দেশে দেশে রোজার উৎসব
মাহে রমজান আরবী নবম মাসের নাম। চাঁদের আবর্তন দ্বারা যে এক বৎসর গণনা করা হয়,
১। শেখ মোহাম্মদ মুহাইমিনুল ইসলাম মাহির পাড়া, ডগার, ঢাকা।
জিজ্ঞাসা : রণাঙ্গনে মহানবী (সা.)-এর উদারতা কেমন ছিল?
জবাব : বিশ্বনবী হযরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম শান্তির বাণী নিয়ে এসেছিলেন এই ধরাধামে। তাঁর উদারতা, মমতা, মহানুভবতা, আদর্শ আর ভালোবাসা দিয়ে জয় করেছিলেন সকলের প্রাণ। সবার অন্তরের গভীরে স্থান করে নিয়েছিলেন মহত্ত্ব¡ আর সহানুভূতির মাধ্যমে। আল্লাহ বলেনÑ “আপনি যদি রাগ ও কর্কশ হৃদয়ের অধিকারী হতেন তাহলে তারা আপনার কাছ থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে যেত” Ñ(আল ইমরান : ১৫৯)। অর্থাৎ রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন কোমল ও ন¤্র হৃদয়ের অধিকারী। তাঁর ব্যবহার, আদর্শ আর সচ্চরিত্রের কারণেই লোকেরা ইসলামধর্মে ঝুঁকে পড়েছিল তৎসময়ে। তারপরও মাদানী জীবনে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বিভিন্ন ঘটনা ও কারণের প্রেক্ষিতে মুখোমুখি হয়েছিলেন অসংখ্য যুদ্ধের। আর মহান আল্লাহতায়ালার আদেশ ছিলÑ “তোমরা যুদ্ধ কর আহলে কিতাবের ঐ লোকদের সাথে, যারা আল্লাহ ও রোজ হাশরে ঈমান রাখে না, আল্লাহ ও তাঁর রাসূল যা হারাম করে দিয়েছেন তা হারাম মনে করে না এবং সত্য ধর্ম গ্রহণ করে না, যতক্ষণ না করজোড়ে তারা জিযিয়া প্রদান করে” Ñ(সুরা আত তাওবাহ : ২৯)। এ জিহাদসমূহের কিছুসংখ্যক রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজে পরিচালনা করেছেন আর কিছু সাহাবীগণের মাধ্যমে পরিচালনা করিয়েছেন। সর্বোপরি ঐতিহাসিকগণের মতানুসারে আটাশটি গাযওয়া পরিচালিত হয়েছে। এর মধ্যে কোনোটিতে তুমুল যুদ্ধ হয়েছে আবার কোনোটি রক্তপাত ছাড়াই বিজয় এসেছে মুসলমানদের করতলে। অনেকে বলে বেড়ান যে, ইসলামধর্ম যুদ্ধ-বিগ্রহের মাধ্যমে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে(?)। সেটা ওদের মনের দুঃখ, কষ্ট আর হতাশার বহিঃপ্রকাশ। আল্লাহর কসম! ইসলাম ধর্ম যুদ্ধের মাধ্যমে পৃথিবীর বুকে প্রতিষ্ঠিত হয়নি, বরং আদর্শ আর ভালোবাসার মাধ্যমে বিশ্বের বুকে মাথা উঁচু করে দাঁড়িয়েছে। জিহাদ ছিল মহান আল্লাহ রাব্বুল আলামীনের আদেশের বাস্তবায়ন আর কাফির, মুশরিক এবং মুনাফিকদের কঠোর, রুক্ষ ও অসভ্য আচরণের দাঁতভাঙ্গা জবাব মাত্র। কারণ, এই জমিন আল্লাহর। এখানে তার দ্বীনই একমাত্র প্রতিষ্ঠিত থাকবে। কেননা, আল্লাহর ঘোষণাÑ “আর তাদের সাথে যুদ্ধ করতে থাক যতক্ষণ না ফিতনা দূরীভূত হয়ে যায়; এবং আল্লাহর সমস্ত হুকুম প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়” Ñ(আল আনফাল : ৩৯)। জিহাদের লক্ষ্য ছিল ইসলামের প্রচার প্রসার আর ইসলামের প্রশংসিত আখলাকসমূহকে বিশ্বের দরবারে পৌঁছে দেয়া। যুদ্ধের প্রথমেই রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কাফির মুশরিকদেরকে ইসলামের দাওয়াত দিতেন। দাওয়াত কবুল না করলে জিযিয়া বা কর দেয়ার প্রতি বলতেন। যদি তাতেও তারা সম্মত না হতো তাহলে যুদ্ধের প্রয়োজন দেখা দিত। যুদ্ধের প্রয়োজন দেখা দিলেও মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সাহাবীদেরকে শিশু, বয়স্ক ও মহিলাদেরকে হত্যা করতে নিষেধ করতেন। ওরা শত্রু হলেও তাদের প্রতি করুণা, দয়া, ভালোবাসা ও সদ্ব্যবহার দেখানোর অসিয়ত করতেন। এমনকি যুদ্ধবন্দিদের প্রতি এমন ব্যবহার দেখাতেন যার কারণে তারা ইসলাম ধর্মে প্রবেশ করত। রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ছিলেন একজন সমরনায়ক, যুদ্ধ কৌশলে মহাবিজ্ঞ। তিনি যুদ্ধের পূর্বে যুদ্ধকৌশল হিসেবে সর্বদিক বিবেচনা করে ঘাঁটি নির্ধারণ করতেন। ওহুদ, বদর, খন্দক তার উৎকৃষ্ট উদাহরণ। মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম কামনা করতেন যাতে রক্তপাত ছাড়াই যুদ্ধে জয়লাভ হয়ে যায়। তিনি কখনও প্রতিশোধ নেয়ার চেষ্টা করেননি, বরং প্রতিরোধ করতে গিয়ে যুদ্ধ হয়েছে অথবা কাফির মুশরিকরা মুসলমানদেরকে নিশ্চিন্ন করতে এসে হয়েছে নিষ্প্রাণ। যদি মহাবীর মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম প্রতিশোধ নিতে চাইতেন তাহলে মক্কা মোকাররামা বিনা রক্তপাতে বিজিত হত না। যে মক্কা নগরী হতে বিশ্বনবী মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বের করে দেয়া হলো, করা হলো অমানবিক নির্যাতন, সাহাবাগণের প্রতি প্রতিনিয়ত চলত নির্যাতনের স্ট্রিম রোলার সেই মক্কা শরীফকে রাসূল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম জয় করলেন রক্তপাত ছাড়াই। ঘোষণা দিলেন, যে আবু সুফিয়ানের ঘরে প্রবেশ করবে সে নিরাপদ, যে মসজিদে হারামে প্রবেশ করবে সে নিরাপদ এমনকি যে তার নিজের ঘরের দরজা বন্ধ করে ঘরে অবস্থান করবে সেও নিরাপদ। শেষপর্যায়ে মহানবী সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম সকলের জন্য সাধারণ ক্ষমা ঘোষণা করলেন। তিনিই তো মহানবী। কে আছে তার মতো?
উত্তর দিচ্ছেন : মাহফুজ আলমাদান
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।