Inqilab Logo

রোববার ১৩ অক্টােবর ২০২৪, ২৮ আশ্বিন ১৪৩১, ০৯ রবিউস সানী ১৪৪৬ হিজরি

জিজ্ঞাসার জবাব

প্রকাশের সময় : ২৫ আগস্ট, ২০১৬, ১২:০০ এএম

১। মোহাম্মদ ফাহমিদুল বারী রাইয়্যান, খেজুরবাগ, কেরানীগঞ্জ, ঢাকা।
জিজ্ঞাসা : নদী কি আল্লাহর রহস্যময় ভুবন?
জবাব : সৃষ্টিকর্তার পরিচয় জানা বোঝার জন্য পৃথিবীতে নিদর্শন রয়েছে। এর মধ্যে নদ-নদী, সাগর-মহাসাগর অন্যতম। নদ-নদীর রহস্যময় নিদর্শনের বর্ণনা কোরআনে রয়েছে। নদীনালা, সাগর-সমুদ্র আল্লাহতায়ালার কুদরতের নিদর্শনের অংশবিশেষ। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি (একই স্থানে) দুটো সাগর একসাথে প্রবাহিত করে রেখেছেন, একটি হচ্ছে মিষ্ট ও সুপেয়, আরেকটি লোনা ও ক্ষারবিশিষ্ট, উভয়ের মাঝখানে তিনি (আল্লাহ) একটি সীমারেখা বানিয়ে রেখেছেন, (সত্যিই) এটি একটি অনতিক্রম্য ব্যবধান’। (সূরা ফোরকান, আয়াত : ৫৩)। পদ্মা মেঘনা ও যমুনা একসাথে প্রবাহিত হচ্ছে। অথচ এক নদীর পানি অন্য নদীর পানির সাথে মিশছে না। এই দৃশ্য আরিচা ফেরিঘাট পার হওয়ার সময় চোখে পড়ে। তিনটি নদীর ঢেউ ও স্রোতের মধ্যেও ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়।
হযরত মুসা (আ.) আল্লাহতালার কুদরতের গুপ্ত জগতের জ্ঞান সম্পর্কে জানতে চেয়েছিলেন। আল্লাহতায়ালা হযরত মুসা (আ.)-কে দুই সাগরের মিলনস্থলে বসবাসকারী হযরত খিজির (আ.)-এর সাক্ষাতে বের হওয়ার নির্দেশ দান করেছিলেন। হযরত মুসা (আ.) এবং হযরত খিজির (আ.)-এর সাক্ষাতের পুরো ঘটনাটির বিবরণ সুরা কাহাফের ৬০ থেকে ৮২নং আয়াতে বর্ণনা করা হয়েছে। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, সে বলল (হ্যাঁ), এই তো হচ্ছে সে (জায়গা), যার সন্ধান আমরা করেছিলাম (মাছটি) চলে যাওয়ার জায়গাই হচ্ছে সাগরের সেই মিলনস্থল, অতঃপর তারা নিজেদের পথের চিহ্ন ধরে ফিরে চলল। এরপর তারা (সেখানে পৌঁছালে) আমার বান্দাদের মাঝ থেকে একজন (পুণ্যবান) বান্দাকে পেল, যাকে আমি আমার অনুগগ্রহ দান করেছি। হযরত মুসা (আ.) তাকে (খিজির) বলল, আমি কি তোমার অনুসরণ করতে পারি, যাতে করে আল্লাহতায়ালার কাছ থেকে যে জ্ঞান তোমাকে শেখানো হয়েছে তার কিছু অংশ তুমি আমাকে দেখাতে পার। (সূরা কাহাফ, আয়াত : ৬৪, ৬৫ ও ৬৬)।
নদীপথ পৃথিবীর প্রথম যোগাযোগ মাধ্যম। যা আল্লাহতায়ালা নিজেই তৈরি করে দিয়েছেন। মৎস্য আহরণের সুবিধার্থে সমুদ্রকে মানুষের অধীন করে দিয়েছে। যোগাযোগের শুরু থেকে বর্তমান সময়কাল পর্যন্ত নদীপথের যাতায়াত ও পণ্য পরিবহন খরচ সবচেয়ে কম। এ ছাড়া পানিতে কত সংখ্যক প্রাণী বসবাস করে এর সংখ্যা আল্লাহতায়ালাই ভালো জানেন। কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘তিনি যাবতীয় জলযানকে তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন যেন তাঁরই ইচ্ছা অনুযায়ী সমুদ্রে বিচরণ করে বেড়ায় এবং (এ কাজের জন্যে) তিনি নদীনালাকেও তোমাদের অধীন করে দিয়েছেন’। (সূরা ইব্রাহিম, আয়াত : ৩২)। স্থলপথের বাহন