Inqilab Logo

বুধবার, ০৩ জুলাই ২০২৪, ১৯ আষাঢ় ১৪৩১, ২৬ যিলহজ ১৪৪৫ হিজরী

কুমিল্লায় স্টুডেন্ট পলিটিকসে আগ্রহ হারাচ্ছে কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীরা

| প্রকাশের সময় : ১৮ জানুয়ারি, ২০১৭, ১২:০০ এএম

সাদিক মামুন, কুমিল্লা থেকে : স্টুডেন্ট পলিটিকসে আগ্রহ হারাচ্ছে কুমিল্লার কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীরা। একসময়কার রাজপথ আর শিক্ষাঙ্গন কাঁপানো কুমিল্লার ছাত্রী নেত্রীদের অনেকেই ঘর-সংসার, চাকরি আর এনজিও নিয়ে ব্যস্ত সময় পার করছেন। হাতেগোনা কয়েকজন রাজনীতির সাথে জড়িয়ে রয়েছেন। কিন্তু তাদের উত্তরসুরি হিসেবে কুমিল্লার কলেজ বিশ্ববিদ্যালয়ে বড় রাজনৈতিক দলের সহযোগী ছাত্র সংগঠনগুলোতে ছাত্রদের ব্যাপক উপস্থিতি থাকলেও প্রতিনিধিত্ব করার জায়গায় ছাত্রীদের অবস্থান নেই বললেই চলে। তবে বাম ছাত্র সংগঠনগুলোর কিছু ছাত্রী সক্রিয়ভাবে কাজ করছেন।
শিক্ষাঙ্গনের স্টুডেন্ট পলিটিকসে ছাত্রীদের অনীহা আগামী দিনে কুমিল্লার রাজনীতিতে নারী নেত্রীত্ব বিকাশের জায়গাটি দিন দিন সঙ্কুচিত হয়ে পড়ছে। রাজনৈতিক নেতাদের মন্তব্য অভিভাবকদের সদিচ্ছা না থাকার কারণেই ছাত্রীরা স্টুডেন্ট পলিটিকসে বিমুখ হয়ে পড়ছে। কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, কুমিল্লা সরকারি কলেজ ও কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজের বেশ ক’জন ছাত্রীর সাথে স্টুডেন্ট পলিটিকস নিয়ে কথা বললে তারা জানান, শিক্ষাঙ্গনে তাদের জন্য রাজনীতি করার পরিচ্ছন্ন জায়গাটি নষ্ট হয়ে যাওয়ায় প্রবল ইচ্ছে থাকা সত্তে¡ও তারা স্টুডেন্ট পলিটিকসে যুক্ত হতে পারছেন না। অন্যদিকে দীর্ঘ সময় ধরে কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রসংসদ নির্বাচন না হওয়ায় গুরুত্বপূর্ণ পদে ছাত্রীদের প্রতিদ্ব›িদ্বতা করা আগ্রহ থাকা সত্তে¡ও তা হয়ে ওঠছে না। আবার রাজনৈতিক দলের সহযোগী ছাত্র সংগঠনে ছাত্রীদের গুরুত্ব দিয়ে রাখার বিষয়টিও নেতাদের কাছে অমূলক মনে হয়ে থাকে। তার ওপর শিক্ষাঙ্গনে বিভিন্ন ছাত্রসংগঠন নেতৃত্বের প্রভাব ধরে রাখতে মারপিট, অস্ত্রবাজি, গোলাগুলিতে লিপ্ত থাকছে। স্টুডেন্ট পলিটিকসের সত্যিকারের আদর্শ যেখানে পদেপদে ভূলুন্ঠিত হচ্ছে যেখানে স্বাভাবিকভাবেই ছাত্রীদের রাজনীতি করার স্বাভাবিক পথচলা কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ওঠে যাচ্ছে। এসব পরিস্থিতির কারণে অভিভাবকরাও চাচ্ছেন না মেয়েরা ষ্টুডেন্ট পলিটিকসে জড়িত হোক।
