প্রাক্তন প্রেমিকের নির্যাতনের শিকার অভিনেত্রী
মালায়ালাম সিনেমার অভিনেত্রী আনিকা বিক্রমন। প্রাক্তন প্রেমিক অনুপ পিল্লাই তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ
স্টাফ রিপোর্টার: গাড়ির ভেতর যেন আরেকটি বাড়ি। বেড রুম, ড্রইং রুম, কিচেন। এমন গাড়ি-বাড়ি পশ্চিমা দেশগুলোতে দেখা যায়। কেউ যখন পরিবার নিয়ে বেড়াতে বেড়াতে, তখন এ ধরনের গাড়ি-বাড়ি নিয়ে বের হন। আমাদের দেশে এ ধরনের বাহন দেখা যায় না। তবে বিশ্বের নামী-দামী তারকাদের শূটিংয়ের সময় এমন গাড়ি-বাড়ি ব্যবহার করতে দেখা যায়। বলা যায়, শূটিংয়ের ফাঁকে বাড়ির পরিবেশে একটু ফ্রেশ হয়ে নেয়ার জন্য তারা তা ব্যবহার করেন। একে ক্যারাভেন বলে। ক্যারাভেন ব্যবহার আমাদের দেশের তারকাদের কখনো ব্যবহার করতে দেখা যায় না। আগেও দেখা যায়নি, এখনও না। তবে এর মধ্যে ব্যতিক্রম আয়রনম্যান খ্যাত চিত্রনায়ক অনন্ত। শূটিংয়ে তিনি ক্যারাভেন ব্যবহার করেন। এটা যে স্টারডমের প্রতীক তা বাংলাদেশে তিনিই প্রথম দেখিয়ে দিলেন। তার ক্যারাভেনের ভেতর রয়েছে ছোট্ট একটি বেড রুম, ড্রয়ংই রুম। বাইরে থেকে বোঝার কোনো উপায় নেই একটি গাড়ির ভেতর ছোট্ট সিমসাম একটি বাড়ির পরিবেশ। এ ক্যারাভেনে বসেই সম্প্রতি অনন্তর সাথে কথা হয় তার বিভিন্ন প্রসঙ্গ নিয়ে। শুরুতেই চলচ্চিত্রে তার দীর্ঘ বিরতির কারণ বললেন। অনন্ত যখন কথা বলেন, তখন অকপটে স্পষ্টভাবে সব বলেন। কোনো রাখঢাক থাকে না। একজন সরল ও স্বচ্ছ মানুষের মতো কথাগুলো বলে ফেলেন। বললেন, আমি ও বর্ষা বিয়ে করেছি। আমাদের সংসার হয়েছে। সংসার হলে তো সন্তান নিতে হবে। সন্তান নিয়েছি। আমার ছেলে হয়েছে। ছেলেকে তো সময় দিতে হবে। আগে আমার সংসার, তারপর সবকিছু। তাই সন্তান ও সংসারকে সময় দিতে গিয়ে চলচ্চিত্র থেকে একটু দূরে ছিলাম। আমার ছেলে আরিজের বয়স এখন দুই বছর পার হয়েছে। তাই আবার চলচ্চিত্রে ফিরে আসার পরিকল্পনা করছি। তবে আমি আগেই বলেছি, চলচ্চিত্র আমার পেশা নয়, শখ। প্রফেশন নয়, প্যাশন। বছরে একটি সিনেমা করব। আর যা করব, তা দর্শকের জন্য সারা বছরের আনন্দ হয়ে থাকবে। ইতোমধ্যে আমি যে সিনেমাগুলো করেছি, সেগুলো এখনও দর্শকদের আনন্দ দিয়ে যাচ্ছে। মূল কথা হচ্ছে, সিনেমা যদি সিনেমার মতো আনন্দ-বিনোদনের না হয়, তবে সে সিনেমার স্থায়িত্ব বেশি দিন হয় না। আমির খানের মতো সুপারস্টার যে বছরে একটি সিনেমা করেন, কেন করেন? এর কারণ তিনি যা করেন, তাই সারা বছরে তার কাছে দর্শকের যে চাহিদা তা এক সিনেমা দিয়ে পুষিয়ে দেন। এই যে কয়েক বছর পর দাঙ্গাল সিনেমাটি করলেন, এটি নিয়ে দর্শকের মধ্যে কী তুমুল আলোচনা! এটা তো অস্বীকার করার উপায় নেই। কাজেই সিনেমা করলে এমন করাই উচিত। আমার পরবর্তী সিনেমা স্পাই আমি এমনভাবেই করব, যা এদেশের দর্শক কখনো দেখেনি। এ সিনেমাটি আমাদের চলচ্চিত্রের জন্য আগামী বিশ-পঁচিশ বছরের অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে।
কী ধরনের অভিজ্ঞতা হয়ে থাকবে?
