Inqilab Logo

শুক্রবার ০৮ নভেম্বর ২০২৪, ২৩ কার্তিক ১৪৩১, ০৫ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

আওয়ামী লীগের ভাবনায় নির্বাচন

| প্রকাশের সময় : ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

* বিএনপির সিইসি বিরোধিতাকে আমলে নিচ্ছে না ক্ষমতাসীনরা
* তাদের ধারণা- অন্যান্য ইস্যুর মতো বিএনপির এই ইস্যুও হারিয়ে যাবে
* ক্ষমতাসীনদের ভাবনা শুধু নির্বাচন, অন্য কিছু নয়
তারেক সালমান : নতুন নির্বাচন কমিশন (ইসি) গঠনের পর ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ এখন নির্ভার এবং প্রচ- আত্মবিশ্বাসী। নির্বাচন কমিশন নিয়ে দলের সর্বস্তরের নেতাকর্মীর মধ্যে আনন্দের উচ্ছ্বাস ছড়িয়ে পড়েছে। আর এই আনন্দ উচ্ছ্বাসের মধ্য দিয়ে আগামী নির্বাচনের প্রতি পূর্ণ মনোযোগ দিচ্ছে ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগ। তাদের ভাবনায় এখন আগামী নির্বাচন। ইসি গঠনে প্রেসিডেন্টের সব প্রক্রিয়াতেই বিএনপির অংশগ্রহণ ছিল। গঠিত নতুন নির্বাচন কমিশন সর্ব মহলেই প্রশংসিত হয়েছে। দলটির নেতাদের প্রত্যাশা নবগঠিত ইসির অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচনে দেশের সকল রাজনৈতিক দল অংশগ্রহণ করবে। একই সঙ্গে এ কমিশন দেশের সকল রাজনৈতিক দল ও জনগণের কাছে একটি গ্রহণযোগ্য, সুষ্ঠু এবং নিরপেক্ষ জাতীয় নির্বাচন করতে সক্ষমতার পরিচয় দেবে। আর আগামী নির্বাচনে জনগণের ভোটে আওয়ামী লীগ আবারও ক্ষমতায় আসবে দলের নেতাকর্মীদের এমনটাই দৃঢ়বিশ্বাস। শুধু নেতাকর্মীদেরই নয়, দেশের এবং দেশের বাইরের বিভিন্ন সংস্থাও ক্ষমতাসীন দলের জনসমর্থন বৃদ্ধির জরিপ প্রকাশ করেছে। সব মিলিয়ে আগামী নির্বাচন নিয়ে আওয়ামী লীগের আত্মবিশ্বাস একেবারে তুঙ্গে বলে বিশ্লেষকরা মনে করছেন।
নির্বাচনী প্রস্তুতি প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য কাজী জাফরউল্যাহ বলেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে বলে আশা করি। দেশের উন্নয়নের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে দলের প্রতি ভোটারদের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করাই হবে মূল উদ্দেশ্য। জনগণের মন জয় করেই আগামীতে আবার ক্ষমতায় আসবে আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, দশম সংসদ নির্বাচন বর্জন করলেও বিএনপি আগামী সংসদ নির্বাচনে অবশ্যই অংশ নেবে। তিনি বলেন, বিএনপিতেও বুদ্ধিমান রাজনীতিকরা আছেন। তারা নির্বাচনে না আসার ভুল করবে বলে আমার মনে হয় না। এমন আত্মবিশ্বাসের কারণ সম্পর্কে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক বলেন, রাজনীতির অভিজ্ঞতা থেকে কথা বলছি। এদেশকে যতটা চিনি, বিএনপিকে যতটা চিনি। বাস্তবতা থেকে বলছি। বিএনপি আগামী নির্বাচনে আসবে।
নির্বাচনের প্রস্তুতিও দলটি ইতোমধ্যে শুরু করে দিয়েছে। সাংগঠনিক সফর, প্রতিনিধি সম্মেলন ও সংবর্ধনার নামে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই নির্বাচনী জনসভা চালিয়ে যাচ্ছে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগ। আগামী নির্বাচন সামনে রেখে কেন্দ্র  থেকে তৃণমূল পর্যন্ত নেতাকর্মীদের মধ্যে দ্বন্দ্ব-সংঘাত মিটিয়ে নির্বাচনের উপযোগী করতে কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন তারা। এজন্য জেলা সফরে তৃণমূল আওয়ামী লীগের দ্বন্দ্ব-সংঘাত মেটানোর পাশাপাশি সরকারের উন্নয়ন কর্মকা- তুলে ধরা হচ্ছে সাধারণ মানুষের কাছে। ঝিমিয়ে পড়া সহযোগী ও অঙ্গসংগঠনগুলোকেও চাঙ্গা করার উদ্যোগ নিচ্ছে ক্ষমতাসীন দলটি। শুধু তাই নয়, মহাজোটের শরিকদের সাথেও চলছে আলোচনা।