হিসেবে আরবের লোকেরা গাধা ও উটকে ব্যবহার করত। ভারতবর্ষে স্থলপথের বাহন হিসেবে গরুরগাড়ি ও ঘোড়াকে ব্যবহার করত। একইভাবে অলি-আউলিয়াদের অনেকে জলপথের বাহন হিসেবে কুমিরকে ব্যবহার করেছেন। রাজশাহীর শাহ মখদুম রূপোষ (রহ.) অন্যতম। হযরত মোহছেন আউলিয়া (রহ.) নদীপথে একটি পাথরের ওপর ভেসে চট্টগ্রামের আনোয়ারাতে এসেছিলেন। হযরত বদর আউলিয়া (রহ.) পানির ওপর পাটি বিছিয়ে চট্টগ্রামে আগমন করেছিলেন। হযরত নূহ (আ.) কাফেরদের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে নৌকার ওপর সাগরে পানিতে ছয় মাস ভেসেছিলেন। সমুদ্রের মাছ হযরত দাউদ (আ.)-এর উম্মতদের জীবিকার প্রধান উৎস ছিল। হযরত মুসা (আ.) ফেরাউনের অত্যাচার সহ্য করতে না পেরে নীল নদের ওপর দিয়ে পাড়ি জমিয়ে ছিলেন।
কালের পরিক্রমায় খাল-বিল, নদ-নদী হারিয়ে যাচ্ছে। খাল-বিল এখন দেখা যায় না বললেই চলে। নদী স্রোত হারিয়ে মরা নদীতে পরিণত হয়ে যাচ্ছে। কলকারখানার দূষিত বর্জ্যে নদী ও সমুদ্রের পানি দূষিত হওয়ার ফলে নদীনালা ও সমুদ্রে বসবাসরত মাছ ও অন্যান্য প্রাণীদের জীবন আজ সংকটাপন্ন। আমাদের দেশের সকল শহর ও বড় বাজার নদীপথকে কেন্দ্র গড়ে উঠেছিল। পৃথিবীর বেশিরভাগ সভ্যতাও নদীকেন্দ্রিক। কালের ইতিহাসের সাক্ষী বুড়িগঙ্গা, শীতলক্ষ্যা, ধলেশ্বরী, কর্ণফুলী ও হালদার পানি এতটাই দূষিত যে, পানির দুর্গন্ধে নদীর আশপাশ বসবাসের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। গড়াই, মধুমতি, গোমতী, আড়িয়াল খাঁ, কীর্তনখোলা, ব্রহ্মপুত্র, কুমার, তিস্তা নদী ক্রমান্বয়ে ফসলি জমিতে পরিণত হয়ে যাচ্ছে।
নদী সৃষ্টির নির্দশন। সূরা আরহমানে ‘মারাজাল বাহরাইনি ইয়াল ত্বাকিয়ান’ বলা হয়েছে। দুই নদীর মিলনস্থল সৃষ্টির রহস্যময় ভুবন। নদী সাহিত্য চর্চার উৎস। নদীকে কেন্দ্র করে বহু উপন্যাস রচিত হয়েছে। সাধারণ আমল ইবাদত কিংবা পাঞ্জেখানা নামাজ আদায়কারী ব্যক্তির পক্ষে নদী ও সমুদ্রের রহস্যময় ভুবনে প্রবেশ করা অসম্ভব। ইহা শুধুমাত্র অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন লোকের পক্ষে অনুধাবন করা সম্ভব। দুই নদীর মিলনস্থলে হযরত মুসা (আ.) কর্তৃক হযরত খিজির (আ.) সাক্ষাৎ লাভের ঘটনাটি আল্লাহর কুদরতের বড় নিদর্শন। ইতিহাস ও সভ্যতার সাক্ষী নদীগুলোকে দূষণের হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। নদীর নাব্যতা রক্ষায় সবার এগিয়ে আসতে হবে।
উত্তর দিচ্ছেন : ফিরোজ আহমদ।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: জিজ্ঞাসার জবাব

১৭ নভেম্বর, ২০১৬
১০ নভেম্বর, ২০১৬
৩ নভেম্বর, ২০১৬
২৭ অক্টোবর, ২০১৬
২০ অক্টোবর, ২০১৬
৬ অক্টোবর, ২০১৬
২৯ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
২২ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
১ সেপ্টেম্বর, ২০১৬
২৫ আগস্ট, ২০১৬
১৮ আগস্ট, ২০১৬
১১ আগস্ট, ২০১৬
৪ আগস্ট, ২০১৬
২৮ জুলাই, ২০১৬

আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