পবিত্র লাইলাতুল বরাত
আজ দিবাগত রাত পবিত্র লাইলাতুল বরাত। পরম করুণাময় আল্লাহতায়ালা তার বান্দাদের গুনাহ মাফ, বিপদমুক্তি ও
বর্তমান সরকারের আমলে জিডিপির আকার বেড়েছে, প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, মাথাপিছু আয় বেড়েছে, রিজার্ভ বেড়েছে, বিদ্যুৎ উৎপাদন বেড়েছে, খাদ্যে স্বয়ংভর হয়েছে দেশ, একথা অস্বীকার করার উপায় নেই। এসব বৃদ্ধি ক্রমান্বয়েই বাড়ছে ২০০৯ সাল তথা বর্তমান সরকার ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই। এমনকি করোনা সৃষ্ট বৈশ্বিক মহামন্দার সময়েও বাড়ছে। এসব বৃদ্ধির কথা প্রায়ই বলছেন মন্ত্রী, এমপি ও সরকারি সংস্থাগুলো। আন্তর্জাতিক কিছু সংস্থাও বাংলাদেশের জিডিপি, প্রবৃদ্ধি ও মাথাপিছু আয় বৃদ্ধির খবর প্রকাশ করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের এক রিপোর্ট মতে, করোনার গত দেড় বছরে ব্যাংকে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় সাড়ে ১৭ হাজার। এসব কথামালার সার কথা, বাংলাদেশ এখন বিশ্বের উন্নয়ন মডেল। এটা ঠিক, দেশের উন্নতি হচ্ছে স্বাধীনতার পর থেকেই এবং তা কখনো কিছু বেশি কখনো কিছু কম। তাই দেশ আজ গরিব দেশ থেকে নিম্ন মধ্যম আয়ের দেশভুক্ত হয়েছে। মধ্য আয়ের দেশভুক্ত হওয়ার দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগের ‘জাতীয় মানব উন্নয়ন প্রতিবেদন-২০২১’ এর প্রক্ষেপণে বলা হয়েছে, ২০৩০ সালের মধ্যেই বিশ্বের ২৪তম বড় অর্থনীতির দেশে পরিণত হবে বাংলাদেশ। আর ২০৪১ সালের মধ্যে বাংলাদেশ হবে একটি পরিপূর্ণ ডিজিটাল অর্থনীতির দেশ। আইএমএফ’র সাম্প্রতিক প্রক্ষেপণ মতে, ক্রয়ক্ষমতার ভিত্তিতে বাংলাদেশের অর্থনীতির আকার চলতি জানুয়ারি মাসে ১ ট্রিলিয়ন ডলারের মাইলফলক পেরিয়েছে, যা বাড়তে বাড়তে দেড় ট্রিলিয়ন ডলার হবে ২০২৬ সালে।
প্রশ্ন উঠতে পারে, এই রেকর্ড পরিমাণে বৃদ্ধির উৎস কী? বর্তমান সরকারের সময়ে কিংবা তারও কয়েক বছর আগে দেশে কি কোনো বড় শিল্প তৈরি হয়েছে? হয়নি। বরং যেগুলো ছিল তার অধিকাংশ বন্ধ হয়ে গেছে লোকসানের কারণে। সরকারি পাটগুলোও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। সার কারখানাগুলোও বন্ধ রেখে আমদানি করা হচ্ছে। সরকারি বিদ্যুৎ প্লান্টের অনেকগুলো বন্ধ রেখে অত্যন্ত ব্যয়বহুল রেন্টাল, কুইক রেন্টালের বিদ্যুৎ কেনা হচ্ছে। এছাড়া বিদ্যুৎ উৎপাদন বৃদ্ধির দিকে যেভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে, সেভাবে সরবরাহ ব্যবস্থার উন্নতির দিকে গুরুত্ব দেওয়া হয়নি। ফলে চাহিদা