আওয়ামী লীগের নির্বাচনী প্রস্তুতি শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সম্প্রতি দলটির সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের বলেন, আগামী ছয় মাসের মধ্যে দলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল নিরসন এবং সহযোগী সংগঠনগুলোর সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে।
পরপর দুইবার ক্ষমতায় থাকা এ দলটির নেতারা মনে করেন, আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে হবে। তাই নির্বাচনের আগে সরকারের অর্জন তুলে ধরতে এবং তৃণমূলের অন্তর্কোন্দল মেটাতে না পারলে নির্বাচনে উল্টো প্রভাব পড়বে। সে লক্ষ্যেই এখন তারা কাজ করে যাচ্ছেন।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের থেকে শুরু করে সব কেন্দ্রীয় নেতা জেলা সফর নিয়ে ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। গত ২৭ ডিসেম্বর থেকে টানা সপ্তাহব্যাপী বেশ কয়েকটি জেলা সফর করেন ও এসব জেলায় জনসভা করেন ওবায়দুল কাদের। ধারাবাহিকভাবে বিভিন্ন জেলায় তিনি সফর চালিয়ে যাবেন বলে দলীয় সূত্রে জানা গেছে।
গত ১৯ জানুয়ারি খুলনা বিভাগের প্রতিনিধি সম্মেলন করেছে আওয়ামী লীগ। সভায় জেলা ও মহানগরের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক, সংসদ সদস্য এবং জেলার প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন। ওই সফরে অংশ নেন দলটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ ও সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাঈদ আল মাহমুদ স্বপন। এরপর ২৫ জানুয়ারি মাগুরা জেলায় জনসভা করেন সাংগঠনিক সম্পাদক স্বপন। গত ২২ জানুয়ারি দিনাজপুর জেলার এক সংবর্ধনায় অংশ নেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক খালিদ মাহমুদ চৌধুরী। এর আগে লক্ষ্মীপুর জেলায় জনসভা করেন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ, সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামিম, যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক হারুনুর রশিদ। ২৭ জানুয়ারি ফরিদপুর সফর করেন আওয়ামী লীগের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আব্দুর রহমান।
এদিকে দীর্ঘদিন ধরে ঝিমিয়ে পড়া আওয়ামী লীগের চার সহযোগী সংগঠনের সম্মেলনের তারিখ নির্ধারণ করা হয়েছে। আগামী ৪ মার্চ মহিলা আওয়ামী লীগ, ১১ মার্চ যুব মহিলা লীগ, ১৯ মার্চ তাঁতী লীগ ও ২৯ এপ্রিল আওয়ামী আইনজীবী পরিষদের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হবে। এসব সংগঠনের শীর্ষ নেতৃত্বে পরিবর্তন আনা হবে বলে জানা গেছে। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক আওয়ামী লীগের শীর্ষ পর্যায়ের কয়েকজন নেতা বলেন, সার্চ কমিটির মাধ্যমে সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য একটি নির্বাচন কমিশন গঠন সম্পন্ন হয়েছে। আমরাও প্রস্তুতি নেয়া শুরু করেছি। ইতোমধ্যে আমরা নির্বাচনী ইশতেহার করার কাজও শুরু করেছি। নির্বাচন মাথায় নিয়ে  নেতাকর্মীদের রাজনীতি করার নির্দেশনা পাঠাচ্ছি।
