নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
স্পোর্টস রিপোর্টার : আইএসএসএফ আন্তর্জাতিক সলিডারিটি আরচ্যারি চ্যাম্পিয়নশিপে ৯টির মধ্যে ছয়টি স্বর্ণপদক জিতে ইতিহাস গড়লেন বাংলাদেশের তীরন্দাজরা। আসর শুরুর আগেই ছয় স্বর্ণ জয়ের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন বাংলাদেশ আরচ্যারি ফেডারেশন কর্মকর্তারা। শেষ পর্যন্ত তাই করে দেখালেন হীরামনি, বন্যা আক্তার, রোমান সানা, শ্যামলী রায়, মিলন মোল্লারা। তারা ঠিকই ছয় স্বর্ণপদক এনে দিলেন দেশকে। ১৪ দেশের অংশগ্রহণে এ আসরে অভাবনীয় সাফল্য এনে দিয়ে ফেডারেশন কর্মকর্তাদের দেয়া কথা রাখলেন স্বাগতিক তীরন্দাজরা। প্রতিযোগিতার ৯ ইভেন্টের মধ্যে একটি রিকার্ভ মহিলা এককে এবং পাঁচটি দলগত ইভেন্টে স্বর্ণ জয় করলেন তারা। আরচ্যারিতে এতো বড় সাফল্য এর আগে কখনো পায়নি বাংলাদেশ।
গতকাল মওলানা ভাসানী জাতীয় হকি স্টেডিয়ামে সলিডারিটি আরচ্যারির নয় ইভেন্টের ফাইনাল অনুষ্ঠিত হয়। এর মধ্যে রিকার্ভ পুরুষ এককে সৌদিআরবের ফারেস আলোতাইবি ভ‚টানের নিমা ওয়াংদীকে ৬-৪ সেট পয়েন্টে হারিয়ে স্বর্ণ জিতেন। এই ইভেন্টের মহিলা এককে বাংলাদেশের মোসাম্মৎ হীরা মনি ৬-৪ সেট পয়েন্টে আজারবাইজানের রামোজানোভা ইয়ালাগুলকে হারিয়ে দেশের পক্ষে প্রথম স্বর্ণ জিতে নেন। মহিলা দলগতে সেরা হয় স্বাগতিক দল (শ্যামলী রায়, বিউটি রায় ও রাদিয়া আক্তার শাপলা)। তারা নেপালকে ৬-২ সেট পয়েন্ট হারিয়ে সোনা জিতে নেয়। পুরুষ দলগতেও স্বর্ণ পায় লাল-সবুজরা। রুমান সানা, সানোয়ার হোসেন ও তামিমুল ইসলামকে নিয়ে গড়া দলটি ৬-২ সেট পয়েন্টে ভুটানকে হারায়। মিশ্রদলগতে বাংলাদেশের রুমান সানা ও বিউটি রায় ভুটানের কিনলি টি-সিরিং ও কারমাকে ৬-২ সেট পয়েন্টে হারিয়ে সেরার খেতাব জিতে নেন। এখানেই থেমে থাকেনি বাংলাদেশ তীরন্দাজদের সাফল্য। কম্পাউন্ড ইভেন্টেও তারা নিজেদের যোগ্যতা প্রমাণ করেন। যদিও এই ইভেন্টের পুরুষ ও মহিলা এককে সেরা হন মালয়েশিয়া ও ইরাকের দুই আরচ্যার। তবে পুরুষ ও মিশ্র দলগতে ঠিকই স্বর্ণ জিতে নেয় বাংলাদেশ। কম্পাউন্ড পুরুষ এককে মালয়েশিয়ার মোহাম্মদ ফিরদাউস বিন ইসা ১৪১-১৪০ পয়েন্টে স্বদেশী নিক আহমদ ডেনিয়াল বিন মোহাম্মদ কামারুলজামানকে হারিয়ে সোনা জিতেন। মহিলা এককে ইরাকের ফাতিমাহ আল মাসহাদানী ১৩৫-১৩৩ পয়েন্টে বাংলাদেশের বন্যা আক্তারের বিপক্ষে জয় পেয়ে স্বর্ণ জিতে নেন। পুরুষ দলগতে বাংলাদেশ (আবুল কাশেম, নাজমুল হুদা ও মিলন মোল্লা) ২১৪-২০৭ পয়েন্টে মালয়েশিয়াকে হারিয়ে স্বর্ণ নিজেদের করে নেয়। এবং মিশ্র দলগতে স্বাগতিক দলের আবুল কাশেম মামুন ও সুস্মিতা বনিক ১৪৯-১৪১ পয়েন্টে জয় পান ইরাকের আল-দাঘমান এশাক ও ফাতিমাহ আল মাসহাদানীর বিপক্ষে। এই জয় তাদের এনে দেয় দেশের পক্ষে ষষ্ঠ স্বর্ণপদক। আসর শেষে বাংলাদেশ ছয় সোনা, এক রুপা ও দুই ব্রোঞ্জসহ ৯টি পদক জিতে সেরা হয়েছে। মালয়েশিয়া এক স্বর্ণ ও দুই রৌপ্যসহ তিনটি পদক জিতে পেয়েছে দ্বিতীয়স্থান। এবং সৌদিআরব এক স্বর্ন ও সমানসংখ্যক ব্রোঞ্জসহ দুই পদক জিতে হয়েছে তৃতীয়।