এদিকে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়, ভিক্টোরিয়া সরকারি কলেজ, কুমিল্লা সরকারি কলেজ ও কুমিল্লা সরকারি মহিলা কলেজে রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগে অনার্স ও মাস্টার্সে অধ্যয়নরত অন্তত ৫শতাধিক ছাত্রীর ওপর জরিপ চালিয়ে জানা গেছে তাদের মধ্যে মাত্র ২৫ থেকে ৩০জন স্টুডেন্ট পলিটিকসে যুক্ত রয়েছে। অন্যদিকে ওইসব শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন শ্রেণি ও বিভাগে অধ্যয়নরত অন্তত শতাধিক ছাত্রী ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফ্রন্ট, ছাত্রসমিতি, জাসদ ছাত্রলীগ, বিপ্লবী ছাত্রমৈত্রী, ছাত্র ফেডারেশনসহ অন্যান্য বাম ছাত্রসংগঠনে সম্পৃক্ত থেকে স্টুডেন্ট পলিটিকসে যুক্ত থাকলেও ছাত্রলীগ, ছাত্রদলে মেয়েদের সম্পৃক্ততার সংখ্যা খুবই কম। দেশের বড় দুইটি রাজনৈতিক দলের ছাত্রসংগঠনে কুমিল্লায় ছাত্রীদের অপ্রতুলতা আগামী দিনে নারী নেত্রীত্বের জায়গাটি সমৃদ্ধ করতে কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন এখানকার নারী শিক্ষাবিদরা।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বিশিষ্ট নারী শিক্ষাবিদ প্রফেসর জোহরা আনিস বলেন, ‘ছাত্রীদেরকে বাংলাদেশের ইতিহাস ও অভ্যুদয় সম্পর্কে জানতে হবে। সংগঠন করতে হবে। সংগঠন না করলে মানুষ পিছিয়ে পড়ে। আর তাদের পক্ষে নেতা হওয়া বা ভবিষ্যত নেত্রীত্ব দেওয়া সম্ভব নয়। বাংলাদেশের ইতিহাসে ২০০৯ সালের জাতীয় নির্বাচনে ৫৫জন নারী প্রার্থী সরাসরি অংশ নিয়ে ১৯জন বিজয়ী হয়েছেন। ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধিকার ও সাংস্কৃতিক আন্দোলনে মিছিল, মিটিংয়ে নারীদের অগ্রগণ্য ভূমিকা সবার জানা আছে। এসব আন্দোলন সংগ্রামে কুমিল্লার ওইসময়কার ছাত্রীনেত্রীরা জীবন বাজি রেখে রাজপথে নেমেছিল। আজকের সময়ে আমাদের কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রীরা কেনো জানি রাজনীতি বিমুখ হয়ে পড়ছে। তাদেরকে ছাত্ররাজনীতির জায়গাটিতে সম্পৃক্ত করতে হবে। জোরালো ভূমিকা রাখার জন্য তৈরি করতে হবে। আর একাজটি সম্পাদনের জন্য রাজনৈতিক নেতাদের মাঠপর্যায়ে নামতে হবে। খুঁজে বের করতে হবে ছাত্র রাজনীতিতে আমাদের মেয়েরা কেনো আগ্রহ হারাচ্ছে। আর ছাত্রনেতাদেরকেও শিক্ষাঙ্গণে সুস্থধারার রাজনীতি চর্চার দরজা খুলে দিতে হবে।

 



 

দৈনিক ইনকিলাব সংবিধান ও জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। তাই ধর্ম ও রাষ্ট্রবিরোধী এবং উষ্কানীমূলক কোনো বক্তব্য না করার জন্য পাঠকদের অনুরোধ করা হলো। কর্তৃপক্ষ যেকোনো ধরণের আপত্তিকর মন্তব্য মডারেশনের ক্ষমতা রাখেন।

ঘটনাপ্রবাহ: কুমিল্লা


আরও
আরও পড়ুন
এ বিভাগের অন্যান্য সংবাদ
গত​ ৭ দিনের সর্বাধিক পঠিত সংবাদ