অন্যদিকে বিএনপির বিরোধিতা নিয়ে আওয়ামী লীগ একেবারেই ভাবছে না। আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে এমনটাই তাদের ধারণা। বিএনপির নির্বাচনে অংশগ্রহণের বিষয়ে তারা বলেন, বিএনপিকে আগামী নির্বাচনে আসতেই হবে। কারণ আইনি মারপ্যাঁচে তারা ধরা পড়ে আছে। আরপিও এর ৯০ এর এইচ এর ই-ধারায় বলা হয়েছে- কোনো রাজনৈতিক দল পরপর দুইবার নির্বাচনে অংশ না নিলে তাদের নিবন্ধন বাতিল হয়ে যাবে। সুতরাং আগামী নির্বাচনে অংশ নিতে তারা বাধ্য। আওয়ামী লীগের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক দুই কেন্দ্রীয় নেতা বলেন, যে কোনো সময়ে নির্বাচন হতে পারে, এমন পরিস্থিতির কথা মাথায় রেখে প্রস্তুতি সম্পন্ন করার চেষ্টা চলছে। এর ফলে সর্বস্তরে সংগঠনও চাঙ্গা হবে।
গত ১৪ জানুয়ারি ধানমন্ডিতে আওয়ামী লীগ সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয় পরিদর্শনে গিয়ে উপস্থিত নেতাকর্মীদের নির্বাচনের প্রস্তুতি নিতে তাগিদ দেন শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আগামী নির্বাচনের জন্য আওয়ামী লীগের ইশতেহার তৈরির কাজ শুরু হয়েছে। দলের প্রত্যেক নেতাকর্মীকে এখন থেকেই নির্বাচনের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। গত তিন বছরে আওয়ামী লীগের অর্জনগুলো সাধারণ মানুষের কাছে তুলে ধরতে হবে। সম্প্রতি ধানমন্ডির রাজনৈতিক কার্যালয়ে শেখ হাসিনা নির্বাচনী ইশতেহারের কাজ শুরু করার তাগিদ দেন। এর আগে গত অক্টোবরে দলের জাতীয় সম্মেলনে নেতাকর্মীদের নির্বাচনমুখী হওয়ার নির্দেশ দেন আওয়ামী লীগ সভাপতি। সম্প্রতি দলের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের ঘোষণা করেন, আগামী তিন মাসের মধ্যে নির্বাচনী ইশতেহার তৈরি করা হবে।



 

Show all comments
  • ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ৮:৩৮ এএম says : 1
    আলম গীর সিইসি যদি বিষেশ ব্যাক্তির অনুসারী হয় তাহলে নিরপেক্খ নিরবাচন হবেইনা তারা যত মিষ্টি কথাই বলুক
    Total Reply(0) Reply
  • রহিম ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ১:৫৪ পিএম says : 0
    নির্বাচন কমিশন এর আওয়তায় সঠিক নির্বাচন হোক এটাই আমাদের কামনা।
    Total Reply(0) Reply
  • mamun ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ২:১৮ পিএম says : 0
    আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচন সব রাজনৈতিক দলের অংশগ্রহণে প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক হবে বলে আশা করি। -
    Total Reply(0) Reply
  • তামান্না ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ৪:১৬ পিএম says : 0
    আগামী নির্বাচনে বিএনপি অংশগ্রহণ করবে এমনটাই আশা করি
    Total Reply(0) Reply
  • তামান্না ১০ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭, ৪:১৮ পিএম says : 0
    khomothai thakle onek kiso bola jai aber korao jai.
    Total Reply(0) Reply

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: আওয়ামী লীগ


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