প্রাক্তন প্রেমিকের নির্যাতনের শিকার অভিনেত্রী
মালায়ালাম সিনেমার অভিনেত্রী আনিকা বিক্রমন। প্রাক্তন প্রেমিক অনুপ পিল্লাই তাকে শারীরিকভাবে নির্যাতন করেছেন বলে অভিযোগ
চঞ্চল চৌধুরী যে বহুমাত্রিক, তা বলা বাহুল্য। দর্শক তাকে নিয়মিতই বহু ধরনের চরিত্রে অভিনয় করতে দেখছেন। কি নাটক, কি সিনেমা-অভিনয়ের সব শাখাতেই তার অভিনয় নৈপুণ্যে দর্শক মুগ্ধ হন। বলা হয়, ছোট পর্দার অভিনেতা-অভিনেত্রীরা বড় পর্দায় খুব একটা সফল হন না। তবে এর ব্যতিক্রমও রয়েছে, প্রখ্যাত অভিনেতা হুমায়ূন ফরিদী, রাইসুল ইসলাম আসাদ, সুবর্ণা মুস্তাফাদের মতো অভিনেতা-অভিনেত্রীরা চলচ্চিত্রে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন। এ ধারাবাহিকতায় চঞ্চল চৌধুরীও রয়েছেন। মঞ্চ থেকে টেলিভিশন নাটকে অভিনয়ের মাধ্যমে চঞ্চল চৌধুরী গিয়াস উদ্দিন সেলিমের মনপুরা সিনেমার মাধ্যমে বড় পর্দায় এসেই ব্যাপক আলোড়ন তোলেন। তারপর মনের মানুষ, টেলিভিশন, আয়নাবাজি, দেবী, পাপপূন্য দিয়ে সেই ধারাবাহিকতা ধরে রেখেছেন। ফলে তার অভিনীত সিনেমার প্রতি দর্শকের আলাদা আগ্রহ রয়েছে। তার সিনেমার জন্য তারা অপেক্ষা করেন। আগামী ২৯ জুলাই মুক্তি পেতে যাচ্ছে চঞ্চল চৌধুরীর অভিনীত চলচ্চিত্র ‘হাওয়া’। এ সিনেমা এবং অন্যান্য বিষয় নিয়ে তার সঙ্গে বিনোদন প্রতিদিনের কথা হয়।
চলচ্চিত্রের বর্তমান প্রেক্ষাপট নিয়ে আপনার অভিমত কি?
এসময়ে দর্শকের রুচিটা আসলে বোঝা দরকার। একটা সময়ে আমরা শুধু চিন্তা করতাম ঢাকাসহ বাংলাদেশের দর্শকদের কথা। এখন আমাদের দর্শক বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে আছে। আমাদের সিনেমা যে শুধু বাংলাদেশের মানুষ দেখে, এমন নয়। অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ও ওটিটির কল্যাণে বিভিন্ন দেশের মানুষসহ প্রবাসে থাকা বাংলা ভাষাভাষীর মানুষও দেখে। দেশে খুবই কমসংখ্যক সিনেমা তৈরী হচ্ছে। এর মধ্যে কয়টি ভাল মানের সিনেমা হয়, সেটাও বিচার্য্য বিষয়। এর মধ্যে দুই-চারটি সিনেমা মানসম্পন্ন হয়। এটা যথেষ্ট নয়। তাছাড়া উন্মুক্ত আকাশ সংস্কৃতির কারণে দর্শকের রুচিরও পরিবর্তন হয়ে গেছে। তাদের দৃষ্টিভঙ্গির বিশাল পরিবর্তন ঘটেছে। তারা যখন আমাদের কাজ দেখে তখন তা তারা তদের দৃষ্টিভঙ্গির সঙ্গে মেলানোর চেষ্টা করে। এ ধরনের কাজ খুব কম হয়। নির্মাতাদের দর্শকের চাহিদার এ জয়াগাটা ধরতে হবে। নিপূণ ক্যামেরার কাজ, ভাল গল্প, ভাল মেকিং না হলে দর্শকদের সন্তুষ্ট করা সম্ভব না।
আপনি যে সিনেমায় অভিনয় করেন তার মধ্যে এসব গুণাবলী কতটা থাকে?
