পোশাক রপ্তানিতে উৎসে কর ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব
আগামী পাঁচ বছরের জন্য তৈরি পোশাক রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে করহার ১ শতাংশ থেকে হ্রাস করে ০.৫ শতাংশ নির্ধারণের প্রস্তাব করেছে পোশাক খাতের দুই সংগঠন
সৌমিত্র চক্রবর্তী, সীতাকুন্ড থেকে : সীতাকুন্ড শিম চাষের জন্য বিখ্যাত জায়গা। এখানে ৫ জাতের শিম প্রচুর পরিমাণে চাষ হয়ে থাকে। তার মধ্যে ছুরি জাতের শিম খুবই জনপ্রিয়। সেই জনপ্রিয় ছুরি শিম চাষের জন্য আমি ৩ বছর আগে কুমিল্লার বড়–ড়া উপজেলায় নিয়ে আসি। এবছর এই ছুরি শিমের বীজ চাষাবাদের জন্য কৃষক, সাংবাদিক, ইউপি চেয়ারম্যান, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ মিলিয়ে অন্তত ২০০ জনকে বিতরণ করা হয়েছিল। তারা চাষাবাদ করেছেন। ফলনও হয়েছে বেশ ভালো। কথাগুলো বলছিলেন, কুমিল্লার বড়–ড়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা মোঃ তারিক মাহমুদুল ইসলাম। তিনি আরো বলেন, যাদেরকে ছুরি শিমের বীজ বিতরণ করা হয়েছিলো তাদের মধ্যে বড়–ড়ার এক সাংবাদিক মোঃ একরাম উৎপাদিত ছুরি শিম তাকে উপহারও পাঠিয়েছেন। প্রকৃত পক্ষে তিনি খুশি এজন্য যে কুমিল্লার বড়–য়াতেও সীতাকুন্ডের শিম চাষে ব্যাপক সাফল্য এসেছে। গত ৩ বছরে তার হাত ধরে এই শিমের চাষ হচ্ছিল কুমিল্লার বড়–ড়া উপজেলায়। এখন শিমটি উপজেলার সর্বত্রই কম-বেশি ছড়িয়ে পড়েছে। সীতাকুন্ডের শিম কুমিল্লায় চাষাবাদে সাফল্য প্রসঙ্গে বলতে গিয়ে বড়–ড়ার কৃষি কর্মকর্তা আরো বলেন, শুধু বড়–ড়াতেই নয়, তিনি কুমিল্লা জেলা কৃষি বিভাগের উপ-পরিচালকের মাধ্যমে কুমিল্লার প্রতিটি উপজেলায় এই বীজ পাঠিয়েছেন। ধীরে ধীরে অন্য উপজেলাগুলোতেও ছুরি শিমের আবাদ ছড়িয়ে পড়ছে। কৃষি কর্মকর্তা তারিক মোঃ মাহমুদুল হকের প্রত্যাশা এই ধারাবাহিকতা অব্যাহত থাকলে একসময় শিমে শিমে ছেয়ে যাবে সমগ্র কুমিল্লা।
জানা যায়, কুমিল্লার বড়–ড়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা তারিক মাহমুদুল ইসলাম কয়েক বছর আগে সীতাকুন্ড কৃষি অফিসে কর্মরত ছিলেন। এখানে চাকুরির সুবাধে শিম রাজ্যখ্যাত শিমের আবাদ সম্পর্কে যথেষ্ট অভিজ্ঞতা রয়েছে তার। সীতাকুন্ডের চাষীরা বারবার শিম চাষে ঈর্ষণীয় সাফল্য লাভ করায় এ শিম চাষ নিয়ে তার মধ্যে বেশ আগ্রহ সৃষ্টি হয়। পরে তিনি কুমিল্লার বড়–ড়াতে বদলী হলে সিদ্ধান্ত নেন
