নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
স্পোর্টস ডেস্ক : বয়স ৩৫ ছাড়িয়ে। তবে র্যাকেটে জং ধরেনি আজও। মাঝে কিছুটা সময় সান দেয়াতে হয়তো পিছলে গিয়েছিলো অধরা গ্র্যান্ড সø্যাম। তবে ইনজুরি কাটিয়ে আবারও বয়সকে জয় করে ফিরেছেন আপন মহিমায়, জিতেছেন নিজের অষ্টাদশ গ্র্যান্ড সø্যাম শিরোপা। গতকাল নিজের সবচেয়ে বড় প্রতিদ্ব›দ্বী রাফায়েল নাদালকে হারিয়েই সেটি জিতে গেলেন রজার ফেদেরার। পাঁচ সেটের দুর্দান্ত লড়াইয়ে স্প্যানিশ তারকাকে ৬-৪, ৩-৬, ৬-১, ৩-৬, ৬-৩ গেমে হারিয়ে অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের শিরোপা জিতলেন ফেদেরার। ১৫ মাস পর টেনিসে তাঁর প্রথম ট্রফি, যা কিনা ওপেন যুগে কোনো গ্র্যান্ড সø্যাম চ্যাম্পিয়নের সবচেয়ে বড় শিরোপা-খরা! সত্যিকারের চ্যাম্পিয়নের মতোই খরাটা ঘোঁচালেন ফেদেরার।
প্রায় পাঁচ বছর পর আরেকটি গ্র্যান্ড সø্যাম জিতলেন এই সুইস কিংবদন্তি। সবশেষ বিশ্ব টেনিস রাঙানো এক ম্যাচ দিয়ে ২০১২ সালের উইম্বলডন চ্যাম্পিয়ন হয়েছিলেন রজার। হাঁটুর চোটের কারণে ছয় মাস পর এই টুর্নামেন্ট দিয়ে কোর্টে ফেরেন ফেদেরার। শুরু করেছিলেন ১৭তম বাছাই হিসেবে। অস্ট্রেলিয়ান ওপেনে ফেদেরারের এটা পঞ্চম শিরোপা, সবমিলিয়ে অষ্টাদশ গ্র্যান্ড সø্যাম শিরোপা। ইতিহাসের প্রথম খেলোয়াড় হিসেবে চার গ্র্যান্ড সø্যামের তিনটিতে পাঁচবার করে চ্যাম্পিয়ন হলেন ফেদেরার। গ্র্যান্ড সø্যামের ফাইনালে নাদালের সঙ্গে মোট নয়বারের মুখোমুখি লড়াইয়ে ফেদেরারের এটা তৃতীয় জয়। এর আগে সবশেষ ২০০৭ সালের উইম্বলডনের ফাইনালে জিতেছিলেন সুইস তারকা।
ম্যাচটা ছিলই দুই চ্যাম্পিয়নের। টেনিসপ্রেমীদের কাছে স্বপ্নের ফাইনালÑ রজার ফেদেরার বনাম রাফায়েল নাদাল! দুই প্রতিদ্ব›দ্বী, দুই বন্ধু! টুর্নামেন্ট শুরুর আগে যে ফাইনালের কথা স্বপ্নেও ভেবেছিলেন খুব কম মানুষ। কয়েক বছর ধরেই যে দু’জন চোটের সঙ্গে লড়াইয়ে একটু একটু করে সরে যাচ্ছিলেন আড়ালে! এবার ফিরলেন। টেনিসপ্রেমীদের নস্টালজিক করে দিয়ে। টেনিসের সর্বকালের সেরা খেলোয়াড় বনাম তাঁর নেমেসিস কোনো গ্র্যান্ড সø্যামের ফাইনালে মুখোমুখি-এর চেয়ে ভালো আর কিছু হতে পারত না!
গতকাল ম্যাচটা অবশ্য সে অর্থে দু’জনের অন্য অনেক ম্যাচের মতো ক্ল্যাসিক হয়নি। কোনো সেট গড়ায়নি টাইব্রেকারে, বলতে গেলে সহজেই জিতেছেন নিজেদের সার্ভিস। তবে যা হলো, তাতেই মুগ্ধতা। ফেদেরারের এইস, ফোরহ্যান্ড রিটার্ন, বা নাদালের ক্রস কোর্ট রিটার্ন...এ যে বর্তমানে অতীতের ছোঁয়া দিয়ে যাওয়া!
