নারী দিবস ম্যারাথনে পাপিয়া চ্যাম্পিয়ন
‘নিরাপদ সমাজ, নিরাপদ নারী’-স্লোগানে অনুষ্ঠিত নারী দিবস রেগুলার ম্যারাথনে রেগুলার বাংলাদেশের পাপিয়া খাতুন চ্যাম্পিয়ন, হামিদা
শামীম চৌধুরী : বাঁ হাতি স্পিনার মোহাম্মদ রফিক ছিলেন যখন টেস্ট দলে অপরিহার্য, তখন ব্যাক আপ স্পিনার হিসেবে টেস্টে সুযোগ পেতেন সাকিব। শুরুতে ছিলেন অনিয়মিত, স্কোয়াডে থেকে তিনটি টেস্টে দর্শক, অন্য তিনটিতে পেয়েছেন সুযোগ। ক্যারিয়ারের প্রথম তিন টেস্টে ৫ ইনিংসে নেই কোন ফিফটি, সর্বসাকূল্যে রান ৯৮। ওই তিনটি টেস্টে ৪৮ ওভার বোলিং করে কাটিয়েছেন উইকেহীন! ওয়ানডের অল রাউন্ডার তখন টেস্টে যে দলের বোঝা! ২০০৮ সালে নিউজিল্যান্ড সফরে ডানেডিনে অনুষ্ঠিত প্রথম টেস্টে একসঙ্গে তিন ক্রিকেটার তামীম, জুনায়েদ, সাজেদুলের অভিষেক হলেও বাংলাদেশের টেস্টের সুবর্ণজয়ন্তী উৎসবে ছিলেন দর্শক। প্রথম তিন টেস্টে অনুউজ্জ্বল পারফরমেন্সের পরও ঝুঁকিটা নিয়েছিলেন সে সময়ের কোচ জেমি সিডন্স। ওয়েলিংটন টেস্টে প্রাপ্ত সুযোগের সদ্বব্যহার করেছেনÑ ২ উইকেটের (২/৪৪) পাশে দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশের বিপর্যস্ত চেহারার (১১৩ রানে অল আউট) মধ্যেও ৪১ রানের ক্লাসিক ইনিংসে দিয়েছেন কোচের আস্থার প্রতিদান। ওই অল রাউন্ড পারফরমেন্সেই ভাগ্য বদলে গেছে সাকিবের। ২০০৮ সালে অর্থের মোহে বিসিবি’র শর্ত ভেঙ্গে জাতীয় দলের ৭ অপরিহার্য ক্রিকেটার একসঙ্গে ভারতের বিদ্রোহী ক্রিকেট লীগ আইসিএলে ঢাকা ওরিয়র্সের পক্ষে নাম লেখানোয় কপালটা খুলে যায় সাকিবের। সে বছর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ফিরতি টেস্ট সফরে চট্টগ্রামে ৭১ রানের ইনিংস এবং ক্যারিয়ার সেরা বোলিংয়ে (৭/৩৬) বাংলাদেশ সেরা অল রাউন্ড পারফরমেন্সে উঠে এলেন লাইমলাইটে। ওই পারফরমেন্সে সেবার আইসিসি’র বর্ষসেরা টেস্ট উঠল সাকিবের নাম! নিজেকে চেনানো শুরু ওয়েলিংটনে, ৯ বছর আগে। সেই ওয়েলিংটনে ফিরতি টেস্টে পেলেন ডাবল সেঞ্চুরি! ওয়েলিংটনে ২১৭ রানের সেই ইনিংসকে আবার বাংলাদেশের সর্বোচ্চ ইনিংসে দিয়েছেন রূপ। মুশফিকুর রহিমের সঙ্গে ৫ম জুটিতে ৩৫৯ রানে একগাদা রেকর্ডে লিখেছেন নিজের নাম। ওই ডাবল সেঞ্চুরির ইনিংসে তৃতীয় বাংলাদেশী হিসেবে টেস্টে ৩ হাজারী ক্লাবের সদস্যপদ পেয়েছেন। টেস্টে ১৫০ উইকেট এবং ৩ হাজার রানে বিরল অল রাউন্ড পারফরমেন্সে সেরা ১৪ জনে লিখিয়েছেন নিজের নাম।
ক্রাইস্টচার্চ টেস্টের প্রথম দিনে ৫৯ রানের ইনিংসে একটা মাইলফলকও করেছেন স্পর্শ। তামীম ইকবালের পর তিন ভার্সনের আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ৯ হাজার রান পূর্ণ করেছেন ওয়েলিংটন টেস্টের প্রথম দিন। দ্বিতীয় দিনের পড়ন্ত বেলায় তার ৩ ওভারের ভয়ংকর স্পেলে (৩-০-৮-৩) নাটকীয়ভাবে বাংলাদেশ ফিরেছে টেস্টে। দূর্দান্ত স্পেলে দলকে ফেরানোর দিনে বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে তিন ফরমেটের ক্রিকেট মিলে সবার আগে ৪শ’ উইকেটের ল্যান্ডমার্কেও দিয়েছেন পা। ওয়াটলিংকে বোল্ড আউটে ফিরিয়ে দিয়ে এই ইতিহাসই করেছেন রচনা বাঁ হাতি স্পিনার। টপকে গেছেন তিন ফরমেটের ক্রিকেট মিলে লংকান বাঁ হাতি স্পিনার হেরাথের শিকার সংখ্যাকে (৪৪৯ উইকেট)। পর পর ২ দিনে দু’টি মাইলস্টোনে রেখেছেন পা। আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে ২৬৯ তম ম্যাচে (৪৬টি টেস্ট, ১৬৬টি ওয়ানডে, ৫৭টি টি-২০) গত পরশু ৯ হাজার রান পূর্ণ করে ছিলেন আর একটি বিরল রেকর্ডে চোখ। সমসাময়িক ক্রিকেটারদের মধ্যে তিন ফরমেটের আন্তর্জাতিক ম্যাচ মিলে উইকেট শিকারে সাকিবের উপরে আছেন এন্ডারসন (৭৫৪), স্টেইন (৬৫৫), স্টুয়ার্ট ব্রড (৬১১), আফ্রিদি (৫৪০), মালিঙ্গা (৪৭০) এবং মর্নে মরকেল (৪৬৮)।