বড়–ড়াতেও এই শিম চাষের চেষ্টা করবেন। তার সেই প্রচেষ্টার অংশ হিসেবেই সীতাকুন্ডের বিভিন্ন প্রকার শিমের বীজ নিয়ে যান তিনি। গত ৩ বছর শিমের আবাদ শুরুর আগে বড়–ড়ার কৃষক, সাংবাদিক, রাজনৈতিক নেতাকর্মীসহ বিভিন্ন জনকে সীতাকুন্ডের শিমগুলো চাষে উৎসাহিত করতে এই শিমের বিশেষত্বগুলো তুলে ধরেন তিনি। তার কাছ থেকে সীতাকুন্ডের ঐতিহ্যবাহী শিমের কথা জেনে সংশ্লিষ্টরাও এই শিম চাষে আগ্রহ প্রকাশ করে বীজ গ্রহণপূর্বক চাষাবাদ শুরু করেন। বলাবাহুল্য ক্ষেতে ফলন শুরু হলে দেখা যায়, বড়–ড়ার মাটিতেও সীতাকুন্ডের ছুরি জাতের শিম চাষে ব্যাপক সাফল্য এসেছে। কৃষি কর্মকর্তার কাছ থেকে বীজ পেয়ে যেসব কৃষক শিম চাষে সাফল্য পেয়েছেন তারাও তাদের সাফল্যের কথা জানাতে ভোলেননি তাকে। শুধু তাই নয়, ছুরি শিম চাষে সাফল্য অর্জন করে নিজের ক্ষেতে উৎপাদিত শিম উপহার হিসাবে কৃষি কর্মকর্তাকে পাঠিয়েছেন বড়–ড়া উপজেলার সাংবাদিক মোঃ একরাম। যা কৃষি কর্মকর্তা তারিক মাহামুদুল ইসলামের জন্য বাড়তি প্রেরণা হয়ে থাকল।
এদিকে বড়–ড়াতে সীতাকুন্ডের শিম চাষে সাফল্য আসার পাশাপাশি সীতাকুন্ডেও প্রতিবারের মতো এবার ফের শিম চাষে ব্যাপক সাফল্য পেয়েছেন কৃষকরা। সীতাকুন্ড উপজেলা কৃষি অফিসের উদ্ভিদ সংরক্ষণ ও উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র নাথ প্রতিবেদককে বলেন, সীতাকুন্ডে বাটা, পুঁটি, ছুরি, কার্ত্তিকোডা, লইট্টা প্রভৃতি জাতের শিম চাষ হয়ে থাকে। এবারও প্রায় ১৮ হাজার ৬৫০ কৃষক উপজেলার পাহাড় থেকে সমতলের সর্বত্রই কমবেশি শিম চাষ করেছেন। শিম চাষে সাফল্যও এসেছে। কৃষকরা বাম্পার ফলন ও ন্যায্য মূল্য পেয়ে খুবই খুশি। মৌসুমের শুরুতে প্রতি কেজি শিম ১শ’ টাকার উপরেও বিক্রি হয়েছিল। শিমের বীচি বিক্রি হয়েছিল ২শ’ থেকে আড়াইশ’ টাকাতেও। বর্তমানে দাম কমলেও পাইকারিতে প্রতি কেজি শিম ২২ টাকা কিংবা তারও বেশি বিক্রি হচ্ছে। কৃষি কর্মকর্তা সুভাষ চন্দ্র নাথ আরো বলেন, সীতাকুন্ডের শিমের একটি ঐহিত্য আছে। এখান থেকে ইউরোপ-আমেরিকাতেও শিম রপ্তানি হয়েছে। তবে এ শিম সব জায়গায় ভালো হয় না। মাটি ও প্রকৃতির কারণে এখানেই ভালো হয়। কিন্তু বড়–ড়া উপজেলার কৃষি কর্মকর্তা তারিক মাহমুদুল স্যার যেহেতু সীতাকুন্ডেও চাকুরি করে গেছেন এবং এখানকার শিম চাষ সম্পর্কে জানেন তাই তিনি সেখানেও এই প্রক্রিয়ায় শিম চাষ করেছেন। এতে তিনি সাফল্য পেয়েছেন জেনে আমাদেরও ভালো লাগছে। আশা করছি এভাবেই একদিন সীতাকুন্ডের শিম দেশের খাদ্যের চাহিদা পূরণে ব্যাপক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।