Inqilab Logo

সোমবার ২৫ নভেম্বর ২০২৪, ১০ অগ্রহায়ণ ১৪৩১, ২২ জামাদিউল সানী ১৪৪৬ হিজরি

গরিবের ভাতা যাচ্ছে সচ্ছলদের ঘরে

| প্রকাশের সময় : ২১ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

মোস্তফা মাজেদ, ঝিনাইদহ থেকে : ঝিনাইদহে ল্যাকটেটিং ও মাতৃত্বকালীন ভাতা নিয়ে নয়-ছয়ের অভিযোগ উঠেছে। হতদরিদ্র মহিলাদের পরিবর্তে মাতৃত্বকালীন ভাতার সুবিধা নিচ্ছেন বড়লোকের স্ত্রীরা। লাজলজ্জা আর শরম ত্যাগ করে অগ্রণী ব্যাংক থেকে ছয় মাস পরপর এই ভাতা উঠয়ে নিচ্ছেন তারা। ব্যাংকের কর্মকর্তারা এসব নারীদের সাজগোজ দেখে অনেক সময় অবাক হন। মাতৃত্বকালীন ভাতা যাদের পাওয়ার কথা তারাই থাকছেন উপেক্ষিত। অফিযোগ পাওয়া গেছে ঝিনাইদহ মহিলা বিষয়ক অফিসের এক শ্রেণির অসাধু কর্মকর্তা-কর্মচারীদের যোগসাজশে মাতৃত্বকালীন ভাতা বড়লোকের স্ত্রীদের আঁচলে বাধা পড়ছে। অফিরে লোকজন টাকার বিনিময়ে দরিদ্র মহিলাদের বাইরে রেখে অর্থ বিত্তশালী পরিবারের স্ত্রীদের সুযোগ করে দিচ্ছেন এমন কথাও শোনা যাচ্ছে। যে কারণে চরমভাবে বঞ্চিত জেলার হতদরিদ্র নারীরা। মাতৃত্বকালীন ভাতা প্রদানের ক্ষেত্রে কোন নীতিমালা মানা হচ্ছে না। নামকাওয়াস্তে আইন মেনে অবস্থাশালীদের স্ত্রীদের দেওয়া হচ্ছে। মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের একটি সূত্র জানায়, সরকার দেশের হতদরিদ্র গর্ভবতী মায়ের চিকিৎসা ও প্রসব পরবর্তী কোলের শিশু সন্তান যাতে মায়ের বুকের দুধ পান সে জন্য এ ভাতা দিয়ে থাকে। কিন্তু জেলায় ২৪৩০ জনের যে মাতৃত্বকালীন ভাতা দেওয়া হয় তাদের মধ্যে অনেকেই আইন বহিভর্‚তভাবে এ ভাতা নিচ্ছেন। জেলা মহিলা বিষয়ক অফিস সূত্রে জানা যায়, ঝিনাইদহ জেলার ৬টি উপজেলায় ও পৌরসভায় দরিদ্র পরিবারের নারীদের সুবিধার্থে এ ভাতা দেয়া হয়। দুই বছর মেয়াদী এ ভাতার টাকা প্রতি মাসে ৫০০ টাকা করে ৬ মাস পর পর দেওয়া হয়। এর মধ্যে কর্মজীবী ল্যাকটেটিং মাদার সহয়তা তহবিলের (ল্যাকটেটিং) আওতায় জেলাতে ২৪৩০ জনকে ল্যাকটেটিং ও ৭৩০৮ জনকে মাতৃত্বকালীন ভাতা দেয়া হচ্ছে। এর মধ্যে ল্যাকটেটিং ভাতা সদর পৌরসভায় ৮০০ জন, কালীগঞ্জে ৩৬০, কোটচাঁদপুরে ৩৬০, মহেশপুরে ৩০০, শৈলকূপায় ৩৬০ ও হরিণাকুন্ডুতে ২৫০ জনকে দেওয়া হয়। অন্যদিকে দরিদ্র মায়েদের জন্য মাতৃত্বকালীন ভাতা হিসেবে সদর উপজেলায় ১৮৫৩ জন, কালীগঞ্জে ১১৯৯, কোটচাঁদপুরে ৫৫০, মহেশপুরে ১৩০৮, শৈলকূপায় ১৫২৬ ও হরিণাকুন্ডুতে ৮৭২ জনকে দেওয়া হয়। এ ভাতার টাকা পেতে হলে ভাতা প্রত্যাশীদের নিজ নিজ ইউনিয়ন ও পৌরসভার মাধ্যমে আবেদন করতে হয়। আবেদনপত্র পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদ প্রাথমিক বাছাই প্রক্রিয়া শেষ করে জেলা মহিলা বিষয়ক অফিসে পাঠায়। সেখান থেকে বাছাই হয়ে পরবর্তীতে জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে চ‚ড়ান্ত বাছাই প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়। কিন্তু ঝিনাইদহ মহিলা বিষয়ক অফিসের এক শ্রেণির কর্মকর্তা-কর্মচারী প্রশাসনের কর্মকর্তাদের অন্ধকারে রেখে দরিদ্র নারীদের বাদ দিয়ে বড়লোকের স্ত্রীদের তালিকাভুক্ত করে দেন বলে অভিযোগ। যে কারণে সরকারের লক্ষ্য পূরণ করতে ব্যার্থ হচ্ছে এই প্রকল্পটি। এ জন্য বঞ্চিত হতদরিদ্র নারীরা তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়ার জন্য আহŸান জনান। ঝিনাইদহ অগ্রণী ব্যাংকের শাখা ব্যবস্থাপক সদর উদ্দীন জানান, ব্যাংকে যেসব মেয়েরা সাজগোজ করে এই ভাতা তুলতে আসেন তাতে সঠিকভাবে তালিকা করা হয় না বলেই ধরে নেওয়া যায়। তবে ঝিনাইদহ মহিলা বিষয়ক অধিদপ্তরের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা জানান, রাজনৈতিকভাবে প্রভাব থাকায় আমরা সচ্ছভাবে এই তালিকা করতে পারি না। এ বিষয়ে জেলা মহিলা বিষয়ক কর্মকর্তা নিলুফার রহমানের মোবাইল ০১৭১২৫৫৫১৪৭ নাম্বারে ফোন করা হলে তিনি ফোন ধরেননি।



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: গরিব

২৮ জুলাই, ২০২০

আরও
আরও পড়ুন
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