সেমিফাইনালে গ্রিগর দিমিত্রভের সঙ্গে ৪ ঘণ্টা ৫৬ মিনিটের মহাকাব্যিক লড়াই শেষে বিরতি পেয়েছিলেন মাত্র এক দিনের। প্রথম সেটে সেটিরই প্রভাব হয়তো টের পাচ্ছিলেন নাদাল। তাঁর চতুর্থ সার্ভিসই ব্রেক করেন ফেদেরার। সেটও জিতে নেন ৪-৬ গেমে। এর মানসিক একটা প্রভাব ফেদেরারের ওপর না পড়ে পারেই না। এর আগে গ্র্যান্ড সø্যামে ১১ সাক্ষাতে মাত্র দু’বার নাদালকে হারিয়েছিলেন সুইস কিংবদন্তি, দুবারই আগে নিজের প্রথম সেট জিতে শুভসূচনা করেছিলেন।
তবে প্রথম সেটের ক্লান্তি দ্বিতীয় সেটের শুরুতেই বেশ ভালোভাবে ঝেড়ে ফেললেন নাদাল। নিজের সব কটি সার্ভ তো জিতেছেনই, ফেদেরারের প্রথম দুটি সার্ভই ব্রেক করেছেন। তাতে সুইস তারকার আনফোর্সড এররের দায় যেমন আছে, তেমনি তাতে চার গেম পর নাদালের পক্ষে ফল দাঁড়ায় ৪-০! সেট নাদাল জিতে যান ৬-৩-এ। দুই সেটে ১-১ সমতা। প্রথমে ফেদেরার, পরে নাদাল। ম্যাচের নিয়ম মেনে পরের গেম ফেদেরারেরই জেতার কথা। জিতলেনও বলতে গেলে আগের সেটের প্রতিশোধ নিয়ে। নাদালের সার্ভ করা প্রথম ও তৃতীয় গেম ব্রেক করেছেন, নিজের সার্ভিসে তো ছিলেন আরও দুর্দান্ত। ফল? সেট জিতলেন ৬-১এ। চতুর্থ সেটে এবার আবার নাদালের পালা। ফেদেরারের সার্ভ করা দ্বিতীয় গেমই ব্রেক করলেন, সেট জিতলেন ৬-৩ গেমে। তবে এই সেটের পঞ্চম গেমের শেষ পয়েন্টটি আলাদা করে নজর কাড়ল। নাদাল পয়েন্টটি পেয়ে সেটে এগিয়ে গিয়েছিলেন ৪-১ গেমে, তবে ওই একটি পয়েন্টই যেন হয়ে থাকল নাদাল-ফেদেরার দ্বৈরথের স্মারক! এখানে শেষ বলে কিছু নেই। চমকও যেখানে অবিশ্বাস্য মনে হয়, এই জুটির দ্বৈরথ সেটিকেই তখন তুলে আনে বাস্তবের জমিনে। এই গেমেও যেমন হলো। পয়েন্ট পেলে গেম নাদালের, এমন সময় বেশ কয়েকটি র্যালির পর ফেদেরারের ফোরহ্যান্ড রিটার্ন... একেবারে কোর্টের ডান কোণে! মনে হচ্ছিল পয়েন্ট সুইস কিংবদন্তিরই হচ্ছে। কিন্তু তখনই চমক নাদালের! হার মানতে যে রাজি নন স্প্যানিশ ম্যাটাডোর! পুরো রড লেভার অ্যারেনাকে চমকে দিয়ে উল্টো ফোরহ্যান্ডে নিচু ক্রস কোর্ট রিটার্ন মারলেন, যা ঠেকানোর কোনো উপায় ছিল না ফেদেরারের! অবিশ্বাস্য!
তবে প্রথম চার সেটে দু’জনের ২-২ সমতা থাকাতে সুবিধাই হলো। দু’জনের ম্যাচ পাঁচ সেটে না গড়ালে হয় নাকি! তবে ফেদেরারের ওপর এর প্রভাব পড়ল ঠিকই, সেটের আগেই মেডিক্যাল টাইম আউট নিলেন। তবে উল্টো শুরুতেই ধাক্কা! তাঁর দ্বিতীয় সার্ভই ব্রেক করেন নাদাল। তবে সেটি যেন ঘা দিয়ে গেল ফেদেরারের অহমে। উল্টো ব্রেক করে দিলেন নাদালের সার্ভ। একবার নয়, দুইবার! নাদালের সার্ভ করা তৃতীয় ও চতুর্থ- টানা দুই গেম ব্রেক করে এগিয়ে গেলেন সেটে। ৩-১-এ নাদাল।
আর ম্যাচের সেরা মুহূর্তটা যেন জন্মাল এরপরই। কী অবিশ্বাস্যভাবে ঘুরে দাঁড়ালেন ফেদেরার! নাদাল ঔ তিনেই আটকে রইল, ৬ সেটের অঙ্ক মিলিয়ে দিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলেন ফেদেরার। নিজের রেকর্ডটা নিয়ে গেলেও আরও এক উচ্চতায়। ১৮তম গ্র্যান্ড সø্যাম এনে দিল হাসিমাখা ক্রন্দন!
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।