২ উইকেট পেলেই প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে সাড়ে ৪শ’ উইকেটের ল্যান্ডমার্কে যাবেন পৌঁছে, সেই অভীষ্ঠ লক্ষ্য পূর্ণ হয়েছে তার। প্রথম স্পেলটি হতাশ করলেও রিদম ফিরে পাওয়া দ্বিতীয় স্পেলে ওয়াটলিংকে বোল্ড আউটে ফিরিয়ে দিয়েই প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে পূর্ণ করেছেন সাড়ে ৪শ’ উইকেট! ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ইনিংস এখনো তার নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই, ২০০৮ সালে চট্টগ্রাম টেস্টে (৭/৩৬)। তবে প্রিয় প্রতিপক্ষ নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে তাদের মাঠে বোলিংটা এতোদিন ছিল না তার প্রত্যাশিত। ৯ বছর আগে ওয়েলিংটনে ২/৪৪ ছিল নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ইতোপূর্বে টেস্টে তার সেরা বোলিং। গতকাল সেই অতীত মুছে দিয়ে করেছেন নিউজিল্যান্ডের মাটিতে স্বাগতিকদের বিপক্ষে করেছেন টেস্টে সেরা বোলিং (৩/৩২)।
নিউজিল্যান্ড সফরে এবার যেনো একটার পর একটা রেকর্ডের নেশা ভালই চেপে বসেছে সাকিবের। টেস্ট ক্যারিয়ারে এই প্রথম পেয়েছেন ডাবল সেঞ্চুরির দেখা। ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে ইতোপূর্বে সাকিবের সর্বোচ্চ রান ছিল ২০৯, পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১১ সালে হোম সিরিজে। সেই রেকর্ড ছাড়িয়ে চলমান টেস্ট সফরে ৩ ইনিংসে সাকিবের রানের সমষ্টি ২৭৬। ২ ম্যাচের টেস্ট সিরিজে তামীমের সর্বোচ্চ (পাকিস্তানের বিপক্ষে ২০১৫ সালে ২৭৭) ছাড়িয়ে যেতে দরকার সাকিবের মাত্র ১ রান। দ্বিতীয় ইনিংসে সেঞ্চুরি পেলে হয়ে যাবে তা একটা রেকর্ড। কারণ, এখনো ২০১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২ ম্যাচের হোম টেস্ট সিরিজে মুমিনুলের ৩৭৬ রানই যে ২ ম্যাচের সিরিজে বাংলাদেশ ব্যাটসম্যানদের মধ্যে সর্বোচ্চ। রেকর্ডস বলছে টেস্টে নিউজিল্যান্ড তার প্রিয় প্রতিপক্ষ। ৪৬ টেস্টে ৩২০৫ রানের মালিকের ক্যারিয়ার গড় যেখানে ৪১.০৮, সেখানে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ৮ টেস্টে ৭৫৫ রানে তার গড়টা ৬৮.৬৩! টেস্ট ক্যারিয়ারে সেঞ্চুরি যেখানে তার ৪টি, সেখানে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২টি। নিউজিল্যান্ডের মাঠে, সবুজ উইকেটে ব্যাটিংটা যেখানে বিশ্বের বাঘা বাঘা ব্যাটসম্যানদের জন্য আতঙ্কের, সেখানে নিউজিল্যান্ডের মাটিতেই খেলতে অধিক স্বাচ্ছন্দ পান সাকিব। নিউজিল্যান্ডের মাটিতে ৪ টেস্টে ৫০৯ রানে গড়টা কোথায় নিয়েছেন জানেন? ৮৪.৮৩! ঈর্ষণীয়ই বটে। এই প্রতিপক্ষের বিপক্ষে ২টি সেঞ্চুরির ২টিই আবার নিউজিল্যান্ডের মাটিতে। পর পর ২ দিন দু’টি মাইলস্টোনে যেভাবে মেলে ধরেছেন সাকিব, তাতে তৃতীয় দিনেও যে এই অল রাউন্ডারের দ্যুতি ছড়ানোর দিকে তাকিয়ে বাংলাদেশ ক্রিকেটপ্রেমীরা।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।