আমি চেষ্টা করি, সীমাবদ্ধতার মধ্যে থেকেও যতটা সম্ভব এ বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করে সিনেমার সাথে যুক্ত হতে। যে সিনেমাটি মুক্তি পেতে যাচ্ছে, মানে ‘হাওয়া’, এ সিনেমাটিতে এ বিষয়গুলো যথাসম্ভব তুলে ধরা হয়েছে। সিনেমাটির পরিচালক মেজবাইর রহমান এসময়ের অভিজ্ঞ একজন নির্মাতা। দীর্ঘদিন ধরে সে কাজ করছে। প্রকৃতপক্ষে সে একজন বিজ্ঞাপন নির্মাতা। কিছু টেলিভিশন নাটক ও টেলিফিল্ম বানিয়েছে। ‘হাওয়া’ তার প্রথম চলচ্চিত্র। চলচ্চিত্রটি নিয়ে তার ব্যাপক প্রস্তুতি ছিল। বেশ কয়েক বছর ধরে স্ক্রিপ্ট তৈরী করেছে। তারপর শুটিং ও অন্যান্য বিষয় নিয়ে চেষ্টা করেছে বর্তমান সময়ের দশর্কের চাহিদার জায়গাটা ধরতে। আমরা আমাদের মত করে তাকে সাপোর্ট করেছি। প্রাথমিক ফলাফল হিসেবে এর একটি গান ইতোমধ্যে ভাইরাল হয়েছে। ট্রেইলারটাও প্রশংসিত হয়েছে। আমার বিশ্বাস, শুধু ট্রেইলার আর গান ভাইরাল হয়ওা নয়। পুরো সিনেমাটিই মানসম্পন্ন হয়েছে। আমরা সবাই মিলে ভাল কিছুর চেষ্টা করেছি। এখন রায় দেবে দর্শক। দর্শকের ভাল লাগলে আমাদের শ্রম ও চেষ্টা সার্থক হবে।
আপনার কি ধারণা ‘হওয়া’ দর্শকের মন ভরাতে পারবে?
আসলে দর্শক ভাল কিছু দেখতে চায়। আমাদের দেশের দর্শক সিনেমা শিল্পকে উল্লেখযোগ্য শিল্প হিসেবেই দেখে। সেখান থেকে তারা বিনোদিত হতে চায়। আমি মনে করি, ভাল সিনেমার দর্শক তৈরী হয়েছে। সে জায়গা থেকে যদি বলি তবে ‘হাওয়া’র গল্প ভাল, মেকিং ভাল। প্রথাগত কোন গল্পের সিনেমা এটি নয়। এর আগে এ ধরনের গল্পের সিনেমা নির্মিত হয়নি। আমরা সমুদ্র পাড়ের গল্প দেখেছি। তবে মাঝ সমুদ্রের গল্প আগে দেখিনি। এ সিনেমাটি মাঝ সমুদ্রের গল্পের। নতুন একটা গল্প, গল্পের নির্মাণ, সিনেমাটোগ্রাফি, ব্যাকগ্রাউন্ড স্কোর, মিউজিক সব মিলিয়ে একটি ভাল সিনেমা হয়েছে বলে মনে করি।
কেউ তো আর নিজের কাজকে মন্দ বলে না...
তা ঠিক। তবে আমি আমর কথা বলতে পারি। মোটামুটি একটা পরিণত বয়সে এসে পৌঁছেছি। এখন অভিনয় বা কাজ বাছাই করা নিয়ে ছিনিমিনি খেলার সময় না। আর এটা আমার প্রথম কাজ এমন নয়। দর্শক প্রত্যাশা বুঝেই কাজটি করেছি। শুধু এটুকু বলব, একটি ভাল কাজ করেছি।
‘হাওয়া’র গল্প বেছে নেয়ার কারণ কি?
প্রথম কথা হচ্ছে, আমি যে নির্মাতা বা গল্পের কাজ করি, সেটা আগে বুঝতে চেষ্টা করি। তারপর সিদ্ধান্ত নিই। গড়পড়তা কাজ আমার পছন্দ নয়। গল্পের প্রেক্ষাপট একটু ব্যতিক্রম না হলে করি না। তাছাড়া নির্মাতার অভিজ্ঞতার বিষয়টিও প্রাধান্য দিই। তা নাহলে, করি না। সবচেয়ে বড় বিষয়, যে কাজই করেছি, ভালভাবে বাছবিচার করেই করার চেষ্টা করেছি। হাওয়ার ক্ষেত্রেও তাই করেছি। এটুকু বলতে পারি, আমার অভিনীত কোন সিনেমাই দর্শকের কাছে অগ্রহণযোগ্য হয়নি। হয়তো কোনটি হিট করেছে বা কোনটি তথাকথিত হিট না করলেও দর্শকের ভাল লেগেছে। এটার পেছনের কারণ একটাই সঠিক গল্প নির্বাচন করে সঠিক পরিচালকের সাথে কাজ করা। আমি সবসময় সেই চেষ্টাটায় করেছি এবং সেই চেষ্টা করার কারণে আমার কাজের একটা ধারাবাহিকতা এখন পর্যন্ত বজায় রাখতে পেরেছি।
‘হাওয়া’র কাজ করার অভিজ্ঞতা কেমন ছিল?