মাফিক বিদ্যুৎ সরবরাহ হচ্ছে না। তাই প্লান্ট বসিয়ে রেখে ভাড়া দিতে হচ্ছে বছরে ৯ হাজার কোটি টাকার অধিক। এসব কারণে বিদ্যুতের মূল্য কয়েকগুণ বাড়াতে হয়েছে। দেশের অধিকাংশ তাঁত শিল্প বন্ধ হয়ে রয়েছে। তাই দেশে শিল্প বলতে এখন মূলত গার্মেন্ট ও তার লিংকেজ খাত আছে। তাই রফতানির প্রধান অংশ হচ্ছে গার্মেন্ট। মোট রফতানির ৮৪%। যদিও এর যা রফতানি হয় তার প্রায় অর্ধেকের বেশি আমদানি করতে হয়। এমনকি, সেলাইয়ের সূচ পর্যন্ত আমদানি করতে হয়। এখানে হয় প্রধানত কাটিং ও সেলাইয়ের কাজ। দ্বিতীয়ত: গার্মেন্ট রফতানিতে দেশ আগে দ্বিতীয় ছিল, এখন হয়েছে তৃতীয়। স্বাধীনতার পর থেকে ক্রমান্বয়ে সর্বাধিক উন্নতি হয়েছে কৃষি খাতের। তবুও কৃষিপণ্যের বেশিরভাগই আমদানি নির্ভর। এমনকি প্রধান খাদ্য চাল ও গম পর্যন্ত আমদানি করতে হয় বছরে প্রায় ৭০ লাখ মেট্রিক টন করে। এভাবে দেশ বিদেশি পণ্যের বাজারে পরিণত হয়েছে। বেসরকারি ও বিদেশি বিনিয়োগ উল্লেখযোগ্য নয়। পর্যটন খাতেরও উন্নতি হয়নি। এসব যেটুকু ছিল, তারও অনেক কমে গেছে করোনাকালে। তাই কর্মসংস্থান হচ্ছে না চাহিদা মাফিক। বিদেশে কর্মসংস্থানও কমে গেছে এই সময়ে। ফলে বেকারত্ব ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। প্রবাসী আয় অনেক হ্রাস পাওয়ায় রিজার্ভ ক্রমান্বয়ে কমে যাচ্ছে। কর জিডিপির হার বৃদ্ধি, শিক্ষার আধুনিকায়ন, শিক্ষার মান বৃদ্ধি,বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি উদ্ভাবন ও ব্যবহার বৃদ্ধি, কারিগরি শিক্ষা হার বৃদ্ধি, দক্ষ লোকের সংখ্যা বৃদ্ধি, পরিবেশের উন্নতি তেমন হয়নি। ডিজিটাল কান্ট্রি বলে বহুল প্রচারিত দেশের ইন্টারনেটের গতি উগান্ডার চেয়েও কম। সাইবার নিরাপত্তার অবস্থাও তথৈবচ!
তবুও জিডিপি, মাথাপিছু আয়, প্রবৃদ্ধি ইত্যাদি বৃদ্ধির কারণ কী? এর প্রধান কারণ হচ্ছে, বর্তমান সরকারের সময়ে অনেকগুলো মেগা প্রকল্পের কাজ চলছে। এডিপির আকারও প্রতি বছরই বেড়েছে, যার প্রায় অর্ধেক অপ্রয়োজনীয়। উপরন্তু অনেক প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে ও হচ্ছে ভারতের ট্রানজিট সুবিধার জন্য। সর্বোপরি মেগাপ্রকল্পসহ বেশিরভাগ প্রকল্পের মেয়াদ ও ব্যয় ব্যাপক বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। উপরন্তু গত এক দশকে রেল খাতে প্রায় দেড় লাখ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। কিন্তু যাত্রী ও পণ্য পরিবহন এবং গতি তেমন বাড়েনি। তাই লোকসান চলছেই! রেলের সব চেয়ে অদ্ভুত কাণ্ড হচ্ছে, ব্রিজের ধারণ ক্ষমতা ৭০ টন আর ইঞ্জিন আমদানি করা হয়েছে ১০০ টনের। ফলে ব্যবহার করা যাচ্ছে না। পায়রা গভীর সমুদ্র বন্দর নির্মাণ করার জন্য কয়েক হাজার কোটি টাকা ব্যয় করার পর এখন সেটা বাতিল করে মহেশখালীতে করা হচ্ছে। এছাড়া, কয়েকটি ব্যাপক ব্যয় সম্বলিত কয়লার বিদ্যুৎ প্লান্ট নির্মাণ করা হচ্ছে, যা যে কোন সময়ে আন্তর্জাতিক চাপে বন্ধ করে দেয়া হতে পারে। এসব হচ্ছে জবাবদিহিতা না থাকার কারণে। তবুও এই অত্যধিক ব্যয়গুলো জিডিপিতে যুক্ত হচ্ছে। ফলে জিডিপির আকার বাড়ছে। আর তাকে মোট মানুষ দিয়ে ভাগ করে মাথা পিছু আয় বের করা হচ্ছে। কিন্তু এই ব্যয় বৃদ্ধিতে সংশ্লিষ্ট লোকরা অনেক লাভবান হলেও সাধারণ মানুষের তেমন লাভ হচ্ছে না। এই বড় প্রকল্পগুলো বাস্তবায়ন করা হচ্ছে বিদেশি ঋণে। কিছুদিন আগের খবর হচ্ছে, বিদেশি ঋণের পরিমাণ দাঁড়িয়েছে ৭০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (অথচ বিশ্বব্যাংকের তথ্য মতে, ২০১০ সাল পর্যন্ত বাংলাদেশের বৈদেশিক ঋণের স্থিতি ছিল ২,৬৫৭.২০ কোটি ডলার)। এছাড়া, অভ্যন্তরীণ ঋণ তো রয়েছেই। এভাবে গত বছরের খবর হচ্ছে, বর্তমানে সরকারের যে ঋণ হয়েছে তার পরিমাণ মাথা পিছু দাঁড়িয়েছ ৮৫ হাজার টাকা, যা এখন ৯০ হাজার অতিক্রম করেছে! তাই বাংলাদেশ বিদেশি ঋণের ফাঁদে পড়ছে বলে বিশেষজ্ঞরা আশংকা প্রকাশ করেছেন।
যা’হোক, বর্তমান সরকারের সময়ে প্রথম কয়েক বছর দারিদ্র হ্রাসের হার যা ছিল, তা অনেক কমে গেছে গত কয়েক বছরে। শেষ পর্যন্ত ২০% ছিল দারিদ্রের হার। কিন্তু করোনার কারণে তা বেড়ে ৪৩% হয়েছে বলে সস্প্রতি কয়েকটি সংস্থার গবেষণাপত্রে বলা হয়েছে। দেশের খ্যাতিমান আমলা ও অর্থনীতিবিদ ড. আকবর আলী খান সম্প্রতি বলেছেন, আন্তর্জাতিক হিসাব অনুযায়ী, দেশে এখনো অর্ধেক মানুষ দরিদ্র (বিশ্ব ব্যাংকের মতে, কারও দৈনিক আয় ১.৯০ মার্কিন ডলারের নিচে হলে সে দরিদ্র)। অপরদিকে গত ১৩ জানুয়ারি প্রকাশিত বিলস’র রিপোর্ট মতে, করোনা সংক্রমণ প্রতিরোধে গত বছর সরকার ঘোষিত লকডাউনে পরিবহন, হোটেল-রেস্তোরাঁ ও দোকান শ্রমিকদের আয় কমেছে ৮১%। ওই সময় ৮৭% শ্রমিক কর্মসংস্থান হারিয়েছে এবং কর্মক্ষেত্র থেকে খাদ্য, অর্থ সহযোগিতা পেয়েছে ৪৮% শ্রমিক। সরকার থেকে এসব শ্রমিকের ১২% বিভিন্ন সহযোগিতা পেয়েছে। করোনা মহামারিতে বেসরকারি খাতে নিয়োজিত পরিবহন, হোটেল-রেস্তোরাঁ এবং দোকান শ্রমিকদের কর্মসংস্থান, আয় ও সামাজিক নিরাপত্তার ওপর বেশ প্রভাব পড়েছে। স্মরণীয় যে, দেশের মোট শ্রমিকের ৮৪% আছে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে।এরা বর্তমানে চরম দুর্দশায় নিপতিত হয়েছে। তেমনি ক্ষুদ্র শিল্পের মালিকদের অবস্থাও অত্যন্ত খারাপ হয়েছে। কারণ, লকডাউনের ক্ষতির কোন সহায়তা পায়নি তারা। অথচ বড় শিল্পের মালিকরা পেয়েছে। অন্যদিকে, সামাজিক সুরক্ষা খাতে যে সামান্য মানুষ সুবিধা পাচ্ছে, তার ৪৫% সচ্ছল ব্যক্তি বলে খবরে প্রকাশ। দ্রব্যমূল্যের এই অস্বাভাবিক বাজারে বেশিরভাগ মানুষ চাহিদা মোতাবেক জিনিসপত্র ক্রয় করতে পারছে না। কিছু দিন আগের বিশ্ব ব্যাংকের এক রিপোর্ট মতে, বাংলাদেশের ৪৩% পরিবারের পুষ্টিকর খাদ্য ক্রয় করার সামর্থ্য নেই। বর্তমানের সে সংখ্যা অনেক বেড়েছে। তারা দৈনন্দিন খাদ্য গ্রহণ কমিয়ে দিয়েছে। ফলে তাদের শ্রম শক্তি হ্রাস পাচ্ছে, যা দেশের জন্য মারাত্মক ক্ষতিকর। স্মরণীয় যে, জীবনযাত্রার ব্যয় ২০০৯ সালে কত ছিল আর ২০২১ সালে কত এবং মার্কিন ডলারের তুলনায় টাকার মান তখন কত ছিল আর এখন কত হয়েছে তার চিত্র এক সাথে প্রকাশ করা হলেই দেখা যাবে আকাশ-পাতাল পার্থক্য। কিন্তু মানুষের আয় সেভাবে বাড়েনি। তাই বেশিরভাগ মানুষ এই অতিরিক্তি ব্যয় নির্বাহ করছে সম্পদ বিক্রি অথবা ঋণ করে। বাকীটা পূরণ করছে কম ব্যবহার করে। এভাবে দেশের মধ্যবিত্তরা নিম্নবিত্ত আর নিম্নবিত্তরা নিঃস্ব হচ্ছে। শিক্ষার্থীর ঝরে পড়ার হার বেড়েছে অনেক। অপরদিক, আঞ্চলিক বৈষম্য প্রকট রয়েছে। ভূমিহীন, গৃহহীন, ছিন্নমূল ও শিশু শ্রমিকের সংখ্যাও অনেক। মুষ্টিমেয় কিছু মানুষ রাতারাতি ধনী হয়ে বিভিন্ন দেশে বেগম পাড়া তৈরি করেছে এবং দেশ-বিদেশে বিলাসী জীবন যাপন করছে। ফলে দেশে আয় বৈষম্য সর্বোচ্চ সীমানা অতিক্রম করেছে! প্যারিস স্কুল অব ইকোনমিকসের ওয়ার্ল্ড ইন ইকুয়ালিটি ল্যাবের বৈশ্বিক অসমতা প্রতিবেদন-২০২২ মতে, বাংলাদেশে ২০২১ সালে শীর্ষ ১০% ধনীর আয় মোট জাতীয় আয়ের ৪৪% ও শীর্ষ ১% ধনীর আয় ১৬.৩% এবং পিছিয়ে থাকা ৫০% মানুষের আয় ১৭.১%। তাই বাংলাদেশ উন্নয়নের মডেল নয় আয় বৈষমের মডেলে পরিণত হয়েছে! ওয়েলথ এক্সের ওয়ার্ল্ড আলট্রা ওয়েলথ রিপোর্ট-২০১৮ মতে, ‘২০১২ সাল থেকে ২০১৭ এই পাঁচ বছরে অতি ধনীর সংখ্যা বৃদ্ধিতে বিশ্ব চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। ওই পাঁচ বছরে বাংলাদেশে ধনকুবেরের সংখ্যা বেড়েছে বার্ষিক ১৭.৩% হারে’। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য মতে, ব্যাংক খাতে কোটিপতি আমানতকারীর সংখ্যা ছিল ১৯৭২ সালে মাত্র পাঁচ জন। ২০০৯ সালের জুনের শেষে ২১,৪৯২ জন। আর বর্তমানে তা প্রায় সোয়া এক লাখ দাঁড়িয়েছে। এদের অধিকাংশই ধনী হয়েছে অবৈধ পথে!