এর নির্মাণ কৌশল এবং উপস্থাপনা থাকবে অত্যাধুনিক। আমাদের দেশে এ ধরনের সিনেমা হতে অনেক সময় লাগবে। হয়তো দুই দশক পর এ ধরনের সিনেমা নির্মিত হবে। আমি দুই দশক আগেই তা করে দেখাতে চাচ্ছি। এবং করবও। আমার আগের সিনেমাগুলোতে দর্শক যে ব্যতিক্রম দেখেছেন, নতুন সিনেমায় তার চেয়েও আরও আধুনিক এবং নতুন কিছু দেখবেন তারা। আমি হলিউড-বলিউড পর্যায়ের সিনেমাকে বাংলাদেশে এ সময়ে নিয়ে আসতে চাই। দেখাতে চাই চেষ্টা, পরিকল্পনা ও চিন্তা-ভাবনা থাকলে আমাদের দেশেও অ্যাডভান্সড ফিল্ম তৈরি করা যায়।
আপনি শিল্পপতি, বেশ কয়েকবার সিআইপি হয়েছেন। চলচ্চিত্রেও তো আপনি ব্যবসা করতে পারেন। বলতে চাচ্ছিলাম ব্যবসার একটি ক্ষেত্র হিসেবে তো নিতে পারেন?
আমার গার্মেন্টস ব্যবসা এখন প্রসারিত হয়েছে। ডেনিমের নতুন একটি ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলেছি। এটিকে গড়ে তুলতে গিয়ে আমাকে অনেক সময় দিতে হচ্ছে। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে ১৮-২০ ঘণ্টা পরিশ্রম করছি। আমি চাই আগে এখানে মানুষের কর্মসংস্থান হোক। তারপর অন্য চিন্তা করব। তবে চলচ্চিত্রকে আমি ব্যবসা হিসেবে নিতে চেয়েছিলাম। এটা পুরোপুরি সম্ভব হচ্ছে না, আমার এক্সিটিং বিজনেসের কারণে। চলচ্চিত্রকে উন্নত করতে ক্যারিয়ারের শুরুতে আমি বেশ কিছু উদ্যোগ ও প্রস্তাব দিয়েছিলাম। পাইরেসি ঠেকাতে ইউএফও প্রযুক্তি সংযোজন থেকে শুরু করে দুইশ’ সিনেমা হল ডিজিটাল করা। তবে এক্ষেত্রে অনেকের আগ্রহ খুব একটা দেখা যায়নি। আসলে অনেকে পরিবর্তনকে ভয় পাচ্ছিলেন। এটা হওয়া স্বাভাবিক। নতুন কিছু সহজে কেউ গ্রহণ করতে পারে না। যে দিন একটি সভায় প্রস্তাব করেছিলাম, সেদিনই তা নিয়ে অনেকে নেতিবাচক ধারণা পোষণ করেছিলেন। ফলে উদ্যোগটি নিতে পারিনি। সবচেয়ে বড় কথা, চলচ্চিত্রের উন্নয়নে সকলকে সম্মিলিতভাবে এগিয়ে আসতে হবে। পরিকল্পনা করতে হবে। কীভাবে শিল্পকে দাঁড় করাতে হবে- এ নিয়ে চিন্তা-ভাবনা করতে হবে। সময়ের সাথে তাল মেলাতে হবে।
আপনার যারা ভক্ত তারা তো আপনার সিনেমার অপেক্ষায় থাকেন। তাদের দীর্ঘ সময় অপেক্ষা রাখা কি একটু অপ্রীতিকর নয়?
