) তাকে উম্মতে মোহাম্মদীর গুনা মাফ চাওয়ার জন্য অনুরোধ করেছিলেন।
ওফাত : ৩৭ হিজরীতে সিফফীনের যুদ্ধে হযরত ওয়াইস ক্বরনী (রা:) শহীদ হন। তাঁর রওজা শরীফের সুনির্দিষ্ট ঠিকানা পাওয়া যায় না। তবে ১২টি জায়গায় রওজার সন্ধান পাওয়া যায়। ১২টি স্থানের লোকেরাই তাঁকে দাফন করতে দেখেছেন বলে জানা যায়। ইহা হযরত ওয়াইস ক্বরনী (রা:) দ্বারা প্রকাশিত কারামাতগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য কারামাত।
উত্তর দিচ্ছেন : ফিরোজ আহমাদ
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।