আমার প্রায় ১৫০ থেকে ২০০ জনের ইউনিট নিয়ে একটানা ৪৫ দিন সমুদ্রে ছিলাম। সে সময়ে সেন্টমার্টিনে থাকতাম। প্রতিদিন সকালে দেড় থেকে দুই ঘন্টা ট্রলারে রওনা দিয়ে মাঝ সমুদ্রে শুটিং করেছি। এটা একদিন দুদিন নয়, ৪৫ দিন! এটা রেকর্ডও বটে। এর মাঝে ৪/৫ দিন ঘূর্ণিঝড় বুলবুলের কারণে আমরা বসে ছিলাম। মাঝ সমুদ্রে ৪৫ দিন শুটিং করা, ঘূর্ণিঝড়ের কবলে পড়া, এসব নতুন অভিজ্ঞতা। এর আগে এভাবে কোন কাজ করিনি। এই গল্পটা আসলে সিনেমার পর্দায় নিয়ে আসাটা খুব কঠিন কাজ ছিল। দর্শক দেখলেই বুঝতে পারবে এই কাজটা আমাদের জন্য মোটেও সহজ ছিলনা। পুরো শুটিং নৌকার মধ্যে হয়েছে। ট্রলারের মাঝির কাছ থেকে জানতে চাওয়া হয় এই জায়গাটা কতটুকু নিরাপদ? তিনি জানান, মোটেও নিরাপদ না। এখানে হাঙ্গর আছে, এটা আছে, সেটা আছে। যোকন মুহুর্তে সমস্যা হতে পারে। এক কথায় জীবন বাজি রেখে কাজটা করেছি আমরা। দর্শকের জন্য নতুন কিছু করার জন্যই এ কাজ করেছি।
নির্মাতা ও শিল্পীরা বলে থাকেন সিনেমা হাউজফুল। কিন্তু হলে গিয়ে এর বিপরীত চিত্র দেখা যায়। এ ব্যাপারে আপনার মতামত কি?
এটার কারণ আমি বলতে পারবো না। আসলে শিল্পের কাজটা কঠিন। দর্শককে মিথ্যা বলে মিসগাইড করে কোন লাভ নাই। এসব যারা করে বা যারা বলে তাদের নিয়ে আমি কিছু বলতে চাইনা। আমি এসব বলাবলি পছন্দ করি না। কাজ দিয়ে প্রমাণ করাই আমার লক্ষ্য। একজন আরেকজনের বিপক্ষে কথা বলাটা শিল্পীসুলভ আচরণ নয়। শিল্পীদের সহনশীল আর ধৈর্য্য সাধারণ মানুষের চেয়ে বেশি হওয়া উচিৎ। নিজে রান্না করে যদি নিজেই প্রশংসা করি, তবে সেটা প্রশংসা নয়। আমি কাজ করছি দর্শকের জন্য। রায় দেবে দর্শক। ভাল হলে ভাল বলবে, খারাপ হলে খারাপ বলবে। দর্শককে বোকা ভাবার কারণ নাই। দর্শক সবকিছুই বুঝে। দর্শক ভাল জিনিসটাই বেছে নেয়। দর্শকের কাছে দ্বায়বদ্ধতা রয়েছে আমাদের।
সিনেমা হলে দর্শক আনার জন্য অভিনেতা-অভিনত্রেীদের হলে হলে ঘুরতে হয়, আগে এমনটি দেখা যেত না। এটাকে কিভাবে দেখছেন?
এটা সময়ের প্রয়োজনেই হচ্ছে। সেসময়ে অনলাইনের অস্তিত্ব ছিলনা। মাইকিং করে জানান দিতে হতো। কথার কথা যদি বলি, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যদি বেঁচে থাকতেন, তবে হয়তো এসময়ে তার একটি ফেসবুক আইডি বা পেইজ থাকতো। যুগের সাথে সাথে আসলে সবকিছুরই পরিবর্তন হয়। আর প্রচার প্রক্রিয়ারও পরিবর্তন ঘটেছে। সিনেমা হাউজফুল করার জন্য দোষের কিছু নয় বলে মনে করি। সহজ কথায় বলা যায় এ যুগটাই প্রচারের যুগ।
বলিউড-হলিউডের অভিনেতা-অভিনেত্রীদের তো এভাবে হলে হলে ছুটতে দেখা যায় না। তাতে কি তাদের সিনেমা হাউজফুল হয় না?
বলিউড-হলিউডের কথা বললে ভুল হবে। কারণ, তাদের ইন্ডাস্ট্রি আর আমাদের ইন্ডাস্ট্রি সমান নয়। তাদের একটা সিনেমার বাজেট থাকে ১০০ কোটি টাকা বা ৫০০ কোটি টাকা। আর আমাদের দেশে ৫০ লাখ বা ১ কোটি টাকায় সিনেমা তৈরী করতে গেলেই হিমশিম খেতে হয়। আর বলিউড-হলিউড বাংলাদেশের আগেই প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। টেকনিক্যালিও তারা অনেক এগিয়ে। তাদের সাথে আমাদের তুলনা হতে পারে না। আমরা তাদের অনুসরণ আর অনুকরণ করি। তবে আমাদের সিনেমাগুলোতে বাংলাদেশকে খুঁজে পেতে হবে। নির্মাণ এমনই হতে হবে। তাহলে ইন্ডাস্ট্রির উন্নতি হবে। নকল সিনেমা নয়, সবকিছুতে আমাদের স্বতন্ত্র থাকতে হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।