বর্ণিত এই নেতিবাচক দিকগুলো সরকারি কর্তারা ভুলেও বলছেন না। কিংবা সংকট নিরসনের চেষ্টা করছেন না। শুধু তারা তোতা পাখির মতো সারাক্ষণ উন্নতির বিশ্ব মডেলের কথা বলে যাচ্ছেন। কিন্তু শাক দিয়ে কি মাছ ঢেকে রাখা যায়? যায় না। সত্য উদ্ভাসিত হয় তার আপন মহিমাতেই। আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলোর খাতভিত্তিক গত কয়েক বছরের বৈশ্বিক সূচকে দেশের অবস্থানই তার বড় প্রমাণ। দেশের আরও নেতিবাচক খবর হচ্ছে, এলডিসি উত্তরণের সংকট। পরিকল্পনামন্ত্রী সম্প্রতি বলেছেন, আমরা মধ্য আয়ের ফাঁদে পড়তে চলেছি। অবশ্য অর্থমন্ত্রী তা নাকচ করে দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে কার ভবিষ্যৎবাণী সঠিক হবে তা বাস্তবায়ন শুরু হলে প্রমাণিত হবে। তবে, দেশের সব মহল থেকেই বলা হচ্ছে, এলডিসি উত্তরণে বড় রকমের চ্যালেঞ্জের মধ্যে পড়তে হবে। উল্লেখ্য যে, মধ্য আয়ের দেশের যাত্রা শুরু হলেই বিদেশি সহায়তা বন্ধ হয়ে যাবে। ভর্তুকিও প্রত্যাহার করে নিতে হবে। সম্প্রতি শুধুমাত্র জ্বালানি তেলের ভর্তুকি তুলে নিয়ে মূল্য বৃদ্ধি করার ফলে পরিবহন ব্যয় অনেক বেড়ে গেছে, যার প্রভাব পড়েছে পণ্য মূল্যে। আর মধ্য আয়ের দেশের যাত্রা শুরু হলে কৃষি, শিক্ষা, চিকিৎসাসহ সব ভর্তুকি বন্ধ করতে হবে। তখন পরিস্থিতি কি ভয়াবহ হবে তা সহজেই অনুমেয়। অপরদিকে, জলবায়ু সংকট তো রয়েছেই। আম্পান ও আইলার ক্ষত এখনো শুকায়নি খুলনা অঞ্চলে। সংশ্লিষ্ট এলাকার ক্ষত নিরসনে সরকার তেমন কিছুই করেনি। একই অবস্থা হওয়ার ঝুঁকিতে রয়েছে সমগ্র উপকূলীয় এলাকা। তাই সেখানে স্থায়ী ব্যবস্থা গড়ে তোলা দরকার। দেশের রফতানি মূলত গার্মেন্ট নির্ভর। এ ক্ষেত্রে বৈচিত্র্য আনা আবশ্যক। হালাল পণ্যের বাজারের ব্যাপক সম্ভাবনা রয়েছে। দেশে করোনার তৃতীয় ঢেউ শুরু হয়েছে। এটা মোকাবেলা করার জন্য পুনরায় লকডাউনের জল্পনা-কল্পনা চলছে। কিন্তু পুনরায় লকডাউনের ভার বহর করার ক্ষমতা নেই দেশবাসীর। তাই করোনা মোকাবেলায় স্বাস্থ্যবিধি কঠোরভাবে পালন এবং চাহিদা মাফিক টিকা প্রদানের ব্যবস্থা করতে হবে খুব দ্রুত।
যা’হোক, দেশের যেটুকু উন্নতি হচ্ছে তার ভাগীদার হতে পারছে না সাধারণ মানুষ। ফলে তাদের ভাগ্যোন্নয়ন হচ্ছে না, বরং ক্রমান্বয়ে অবনতি হচ্ছে! কিন্তু বিশ্বখ্যাত অর্থনীতিবিদদের অভিমত হচ্ছে, যে উন্নতিতে সাধারণ মানুষের জীবন মানের উন্নতি হয় না, সেটা উন্নতি নয়। তাই শুধুমাত্র দেশ ধনী হলেই হবে না, একই সাথে সাধারণ মানুষেরও জীবন মানের উন্নতি ঘটাতে হবে। উপরন্তু দারিদ্র্য দূর করতে হবে। তবেই মানুষের অর্থনৈতিক মুক্তি ঘটবে।
লেখক: সাংবাদিক ও কলামিস্ট।
দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।