-দেখুন, আমি আগেই বলেছি, বছরে একটির বেশি সিনেমা করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়। কারণ আমার একটি সিনেমার প্রস্তুতিসহ শূটিং সম্পন্ন করতেই ছয় মাস লেগে যায়। আমি যে ধরনের সিনেমা করি, তা দশ-পনের দিন বা এক দুই মাসের ব্যাপার নয়। এতে অনেক আয়োজন থাকে। বিশেষ করে প্রযুক্তির যে আয়োজন তা প্রস্তুত করাসহ প্রযুক্তি ব্যবহারের লোকজন সংগ্রহ করা অনেক দুরূহ একটা ব্যাপার। এছাড়া শূটিং লোকেশন বাছাই ও সেখানে শূটিং করা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। আপনি যদি হলিউড ও বলিউডের সিনেমার দিকে তাকান, তাহলে দেখবেন সেখানে যেসব সিনেমা হিট-সুপারহিট হয়, সেগুলো নির্মাণ করতে মাসের পর মাস লেগে যায়। আসলে ভাল সিনেমা এবং দর্শককে চমকে দেয়ার সিনেমা বছরে একটির বেশি করা সম্ভব নয়। বলিউডে বছরে কয়েকশ’ সিনেমা নির্মিত হয়। আমরা কিন্তু খোঁজ পাই চার-পাঁচটির। এর কারণ এসব সিনেমা সব সিনেমা যাতে ছাপিয়ে যেতে পারে, সেভাবেই নির্মিত হয়। আমির খান, সালমান খান, শাহরুখ খান এদের সিনেমার দিকে যদি তাকান, তাহলে দেখবেন তারা এক দুটির বেশি সিনেমা করেন না। তাদের ভক্ত দর্শকরাও বিষয়টি জানে। ফলে তাদের অপেক্ষা করতে সমস্যা হয় না। আমিও মনে করি, আমি যে অনন্ত হয়েছি তা আমার ভক্ত দর্শকদের কারণেই। আশা করি, আমার সিনেমার জন্য তাদের অপেক্ষা করতে খুব বেশি সমস্যা হয় না।
চলচ্চিত্রের উন্নয়নে কী করা যেতে পারে?
-একটা সম্মিলিত পরিকল্পিত উদ্যোগ। এলোমেলো ও বিক্ষিপ্তভাবে কাজ করলে হবে না। চলচ্চিত্র তো একটা ইন্ডাস্ট্রি। এ ইন্ডাস্ট্রি চালাতে এর পরিচালকদেরও দক্ষ হতে হবে। এখন চলচ্চিত্রের যারা নিয়ন্ত্রক তাদের মধ্যে এ উদ্যোগটা পরিলক্ষিত হচ্ছে না। তারপরও আমি মনে করি, যারা আছেন তারা যদি সঠিকভাবে কাজ শুরু করেন, তবে চলচ্চিত্র ঘুরে দাঁড়াতে পারবে। আশার কথা ডিপজল কাজ শুরু করেছেন, জাজ কাজ করে যাচ্ছে, এভাবে আরও যারা আছেন, তারা শুরু করলে চলচ্চিত্র বদলে যেতে সময় লাগবে না।
আপনার নতুন চলচ্চিত্রের কাজ শুরু হবে কবে?
-আশা করছি, এ বছরের মাঝামাঝি। সেভাবেই আমরা প্রস্তুতি নিচ্ছি। সবকিছু ঠিক থাকলে এ বছরই দর্শক আমার নতুন সিনেমা দেখতে পাবেন।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।