রিকার্ভ ও কম্পাউন্ড এককের চারটি ইভেন্টের মধ্যে স্বাগতিকদের হয়ে একমাত্র স্বর্ণপদক জয় করেন বিকেএসপির তীরন্দাজ হীরামনি। ক্যারিয়ারে প্রথমবার বড় কোনো আন্তর্জাতিক আসরে সেরার খেতাব জেতায় বেশ উচ্ছ¡সিত ছিলেন তিনি। তাই তো স্বর্ণ জয়ের পর তার কণ্ঠে ঝরল উচ্ছ¡াসের ফুলঝুরি, ‘আজারবাইজানের রামোজামোভাকে হারানোর পরই আমি বাবা-মাকে ফোন করেছি। তারা খুব খুশি হয়ে আমাকে দোয়া করলেন।’ বিকেএসপির এই তীরন্দাজ আরও বলেন, ‘আন্তর্জাতিক কোনো আসরে এটাই আমার প্রথম স্বর্ণপদক জয়। আর এমন সাফল্য আমাকে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সহায়তা করবে। যদিও আমার এইচএসসি পরীক্ষা সামনে। তারপরও পড়ালেখা ও খেলা দুই সামলাতে হবে আমাকে।’ এশিয়ান চ্যাম্পিয়ণশিপ নিয়ে হীরামনি বলেন, ‘আগামী নভেম্বরে ঢাকায় শুরু হবে এশিয়ান চ্যাম্পিয়ন। তার আগে আমাকে কঠোর পরিশ্রম করতে হবে সাফল্য ধরে রাখতে। সলিডারিটি আরচ্যারির স্বর্ণপদক জয় যেমন আমাকে উৎসাহিত করবে তেমনি ভবিষ্যতের আরচ্যারদেরও সাহস যোগাবে।’
বাংলাদেশ কোচ নিশীথ দাস তার আরচ্যারদের এমন সাফল্যে উৎফুল্ল। তিনি বলেন,‘আসর শুরুর আগে আমরা বলেছিলাম ছয়টি স্বর্ণ জিতবো। আমাদের প্রত্যাশা বাস্তবে রুপ দেয়ায় ছেলে ও মেয়েদের নিয়ে আমি গর্বিত। তবে এখন আমাদের প্রত্যাশা আরও বেড়ে গেল। ভবিষ্যতে যাতে নয়টি ইভেন্টের সবগুলোতেই আমরা সোনা জিততে পারি, সেটাই চেষ্টা করবো।’ তিনি আরও, ‘এখন আমাদের লক্ষ্য নভেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য এশিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ। তার আগে আমরা মার্চে থাইল্যান্ডে এশিয়ান কাপ এবং জুলাইয়ে মেক্সিকোতে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে খেলাবো আরচ্যারদের। তাছাড়া নভেম্বরের আগে কাউকেই ছুটি দেয়া হবে না। সবাইকে নিয়ে টঙ্গীতে দীর্ঘমেয়াদী ক্যাম্প চলবে। প্রয়োজনে আমরা বিভিন্ন জেলাগুলোতে অনুশীলন করবো। বান্দরবানের কোয়ান্টাম হিলেও অনুশীলন চলবে। তীরন্দাজদের যোগাসন করানো হবে নার্ভকে শক্ত রাখার জন্য।’ দেশের আরচ্যারদের অভাবনীয় সাফল্যে দারুণ খুশি বাংলাদেশ আরচ্যারি ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক ও জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কারপ্রাপ্ত সংগঠক কাজী রাজিব উদ্দিন আহমেদ চপল। তিনি বলেন,‘ছেলে-মেয়েদের ধন্যবাদ দেয়ার ভাষা আমার নেই। তারা যা করে দেখিয়েছে তা সত্যিই ইতিহাসের অংশ হয়ে থাকবে। বাংলাদেশ আরচ্যারির এতো বড় সাফল্য এটাই প্রথম। ভবিষ্যতে যেন সাফল্যের ধারা অব্যাহত থাকে সে চেষ্টাই আমরা করব।’ প্রতিযোগিতার সমাপনী দিনে প্রধান অতিথি থেকে পুরস্কার বিতরণ করেন যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় এমপি।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ইসলামিক সলিডারিটি স্পোর্টস ফেডারেশনের জেনারেল ডাইক্টের খালিদ বিন আল শায়েখ, ওয়ার্ল্ড আরচ্যারি এশিয়ার ভাইস প্রেসিডেন্ট ও ন্যাশনাল আরচ্যারি অ্যাসোসিয়েশন অব থাইল্যান্ডের প্রেসিডেন্ট সাংগুয়ান কোসাভিন্তা, বাংলাদেশ আরচ্যারি ফেডারেশনের সভাপতি লে. জেনারেল মো: মইনুল ইসলাম ও সাধারণ সম্পাদক কাজী রাজিব উদ্দিন আহমেদ চপল।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।